
নওগাঁর মান্দায় ৩ মাস পূর্বের দূর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে জখম দেখিয়ে ষড়যন্ত্রমূলতভাবে থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে মান্দা থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। মান্দা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলু রহমানের যোগসাজছে এমন সাজানো ঘটনায় মামলা নেয়ার পর ভুক্তভোগী এশিয়ান টিভির সাংবাদিক রায়হান আলীর মা ও বড় ভাইয়ের কিশোরী নাবালিকা মেয়ে হুমায়রা খাতুন তামান্না (১৬)। কিশোরী মেয়েকে ২০ বছর বানিয়ে মামলায় সাবালিকা দেখিয়ে গ্রেফতার করেছে ওই পুলিশ।
অভিযোগ উঠেছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে না পেয়ে ও ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে পারিবারিক ঝামেলায় নাবালিকা মেয়েকে ফাঁসিয়েছে পুলিশের উপ-পরিদর্শক ফজলু রহমান।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য রায়হান আলী পেশায় সাংবাদিক হওয়ার উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের দ্বায়িত্বে থাকা এসআই ফজলু রহমানের বিভিন্ন অনিয়ম ও এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতেন। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এসআই ফজলু। পারিবারিক ঝামেলার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও বাহাদুরি দেখিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়া হলো এক নাবালিকা মেয়েকে। সম্প্রতি পুলিশের এমন কাণ্ডে এলাকা জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝাড় বইছে।
জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার পরানপুর ইউপির পরানপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে প্রতিবেশী দেলোয়ার গংয়ের সাথে পারিবারিক বিষয় নিয়ে এক ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছিল সোলাইমান আলী সরদারের। সেদিন সোলাইমান সরদারের ছেলে রায়হান আলী কাজ শেষ করে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় পূর্ব থেকে ওঁত পেতে থেকে রাস্তা আটকিয়ে হামলা করেন দেলোয়ার গংরা। হামলার শিকার হওয়ার পর মোবাইল ফেলে দৌড়ে পালিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়েন রায়হান আলী।
সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছিলেন সাংবাদিক রায়হান।
এমন ঘটনার পর উপরের চাপ আছে এমন কথা বলে থানায় দু’পক্ষেরই মামলা রের্কড করে দুর্নীতিবাজ ওই পুলিশ। কিন্তু মারপিটের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয়, এমন আহত যুবককে দিয়ে থানায় মিথ্যা মামলা করেন অভিযুক্ত দেলোয়ার গংরা। আহত যুবক রেজাউল গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে কাজ করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় শিকার হয়ে তার আঙ্গুল হারান।
গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পরেও তা আমলে নেননি ।
পুলিশ কৌশলে বলেন, তদন্ত করে বাদ দেওয়া হবে। কিন্তু পুলিশের মিথ্যা শান্তনায় কোন কাজ হয়নি। তদন্ত না করেই রায়হানকে শায়েস্তা করতে হিতে বিপরীত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন বির্তকিত ওই পুলিশ।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক রায়হান আলী জানান, আমার পারিবারিক মারপিটের ঘটনার সাথে আহত রেজাউলের কোন সম্পৃক্ততা নেই। রেজাউল ইসলাম চট্রগ্রামে কাজ করতে গিয়ে মামলা হওয়ার তিন মাস পূর্বে পায়ের দুটি আঙ্গুল হারান। সেখানে এক চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে এলাকাতে চলে আসেন রেজাউল। এরপর গোপালপুর বাজারে ডাক্তার মনিরুল ইসলামের কাছে নিয়মিত ড্রেসিং করান। কাজ করতে গিয়ে আহত রেজাউল ইসলামকে দিয়ে নাটকীয় ভাবে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়টি পুলিশকে বারবার জানানো হলে ও আমলে নেয়নি তারা। টাকা নিয়ে ও এসআই ফজলুর ব্যক্তিগত আক্রোশোর শিকার হয়ে মিথ্যা মামলা জুড়ে দিয়েছে ফাঁসিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমার ভাতিজির বয়স মাত্র ১৬ বছর।ন কিন্তু কোর প্রকার তদন্ত না করেই তাকে ২০ বছর বয়স বানিয়ে দিয়েছে ও-ই বির্তকিত পুলিশ সদস্য। স্থানীয় বিএনপি নেতা দেলোয়ার গংদের খুশি করতে মিথ্যা মামলায় আমার মা ও ভাতিজিকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে চালান দেন পুলিশ।
এমন আলোচিত ঘটনার রাজসাক্ষী হয়ে আছে এলাকার সাধারণ মানুষজনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সেই সময় অসহায় রেজাউলকে এলাকার সকল স্তরের মানুষজন চিকিৎসার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেছেন। অথচ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ফজলু বিষয়টি জানার পরেও তদন্তে তা উল্লেখ করেননি। জন্ম দিয়েছেন বির্তকিত ও আজব এক ঘটনার। শুধু তাই নয়, ভুক্তভোগী পরিবারের ১৬ বছরের নাবালিকা মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার করে আলোচিত হয়েছেন ও-ই দুর্নীতিবাজ পুলিশ ।
এ ব্যাপারে উপজেলার পরানপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা জানি। রেজাউল চট্রগ্রামে কাজ করতে গিয়ে পায়ের দুটি আঙ্গুল হারিয়ে। তার চিকিৎসার জন্য এলাকাবাসী সহযোগীতা করেছেন। মারপিটের ঘটনায় তার আঙ্গুল কেটে পড়েনি। গভীর ভাবে তদন্ত করে বিষয়টি নথিতে উল্লেখ করা উচিত ছিল।
মান্দা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলুর রহমান বলেন, আমি এজাহার দেখে মেয়ের বয়স দিয়েছি। এছাড়া মেডিক্যাল থেকে তারা এমসি এনেছে। কোন তদন্ত ছাড়া শুধুমাত্র এজাহার দেখে বয়স নির্ধারণ করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের তিনি কোন সদ্বোত্তর দিতে না পেরে এড়িয়ে যান। দূর্ঘটনায় আহত যুবক সম্পর্কেও তিনি কথা বলেননি।
এ বিষয়ে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যেহেতু এসআই ফজলু সেহেতু তিনি ঘটনা সব কিছু জানেন। তদন্ত না করে নাবালিকাকে তার ইচ্ছে মতন বয়স বাড়িয়ে সাবালিকা বানালে এর দায়ভার তাকেই নিতে হবে।
নওগাঁ প্রতিবেদক 


















