ঢাকা ০৫:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সীমান্তে ৪ কোটি টাকার পণ্যসহ গাড়ি জব্দ করছে বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়ান Logo আত্রাইয়ে ইটভাটা বন্ধের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি প্রদান Logo সাঁথিয়ায় প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ Logo বিজয়নগরে গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রোল ঢেলে আগুন Logo ঢাকা ও আশপাশে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন, সতর্ক পুলিশ-র‍্যাবও Logo ছাত্রদলের প্যানেলে শীর্ষ দুই পদেই বহিরাগত! তৃণমূলে অসন্তোষ Logo মাঠে ময়লার ভাগাড় থাকায় খেলাধুলা বন্ধ পাঁচ বছর; ওয়াসব্লকে ছাগলের খামার! Logo তানোর-গোদাগাড়ীতে প্রার্থী ঘোষণায় সরগরম বিএনপির তৃণমূল Logo বিএনপিতে ফেরায় সংবর্ধিত হলেন কমেট চৌধুরী Logo ঈশ্বরদীতে ক্ষুধায় বাবা মায়ের কবরের কাছে গিয়ে খাবার চাওয়া সাগরের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

আমরা কী চেয়েছিলাম আর কী হলো: রেজা কিবরিয়া

গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার বেইমানি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেছেন, আমরা কী চেয়েছিলাম আর কী হলো।

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছে এই সরকার। এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমরা যে আশা করেছিলাম— দেশ পরিচালনার ব্যাপারে গুণগত মানের একটা পরিবর্তন বা উন্নতি দেখতে পাব— সেটা হয়নি। আমরা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে অনেক বেশি আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনি কয়েকজন এনজিওর লোক এবং কয়েকজন চাটগাঁইয়াকে নিয়ে কী ধরনের সরকার গঠন করেছেন, সেটা তিনি নিজেই ভালো জানেন। আমি এ রকম সরকার আগে দেখিনি। একজন এনজিওওয়ালা দেশ পরিচালনায় খুব দক্ষ হবেন— এরকম কোনো ভরসা নেই। আর যাদের তিনি দিয়েছেন দায়িত্ব, তারা অদক্ষ।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক হলো— তারা অসৎ। এখন যে আইন উপদেষ্টা আছেন, তিনি কি আনিসুল হকের চেয়ে কোনোভাবে ভালো? আমার তো মনে হয় না। তারা একই জাতের লোক, একই কাজ করছে— শুধু এখন করছে বিপ্লবের নামে, ছাত্রদের নামে। ছাত্ররা অনেকটা ঠকেছে। কিছু ছাত্র বুঝতে পারছে তারা একটা বিরাট ভুল করেছে। আবার কিছু ছাত্র সেই দুষ্কৃতকারীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে টাকা বানাচ্ছে। তারা খুশি।’

রেজা কিবরিয়া কোনো ছাত্র উপদেষ্টার নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘যে মানুষের ১ হাজার টাকা হালাল পয়সা উপার্জনের ক্ষমতা ছিল না, সে এখন ৫০ কোটি টাকার ডিল করছে। দেশে-বিদেশে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, সেখানে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। ওকে, টাউট-বাটপার কোটিপতিদের সঙ্গে তার বৈষম্য কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমার মনে হয় না বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্য এটা ছিল। আমরা এখন বিপ্লবের পথ হারিয়ে ফেলেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কী চেয়েছিলাম আর কী হলো, সেটা আগের বক্তারা সুন্দর করে বলেছেন। কিন্তু আমরা যদি হাসিনা সরকারের চেয়ে মাত্র ৫% উন্নতি চাইতাম, হয়ত সেটা পেতাম। ৫% বা ১০% উন্নতমানের সরকার হয়ত হতো। কিন্তু আমি সেটা চাইনি। আমি কখনো ভাবিনি যে শেখ হাসিনার পরে এত নিম্নমানের একটা সরকার ক্ষমতায় আসবে। কখনো ভাবিনি। আমার সবসময় স্বপ্ন ছিল এই দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডের মতো হবে— এটা আমি অস্বাভাবিক কিছু মনে করিনি। কিন্তু এখন আমার কাছে তা অসম্ভব মনে হচ্ছে। এরা যে এক বছর নষ্ট করেছে, এর কৈফিয়ত তারা কাকে দেবে জানি না। তবে তারা এমন কাজ করেছে যে, দেশ থেকে তাদের অনেককে পালাতে হবে।’

