ঢাকা ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায় : রাষ্ট্রদূত

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চায়।

তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। তবে এখন সে সম্পর্ক জোরদার করার কাজ চলছে।’

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন-ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’-এ এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে প্রশ্নটি করা হয়।

রাষ্ট্রদূত জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামাীর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল চীন সফর করেছে এবং সেখানে শাসনব্যবস্থা সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিয়েছে।

ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন যাই হোক না কেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। আমরা টেকসই উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করে যাব।’

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চীনের অবস্থান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নির্ধারণ বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের নিজস্ব বিষয়।  একজন বিদেশি কূটনীতিক হিসেবে এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় সরকার গঠন করা হবে কি না, সেটিও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেইজিংয়ের হস্তক্ষেপ না করার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনকার্যকে চীন সমর্থন করে এবং বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও সফল জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানায়। একইসঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় পরিস্থিতির উপযোগী একটি উন্নয়ন পথ অনুসরণের প্রচেষ্টায়ও চীন সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় চীন গভীরভাবে মর্মাহত।’

বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে চীন সহায়তা দিবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার চাইলে চীন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক প্রসঙ্গে ইয়াও ওয়েন জানান, সম্প্রতি চীনের কুনমিং শহরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ১২টি নির্দিষ্ট খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে তিন দেশ।

তিনি বলেন, ‘এটা খুবই স্বাভাবিক। চীন বহু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে চীন ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও দৃঢ় করতে এবং বাস্তবসম্মত ফলাফল অর্জন করতে চায়।’

রাষ্ট্রদূত জানান, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ দেশের উন্নয়ন, সার্বভৌমত্ব ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতায় আগের মতোই চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে চীন ও বাংলাদেশ উভয় দেশই একদিকে ঐতিহাসিক সুযোগ, অন্যদিকে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে। তারপরও আমাদের সম্পর্কের মূল ভিত্তি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতার বিষয় এখনো অটুট রয়েছে।’

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাস, যা আরও শক্তিশালী হচ্ছে। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘দুই নেতা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে কৌশলগত নির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।’

তিনি জানান, সিপিসি পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের মধ্যে বৈঠকেও পারস্পরিক স্বার্থ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা গড়ে তোলার ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে।’

অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশ থেকে সব শুল্কযোগ্য পণ্যের ওপর ২০২৮ সাল পর্যন্ত শূন্য শুল্ক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে এবং দুই দেশের উন্নয়ন কৌশল সমন্বয়ের কাজ গভীরতর হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩ দশমিক ৭ গুণ বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকারী হয়ে উঠেছে।’

বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে চীনের আগ্রহের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের আম চীনা বাজারে প্রবেশ করেছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন মাইলফলক।’

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে বলেও জানান ইয়াও ওয়েন। এর মধ্যে রয়েছে- ঢাকায় ঐতিহাসিক ড্রোন শো, চিকিৎসা সহায়তা, গণমাধ্যম কর্মীদের সফর ও শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন সুযোগ বাড়ানো।

বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে ৬৮টি ফ্লাইটে ১৩ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করছেন এবং প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশ ও চীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ইয়াও ওয়েন। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অগ্রগতির প্রশংসা করেন তিনি।

তিনি একচেটিয়া বাণিজ্যনীতি ও সুরক্ষাবাদী মনোভাবের সমালোচনা করে বলেন, ‘বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এমন নীতি গ্রহণ করেছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)’র নিয়ম এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাশে আছে। একতরফা চাপে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সংহতি ও সমন্বয় জোরদার করতে প্রস্তুত এবং বৈশ্বিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষায় একযোগে কাজ করতে চায়।’

অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন স্বাগত বক্তব্য দেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায় : রাষ্ট্রদূত

Update Time : ০৫:৪৬:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চায়।

তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। তবে এখন সে সম্পর্ক জোরদার করার কাজ চলছে।’

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন-ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’-এ এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে প্রশ্নটি করা হয়।

রাষ্ট্রদূত জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামাীর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল চীন সফর করেছে এবং সেখানে শাসনব্যবস্থা সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিয়েছে।

ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন যাই হোক না কেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। আমরা টেকসই উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করে যাব।’

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চীনের অবস্থান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নির্ধারণ বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের নিজস্ব বিষয়।  একজন বিদেশি কূটনীতিক হিসেবে এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় সরকার গঠন করা হবে কি না, সেটিও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেইজিংয়ের হস্তক্ষেপ না করার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনকার্যকে চীন সমর্থন করে এবং বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও সফল জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানায়। একইসঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় পরিস্থিতির উপযোগী একটি উন্নয়ন পথ অনুসরণের প্রচেষ্টায়ও চীন সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় চীন গভীরভাবে মর্মাহত।’

বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে চীন সহায়তা দিবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার চাইলে চীন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক প্রসঙ্গে ইয়াও ওয়েন জানান, সম্প্রতি চীনের কুনমিং শহরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ১২টি নির্দিষ্ট খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে তিন দেশ।

তিনি বলেন, ‘এটা খুবই স্বাভাবিক। চীন বহু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে চীন ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও দৃঢ় করতে এবং বাস্তবসম্মত ফলাফল অর্জন করতে চায়।’

রাষ্ট্রদূত জানান, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ দেশের উন্নয়ন, সার্বভৌমত্ব ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতায় আগের মতোই চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে চীন ও বাংলাদেশ উভয় দেশই একদিকে ঐতিহাসিক সুযোগ, অন্যদিকে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে। তারপরও আমাদের সম্পর্কের মূল ভিত্তি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতার বিষয় এখনো অটুট রয়েছে।’

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাস, যা আরও শক্তিশালী হচ্ছে। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘দুই নেতা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে কৌশলগত নির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।’

তিনি জানান, সিপিসি পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের মধ্যে বৈঠকেও পারস্পরিক স্বার্থ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা গড়ে তোলার ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে।’

অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশ থেকে সব শুল্কযোগ্য পণ্যের ওপর ২০২৮ সাল পর্যন্ত শূন্য শুল্ক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে এবং দুই দেশের উন্নয়ন কৌশল সমন্বয়ের কাজ গভীরতর হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩ দশমিক ৭ গুণ বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকারী হয়ে উঠেছে।’

বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে চীনের আগ্রহের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের আম চীনা বাজারে প্রবেশ করেছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন মাইলফলক।’

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে বলেও জানান ইয়াও ওয়েন। এর মধ্যে রয়েছে- ঢাকায় ঐতিহাসিক ড্রোন শো, চিকিৎসা সহায়তা, গণমাধ্যম কর্মীদের সফর ও শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন সুযোগ বাড়ানো।

বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে ৬৮টি ফ্লাইটে ১৩ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করছেন এবং প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশ ও চীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ইয়াও ওয়েন। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অগ্রগতির প্রশংসা করেন তিনি।

তিনি একচেটিয়া বাণিজ্যনীতি ও সুরক্ষাবাদী মনোভাবের সমালোচনা করে বলেন, ‘বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এমন নীতি গ্রহণ করেছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)’র নিয়ম এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাশে আছে। একতরফা চাপে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সংহতি ও সমন্বয় জোরদার করতে প্রস্তুত এবং বৈশ্বিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষায় একযোগে কাজ করতে চায়।’

অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন স্বাগত বক্তব্য দেন।