ঢাকা ১০:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা Logo মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা

উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করা যার শখ

ইয়োভান চুলিয়োকোভিচের সংগ্রহে ৩০টি উল্কাপিণ্ড আছে

সার্বিয়ার ইয়োভান চুলিয়োকোভিচের শখ মেটিওরাইট বা উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করা৷

তার সংগ্রহে প্রায় ৩০টি উল্কাপিণ্ড রয়েছে৷ উল্কাপিণ্ড নিয়ে জানার আগ্রহ থেকে তিনি এই বিষয়ে কিছু পড়াশোনা করেছেন৷ তাই তিনি এখন একটি পাথর দেখলে কিছুটা ধারণা করতে পারেন যে, সেটি হয়ত উল্কাপিণ্ড হতে পারে৷

চুলিয়োকোভিচ বলেন, ‘‘আমি যখন বাইরে যাই, প্রকৃতির মধ্যে থাকি, তখন সবসময় নজর রাখি৷ আমার চোখ মাটি, পাথর এবং অন্যান্য জিনিসের উপর স্থির থাকে৷ আমি সেগুলো দেখে চিনতে পারি, কারণ আমি সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা করেছি৷ আমার প্রথম উল্কাপিণ্ড খুঁজে পাওয়ার পর আমি সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি, এবং তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি৷ এর মানে হলো, আমার চোখ একটি উল্কাপিণ্ড সনাক্ত করতে পারে – এমনকি পাথরের মধ্যেও৷”

চুলিয়োকোভিচ পাঁচ বছর ধরে উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করছেন৷ তার কাছে প্রায় ত্রিশটি উল্কাপিণ্ড আছে৷ তিনি যত জিনিস সংগ্রহ করেন তার মধ্যে উল্কাপিণ্ডই তার প্রিয়৷

চুলিয়োকোভিচ বলেন, ‘‘আমি প্রথম যে উল্কাপিণ্ডটি খুঁজে পেয়েছিলাম, সেটিই আমার প্রিয়৷ দেখতে সুন্দর৷ আকৃতিও সবচেয়ে সুন্দর৷ এটিই সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত করে রাখা আছে, কারণ, আবহাওয়ার সংস্পর্শে এলে এগুলি উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে – ম্লান হয়ে যায়৷ এখানে আপনি পৃষ্ঠে অলিভাইন দেখতে পাচ্ছেন৷ এটি যে একটি উল্কাপিণ্ড, এটি তার অন্যতম একটি লক্ষণ৷”

মেটিওরাইট বা উল্কাপিণ্ড হলো মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে পড়া একটি শিলা৷ সৌরজগতের আদি যুগের হওয়ায় বিজ্ঞানীদের কাছে এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ মেরু বরফের চূড়ায় এবং মরুভূমিতে এগুলো সহজেই দেখা যায়৷

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং আলফা অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড্রাগান গায়ইচ বলেন, অপেশাদাররা এগুলো সহজেই শনাক্ত করতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মেটিওরাইট বা উল্কাপিণ্ডটি যদি লৌহঘটিত হয় তাহলে আপনি একটি চুম্বক ব্যবহার করে দেখতে পারেন যে এটি লোহা কিনা, কারণ আয়রন মেটিওরাইটের ৯৬ শতাংশ লোহা ও নিকেল দিয়ে তৈরি৷ এভাবে আপনি আয়রন মেটিওরাইট শনাক্ত করতে পারেন৷ আপনি যখন বালির মধ্য দিয়ে একটি চুম্বক টেনে আনেন, তখন চুম্বকের সাথে যা লেগে থাকে – যদিও এর মধ্যে কিছু মাটির উপাদানও থাকতে পারে – সেই ক্ষুদ্র কণাগুলি হলো মাইক্রো মেটাল উল্কাপিণ্ড৷ যখন পাথর – যার মধ্যে বিভিন্ন ধরণও রয়েছে – বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে যায়, তখন তাদের পৃষ্ঠের স্তর অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে বার্নিশের মতো কাঁচের পর্দায় পরিণত হয়৷”

লক্ষ লক্ষ বছর ধরে উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে আছড়ে পড়ছে৷ নাসার মতে, প্রতিদিন প্রায় ৪৮.৫ টন অর্থাৎ, ৪৪ হাজার কেজি উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে পড়ে৷

অধ্যাপক গায়ইচ বলেন, ‘‘প্রথমত উল্কাপিণ্ড হলো এমন এক বস্তু, যা মহাকাশের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে- ছোট আকারের একটি বস্তু৷ এটি যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠে প্রবেশ করে, যেহেতু এটি উচ্চগতিতে- সেকেন্ডে কমপক্ষে ১১.২ কিমি গতিতে চলে – এই গতিতেই আপনাকে এমন কিছু ছুঁড়তে হবে যেন এটি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণরূপে উড়ে যায়৷ এই গতিতে, সেকেন্ডে কমপক্ষে ১১.২ কিমি গতিতে, বস্তুটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ যদি সেই বস্তুটি সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায় এবং যা অবশিষ্ট থাকে তা হলো সেই মাইক্রোমেটিওরাইট, যা ধুলোর মতো পড়ে, তাহলে আমরা যে আলোক ঘটনাটি দেখতে পাই তা একটি উল্কা৷ যদি বস্তুটি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সেই পথ অতিক্রম করে টিকে থাকে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠে পড়ে – সাধারণত এর একটি বড় অংশ গলে যায় বা বাষ্পীভূত হয় – তাহলেই কেবল আমরা সেটি যে উল্কাপিণ্ড তা বলতে পারি৷”

বৈজ্ঞানিক এবং বস্তুগত উভয় দিক থেকেই উল্কাপিণ্ড খুবই মূল্যবান হতে পারে৷ চুলিয়োকোভিচ তার উল্কাপিণ্ডগুলির মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন, কিন্তু তিনি তা করতে আগ্রহী নন৷ কারণ, এটি তার কাছে প্রিয় জিনিস সংগ্রহ করার মতো আনন্দের বিষয়৷

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত

উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করা যার শখ

Update Time : ০৯:১৫:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫

সার্বিয়ার ইয়োভান চুলিয়োকোভিচের শখ মেটিওরাইট বা উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করা৷

তার সংগ্রহে প্রায় ৩০টি উল্কাপিণ্ড রয়েছে৷ উল্কাপিণ্ড নিয়ে জানার আগ্রহ থেকে তিনি এই বিষয়ে কিছু পড়াশোনা করেছেন৷ তাই তিনি এখন একটি পাথর দেখলে কিছুটা ধারণা করতে পারেন যে, সেটি হয়ত উল্কাপিণ্ড হতে পারে৷

চুলিয়োকোভিচ বলেন, ‘‘আমি যখন বাইরে যাই, প্রকৃতির মধ্যে থাকি, তখন সবসময় নজর রাখি৷ আমার চোখ মাটি, পাথর এবং অন্যান্য জিনিসের উপর স্থির থাকে৷ আমি সেগুলো দেখে চিনতে পারি, কারণ আমি সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা করেছি৷ আমার প্রথম উল্কাপিণ্ড খুঁজে পাওয়ার পর আমি সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি, এবং তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি৷ এর মানে হলো, আমার চোখ একটি উল্কাপিণ্ড সনাক্ত করতে পারে – এমনকি পাথরের মধ্যেও৷”

চুলিয়োকোভিচ পাঁচ বছর ধরে উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করছেন৷ তার কাছে প্রায় ত্রিশটি উল্কাপিণ্ড আছে৷ তিনি যত জিনিস সংগ্রহ করেন তার মধ্যে উল্কাপিণ্ডই তার প্রিয়৷

চুলিয়োকোভিচ বলেন, ‘‘আমি প্রথম যে উল্কাপিণ্ডটি খুঁজে পেয়েছিলাম, সেটিই আমার প্রিয়৷ দেখতে সুন্দর৷ আকৃতিও সবচেয়ে সুন্দর৷ এটিই সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত করে রাখা আছে, কারণ, আবহাওয়ার সংস্পর্শে এলে এগুলি উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে – ম্লান হয়ে যায়৷ এখানে আপনি পৃষ্ঠে অলিভাইন দেখতে পাচ্ছেন৷ এটি যে একটি উল্কাপিণ্ড, এটি তার অন্যতম একটি লক্ষণ৷”

মেটিওরাইট বা উল্কাপিণ্ড হলো মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে পড়া একটি শিলা৷ সৌরজগতের আদি যুগের হওয়ায় বিজ্ঞানীদের কাছে এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ মেরু বরফের চূড়ায় এবং মরুভূমিতে এগুলো সহজেই দেখা যায়৷

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং আলফা অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড্রাগান গায়ইচ বলেন, অপেশাদাররা এগুলো সহজেই শনাক্ত করতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মেটিওরাইট বা উল্কাপিণ্ডটি যদি লৌহঘটিত হয় তাহলে আপনি একটি চুম্বক ব্যবহার করে দেখতে পারেন যে এটি লোহা কিনা, কারণ আয়রন মেটিওরাইটের ৯৬ শতাংশ লোহা ও নিকেল দিয়ে তৈরি৷ এভাবে আপনি আয়রন মেটিওরাইট শনাক্ত করতে পারেন৷ আপনি যখন বালির মধ্য দিয়ে একটি চুম্বক টেনে আনেন, তখন চুম্বকের সাথে যা লেগে থাকে – যদিও এর মধ্যে কিছু মাটির উপাদানও থাকতে পারে – সেই ক্ষুদ্র কণাগুলি হলো মাইক্রো মেটাল উল্কাপিণ্ড৷ যখন পাথর – যার মধ্যে বিভিন্ন ধরণও রয়েছে – বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে যায়, তখন তাদের পৃষ্ঠের স্তর অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে বার্নিশের মতো কাঁচের পর্দায় পরিণত হয়৷”

লক্ষ লক্ষ বছর ধরে উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে আছড়ে পড়ছে৷ নাসার মতে, প্রতিদিন প্রায় ৪৮.৫ টন অর্থাৎ, ৪৪ হাজার কেজি উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে পড়ে৷

অধ্যাপক গায়ইচ বলেন, ‘‘প্রথমত উল্কাপিণ্ড হলো এমন এক বস্তু, যা মহাকাশের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে- ছোট আকারের একটি বস্তু৷ এটি যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠে প্রবেশ করে, যেহেতু এটি উচ্চগতিতে- সেকেন্ডে কমপক্ষে ১১.২ কিমি গতিতে চলে – এই গতিতেই আপনাকে এমন কিছু ছুঁড়তে হবে যেন এটি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণরূপে উড়ে যায়৷ এই গতিতে, সেকেন্ডে কমপক্ষে ১১.২ কিমি গতিতে, বস্তুটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ যদি সেই বস্তুটি সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায় এবং যা অবশিষ্ট থাকে তা হলো সেই মাইক্রোমেটিওরাইট, যা ধুলোর মতো পড়ে, তাহলে আমরা যে আলোক ঘটনাটি দেখতে পাই তা একটি উল্কা৷ যদি বস্তুটি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সেই পথ অতিক্রম করে টিকে থাকে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠে পড়ে – সাধারণত এর একটি বড় অংশ গলে যায় বা বাষ্পীভূত হয় – তাহলেই কেবল আমরা সেটি যে উল্কাপিণ্ড তা বলতে পারি৷”

বৈজ্ঞানিক এবং বস্তুগত উভয় দিক থেকেই উল্কাপিণ্ড খুবই মূল্যবান হতে পারে৷ চুলিয়োকোভিচ তার উল্কাপিণ্ডগুলির মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন, কিন্তু তিনি তা করতে আগ্রহী নন৷ কারণ, এটি তার কাছে প্রিয় জিনিস সংগ্রহ করার মতো আনন্দের বিষয়৷