
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ঈশ্বরদীর অরণখোলার কোরবানির পশুহাট জমে উঠছে। চলতি বছর এই উপজেলায় খামার ও গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে। অরণখোলা পশু হাটে গরু-ছাগল মহিষ নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। তবে বেচাকেনা এখনও পুরোপুরি জমে উঠেনি পশুর হাটে। অরণখোলা হাট আগামীতে দুইটা হাট পাবে। আগামী এই দুই হাটে উৎসবের আমেজ বইবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদীতে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির জন্য ৭৩ হাজার ৫১৬ টি গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এসব পশু পাওয়া যাবে কোরবানির হাট, খামার, ও গৃহস্তের বাড়িতে। স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নিয়মনীতি মেনে কোরবানির জন্য ঈশ্বরদীর অরনকোলা পশুর হাট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, ষাঁড় ১৭ হাজার ৪০২ টি,বলদ ৩ হাজার ৮০৫টি, গাভী ২ হাজার ৭৫৪ টি, মহিষ ৯১৫ টি, ছাগল ৩৯ হাজার ৫২২টি, ভেড়া ৮ হাজার ৯১৩ টি ও গাঁড়ল ৯৫৫ টিসহ গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও অন্যান্য পশুসহ ঈশ্বরদীতে এবার মোট ৭৩ হাজার ৫১৬ টি পশু রয়েছে, যা কোরবানির ঈদ উপলক্ষে স্থানীয় অরনখোলাসহ আশেপাশের হাটে উঠবে এবং কোরবানির পশুর ক্রেতা ও ব্যাপারীরা হাট-খামার থেকে এইসব কোরবানির গবাদি পশু ঢাকার গাবতলী সহ অন্যান্য হাটে উঠিয়ে বিক্রি করবে।অতিরিক্ত এসব পশু বিক্রির জন্য নেওয়া হবে দেশের অন্যান্য জেলায়। বর্তমানে এসব পশু মানুষের বাসাবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন খামারে লালনপালন করছেন খামারিরা।
খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের লাগামছাড়া দামের কারণে কোরবানির পশুর বাজারে প্রভাব পড়বে। দাম বেশি না হলে লোকসান হবে। যদিও ঈশ্বরদী প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছেন, এবারও কোরবানির পশুর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। তাই দাম খুব একটা বাড়বে না। সহনীয় একটা দাম থাকবে, এতে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও সমস্যা হবে না।
উপজেলার আওতাপাড়ার খামারি নজরুলের খামারে ছয়টি গরু আছে। এর মধ্যে চারটি কোরবানির উপযোগী। তিনি বলেন, গরুগুলো চার মাস ধরে লালনপালন করছি। কোরবানির দুই সপ্তাহ আগে থেকে বিক্রি শুরু করব। খামার থেকেই বিক্রির চেষ্টা করব, না হলে হাটে তুলব। সব খাবারই কিনে খাওয়াতে হয়। গতবারের তুলনায় এবার গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে ঘাস, ভুট্টা, খৈল ও ভুসির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
উপজেলার পৌর এলাকার দক্ষিণ নারিচার খামাড়ি আবুল হোসেন বলেন,আমার খামারে দুইটি ষাঁড় আছে। তার দাবি,প্রত্যেকটি ষাঁড়ের ওজনে সাত-আট মণের বেশি হবে। তিনি সাড়ে ছয় লাখ টাকা দুইটি ষাঁড়ের দাম হাঁকছেন। তিনি বলেন ২৪ মাস আগে অরণখোলা হাট থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা দিয়ে কিনেন। তারপর থেকেই ষাঁড় দুটোকে তিনি লালনপালন করছেন।স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দেখতে আসছেন। কিন্তু এখন যে দাম বলছেন, তাতে খরচ উঠবে। ঈদ আসতে আরও বেশ কিছুদিন সময় আছে। এর মধ্যে কিছুটা লাভ পেলেই বিক্রি করে দেব।
উপজেলার আড়মবাড়িয়া বাজারে গমের ভুষি বিক্রেতা নাজমুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এক বস্তা গমের ভুসির দাম সাড়ে ১৮ শত থেকে ২ হাজার টাকা। এছাড়া খইলসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আবার বিভিন্ন কোম্পানির দানাদার গোখাদ্যের (সম্পূরক) ২৫ কেজির একেকটি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। এছাড়া ভুট্টার আটা, চালের গুঁড়া (খুদ), অ্যাঙ্কর ভুসি, মসুরের ভুসি, সরিষার খৈলসহ সবকিছুর দাম কয়েক গুণ বেড়েছে।
অরনকোলা পশুর হাটের ইজারা কমিটির অন্যতম পরিচালক মিজানুর রহমান রুনু মণ্ডল বলেন, `স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নিয়মনীতি মেনে অরনকোলা পশুর হাট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে অরণখোলা পশুহাট ঘুরে দেখা গেছে, গরু মহিষের ক্রেতা- বিক্রেতা যেন নিরাপদে হাটে আসতে পারে এবং নিরাপদে ফেরত যেতে পারে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য এএসআই আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচজন পুলিশ কর্মরত রয়েছেন। অরুণখোলা পশুহাটে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য রয়েছে।এসব টিম গবাদি পশুর পাশাপাশি মানুষেরও কিছু চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন হলে পাবেন ও পশুর স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধানে কাজ করছে। এছাড়া হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা্র পাশাপাশি হাটের ইজারাদারদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোছা: আকলিমা খাতুন বলেন, এবার কোরবানির ঈদে ভারতীয় গরুর কোনো প্রয়োজন হবে না। আমরা কোরবানির পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোরবানির ঈদের জন্য বিদেশি গরুর দরকার নেই। খামারগুলোতে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু মজুদ আছে। আমরা খামার থেকে নিয়মিত তথ্য নিচ্ছি। নিয়মিত ভাবে পরিদর্শন ও মনিটর করা হচ্ছে। খাদ্য কীভাবে খাওয়াতে হবে, কীভাবে পরিচর্যা করতে হবে- এসব বিষয়ে আমরা খামারীদের পরামর্শ দিচ্ছি। উদ্বৃত্ত কোরবানির পশু থাকায় এ বছর চাহিদা অনুযায়ী হাটে পশু পাবেন ক্রেতারা।
আলমাস আলী, ঈশ্বরদী (পাবনা ) প্রতিবেদক 



















