ঢাকা ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত

হাসিনার কল রেকর্ড মুছে ফেলা কে এই সেনা কর্মকর্তা?

কোটাবিরোধী আন্দোলন দমাতে সেসময়ের ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা নিজ দলের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে সব ধরেনের নির্দেশনা দেন। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা যখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে দিল্লিতে অবস্থান করছেন, ঠিক সেই সময়ে ঢাকায় তার সব কল রেকর্ড মুছে ফেলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তদানীন্তন মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান।

কে এই জিয়াউল?

গত এক দশকের বেশি সময় ধরে গুম, খুন ও ফোনে আড়িপাতাসহ নানা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এই সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান। সবশেষে মেজর জেনারেল পদেও উন্নীত হয়েছেন। র‌্যাব, এনএসআই ও এনটিএমসিসহ একাধিক স্পর্শকাতর সংস্থায় কাজ করা এই কর্মকর্তা তৎকালীন সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে ক্রমাগত পদোন্নতি পেয়েছেন বলে দাবি সংশ্লিষটদের।

১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঝালকাঠি জেলায় জন্ম নেওয়া জিয়াউল আহসান ১৯৯১ সালের ২১ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পদাতিক কর্মকর্তা হিসেবে কমিশন লাভ করেন। সেনাবাহিনীতে তিনি একজন প্রশিক্ষিত কমান্ডো ও স্কাই ডাইভার হিসেবে গড়ে উঠেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথায়, তখনকার মেজর জিয়াউল আহসানকে র‌্যাব-২-এর ভাইস ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই বছরের ২৭ আগস্ট তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হন।

এরপর তিন বছরের ব্যবধানে, ২০১৩ সালে কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে তিনি র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) হিসেবে দায়িত্ব নেন। ওই সময়েই র‌্যাবের কথিত ‘ক্রসফায়ার’ বা বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়, যার পেছনে গোয়েন্দা শাখার কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে।

২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান এবং এরপর তাকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (NSI) ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স শাখার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর তিনি কাজ করেছেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারেও (NTMC), যা দেশের টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

২০১৭ সালে জিয়াউলকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন এনটিএমসির পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ২১ জুলাই এনটিএমসিতে মহাপরিচালক (ডিজি) পদ তৈরি করা হয় এবং জিয়াউলকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তিনি এনটিএমসির প্রথম মহাপরিচালক হন। এই পদে থাকা অবস্থায় ৬ আগস্ট তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

উল্লেখ্য, এনটিএমসি তথ্য ও যোগাযোগের ডেটা পর্যবেক্ষণ, সংগ্রহ ও রেকর্ড করার পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যোগাযোগ যেমন ফোনকল, ই-মেইল ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ইন্টারসেপ্ট করে থাকে।

আয়নাঘরের ‘জনক’

কথিত গোপন বন্দিশালা আয়নাঘর তৈরি করে সেখানে বিরোধী মতাবলম্বীদের তুলে নিয়ে বছরের পর বছর গুম করে রাখার অভিযোগ রয়েছে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে।

কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান আয়নাঘর এবং ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ ও হত্যার সঙ্গে থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

ব্যক্তিগত আলাপ রেকর্ড করতেন জিয়াউল 

জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে সরকারদলীয় ও বিরোধীদলীয় হাইপ্রোফাইল নেতাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যক্তিগত ফোনালাপ রেকর্ড করার অভিযোগ পাওয়া গেছে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের ফোনকল ফাঁস করে তা বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচার করার ঘটনাও উঠে এসেছে।

সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং কয়েকজন মন্ত্রীর ফোনালাপের সংক্ষিপ্ত তথ্য গণভবন থেকে উদ্ধার হয়। সেই আলাপচারিতায় আন্দোলন দমনে ইন্টারনেট বন্ধসহ বিভিন্ন কৌশলের পরিকল্পনা প্রকাশ পায়।

২০০৯ সালে র‌্যাব থেকে শুরু করে এনটিএমসির মহাপরিচালক পদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তা দীর্ঘ ১৫ বছর আলোচিত ও বিতর্কিত ছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গুম ও খুনের ঘটনায় জিয়াউল আহসানকে প্রধান কুশীলব হিসেবে উল্লেখ করে গুমের শিকারদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ তাকে ও সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই জিয়াউল আহসানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি গ্রেফতার হয়ে জেলজরিমুল করছেন এবং তার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যা মামলার বিচার চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার

হাসিনার কল রেকর্ড মুছে ফেলা কে এই সেনা কর্মকর্তা?

Update Time : ০৬:১৪:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
কোটাবিরোধী আন্দোলন দমাতে সেসময়ের ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা নিজ দলের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে সব ধরেনের নির্দেশনা দেন। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা যখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে দিল্লিতে অবস্থান করছেন, ঠিক সেই সময়ে ঢাকায় তার সব কল রেকর্ড মুছে ফেলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তদানীন্তন মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান।

কে এই জিয়াউল?

গত এক দশকের বেশি সময় ধরে গুম, খুন ও ফোনে আড়িপাতাসহ নানা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এই সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান। সবশেষে মেজর জেনারেল পদেও উন্নীত হয়েছেন। র‌্যাব, এনএসআই ও এনটিএমসিসহ একাধিক স্পর্শকাতর সংস্থায় কাজ করা এই কর্মকর্তা তৎকালীন সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে ক্রমাগত পদোন্নতি পেয়েছেন বলে দাবি সংশ্লিষটদের।

১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঝালকাঠি জেলায় জন্ম নেওয়া জিয়াউল আহসান ১৯৯১ সালের ২১ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পদাতিক কর্মকর্তা হিসেবে কমিশন লাভ করেন। সেনাবাহিনীতে তিনি একজন প্রশিক্ষিত কমান্ডো ও স্কাই ডাইভার হিসেবে গড়ে উঠেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথায়, তখনকার মেজর জিয়াউল আহসানকে র‌্যাব-২-এর ভাইস ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই বছরের ২৭ আগস্ট তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হন।

এরপর তিন বছরের ব্যবধানে, ২০১৩ সালে কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে তিনি র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) হিসেবে দায়িত্ব নেন। ওই সময়েই র‌্যাবের কথিত ‘ক্রসফায়ার’ বা বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়, যার পেছনে গোয়েন্দা শাখার কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে।

২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান এবং এরপর তাকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (NSI) ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স শাখার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর তিনি কাজ করেছেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারেও (NTMC), যা দেশের টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

২০১৭ সালে জিয়াউলকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন এনটিএমসির পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ২১ জুলাই এনটিএমসিতে মহাপরিচালক (ডিজি) পদ তৈরি করা হয় এবং জিয়াউলকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তিনি এনটিএমসির প্রথম মহাপরিচালক হন। এই পদে থাকা অবস্থায় ৬ আগস্ট তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

উল্লেখ্য, এনটিএমসি তথ্য ও যোগাযোগের ডেটা পর্যবেক্ষণ, সংগ্রহ ও রেকর্ড করার পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যোগাযোগ যেমন ফোনকল, ই-মেইল ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ইন্টারসেপ্ট করে থাকে।

আয়নাঘরের ‘জনক’

কথিত গোপন বন্দিশালা আয়নাঘর তৈরি করে সেখানে বিরোধী মতাবলম্বীদের তুলে নিয়ে বছরের পর বছর গুম করে রাখার অভিযোগ রয়েছে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে।

কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান আয়নাঘর এবং ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ ও হত্যার সঙ্গে থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

ব্যক্তিগত আলাপ রেকর্ড করতেন জিয়াউল 

জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে সরকারদলীয় ও বিরোধীদলীয় হাইপ্রোফাইল নেতাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যক্তিগত ফোনালাপ রেকর্ড করার অভিযোগ পাওয়া গেছে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের ফোনকল ফাঁস করে তা বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচার করার ঘটনাও উঠে এসেছে।

সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং কয়েকজন মন্ত্রীর ফোনালাপের সংক্ষিপ্ত তথ্য গণভবন থেকে উদ্ধার হয়। সেই আলাপচারিতায় আন্দোলন দমনে ইন্টারনেট বন্ধসহ বিভিন্ন কৌশলের পরিকল্পনা প্রকাশ পায়।

২০০৯ সালে র‌্যাব থেকে শুরু করে এনটিএমসির মহাপরিচালক পদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তা দীর্ঘ ১৫ বছর আলোচিত ও বিতর্কিত ছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গুম ও খুনের ঘটনায় জিয়াউল আহসানকে প্রধান কুশীলব হিসেবে উল্লেখ করে গুমের শিকারদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ তাকে ও সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই জিয়াউল আহসানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি গ্রেফতার হয়ে জেলজরিমুল করছেন এবং তার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যা মামলার বিচার চলছে।