ঢাকা ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের সময় ভারতীয় গণমাধ্যমে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সরাসরি সম্প্রচার করছে ভারতের একটি টেলিভিশন। ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের সময় ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে দেশটির অভূতপূর্ব সাফল্যের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। কিছু খবর ছিল এমন—ভারতীয় হামলায় একটি পাকিস্তানি পারমাণবিক ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে, দুটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে এবং পাকিস্তানের তেল ও বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র করাচি বন্দর ধ্বংস হয়ে গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের এসব প্রতিবেদনের প্রতিটি তথ্যই ছিল অত্যন্ত নির্দিষ্ট, কিন্তু এর কোনোটিই সত্য ছিল না।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া তীব্র সামরিক সংঘাতের সময় এবং তারপরের দিনগুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। সত্য ও মিথ্যার ফারাক করা দুই দেশের মানুষের জন্যই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ, অসংখ্য মিথ্যা, আধা সত্য, মিম, ভুয়া ভিডিও এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে বিকৃত বক্তব্য ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছিল।

এ ভুয়া তথ্যের ঢেউ কিছুটা মূলধারার গণমাধ্যমেও আছড়ে পড়েছিল, যা ভারতীয় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিবর্তন নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। খবর ‘সবার আগে’ দেওয়ার প্রতিযোগিতা এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রতিবেদন করার প্রবণতা সংঘাতের চার দিনের মধ্যে ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিল। ওই সময় কিছু সংবাদ উপস্থাপক ও বিশ্লেষক সরাসরি দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের যুদ্ধে ‘চিয়ারলিডার’ হয়ে উঠেছিলেন।

নামকরা কিছু সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল যাচাই-বাছাই না করে অনির্ভরযোগ্য বা সাজানো গল্প প্রচার করে জাতীয়তাবাদের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিয়েছে।

আমেরিকান ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমিত্রা বদ্রিনাথন দক্ষিণ এশিয়ায় ভুল তথ্য নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, আমরা যখন মিথ্যা তথ্যের কথা ভাবি, তখন ভাবি নাম না জানা কেউ বা কোনো বট অ্যাকাউন্টের কথা, যার উৎস বোঝার উপায় থাকে না।

সহকারী অধ্যাপক সুমিত্রা বলেন, ২০১৯ সালে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময়ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়েছিল। কিন্তু এবারের সঙ্গে পার্থক্য হলো ‘আগে যেসব সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে নির্ভরযোগ্য মনে করা হতো, তারাও এবার সরাসরি ভুল তথ্য প্রচার করেছে।’

আমেরিকান ইউনিভার্সিটির এই শিক্ষক বলেন, আগে বিশ্বাসযোগ্য বলে পরিচিত মূলধারার গণমাধ্যমই যখন ভুল তথ্যের কারখানায় পরিণত হয়, তখন তা ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় মূলধারার গণমাধ্যমে ছড়ানো ভুল তথ্য ভারতের একসময়ের প্রাণবন্ত সাংবাদিকতাজগতে নতুন এক ধাক্কা হয়ে এসেছে।

সশস্ত্র সংঘাতের সময় অপপ্রচার ও ভুল তথ্য ছড়ানো নতুন কিছু নয়। দেশের পক্ষে যুদ্ধের প্রচার চালাতে মূলধারার গণমাধ্যম বহু আগে থেকেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তবে এটি করতে গিয়ে কখনো কখনো তাড়াহুড়ো করে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে, যা পরে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই ভুল তথ্য ছড়ানোর আশঙ্কা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যমকে এমন খবর প্রকাশ না করতে চাপ দেওয়া হয়েছে, যেসব খবর সরকারকে বিব্রত করতে পারে। অনেক টিভি চ্যানেলসহ অন্য আরও গণমাধ্যম সরাসরি সরকারের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে। (তবে কিছু ছোট স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অনলাইন সংবাদমাধ্যম এখনো নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও তাদের পাঠকসংখ্যা সীমিত।)

ভারতের অন্যতম পরিচিত সাংবাদিক এবং ইন্ডিয়া টুডে টেলিভিশনের উপস্থাপক রাজদীপ সারদেশাই পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ভুল প্রতিবেদন প্রচারের জন্য গত সপ্তাহে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি স্বীকার করেন, খবরটি ‘ওই মুহূর্তে যাচাই-বাছাই’ করা হয়নি।

গত শনিবার নিজের ইউটিউব ভিডিও ব্লগে রাজদীপ আবার দর্শকদের কাছে ক্ষমা চান এবং বলেন, কিছু ভুয়া খবর একটি পরিকল্পিত প্রচারাভিযানের অংশ ছিল, যা ‘জাতীয় স্বার্থের ছদ্মবেশে ডানপন্থী ভুয়া তথ্য প্রচারকারী’ গ্রুপের মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেলগুলো অনেক সময় সেই ফাঁদে পড়ে যায়।

কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষক ড্যানিয়েল সিলভারম্যান বলেন, ‘সাধারণত উত্তেজনা ছড়ানো, তথ্য গোপন করা বা আবেগে আঘাত হানার মতো উদ্দেশ্যে’ অপতথ্য ছড়ানো হয়ে থাকে। ভারত-পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে আগে থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ রয়েছে। ফলে এখানে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া সহজ এবং মানুষ এসব বিশ্বাসও করে।

অল্টনিউজ নামের ভারতের একটি নিরপেক্ষ ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট বিভিন্ন সামাজিক ও মূলধারার গণমাধ্যমের ভুল তথ্য যাচাই-বাছাই করে এবং তা প্রচার করে। তারা প্রমাণসহ দেখিয়েছে, জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল যেমন আজতক, নিউজ১৮ ইত্যাদি সরাসরি ভুল খবর প্রচার করেছে।

অল্টনিউজের প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা বলেন, তথ্যপ্রবাহের পরিকাঠামো এখন ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, ভুয়া খবরের ব্যাপারে ফ্যাক্টচেক বা যাচাই-বাছাই করা জরুরি।

তবে এসব করতে গিয়ে সিনহা ও তার প্রতিষ্ঠানকে মূল্য চোকাতে হচ্ছে। অল্টনিউজের বিরুদ্ধে একাধিক মানহানির মামলা হয়েছে। তাদের সাংবাদিকেরাও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স বলছে, ভারতের ২০ কোটির বেশি পরিবারে টেলিভিশন আছে। দেশটিতে শুধু সংবাদ সম্প্রচার করে প্রায় ৪৫০টি বেসরকারি চ্যানেল। ফলে ভারতীয়দের কাছে টেলিভিশনই তথ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী উৎস।

গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত টিভি চ্যানেল বেশ ফলাও করে খবর প্রচার করেছিল যে ভারতীয় নৌবাহিনী করাচি বন্দরে হামলা চালিয়েছে। এ খবর দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

‘করাচি’ ও ‘করাচি পোর্ট’ টার্মগুলো এক্সে (সাবেক টুইটার) ট্রেন্ড হতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ছবি-ভিডিও ভাইরাল হতে থাকে, যাতে দেখা যায়, করাচির আকাশে বিস্ফোরণের ফলে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে।

তথ্য যাচাই-বাছাইকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পরে দেখান, ওই ছবি-ভিডিও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলার দৃশ্য ছিল। সংঘাত শেষে ভারতীয় নৌবাহিনী এক ব্রিফিংয়ে জানায়, তারা করাচিতে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো হামলা চালায়নি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের সময় ভারতীয় গণমাধ্যমে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি

Update Time : ০১:৩৯:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের সময় ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে দেশটির অভূতপূর্ব সাফল্যের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। কিছু খবর ছিল এমন—ভারতীয় হামলায় একটি পাকিস্তানি পারমাণবিক ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে, দুটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে এবং পাকিস্তানের তেল ও বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র করাচি বন্দর ধ্বংস হয়ে গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের এসব প্রতিবেদনের প্রতিটি তথ্যই ছিল অত্যন্ত নির্দিষ্ট, কিন্তু এর কোনোটিই সত্য ছিল না।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া তীব্র সামরিক সংঘাতের সময় এবং তারপরের দিনগুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। সত্য ও মিথ্যার ফারাক করা দুই দেশের মানুষের জন্যই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ, অসংখ্য মিথ্যা, আধা সত্য, মিম, ভুয়া ভিডিও এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে বিকৃত বক্তব্য ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছিল।

এ ভুয়া তথ্যের ঢেউ কিছুটা মূলধারার গণমাধ্যমেও আছড়ে পড়েছিল, যা ভারতীয় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিবর্তন নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। খবর ‘সবার আগে’ দেওয়ার প্রতিযোগিতা এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রতিবেদন করার প্রবণতা সংঘাতের চার দিনের মধ্যে ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিল। ওই সময় কিছু সংবাদ উপস্থাপক ও বিশ্লেষক সরাসরি দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের যুদ্ধে ‘চিয়ারলিডার’ হয়ে উঠেছিলেন।

নামকরা কিছু সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল যাচাই-বাছাই না করে অনির্ভরযোগ্য বা সাজানো গল্প প্রচার করে জাতীয়তাবাদের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিয়েছে।

আমেরিকান ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমিত্রা বদ্রিনাথন দক্ষিণ এশিয়ায় ভুল তথ্য নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, আমরা যখন মিথ্যা তথ্যের কথা ভাবি, তখন ভাবি নাম না জানা কেউ বা কোনো বট অ্যাকাউন্টের কথা, যার উৎস বোঝার উপায় থাকে না।

সহকারী অধ্যাপক সুমিত্রা বলেন, ২০১৯ সালে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময়ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়েছিল। কিন্তু এবারের সঙ্গে পার্থক্য হলো ‘আগে যেসব সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে নির্ভরযোগ্য মনে করা হতো, তারাও এবার সরাসরি ভুল তথ্য প্রচার করেছে।’

