ঢাকা ০৮:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ১৮ প্রকল্প অনুমোদন Logo দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প  গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না দুই বছরেও Logo আটঘরিয়া জ্যামীর আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ মিছিল, প্রশাসনে স্মারকলিপি প্রদান Logo দৈনিক বার্তার অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার প্রকাশনার সফলতা কামনা করলেন রোকেয়া রাজ্জাক জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার Logo পাবনা-৩ আসনে বিএনপির জনসমুদ্রে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবী Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর

জাতীয় নির্বাচন: বিএনপি-জামায়াত রসায়ন ও অন্যদের ভাবনা

নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে রাজনৈতি দলগুলো জোট ভারি করতে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছে৷ আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলগুলো কীভাবে রাজনৈতিক জোট তৈরি করবে সে নিয়ে চলছে আলোচনা৷

বছরের পর বছর ধরে জোটসঙ্গী হিসেবে একসাতে হেঁটেছে বিএনপি ও জামায়াত৷ আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন দিকে মোড় নেবে এই দুদলের সম্পর্ক?

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ পারবে কি না তার উপর নির্ভর করছে জোটের সমীকরণ৷ ধারণা করা হচ্ছে, দলটি যদি নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে তাহলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতই বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে৷ এদিকে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নগারিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থান কেমন হয়ে উঠতে পারে তা নিয়েও আলোচনা চলছে৷

৫ আগস্টের পর নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের দূরত্ব বাড়তে থাকলেও সম্প্রতি লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাথে জাময়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বৈঠকের পর দূরত্ব কমার আভাস দেখা দিয়েছিলো৷

ওই বৈঠকের পর জামায়াতের আমীর ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময় ফেব্রুয়ারিতে (রোজার আগে) নির্বাচনের কথা বলেন৷ বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করে আসছে জাতীয় নির্বাচনের এই দাবির আগে জাাময়াতের অবস্থান ছিল অনেকটা ভিন্ন৷  তারা সংস্কারকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে তারপরে নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থান নিয়েছিল৷ কিন্তু গত সপ্তাহে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চান৷ এদিকে বিএনপি এমন প্রস্তাবনার বিরোধী৷ জাতীয় নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হোক এমনটা চায় দলটি৷ এদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে জামায়াতের সাথে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির মিল রয়েছে৷

জানা গেছে, জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বিএনপির অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা হলেও ৫ আগস্টের পরে এই দুই দলের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক বৈঠক  হয়নি৷ সহসা হবে কী না তারও কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না৷ বিএনপি এরইমধ্যে তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরীকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে৷ তাদের সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম ও এনসিপিরও বৈঠক হয়েছে৷

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরীক বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক  সাইফুল হক বলেন, ‘‘জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গী ছিলো৷ তবে এখন তাদের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব দেখছি৷ তাদের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ দেখছি না৷ এটা একটা বড় চমক৷ তবে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ আছে৷’’

তার কথা, ‘‘এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে নানামুখী বৈঠক হচ্ছে তার কারণ দুইটি৷ একটি হলো আগামীতে জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক অবস্থান এবং মেরুকরণ তৈরি করা৷  আরেকটি হলো সংস্কারের গতি তৈরি করে এবছরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন করা৷ বিএনপিসহ আমরা আরো অনেক দল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই৷ সেটা না হলো আন্দোলনের চিন্তাও আছে৷”

এনসিপিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছে৷ তারা বিএনপি জামায়াত উভয় দলের সঙ্গেই বৈঠকের আশা করে৷ এরইমধ্যে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গেও তারা বৈঠক করেছে৷

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, ‘‘আমরা এখন যে বৈঠকগুলো করছি সেখানে আমরা জাতীয় নির্বাচনকে মাথায় রাখিনি৷ আমরা আসলে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান তাদের জানাচ্ছি৷  প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের বিচার এই দুইটি বিষয়কেই আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি৷’’

‘‘আর নির্বাচনের আগে আমরা নির্বাচনী জোটের কথা ভাবব৷  তবে সেই জোট হবে আমাদের৷ আমরা অন্য কোনো জোটে যাব না৷ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার চিন্তা আমাদের আছে,” বলেন তিনি৷

জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্টতার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘জামায়াত তো রোজার আগে নির্বাচন চেয়েছে৷ সেই ধরনের অবস্থানে তো আমরা নাই৷ আমরা তো সংস্কার শেষে নির্বাচন চাই৷ আর আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চাই৷ সেটা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে চাই৷ কারণ যেভাবে চাঁদাবাজি দখল বেড়ে যাচ্ছে তাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দরকার৷ সেই চাওয়ার সঙ্গে হয়তো আমাদের সাথে জামায়াতের মিল আছে৷ কিন্তু আমরা চাইছি, আমাদের চিন্তা থেকে৷ আর জামায়াতের সঙ্গে কোনো জোট করার সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নেইনি৷’’

জামায়াতের সাথে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়ে দলটির  যুগ্ম মহাচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘জামায়াত নিয়ে আমাদের বোঝাপড়ার কোনো বিষয় নাই৷ বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল , জামায়াত আরেকটি রাজনৈতিক দল৷ তারা তাদের মতো চলে৷   লন্ডনে যে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের আমীর দেখা করেছেন এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ, রাজনৈতিক শিষ্টাচার৷ এর বাইরে যা বলা হচ্ছে তা আমরা পত্রিকায়ই দেখছি৷”

‘‘তারা বলছে পরিপূর্ণ সংস্কারের পর নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে৷ বলছে এই মূহুর্তে নির্বাচনের দরকার নেই৷ আসলে বাস্তব অবস্থা হচ্ছে দেশের মানুষ জাতীয় নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করে আছে৷ আমরা সেই নির্বাচনের জন্যই কাজ করছি৷ আমরা আমাদের জোটের দলগুলোর সঙ্গে এনিয়ে ধরাবাহিক বৈঠক করছি৷ আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই,’’ বলেন তিনি৷

জামায়াতের সঙ্গে কোনো বৈঠক বা আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সে বিষয়টি আমার জানা নেই৷ আরো উপরের নেতারা বলতে পারবেন৷’’

বিএনপি জামায়তের সম্পর্কের বিষয়টি দুইটি সমীকরণ থেকে দেখছেন  রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান ৷ তিনি বলেন,  আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না, এটা একটা বিষয়৷ আরেকটি বিষয় হলো, আগে বিএনপির কাছে জামায়াত যতটা প্রয়োজনীয় ছিলো আমার মনে হয় এখন ততটা নয়৷ জামায়াতের পপুলার ভোটের পার্সেন্টেজ কখনো খুব বেশি ছিল না৷ যদি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় তখন একশ’র মতো আসন আছে সেখানে জামায়াতের ৩০-৪০ হাজার ভোট আছে৷ তখন ওই ভোট নিয়ামক হয়ে ওঠে৷ তখন জামায়াত বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে৷ সেই অবস্থা এখন আর নাই৷ জামায়াত চাইছে সংস্কার, বিচার এসব দিয়ে নির্বাচনটা দেরি করতে৷ তাদের ধারনা এতে তাদের অবস্থান ভালো হবে৷’’

‘‘তবে বিএনপি এখন জামায়াতের সথে সম্পর্কটা রাখতে চাইছে যাতে নির্বাচন বিলম্বিত না হয়৷ জামায়াতের আমির লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ফেরার পর বললেন, তারা রোজার আগে নির্বাচন চায়৷ কিন্তু পরে আবার বলল সংস্কার ও বিচারের আগে নির্বাচন হবে না৷ জামায়াতকে বোঝা কঠিন৷ তারা এখন আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চায়৷  আসলে তারা তাদের প্রতিপক্ষকে নানাভাবে টেনশনের মধ্যে রাখতে চায়৷ তাদের ওপরও তাই নির্ভর করা কঠিন৷’’

এবিষয়ে জামায়াতের কোনো নেতার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে জামায়াতের এক নেতা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেন, ‘‘আমরা আসলে সংস্কার, নির্বাচন, বিচার সবই চাই৷ সেটা করতে হলে এই সরকারের যে যৌক্তিক সময় দরকার সেটা আমরা দেব৷ আর নির্বাচনে জোট নিয়ে এখনই জামায়াত চিন্তা করছে না৷ ৩০০ আসনেই আমাদের প্রার্থী দেয়ার সক্ষমতা আছে৷’’

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবার নির্বাচনে  ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর একটি জোট গঠন করতে চায়৷

দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘‘আমরা ধারবাহিকভাবে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি৷ একটি বড় ইসলামি রাজনৈতি দল  হিসাবে অবশ্যই এনিয়ে আমরা জামায়াতের সঙ্গে কথা বলব৷ তবে তাদের কী চিন্তা আছে তা আমরা এখনো জানি না৷’’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ১৮ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় নির্বাচন: বিএনপি-জামায়াত রসায়ন ও অন্যদের ভাবনা

Update Time : ০৯:০৯:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে রাজনৈতি দলগুলো জোট ভারি করতে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছে৷ আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলগুলো কীভাবে রাজনৈতিক জোট তৈরি করবে সে নিয়ে চলছে আলোচনা৷

বছরের পর বছর ধরে জোটসঙ্গী হিসেবে একসাতে হেঁটেছে বিএনপি ও জামায়াত৷ আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন দিকে মোড় নেবে এই দুদলের সম্পর্ক?

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ পারবে কি না তার উপর নির্ভর করছে জোটের সমীকরণ৷ ধারণা করা হচ্ছে, দলটি যদি নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে তাহলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতই বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে৷ এদিকে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নগারিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থান কেমন হয়ে উঠতে পারে তা নিয়েও আলোচনা চলছে৷

৫ আগস্টের পর নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের দূরত্ব বাড়তে থাকলেও সম্প্রতি লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাথে জাময়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বৈঠকের পর দূরত্ব কমার আভাস দেখা দিয়েছিলো৷

ওই বৈঠকের পর জামায়াতের আমীর ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময় ফেব্রুয়ারিতে (রোজার আগে) নির্বাচনের কথা বলেন৷ বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করে আসছে জাতীয় নির্বাচনের এই দাবির আগে জাাময়াতের অবস্থান ছিল অনেকটা ভিন্ন৷  তারা সংস্কারকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে তারপরে নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থান নিয়েছিল৷ কিন্তু গত সপ্তাহে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চান৷ এদিকে বিএনপি এমন প্রস্তাবনার বিরোধী৷ জাতীয় নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হোক এমনটা চায় দলটি৷ এদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে জামায়াতের সাথে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির মিল রয়েছে৷

জানা গেছে, জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বিএনপির অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা হলেও ৫ আগস্টের পরে এই দুই দলের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক বৈঠক  হয়নি৷ সহসা হবে কী না তারও কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না৷ বিএনপি এরইমধ্যে তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরীকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে৷ তাদের সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম ও এনসিপিরও বৈঠক হয়েছে৷

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরীক বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক  সাইফুল হক বলেন, ‘‘জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গী ছিলো৷ তবে এখন তাদের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব দেখছি৷ তাদের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ দেখছি না৷ এটা একটা বড় চমক৷ তবে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ আছে৷’’

তার কথা, ‘‘এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে নানামুখী বৈঠক হচ্ছে তার কারণ দুইটি৷ একটি হলো আগামীতে জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক অবস্থান এবং মেরুকরণ তৈরি করা৷  আরেকটি হলো সংস্কারের গতি তৈরি করে এবছরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন করা৷ বিএনপিসহ আমরা আরো অনেক দল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই৷ সেটা না হলো আন্দোলনের চিন্তাও আছে৷”

এনসিপিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছে৷ তারা বিএনপি জামায়াত উভয় দলের সঙ্গেই বৈঠকের আশা করে৷ এরইমধ্যে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গেও তারা বৈঠক করেছে৷

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, ‘‘আমরা এখন যে বৈঠকগুলো করছি সেখানে আমরা জাতীয় নির্বাচনকে মাথায় রাখিনি৷ আমরা আসলে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান তাদের জানাচ্ছি৷  প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের বিচার এই দুইটি বিষয়কেই আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি৷’’

‘‘আর নির্বাচনের আগে আমরা নির্বাচনী জোটের কথা ভাবব৷  তবে সেই জোট হবে আমাদের৷ আমরা অন্য কোনো জোটে যাব না৷ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার চিন্তা আমাদের আছে,” বলেন তিনি৷

জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্টতার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘জামায়াত তো রোজার আগে নির্বাচন চেয়েছে৷ সেই ধরনের অবস্থানে তো আমরা নাই৷ আমরা তো সংস্কার শেষে নির্বাচন চাই৷ আর আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চাই৷ সেটা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে চাই৷ কারণ যেভাবে চাঁদাবাজি দখল বেড়ে যাচ্ছে তাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দরকার৷ সেই চাওয়ার সঙ্গে হয়তো আমাদের সাথে জামায়াতের মিল আছে৷ কিন্তু আমরা চাইছি, আমাদের চিন্তা থেকে৷ আর জামায়াতের সঙ্গে কোনো জোট করার সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নেইনি৷’’

জামায়াতের সাথে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়ে দলটির  যুগ্ম মহাচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘জামায়াত নিয়ে আমাদের বোঝাপড়ার কোনো বিষয় নাই৷ বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল , জামায়াত আরেকটি রাজনৈতিক দল৷ তারা তাদের মতো চলে৷   লন্ডনে যে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের আমীর দেখা করেছেন এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ, রাজনৈতিক শিষ্টাচার৷ এর বাইরে যা বলা হচ্ছে তা আমরা পত্রিকায়ই দেখছি৷”

‘‘তারা বলছে পরিপূর্ণ সংস্কারের পর নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে৷ বলছে এই মূহুর্তে নির্বাচনের দরকার নেই৷ আসলে বাস্তব অবস্থা হচ্ছে দেশের মানুষ জাতীয় নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করে আছে৷ আমরা সেই নির্বাচনের জন্যই কাজ করছি৷ আমরা আমাদের জোটের দলগুলোর সঙ্গে এনিয়ে ধরাবাহিক বