ঢাকা ০৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা Logo মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা Logo দুর্গাপুরে ‎রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন 
আমদানীকৃত হার্ব অল কক্স এর রি-প্যাকিং ও ডোজ জালিয়াতি

স্কয়ার ফার্মার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

সুইজারল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত ব্রয়লার মুরগীর খাদ্যে মিশ্রণের জন্য কক্সিডিউস্টাট হার্ব অল কক্স রি-প্যাকিং ও ডোজ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে স্কয়ার ফার্মার বিরুদ্ধে। তাদের এ অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূত কাজের ফলে খামারীরা কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সন্মুখীন হয়ে ন্যায়বিচারের আশায় প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছেন।

গত ৪ জুন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন অর্গানিক চিকেন এর স্বত্বাধিকারী ইমরুল হাসান। তাঁর এই অভিযোগের সূত্রে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর ব্যাখ্যা চেয়ে ১৯ জুন চিঠিও ইস্যু করেছে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর। সেই চিঠির জবাবে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড তাদের ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে এমনটি আর হবেনা বলে জানিয়েছেন বলে জানায় প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাক্তার মোঃ বয়জার রহমান।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘লাইফ সার্কেল নিউট্রিশন’ এর ন্যাচারাল কক্সিডিউস্টাট ‘হার্ব-অল কক্স’ বাংলাদেশে দীর্ঘদিন যাবত আমদানী করে বিপনন ও বাজারজাত করে আসছে। এই ন্যাচারাল কক্সিডিউস্টাট এর প্রধান কাজ হলো, মুরগির শরীরে প্রয়োজনীয় ইমিউনিটি তৈরি করার মাধ্যমে কক্সিডিউসিস রোগ প্রতিরোধ করা এবং এন্টিবায়োটিকমুক্ত মুরগী উৎপাদন করা। সাধারনত কেমিক্যাল ও আইনোফর কক্সিডিউস্টাটস এর ক্ষেত্রে কক্সিডিউসিস রেজিস্টান্ট এর জন্য শ্যাটল অথবা রোটেশন প্রোগ্রাম ফলো করা হয়। কিন্তু ‘লাইফ সার্কেল নিউট্রিশন’ দাবী করে যে, তাদের এই ন্যাচারাল কক্সিডিউস্টাট ‘হার্ব-অল কক্স’ ব্যবহার করলে শ্যাটল অথবা রোটেশন প্রোগ্রাম ফলো করার দরকার হয়না এবং বাজারে প্রাপ্ত অন্যান্য কক্সিডিউস্টাটসকে ১০০% রিপ্লেস করতে পারে কোনরূপ নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট ছাড়া।

‘লাইফ সার্কেল নিউট্রিশন’ তাদের এই ন্যাচারাল কক্সিডিউস্টাট ‘হার্ব-অল কক্স’ এর ডোজ (মাত্রা) ব্রয়লার মুরগির জন্য প্রথম ১০-১৪ দিন বয়স পর্যন্ত প্রতি টনে ০১ কেজি (১০০০ গ্রাম) এবং ১৫ দিন বয়স থেকে প্রতি টনে ৫০০ গ্রাম নিয়মিতভাবে ব্যবহার বিধি ঘোষনা করে সারা পৃথিবীতে বিক্রি করে আসছে। মুরগি বাচ্চা অবস্থায় কম খাবার গ্রহন করার কারনে প্রথম ১৪ দিন পর্যন্ত ডোজ দ্বিগুন করা হয়েছে যেন মুরগীর বাচ্চার শরীরে পর্যাপ্ত কক্সিডিউসিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় এবং কক্সিডিউসিস রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে পারে।

কিন্তু স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড উৎপাদক ‘লাইফ সার্কেল নিউট্রিশন’ এর ঘোষণাকৃত ডোজ গোপন করে বাংলাদেশে প্রতি টনে ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ডোজ ঘোষনা করে বিক্রি করে আসছিল। এর ফলে ব্রয়লার খামারী ইমরুল হাসান স্কয়ারের ঘোষণাকৃত ডোজ অনুসারে হার্ব-অল কক্স ব্যবহার করে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। স্কয়ার এই হার্বাল পণ্যটি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আমদানি নীতিমালার ক্যাটাগরী-২ এর আওতায় স্থানীয়ভাবে রি-প্যাকিং না করার শর্তে ২০ কেজির প্যাকেজিং এ আমদানী করে স্থানীয়ভাবে ৫০০ গ্রামের প্লাস্টিক কন্টেইনারে রি-প্যাকিং করে বাজারজাত ও বিক্রি করে আসছিল। ক্ষতিগ্রস্ত খামারীর অভিযোগের ভিত্তিতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ২৩ মে ২০২৫ তারিখে তাদের ওয়েবসাইটে আগের ঘোষনাকৃত ডোজ পরিবর্তন করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ১ জুন ২০২৫ তারিখেও স্থানীয়ভাবে রি-প্যাক করা ৫০০ গ্রামের প্লাস্টিক কন্টেইনারে পুর্বের ডোজ পাওয়া যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ‘স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’কে অন্ধ বিশ্বাস করার ফল তারা ভোগ করছেন। স্কয়ারের ঘোষনাকৃত ৫০% ডোজ ফলো করে খামারে কক্সিডিউসিস রোগ প্রতিরোধ করা তো সম্ভব হয়ইনি বরং দিনদিন কক্সিডিউসিস রোগের কারনে মুরগির মৃত্যুর হার অনেক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। সেইসাথে সেকেন্ডারী ইনফেকশনও ছড়িয়ে পড়েছে। উনি আরও জানান এই ব্যাপারে স্কয়ারের সেলস টিমকে বার বার জানানোর পরেও স্কয়ার ফার্মা প্রতিবার ৫০০ গ্রাম ডোজই দিতে বলেছে। কিন্তু এ বিষয়ে এর বেশি কোন পদক্ষেপ স্কয়ার কর্তৃপক্ষ নেয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আমদানির অনুমতির দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক ড. শাহিনুর ইসলাম বলেন, “স্কয়ার কোনভাবেই আমদানীকৃত কক্সিডিউস্টাটের ডোজ জালিয়াতি ও রি-প্যাকিং করতে পারে না। এমনকি স্কয়ার যদি স্থানীয়ভাবে ট্রায়াল দিয়ে অন্য ডোজে ভাল রেজাল্ট পেয়ে থাকে, তবুও ডোজ পরিবর্তন করতে পারবে না। অর্গানিক চিকেন এর অভিযোগের বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়ে আমরা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কাছে শো-কোজ চিঠি দিয়েছি এবং তারা তার উত্তরও দিয়েছেন। এবং এরপরে আমরা খামারী ও স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালসের প্রতিনিধিদের নিয়ে গত ১৩ই জুলাই অধিদপ্তরে মিটিং করেছি। স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডকে আমরা অতি দ্রুত বিষয়টি সমাধানের জন্য বলেছি। তারা বিষয়টি দ্রুতই সমাধান করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন”। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আমদানি নীতিমালার ক্যাটাগরি-২ এর আওতায় আমদানিকৃত পণ্য রি-প্যাকিং করে স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড যে অপরাধ করেছে তার বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কি পদক্ষেপ নিবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। অবশ্যই অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে আমাদের অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাক্তার মোঃ বয়জার রহমান ভালো বলতে পারবেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ বয়জার রহমান এ বিষয়ে দৈনিক বার্তাকে বলেন, “স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের শো-কজের জবাব দিয়েছেন। আইনগত কারণে আমি সেই চিঠির কপি গণমাধ্যমে দিতে পারছিনা। তবে তারা ভবিষ্যতে এমন ভুল আর করবে না বলে আমাদের জানিয়েছেন। এমনকি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমি স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডকে ঐ খামারীর সাথে আলোচনা করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাধানের জন্য বলেছি। ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি লিখিত দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা তাদেরকে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে বলেছি”।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ভবনে ক্ষতিগ্রস্ত খামারী ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর প্রতিনিধি দলের ১৩ জুলাই এর বৈঠকে উপস্থিত প্রতিষ্ঠানের এগ্রোভেটের জিএম জয়ন্ত দত্ত গুপ্তকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে ডোজ জালিয়াতি ও আমদানি নীতিমালা আইন লঙ্ঘন এবং এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত খামারির বিষয়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর গৃহীত পদক্ষেপ এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক বার্তাকে বলেন, “আপনারা সরেজমিনে ঐ খামারে গিয়ে দেখুন যে তিনি ঠিকমতো খামার পরিচালনা করছেন কিনা? তিনি কোন নিবন্ধিত পশু চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী মুরগির বাচ্চাকে খাদ্য প্রদান করছেন কিনা? এবং তার প্রতিষ্ঠানের কোন বৈধ লাইসেন্স আছে কিনা? সেগুলো যাচাই করে আমার কাছে আসুন। অভিযোগকারী খামারি নিজের কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন আমাদের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন”।