আমেরিকান ইউনিভার্সিটির এই শিক্ষক বলেন, আগে বিশ্বাসযোগ্য বলে পরিচিত মূলধারার গণমাধ্যমই যখন ভুল তথ্যের কারখানায় পরিণত হয়, তখন তা ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় মূলধারার গণমাধ্যমে ছড়ানো ভুল তথ্য ভারতের একসময়ের প্রাণবন্ত সাংবাদিকতাজগতে নতুন এক ধাক্কা হয়ে এসেছে।

সশস্ত্র সংঘাতের সময় অপপ্রচার ও ভুল তথ্য ছড়ানো নতুন কিছু নয়। দেশের পক্ষে যুদ্ধের প্রচার চালাতে মূলধারার গণমাধ্যম বহু আগে থেকেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তবে এটি করতে গিয়ে কখনো কখনো তাড়াহুড়ো করে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে, যা পরে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই ভুল তথ্য ছড়ানোর আশঙ্কা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যমকে এমন খবর প্রকাশ না করতে চাপ দেওয়া হয়েছে, যেসব খবর সরকারকে বিব্রত করতে পারে। অনেক টিভি চ্যানেলসহ অন্য আরও গণমাধ্যম সরাসরি সরকারের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে। (তবে কিছু ছোট স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অনলাইন সংবাদমাধ্যম এখনো নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও তাদের পাঠকসংখ্যা সীমিত।)

ভারতের অন্যতম পরিচিত সাংবাদিক এবং ইন্ডিয়া টুডে টেলিভিশনের উপস্থাপক রাজদীপ সারদেশাই পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ভুল প্রতিবেদন প্রচারের জন্য গত সপ্তাহে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি স্বীকার করেন, খবরটি ‘ওই মুহূর্তে যাচাই-বাছাই’ করা হয়নি।

গত শনিবার নিজের ইউটিউব ভিডিও ব্লগে রাজদীপ আবার দর্শকদের কাছে ক্ষমা চান এবং বলেন, কিছু ভুয়া খবর একটি পরিকল্পিত প্রচারাভিযানের অংশ ছিল, যা ‘জাতীয় স্বার্থের ছদ্মবেশে ডানপন্থী ভুয়া তথ্য প্রচারকারী’ গ্রুপের মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেলগুলো অনেক সময় সেই ফাঁদে পড়ে যায়।

কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষক ড্যানিয়েল সিলভারম্যান বলেন, ‘সাধারণত উত্তেজনা ছড়ানো, তথ্য গোপন করা বা আবেগে আঘাত হানার মতো উদ্দেশ্যে’ অপতথ্য ছড়ানো হয়ে থাকে। ভারত-পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে আগে থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ রয়েছে। ফলে এখানে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া সহজ এবং মানুষ এসব বিশ্বাসও করে।

অল্টনিউজ নামের ভারতের একটি নিরপেক্ষ ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট বিভিন্ন সামাজিক ও মূলধারার গণমাধ্যমের ভুল তথ্য যাচাই-বাছাই করে এবং তা প্রচার করে। তারা প্রমাণসহ দেখিয়েছে, জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল যেমন আজতক, নিউজ১৮ ইত্যাদি সরাসরি ভুল খবর প্রচার করেছে।

অল্টনিউজের প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা বলেন, তথ্যপ্রবাহের পরিকাঠামো এখন ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, ভুয়া খবরের ব্যাপারে ফ্যাক্টচেক বা যাচাই-বাছাই করা জরুরি।

তবে এসব করতে গিয়ে সিনহা ও তার প্রতিষ্ঠানকে মূল্য চোকাতে হচ্ছে। অল্টনিউজের বিরুদ্ধে একাধিক মানহানির মামলা হয়েছে। তাদের সাংবাদিকেরাও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স বলছে, ভারতের ২০ কোটির বেশি পরিবারে টেলিভিশন আছে। দেশটিতে শুধু সংবাদ সম্প্রচার করে প্রায় ৪৫০টি বেসরকারি চ্যানেল। ফলে ভারতীয়দের কাছে টেলিভিশনই তথ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী উৎস।

গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত টিভি চ্যানেল বেশ ফলাও করে খবর প্রচার করেছিল যে ভারতীয় নৌবাহিনী করাচি বন্দরে হামলা চালিয়েছে। এ খবর দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

‘করাচি’ ও ‘করাচি পোর্ট’ টার্মগুলো এক্সে (সাবেক টুইটার) ট্রেন্ড হতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ছবি-ভিডিও ভাইরাল হতে থাকে, যাতে দেখা যায়, করাচির আকাশে বিস্ফোরণের ফলে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে।

তথ্য যাচাই-বাছাইকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পরে দেখান, ওই ছবি-ভিডিও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলার দৃশ্য ছিল। সংঘাত শেষে ভারতীয় নৌবাহিনী এক ব্রিফিংয়ে জানায়, তারা করাচিতে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো হামলা চালায়নি।