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমার কথা হলো— বাংলাদেশে অনেক সরকার হয়েছে, প্রায় ২০০০ জন মানুষ মন্ত্রী হয়েছে ইতিহাসে। একটু চিন্তা করুন, যারা সুনাম নিয়ে মন্ত্রিত্বে ঢুকেছিল, তারা কয়জন একই সুনাম নিয়ে বের হয়েছে? হাতে গোনা কয়েকজন। আমি শুধু বলতে চাই— আপনারা এমন কিছু করবেন না যার জন্য দেশ থেকে পালাতে হবে। কারণ, সামনের সরকার আসলে আপনারা দেখবেন, অনেকেই বর্ডার পার হবে। হয়ত সেটাই হবে তাদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। টাকা-পয়সা বিদেশে পাঠিয়েছে, পরিবারকে বিদেশে পাঠিয়েছে— এখন নিজেরাও বিদেশে যাবে। দেশের প্রতি এদের কোনো আগ্রহ নেই।’

তিনি বলেন, ‘এখন সংস্কারের কথা অনেকে বলেছে। আমি এদের হাতে কোনো সংস্কারে বিশ্বাস করি না। এরা অসৎ, অদক্ষ, অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত। আসিফ নজরুলকে আমি অর্ধশিক্ষিত বলব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড ক্লাশ ল’ ডিগ্রি নিয়ে সে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তদবির করে প্রফেসরশিপ পেয়েছে। সে শিক্ষিত মানুষের কাতারে পড়ে না। এদের হাতে সংস্কার দেওয়া বিরাট ভুল। আমি মানি না। সংস্কার হবে সামনের সরকারের হাতে। কিন্তু এত নিম্নমানের অর্ধশিক্ষিত লোকের হাতে সংস্কার সম্ভব নয়।’

রেজা কিবরিয়া সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এদের হাতে তো সংস্কারের কথা দূরে থাক, নির্বাচনও সম্ভব না। তারা বলছে নির্বাচন হবে— কোন প্রক্রিয়ায় হবে? কোন সরকার ক্ষমতায় থাকবে? এরা থাকবে? এরা তো নিরপেক্ষ নয়, তাদের তো একটা দল আছে। সেই দলকে ক্ষমতায় আনতে সরকার থেকেই তারা এখন কাজ করছে। তাই আমি এদের বিশ্বাস করি না। আমাদের সবার দাবি হলো— একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এটাই আজকের প্রধান সত্য। আমরা যদি সঠিক নেতৃত্ব, যোগ্য মানুষ এবং সৎ চরিত্রের সরকার চাই, তবে সেই সরকার আসবে কেবল নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ জনতা পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, জাতীয় সংস্কার জোটের আহ্বায়ক মেজর (অব) আমিন আহমেদ আফসারী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা একে আশরাফুল হক প্রমুখ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সীমান্তে ৪ কোটি টাকার পণ্যসহ গাড়ি জব্দ করছে বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়ান

আমরা কী চেয়েছিলাম আর কী হলো: রেজা কিবরিয়া

Update Time : ০৮:৪৪:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার বেইমানি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেছেন, আমরা কী চেয়েছিলাম আর কী হলো।

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছে এই সরকার। এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমরা যে আশা করেছিলাম— দেশ পরিচালনার ব্যাপারে গুণগত মানের একটা পরিবর্তন বা উন্নতি দেখতে পাব— সেটা হয়নি। আমরা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে অনেক বেশি আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনি কয়েকজন এনজিওর লোক এবং কয়েকজন চাটগাঁইয়াকে নিয়ে কী ধরনের সরকার গঠন করেছেন, সেটা তিনি নিজেই ভালো জানেন। আমি এ রকম সরকার আগে দেখিনি। একজন এনজিওওয়ালা দেশ পরিচালনায় খুব দক্ষ হবেন— এরকম কোনো ভরসা নেই। আর যাদের তিনি দিয়েছেন দায়িত্ব, তারা অদক্ষ।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক হলো— তারা অসৎ। এখন যে আইন উপদেষ্টা আছেন, তিনি কি আনিসুল হকের চেয়ে কোনোভাবে ভালো? আমার তো মনে হয় না। তারা একই জাতের লোক, একই কাজ করছে— শুধু এখন করছে বিপ্লবের নামে, ছাত্রদের নামে। ছাত্ররা অনেকটা ঠকেছে। কিছু ছাত্র বুঝতে পারছে তারা একটা বিরাট ভুল করেছে। আবার কিছু ছাত্র সেই দুষ্কৃতকারীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে টাকা বানাচ্ছে। তারা খুশি।’

রেজা কিবরিয়া কোনো ছাত্র উপদেষ্টার নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘যে মানুষের ১ হাজার টাকা হালাল পয়সা উপার্জনের ক্ষমতা ছিল না, সে এখন ৫০ কোটি টাকার ডিল করছে। দেশে-বিদেশে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, সেখানে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। ওকে, টাউট-বাটপার কোটিপতিদের সঙ্গে তার বৈষম্য কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমার মনে হয় না বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্য এটা ছিল। আমরা এখন বিপ্লবের পথ হারিয়ে ফেলেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কী চেয়েছিলাম আর কী হলো, সেটা আগের বক্তারা সুন্দর করে বলেছেন। কিন্তু আমরা যদি হাসিনা সরকারের চেয়ে মাত্র ৫% উন্নতি চাইতাম, হয়ত সেটা পেতাম। ৫% বা ১০% উন্নতমানের সরকার হয়ত হতো। কিন্তু আমি সেটা চাইনি। আমি কখনো ভাবিনি যে শেখ হাসিনার পরে এত নিম্নমানের একটা সরকার ক্ষমতায় আসবে। কখনো ভাবিনি। আমার সবসময় স্বপ্ন ছিল এই দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডের মতো হবে— এটা আমি অস্বাভাবিক কিছু মনে করিনি। কিন্তু এখন আমার কাছে তা অসম্ভব মনে হচ্ছে। এরা যে এক বছর নষ্ট করেছে, এর কৈফিয়ত তারা কাকে দেবে জানি না। তবে তারা এমন কাজ করেছে যে, দেশ থেকে তাদের অনেককে পালাতে হবে।’

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমার কথা হলো— বাংলাদেশে অনেক সরকার হয়েছে, প্রায় ২০০০ জন মানুষ মন্ত্রী হয়েছে ইতিহাসে। একটু চিন্তা করুন, যারা সুনাম নিয়ে মন্ত্রিত্বে ঢুকেছিল, তারা কয়জন একই সুনাম নিয়ে বের হয়েছে? হাতে গোনা কয়েকজন। আমি শুধু বলতে চাই— আপনারা এমন কিছু করবেন না যার জন্য দেশ থেকে পালাতে হবে। কারণ, সামনের সরকার আসলে আপনারা দেখবেন, অনেকেই বর্ডার পার হবে। হয়ত সেটাই হবে তাদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। টাকা-পয়সা বিদেশে পাঠিয়েছে, পরিবারকে বিদেশে পাঠিয়েছে— এখন নিজেরাও বিদেশে যাবে। দেশের প্রতি এদের কোনো আগ্রহ নেই।’

তিনি বলেন, ‘এখন সংস্কারের কথা অনেকে বলেছে। আমি এদের হাতে কোনো সংস্কারে বিশ্বাস করি না। এরা অসৎ, অদক্ষ, অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত। আসিফ নজরুলকে আমি অর্ধশিক্ষিত বলব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড ক্লাশ ল’ ডিগ্রি নিয়ে সে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তদবির করে প্রফেসরশিপ পেয়েছে। সে শিক্ষিত মানুষের কাতারে পড়ে না। এদের হাতে সংস্কার দেওয়া বিরাট ভুল। আমি মানি না। সংস্কার হবে সামনের সরকারের হাতে। কিন্তু এত নিম্নমানের অর্ধশিক্ষিত লোকের হাতে সংস্কার সম্ভব নয়।’

রেজা কিবরিয়া সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এদের হাতে তো সংস্কারের কথা দূরে থাক, নির্বাচনও সম্ভব না। তারা বলছে নির্বাচন হবে— কোন প্রক্রিয়ায় হবে? কোন সরকার ক্ষমতায় থাকবে? এরা থাকবে? এরা তো নিরপেক্ষ নয়, তাদের তো একটা দল আছে। সেই দলকে ক্ষমতায় আনতে সরকার থেকেই তারা এখন কাজ করছে। তাই আমি এদের বিশ্বাস করি না। আমাদের সবার দাবি হলো— একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এটাই আজকের প্রধান সত্য। আমরা যদি সঠিক নেতৃত্ব, যোগ্য মানুষ এবং সৎ চরিত্রের সরকার চাই, তবে সেই সরকার আসবে কেবল নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ জনতা পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, জাতীয় সংস্কার জোটের আহ্বায়ক মেজর (অব) আমিন আহমেদ আফসারী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা একে আশরাফুল হক প্রমুখ।