ঢাকা ০৭:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা Logo মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা Logo দুর্গাপুরে ‎রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন  Logo শীতের গন্ধ, তাপমাত্রা কমছে প্রতিদিন দুই ডিগ্রি ঈশ্বরদীতে দোকানে উঠছে শীতের সোয়েটার-জ্যাকেট, কম্বল Logo পদ্মার চরজুড়ে চলছে ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ Logo নীলফামারীতে চার দফা দাবী বাস্তবায়নে বিসিএস প্রভাষক পরিষদের মানবন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন
ভোলায় আলোচিত নোমানি হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত

ছেলের হাতে নির্মমভাবে খুন হন পিতা আমিনুল হক নোমানী

ভোলার বরেণ্য আলেম, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের জেলা সেক্রেটারি, ভোলা দারুল হাদিস কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ও সদর উপজেলার পরিষদ মসজিদের খতিব মাওলানা আমিনুল হক নোমানী হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। নিজ সন্তানের হাতেই নির্মমভাবে খুন হন পিতা। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মোঃ শরীফুল হক। এ ঘটনা ঘাতক ছেলে রেদোয়ান (১৭) কে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছেলের হাতে বাবার এমন করুন মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো জেলায় একটা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। সবাই বলতে থাকে কিভাবে পারলো নিজ হাতে ছেলে তার বাবাকে হত্যা করতে ? বিষয়টি টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ শরীফুল হক বলেন, ছেলেকে ভাল রাখার জন্য বাবা নোমানীর কড়া শাসনেই রাখতেন। আর এ থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল ছেলে রেদোয়ান। বাবার সাথে রাগ করে সন্তানকে তার তজুমদ্দিনে মামা বাড়িতে পাঠানো হয়। কিন্তু সে পড়ালেখা করতো বাবার মাদ্রাসাতেই। পরিবারে এমন কড়া শাসনের কারণে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে রেদোয়ান। কিন্তু আত্মহত্যা করতে না পারায় বাবাকেই হত্যার পরিকল্পনা করে সে। সেই লক্ষে গত ২ সেপ্টেম্বর দারাজ থেকে একটি ছুরির অর্ডার করেন ছেলে। সেই ছুরি ৫ সেপ্টেম্বর হাতে পেয়ে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে রেদোয়ান। এমন সময় মা জানায় তারা তজুমদ্দিনের নানা বাড়ীতে আসছেন। এ তথ্য পেয়ে ছেলে রেদোয়ান ঠিক করেন যে ৬ তারিখ রাতেই তার বাবাকে হত্যা করবেন। মামা বাড়ী থেকে ওই দিন ঘাতক রেদোয়ান ভোলা শহরের নিজ বাড়ীতে আসেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ তারিখ রাতে এশার নামাজ শেষে বাবা আমিনুল হক নোমানী বাসায় ফিরে কম্পিউটারে কাজ করছিলেন। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়েন ছেলে রেদোয়ান। তখন বাসার ভিতর থেকে বাবা বলেন কে, রেদোয়ান বলে বাবা আমি। ছেলের কণ্ঠ পেয়ে বাবা নোমানী দরজা খুলে দেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই ছেলে রেদোয়ান ছুরি দিয়ে পিতার গায়ে আঘাত করেন। তখন বাবা ছেলেকে বলে আমাকে মারিস না। ছেলেও তখন কিছু সময়ের জন্য নিব্রিত থাকে। কিন্তু সুযোগ বুঝে সে পুনরায় বাবার উপর ছুরির আঘাত চালায়। এক পর্যায়ে বাবা ছেলের ছুরি ধরে ফেলেন, যার ফলশ্রুতিতে পিতা নোমানীর হাত ও ছেলে হাতও কেটে যায়। এক পর্যায়ে ছেলে পিতার শরীরের বিভন্ন অংশে ওই ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাত করতে থাকে। তখন নোমানী চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসার আগেই ছেলে রেদোয়ান বাসার পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।


এসপি আরো জানান, হত্যার ‘কিলিং মিশনে’ রেদেয়ান একাই অংশ নিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাবার কড়া শাসন মানতে না পেরে ক্ষোভে তিনি বাবাকে খুন করেন। এ জন্য ইউটিউবে বিভিন্ন ক্রাইম মুভি দেখে দক্ষতা অর্জন করেন। কিভাবে আঘাত করলে মৃত্যু নিশ্চিত হবে তা শিখে নেন। দুই মাস আগে থেকেই বাবাকে হত্যার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এরপর হত্যার উদ্দেশে ছুরি, কালো শার্ট, টি-শার্ট, কেপ এবং হাতঘড়ি সংগ্রহ করেন। রেদোয়ানের দেয়া তথ্যানুযায়ী হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি বাড়ির পিছনের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও তার ব্যবহৃত মাক্স, কালো শার্ট, টি-শার্ট, ঘড়িসহ অন্যান্য আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ হত্যাকান্ডে ছেলের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সেটির ব্যাপারেও তদন্ত করছে পুলিশ।
শরীফুল হক আরো বলেন, আমরা প্রথমে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় নোমানীকে উদ্ধার করে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনালেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাওলানা আমিনুল হক নোমানী মৃত্যু বরণ করেন। এরপর থেকেই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে সদর থানা পুলিশ ও ডিবির একাধিক টিম কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের স্ত্রী হালিমা বিনতে কামাল বাদী হয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ধারায় ভোলা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৩। দীর্ঘ ৬ দিন তদন্তের পর শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে ঘাতক ছেলে রোদোয়ানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুড়ো জেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা

ভোলায় আলোচিত নোমানি হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত

ছেলের হাতে নির্মমভাবে খুন হন পিতা আমিনুল হক নোমানী

Update Time : ০৭:৩৫:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভোলার বরেণ্য আলেম, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের জেলা সেক্রেটারি, ভোলা দারুল হাদিস কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ও সদর উপজেলার পরিষদ মসজিদের খতিব মাওলানা আমিনুল হক নোমানী হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। নিজ সন্তানের হাতেই নির্মমভাবে খুন হন পিতা। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মোঃ শরীফুল হক। এ ঘটনা ঘাতক ছেলে রেদোয়ান (১৭) কে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছেলের হাতে বাবার এমন করুন মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো জেলায় একটা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। সবাই বলতে থাকে কিভাবে পারলো নিজ হাতে ছেলে তার বাবাকে হত্যা করতে ? বিষয়টি টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ শরীফুল হক বলেন, ছেলেকে ভাল রাখার জন্য বাবা নোমানীর কড়া শাসনেই রাখতেন। আর এ থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল ছেলে রেদোয়ান। বাবার সাথে রাগ করে সন্তানকে তার তজুমদ্দিনে মামা বাড়িতে পাঠানো হয়। কিন্তু সে পড়ালেখা করতো বাবার মাদ্রাসাতেই। পরিবারে এমন কড়া শাসনের কারণে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে রেদোয়ান। কিন্তু আত্মহত্যা করতে না পারায় বাবাকেই হত্যার পরিকল্পনা করে সে। সেই লক্ষে গত ২ সেপ্টেম্বর দারাজ থেকে একটি ছুরির অর্ডার করেন ছেলে। সেই ছুরি ৫ সেপ্টেম্বর হাতে পেয়ে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে রেদোয়ান। এমন সময় মা জানায় তারা তজুমদ্দিনের নানা বাড়ীতে আসছেন। এ তথ্য পেয়ে ছেলে রেদোয়ান ঠিক করেন যে ৬ তারিখ রাতেই তার বাবাকে হত্যা করবেন। মামা বাড়ী থেকে ওই দিন ঘাতক রেদোয়ান ভোলা শহরের নিজ বাড়ীতে আসেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ তারিখ রাতে এশার নামাজ শেষে বাবা আমিনুল হক নোমানী বাসায় ফিরে কম্পিউটারে কাজ করছিলেন। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়েন ছেলে রেদোয়ান। তখন বাসার ভিতর থেকে বাবা বলেন কে, রেদোয়ান বলে বাবা আমি। ছেলের কণ্ঠ পেয়ে বাবা নোমানী দরজা খুলে দেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই ছেলে রেদোয়ান ছুরি দিয়ে পিতার গায়ে আঘাত করেন। তখন বাবা ছেলেকে বলে আমাকে মারিস না। ছেলেও তখন কিছু সময়ের জন্য নিব্রিত থাকে। কিন্তু সুযোগ বুঝে সে পুনরায় বাবার উপর ছুরির আঘাত চালায়। এক পর্যায়ে বাবা ছেলের ছুরি ধরে ফেলেন, যার ফলশ্রুতিতে পিতা নোমানীর হাত ও ছেলে হাতও কেটে যায়। এক পর্যায়ে ছেলে পিতার শরীরের বিভন্ন অংশে ওই ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাত করতে থাকে। তখন নোমানী চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসার আগেই ছেলে রেদোয়ান বাসার পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।


এসপি আরো জানান, হত্যার ‘কিলিং মিশনে’ রেদেয়ান একাই অংশ নিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাবার কড়া শাসন মানতে না পেরে ক্ষোভে তিনি বাবাকে খুন করেন। এ জন্য ইউটিউবে বিভিন্ন ক্রাইম মুভি দেখে দক্ষতা অর্জন করেন। কিভাবে আঘাত করলে মৃত্যু নিশ্চিত হবে তা শিখে নেন। দুই মাস আগে থেকেই বাবাকে হত্যার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এরপর হত্যার উদ্দেশে ছুরি, কালো শার্ট, টি-শার্ট, কেপ এবং হাতঘড়ি সংগ্রহ করেন। রেদোয়ানের দেয়া তথ্যানুযায়ী হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি বাড়ির পিছনের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও তার ব্যবহৃত মাক্স, কালো শার্ট, টি-শার্ট, ঘড়িসহ অন্যান্য আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ হত্যাকান্ডে ছেলের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সেটির ব্যাপারেও তদন্ত করছে পুলিশ।
শরীফুল হক আরো বলেন, আমরা প্রথমে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় নোমানীকে উদ্ধার করে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনালেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাওলানা আমিনুল হক নোমানী মৃত্যু বরণ করেন। এরপর থেকেই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে সদর থানা পুলিশ ও ডিবির একাধিক টিম কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের স্ত্রী হালিমা বিনতে কামাল বাদী হয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ধারায় ভোলা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৩। দীর্ঘ ৬ দিন তদন্তের পর শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে ঘাতক ছেলে রোদোয়ানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুড়ো জেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।