স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আমদানি নীতিমালার ক্যাটাগরি-২ এর আওতায় আমদানিকৃত পণ্যের রি-প্যাকিং ও মাদার প্রতিষ্ঠানের ঘোষণাকৃত ডোজ গোপন করে যে অপরাধ করেছেন এবং এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের শো-কজের উত্তরে কি জানিয়েছেন তা সুনির্দিষ্ট করে জানতে চাইলে, তিনি “আমি ব্যস্ত আছি। আমার সহকারী আপনার সাথে যোগাযোগ করবে” জানিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধিত ভেটেরিনারী চিকিৎসক জনাব ডাঃ মাসুদুল ইসলাম দৈনিক বার্তাকে (নিবন্ধন নং – ৪৭১৩) বলেন, “জিরো এন্টিবায়োটিক (নো এন্টিবায়োটিক এভার) খামারে কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের নিয়ম নেই। এমনকি মুরগী কোন ধরনের রোগে আক্রান্ত হলেও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। এই জন্য রোগ প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। আমি এ ধরনের খামারের সাথে অনেকদিন যাবত জড়িত এবং অর্গানিক চিকেন খামারটির পরিচালন পদ্ধতি অনেক উন্নত এবং প্রতিটি ধাপ নিয়ম মেনে পরিচালনা করা হয়। একটি কক্সিডিউস্টাটের ডোজ ভিত্তিক কার্যক্ষমতা শুধুমাত্র ম্যানুফাকচারার বলতে পারবে। স্কয়ার এতদিন ডোজ গোপন করার মত যে অন্যায় কাজটি করেছে তা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়”। অর্গানিক চিকেন খামারের মুরগী কি কক্সিডিউসিস রোগের কারনেই মারা গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্গানিক চিকেন খামারটি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে হেলথ ট্রাকিং সিস্টেম এর গাইডলাইন অনুসারে কক্সিডিউসিস এর স্কোরিং করে থাকে। তিনি খামারের গত দেড় বছরের স্কোরিং শিট দেখিয়ে বলেন, “এই স্কোরিং শিটই বলে দিচ্ছে মুরগির কক্সিডিউসিস হয়েছিল এবং কক্সিডিউসিস রোগের কারনেই পরে অন্যান্য সেকেন্ডারী ইনফেকশনে মুরগী মারা গেছে। এবং এটা স্কয়ারের মিথ্যা ডোজের কারনেই হয়েছিল।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বিষয়ক অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ফ্রি-রেঞ্জের জন্য বাংলাদেশে ব্রয়লার বাচ্চার উপযুক্ত ব্রিড পাওয়া যায় না এটা ভুল এবং এক ধরনের অজ্ঞতা। হাবার্ট ইপি ব্রিড, ফ্রি রেঞ্জ ও কনভেনশনাল উভয় ফার্মিং এর জন্য তৈরি করা। যে কেউ গুগুল সার্চ করলেই তা দেখতে পাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত খামারীর জিরো এন্ট্রিবায়োটিক পদ্ধতিতে ফার্মিং করার জন্য অনুমতি আছে কিনা বা অনুমতি প্রয়োজন আছে কিনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ ধরনের কোন অনুমতির কর্তৃপক্ষ আছে বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশ সরকার মুরগীর ফিডে কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন যাতে করে মুরগীর শরীরে আন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি না হয়। এখন কোন খামারি যদি কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক, এমনকি পানি বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমেও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করে মুরগী পালন করে সফল হন সেজন্য ওই খামারীকে সরকারীভাবে পুরস্কৃত করা উচিত। যাতে করে অন্যান্য খামারিরাও উৎসাহিত হয়। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, আমেরিকার মত দেশে প্রায় ৪০% থেকে ৫০% ব্রয়লার মুরগির খামার এখন জিরো এন্টিবায়োটিক পদ্ধতিতে পরিচালনা হচ্ছে এবং এর জন্য বিস্তারিত গাইডলাইনও রয়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড এখন যা বলছে তা গ্রহণযোগ্য নয। কারন তারা ডোজ গোপন করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে”। রি-প্যাকিং এর বিষয়ে তিনি বলেন, এটা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর ভালো বলতে পারবে। তবে রি-প্যাকিং করলে পণ্যে ভেজাল মেশানোর সুযোগ থাকে। আমি বলছি না স্কয়ার ভেজাল বা ক্যারিয়ার যোগ করেছে। কিন্তু সুযোগ থাকে।
প্রতিবার মুরগীতে কক্সিডিউসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরেও কেন এই কক্সিডিউস্টাট ব্যবহার করছিলেন এবং ডোজে পরিবর্তন না করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট পশু পুষ্টিবিদ চয়ন কুমার বর্ম (নিবন্ধন নং- ২৮৯৭৩) বলেন, “প্রোডাক্ট হিসেবে ‘হার্ব-অল কক্স’ কক্সিডিউস্টাটের কোন সমস্যা নেই। এটা খুবই ভালো ও কার্যকর প্রোডাক্ট। সমস্যা হচ্ছে এর ডোজ পরিবর্তন করা।এন্টিবায়োটিক ফ্রি মুরগী পালনের জন্য এর বিকল্প সমাধান আমরা পাচ্ছিলাম না। নিউট্রিশনিস্ট হিসেবে আমাদের ম্যানুফাকচ্যারার এর ডোজের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। স্কয়ারকে বার বার ডোজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছেলো। কিন্তু তারা প্রতিবারই ৫০% ডোজই কনফার্ম করেছেন। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিনিধিরা প্রাণীসম্পদ অফিসে অনুষ্ঠিত গত বৈঠকে বারবার ব্রিডার ফার্মের অভিজ্ঞতা বলছিলেন যে সেখানে কোন সমস্যা হয়নি। তারা হয়ত খেয়াল করেননি ১৫ দিন বয়সের পরের ডোজ এমনিতেই ৫০০ গ্রাম। কিন্তু ব্রয়লার বাচ্চার ডোজ ০১ কেজি। এটা তারা গোপন করেছেন। ৩০০ গ্রামের কথা কোথাও নেই। এটা স্কয়ারের মনগড়া ডোজ। আসলে এই প্রোডাক্টের ২০ কেজির প্যাকেটে কোন ডোজ লেখা নেই। যা অন্যান্য আমদানিকৃত প্রোডাক্টে থাকে। আমার মনে হয় স্কয়ার এই সুযোগটাই নিয়েছে”।

