
জয়পুরহাট আক্কেলপুরে শ্রীকর্ণদীঘি বিদ্যালয়ে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে পিয়ন পদে চাকরী নিয়েছিলেন মাসুদ রানা। চাকরীতে যোগদানের দেড় বছর পার হলেও বেতন ভাতা হয়নি। নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতায় ঝুলিয়ে আছে বেতন ভাতা। বেতন ভাতা না হওয়ায় ঘুষের সাড়ে আট লাখ টাকা ফেরতের দাবীতে মধ্যস্তকারী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামকে আটকে রেখে মারধর করেছে ভুক্তভোগি। ঘটনাটি ঘটেছে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার শ্রীকর্ণদীঘি বাজারের মোড়ের একটি দোকানে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের উপস্থিতিতে দু’পক্ষের দেন-দরবারের স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা লিখে নেওয়ার পর সাইফুল ইসলামকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে গত রোববার রাতে সাইফুল ইসলাম মোটরসাইকেল নিয়ে শ্রীকর্ণদীঘি মোড়ের দোকানে ওষুধ কিনতে আসেন। পিয়ন মাসুদ রানা তখন সাইফুল ইসলামকে ধরে এনে একটি দোকানে বসিয়ে রেখে ঘুষের সাড়ে আট লাখ টাকা ফেরত চাই। সাইফুল ইসলাম প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। পুলিশের উপস্থিতিতে স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা লিখে নেওয়ার পর তাকে রাত বারোটার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পিয়ন মাসুদ রানার বাড়ি উপজেলার ঘোলকুড়ি গ্রামে। সাইফুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী মোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি তিলকপুর ইউপির সাবেক সদস্য। নিষিদ্ধ ঘোষিত দল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন সাইফুল ইসলাম।
পিয়ন মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি দিনমজুর মানুষ। শেষ সম্বল বাড়ীর জমি ও গরু বিক্রি করে সাড়ে আট লাখ টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছি। ভুল নিয়োগ বোর্ডের কারণে চাকরিতে যোগদানের দেড় বছরেও এমপিওভুক্ত হইনি। নিয়োগ পরীক্ষার ২৫ দিন আগে ইউপির সাবেক সদস্য মধ্যস্তকারী সাইফুল ইসলাম আমাকে তার বাড়িতে ডেকে নেন। সেখানে সেই সময়ের বিদ্যালয়ের সভাপতি মাজেদুল রহমানের উপস্থিতিতে সাড়ে আট লাখ টাকা সাইফুল ইসলামের হাতে দিয়েছি। নিয়োগ বোর্ড বিধিসম্মত না হওয়ায় একাধিকবার অনলাইনে আবেদন করেও এমপিওভুক্তি হয়নি। সাইফুলের কাছে ঘুষের সাড়ে আট লাখ টাকা চাইলে নানান টালবাহানা শুরু করেন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপারভাইজারকে জানিয়েছি। তারা কোন পদক্ষেপ নেননি।’
আজ মঙ্গলবার সকালে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মধ্যস্থতায় শ্রীকর্ণদীঘি বিদ্যালয়ের সভাপতি মাজেদুল ইসলাম ও প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন ঘুষের টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। অথচ তারা আমাকে রাতে আটকে রেখে মারধর করে স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা লিখে নিয়েছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মাজেদুল ইসলাম বলেন, আগে আমি বিএনপি করতাম। পরে আওয়ামী লীগে যোগদিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়েছি। বিদ্যালয়ে তিনটা নিয়োগ দিয়েছি। আমি একটি টাকাও ছুঁয়ে দেখিনি। বিধিসম্মতভাবে নিয়োগ বোর্ড হয়নি। এ কারণে বিদ্যালয়ের নতুন নিয়োগকৃত তিন কর্মচারীর কারো এমপিওভূক্ত হয়নি।
প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি নিয়োগ বাণিজ্যে সর্ম্পকে কিছুই জানি না। তখন আওয়ামী লীগের নেতারা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম আমাকে কোণঠাসা করে বিদ্যালয়ে তিনটি নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেই সময় নিযোগ বোর্ড বিধিসম্মত হয়নি। এ কারণে তিন কর্মচারী এমপিভুক্ত হয়নি।
আক্কেলপুর থানার উপপরির্দশক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শ্রীকর্ণদীঘি উচ্চবিদ্যালয়ে পিয়ন পদে মাসুদ রানার কাছ থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ঘুষের টাকা ফেরতের জন্য লোকজন সাবেক মেম্বারকে আটকে রেখেছিল। আমরা জরুরি সেবা ৯৯৯-এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঘুষের টাকা ফেরত দেবেন মর্মে স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকারনামা দেন সাইফুল ইসলাম। এরপর লোকজন তাকে ছেড়ে দেন।
আক্কেলপুর প্রতিবেদক 


