অভিযোগকারী খামারী প্রকৌশলী ইমরুল হাসান দৈনিক বার্তাকে অত্যন্ত হতাশার সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর মত কম্পানী এই কাজ করতে পারে এটা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারিনা। স্কয়ারকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতাম। কোন ডাক্তার আমাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য অন্য ফার্মার ওষুধ প্রেসক্রাইব করলেও আমি নিজে ফার্মেসি থেকে স্কয়ারের ওষুধ কিনতাম। একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই বাংলাদেশে জিরো এন্টিবায়োটিক পোল্ট্রি ফার্মিং শুরু করেছিলাম। কিন্তু শুধুমাত্র স্কয়ারের এই অনৈতিক ডোজ জালিয়াতির জন্য এই উদ্যোগ এখন হুমকির মুখে। একে তো ডোজ গোপন করে বিক্রি করেছে উপরন্ত বার বার রিপোর্ট করার পরেও আমাদের মিস-গাইড করেছে। কমপক্ষে ৭ বার মেসেজ দিয়েছি। ফোনে যে কতবার বলেছি তা আর কি বলবো। এখন স্কয়ার নিজেদের অপরাধ আড়াল করার জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন অবান্তর প্রশ্নের মুখে ফেলছে। এমনকি তাদের কর্মচারীরাও সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ও ব্যক্তিগত আক্রমন করছে। এমনটা কাদের ইন্ধনে হয়েছে তা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্স পড়া লাগে না। তারা যে অন্যায় করেছেন তা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর দ্বারা প্রমানিত। আমি এর সঠিক বিচার চাই। মানুষ বা প্রানী কারো জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার স্কয়ারকে দেয়া হয়নি”।

শুধু আমদানিকৃত পণ্যের রি প্যাকিং বা ডোজ গোপন করা নয়, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বিল জালিয়াতি করেও সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এমন কিছু বেনামী বিলের কপিও এখন দৈনিক বার্তার হাতে রয়েছে। এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান সাপেক্ষে বিস্তারিত পরবর্তীতে দৈনিক বার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।

স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী ও পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তারা কল রিসিভ করেননি। উভয়ের মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠালে পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী দেশের বাইরে আছেন এবং প্রতিষ্ঠানের ফার্মাসিটিক্যালস এর দায়িত্বে নেই বলে লিখিত বার্তা পাঠান। পরিচালক হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠানের এই অপরাধের দায় এড়াতে পারেন কিনা জানতে চাইলে আর কোন উত্তর দেননি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী খুদেবার্তার উত্তরও দেননি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সুফিয়ানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক বার্তাকে বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি দ্রুতই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবো”।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত

আমদানীকৃত হার্ব অল কক্স এর রি-প্যাকিং ও ডোজ জালিয়াতি

স্কয়ার ফার্মার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

Update Time : ০১:৪৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

সুইজারল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত ব্রয়লার মুরগীর খাদ্যে মিশ্রণের জন্য কক্সিডিউস্টাট হার্ব অল কক্স রি-প্যাকিং ও ডোজ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে স্কয়ার ফার্মার বিরুদ্ধে। তাদের এ অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূত কাজের ফলে খামারীরা কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সন্মুখীন হয়ে ন্যায়বিচারের আশায় প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছেন।

গত ৪ জুন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন অর্গানিক চিকেন এর স্বত্বাধিকারী ইমরুল হাসান। তাঁর এই অভিযোগের সূত্রে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর ব্যাখ্যা চেয়ে ১৯ জুন চিঠিও ইস্যু করেছে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর। সেই চিঠির জবাবে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড তাদের ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে এমনটি আর হবেনা বলে জানিয়েছেন বলে জানায় প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাক্তার মোঃ বয়জার রহমান।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘লাইফ সার্কেল নিউট্রিশন’ এর ন্যাচারাল কক্সিডিউস্টাট ‘হার্ব-অল কক্স’ বাংলাদেশে দীর্ঘদিন যাবত আমদানী করে বিপনন ও বাজারজাত করে আসছে। এই ন্যাচারাল কক্সিডিউস্টাট এর প্রধান কাজ হলো, মুরগির শরীরে প্রয়োজনীয় ইমিউনিটি তৈরি করার মাধ্যমে কক্সিডিউসিস রোগ প্রতিরোধ করা এবং এন্টিবায়োটিকমুক্ত মুরগী উৎপাদন করা। সাধারনত কেমিক্যাল ও আইনোফর কক্সিডিউস্টাটস এর ক্ষেত্রে কক্সিডিউসিস রেজিস্টান্ট এর জন্য শ্যাটল অথবা রোটেশন প্রোগ্রাম ফলো করা হয়। কিন্তু ‘লাইফ সার্কেল নিউট্রিশন’ দাবী করে যে, তাদের এই ন্যাচারাল কক্সিডিউস্টাট ‘হার্ব-অল কক্স’ ব্যবহার করলে শ্যাটল অথবা রোটেশন প্রোগ্রাম ফলো করার দরকার হয়না এবং বাজারে প্রাপ্ত অন্যান্য কক্সিডিউস্টাটসকে ১০০% রিপ্লেস করতে পারে কোনরূপ নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট ছাড়া।

‘লাইফ সার্কেল নিউট্রিশন’ তাদের এই ন্যাচারাল কক্সিডিউস্টাট ‘হার্ব-অল কক্স’ এর ডোজ (মাত্রা) ব্রয়লার মুরগির জন্য প্রথম ১০-১৪ দিন বয়স পর্যন্ত প্রতি টনে ০১ কেজি (১০০০ গ্রাম) এবং ১৫ দিন বয়স থেকে প্রতি টনে ৫০০ গ্রাম নিয়মিতভাবে ব্যবহার বিধি ঘোষনা করে সারা পৃথিবীতে বিক্রি করে আসছে। মুরগি বাচ্চা অবস্থায় কম খাবার গ্রহন করার কারনে প্রথম ১৪ দিন পর্যন্ত ডোজ দ্বিগুন করা হয়েছে যেন মুরগীর বাচ্চার শরীরে পর্যাপ্ত কক্সিডিউসিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় এবং কক্সিডিউসিস রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে পারে।

কিন্তু স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড উৎপাদক ‘লাইফ সার্কেল নিউট্রিশন’ এর ঘোষণাকৃত ডোজ গোপন করে বাংলাদেশে প্রতি টনে ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ডোজ ঘোষনা করে বিক্রি করে আসছিল। এর ফলে ব্রয়লার খামারী ইমরুল হাসান স্কয়ারের ঘোষণাকৃত ডোজ অনুসারে হার্ব-অল কক্স ব্যবহার করে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। স্কয়ার এই হার্বাল পণ্যটি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আমদানি নীতিমালার ক্যাটাগরী-২ এর আওতায় স্থানীয়ভাবে রি-প্যাকিং না করার শর্তে ২০ কেজির প্যাকেজিং এ আমদানী করে স্থানীয়ভাবে ৫০০ গ্রামের প্লাস্টিক কন্টেইনারে রি-প্যাকিং করে বাজারজাত ও বিক্রি করে আসছিল। ক্ষতিগ্রস্ত খামারীর অভিযোগের ভিত্তিতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ২৩ মে ২০২৫ তারিখে তাদের ওয়েবসাইটে আগের ঘোষনাকৃত ডোজ পরিবর্তন করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ১ জুন ২০২৫ তারিখেও স্থানীয়ভাবে রি-প্যাক করা ৫০০ গ্রামের প্লাস্টিক কন্টেইনারে পুর্বের ডোজ পাওয়া যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ‘স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’কে অন্ধ বিশ্বাস করার ফল তারা ভোগ করছেন। স্কয়ারের ঘোষনাকৃত ৫০% ডোজ ফলো করে খামারে কক্সিডিউসিস রোগ প্রতিরোধ করা তো সম্ভব হয়ইনি বরং দিনদিন কক্সিডিউসিস রোগের কারনে মুরগির মৃত্যুর হার অনেক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। সেইসাথে সেকেন্ডারী ইনফেকশনও ছড়িয়ে পড়েছে। উনি আরও জানান এই ব্যাপারে স্কয়ারের সেলস টিমকে বার বার জানানোর পরেও স্কয়ার ফার্মা প্রতিবার ৫০০ গ্রাম ডোজই দিতে বলেছে। কিন্তু এ বিষয়ে এর বেশি কোন পদক্ষেপ স্কয়ার কর্তৃপক্ষ নেয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আমদানির অনুমতির দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক ড. শাহিনুর ইসলাম বলেন, “স্কয়ার কোনভাবেই আমদানীকৃত কক্সিডিউস্টাটের ডোজ জালিয়াতি ও রি-প্যাকিং করতে পারে না। এমনকি স্কয়ার যদি স্থানীয়ভাবে ট্রায়াল দিয়ে অন্য ডোজে ভাল রেজাল্ট পেয়ে থাকে, তবুও ডোজ পরিবর্তন করতে পারবে না। অর্গানিক চিকেন এর অভিযোগের বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়ে আমরা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কাছে শো-কোজ চিঠি দিয়েছি এবং তারা তার উত্তরও দিয়েছেন। এবং এরপরে আমরা খামারী ও স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালসের প্রতিনিধিদের নিয়ে গত ১৩ই জুলাই অধিদপ্তরে মিটিং করেছি। স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডকে আমরা অতি দ্রুত বিষয়টি সমাধানের জন্য বলেছি। তারা বিষয়টি দ্রুতই সমাধান করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন”। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আমদানি নীতিমালার ক্যাটাগরি-২ এর আওতায় আমদানিকৃত পণ্য রি-প্যাকিং করে স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড যে অপরাধ করেছে তার বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কি পদক্ষেপ নিবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। অবশ্যই অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে আমাদের অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাক্তার মোঃ বয়জার রহমান ভালো বলতে পারবেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ বয়জার রহমান এ বিষয়ে দৈনিক বার্তাকে বলেন, “স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের শো-কজের জবাব দিয়েছেন। আইনগত কারণে আমি সেই চিঠির কপি গণমাধ্যমে দিতে পারছিনা। তবে তারা ভবিষ্যতে এমন ভুল আর করবে না বলে আমাদের জানিয়েছেন। এমনকি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমি স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডকে ঐ খামারীর সাথে আলোচনা করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাধানের জন্য বলেছি। ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি লিখিত দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা তাদেরকে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে বলেছি”।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ভবনে ক্ষতিগ্রস্ত খামারী ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর প্রতিনিধি দলের ১৩ জুলাই এর বৈঠকে উপস্থিত প্রতিষ্ঠানের এগ্রোভেটের জিএম জয়ন্ত দত্ত গুপ্তকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে ডোজ জালিয়াতি ও আমদানি নীতিমালা আইন লঙ্ঘন এবং এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত খামারির বিষয়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর গৃহীত পদক্ষেপ এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক বার্তাকে বলেন, “আপনারা সরেজমিনে ঐ খামারে গিয়ে দেখুন যে তিনি ঠিকমতো খামার পরিচালনা করছেন কিনা? তিনি কোন নিবন্ধিত পশু চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী মুরগির বাচ্চাকে খাদ্য প্রদান করছেন কিনা? এবং তার প্রতিষ্ঠানের কোন বৈধ লাইসেন্স আছে কিনা? সেগুলো যাচাই করে আমার কাছে আসুন। অভিযোগকারী খামারি নিজের কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন আমাদের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন”।

স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আমদানি নীতিমালার ক্যাটাগরি-২ এর আওতায় আমদানিকৃত পণ্যের রি-প্যাকিং ও মাদার প্রতিষ্ঠানের ঘোষণাকৃত ডোজ গোপন করে যে অপরাধ করেছেন এবং এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের শো-কজের উত্তরে কি জানিয়েছেন তা সুনির্দিষ্ট করে জানতে চাইলে, তিনি “আমি ব্যস্ত আছি। আমার সহকারী আপনার সাথে যোগাযোগ করবে” জানিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধিত ভেটেরিনারী চিকিৎসক জনাব ডাঃ মাসুদুল ইসলাম দৈনিক বার্তাকে (নিবন্ধন নং – ৪৭১৩) বলেন, “জিরো এন্টিবায়োটিক (নো এন্টিবায়োটিক এভার) খামারে কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের নিয়ম নেই। এমনকি মুরগী কোন ধরনের রোগে আক্রান্ত হলেও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। এই জন্য রোগ প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। আমি এ ধরনের খামারের সাথে অনেকদিন যাবত জড়িত এবং অর্গানিক চিকেন খামারটির পরিচালন পদ্ধতি অনেক উন্নত এবং প্রতিটি ধাপ নিয়ম মেনে পরিচালনা করা হয়। একটি কক্সিডিউস্টাটের ডোজ ভিত্তিক কার্যক্ষমতা শুধুমাত্র ম্যানুফাকচারার বলতে পারবে। স্কয়ার এতদিন ডোজ গোপন করার মত যে অন্যায় কাজটি করেছে তা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়”। অর্গানিক চিকেন খামারের মুরগী কি কক্সিডিউসিস রোগের কারনেই মারা গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্গানিক চিকেন খামারটি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে হেলথ ট্রাকিং সিস্টেম এর গাইডলাইন অনুসারে কক্সিডিউসিস এর স্কোরিং করে থাকে। তিনি খামারের গত দেড় বছরের স্কোরিং শিট দেখিয়ে বলেন, “এই স্কোরিং শিটই বলে দিচ্ছে মুরগির কক্সিডিউসিস হয়েছিল এবং কক্সিডিউসিস রোগের কারনেই পরে অন্যান্য সেকেন্ডারী ইনফেকশনে মুরগী মারা গেছে। এবং এটা স্কয়ারের মিথ্যা ডোজের কারনেই হয়েছিল।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বিষয়ক অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ফ্রি-রেঞ্জের জন্য বাংলাদেশে ব্রয়লার বাচ্চার উপযুক্ত ব্রিড পাওয়া যায় না এটা ভুল এবং এক ধরনের অজ্ঞতা। হাবার্ট ইপি ব্রিড, ফ্রি রেঞ্জ ও কনভেনশনাল উভয় ফার্মিং এর জন্য তৈরি করা। যে কেউ গুগুল সার্চ করলেই তা দেখতে পাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত খামারীর জিরো এন্ট্রিবায়োটিক পদ্ধতিতে ফার্মিং করার জন্য অনুমতি আছে কিনা বা অনুমতি প্রয়োজন আছে কিনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ ধরনের কোন অনুমতির কর্তৃপক্ষ আছে বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশ সরকার মুরগীর ফিডে কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন যাতে করে মুরগীর শরীরে আন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি না হয়। এখন কোন খামারি যদি কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক, এমনকি পানি বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমেও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করে মুরগী পালন করে সফল হন সেজন্য ওই খামারীকে সরকারীভাবে পুরস্কৃত করা উচিত। যাতে করে অন্যান্য খামারিরাও উৎসাহিত হয়। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, আমেরিকার মত দেশে প্রায় ৪০% থেকে ৫০% ব্রয়লার মুরগির খামার এখন জিরো এন্টিবায়োটিক পদ্ধতিতে পরিচালনা হচ্ছে এবং এর জন্য বিস্তারিত গাইডলাইনও রয়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড এখন যা বলছে তা গ্রহণযোগ্য নয। কারন তারা ডোজ গোপন করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে”। রি-প্যাকিং এর বিষয়ে তিনি বলেন, এটা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর ভালো বলতে পারবে। তবে রি-প্যাকিং করলে পণ্যে ভেজাল মেশানোর সুযোগ থাকে। আমি বলছি না স্কয়ার ভেজাল বা ক্যারিয়ার যোগ করেছে। কিন্তু সুযোগ থাকে।
প্রতিবার মুরগীতে কক্সিডিউসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরেও কেন এই কক্সিডিউস্টাট ব্যবহার করছিলেন এবং ডোজে পরিবর্তন না করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট পশু পুষ্টিবিদ চয়ন কুমার বর্ম (নিবন্ধন নং- ২৮৯৭৩) বলেন, “প্রোডাক্ট হিসেবে ‘হার্ব-অল কক্স’ কক্সিডিউস্টাটের কোন সমস্যা নেই। এটা খুবই ভালো ও কার্যকর প্রোডাক্ট। সমস্যা হচ্ছে এর ডোজ পরিবর্তন করা।এন্টিবায়োটিক ফ্রি মুরগী পালনের জন্য এর বিকল্প সমাধান আমরা পাচ্ছিলাম না। নিউট্রিশনিস্ট হিসেবে আমাদের ম্যানুফাকচ্যারার এর ডোজের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। স্কয়ারকে বার বার ডোজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছেলো। কিন্তু তারা প্রতিবারই ৫০% ডোজই কনফার্ম করেছেন। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিনিধিরা প্রাণীসম্পদ অফিসে অনুষ্ঠিত গত বৈঠকে বারবার ব্রিডার ফার্মের অভিজ্ঞতা বলছিলেন যে সেখানে কোন সমস্যা হয়নি। তারা হয়ত খেয়াল করেননি ১৫ দিন বয়সের পরের ডোজ এমনিতেই ৫০০ গ্রাম। কিন্তু ব্রয়লার বাচ্চার ডোজ ০১ কেজি। এটা তারা গোপন করেছেন। ৩০০ গ্রামের কথা কোথাও নেই। এটা স্কয়ারের মনগড়া ডোজ। আসলে এই প্রোডাক্টের ২০ কেজির প্যাকেটে কোন ডোজ লেখা নেই। যা অন্যান্য আমদানিকৃত প্রোডাক্টে থাকে। আমার মনে হয় স্কয়ার এই সুযোগটাই নিয়েছে”।

অভিযোগকারী খামারী প্রকৌশলী ইমরুল হাসান দৈনিক বার্তাকে অত্যন্ত হতাশার সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর মত কম্পানী এই কাজ করতে পারে এটা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারিনা। স্কয়ারকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতাম। কোন ডাক্তার আমাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য অন্য ফার্মার ওষুধ প্রেসক্রাইব করলেও আমি নিজে ফার্মেসি থেকে স্কয়ারের ওষুধ কিনতাম। একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই বাংলাদেশে জিরো এন্টিবায়োটিক পোল্ট্রি ফার্মিং শুরু করেছিলাম। কিন্তু শুধুমাত্র স্কয়ারের এই অনৈতিক ডোজ জালিয়াতির জন্য এই উদ্যোগ এখন হুমকির মুখে। একে তো ডোজ গোপন করে বিক্রি করেছে উপরন্ত বার বার রিপোর্ট করার পরেও আমাদের মিস-গাইড করেছে। কমপক্ষে ৭ বার মেসেজ দিয়েছি। ফোনে যে কতবার বলেছি তা আর কি বলবো। এখন স্কয়ার নিজেদের অপরাধ আড়াল করার জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন অবান্তর প্রশ্নের মুখে ফেলছে। এমনকি তাদের কর্মচারীরাও সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ও ব্যক্তিগত আক্রমন করছে। এমনটা কাদের ইন্ধনে হয়েছে তা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্স পড়া লাগে না। তারা যে অন্যায় করেছেন তা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর দ্বারা প্রমানিত। আমি এর সঠিক বিচার চাই। মানুষ বা প্রানী কারো জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার স্কয়ারকে দেয়া হয়নি”।

শুধু আমদানিকৃত পণ্যের রি প্যাকিং বা ডোজ গোপন করা নয়, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বিল জালিয়াতি করেও সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এমন কিছু বেনামী বিলের কপিও এখন দৈনিক বার্তার হাতে রয়েছে। এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান সাপেক্ষে বিস্তারিত পরবর্তীতে দৈনিক বার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।

স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী ও পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তারা কল রিসিভ করেননি। উভয়ের মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠালে পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী দেশের বাইরে আছেন এবং প্রতিষ্ঠানের ফার্মাসিটিক্যালস এর দায়িত্বে নেই বলে লিখিত বার্তা পাঠান। পরিচালক হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠানের এই অপরাধের দায় এড়াতে পারেন কিনা জানতে চাইলে আর কোন উত্তর দেননি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী খুদেবার্তার উত্তরও দেননি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সুফিয়ানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক বার্তাকে বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি দ্রুতই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবো”।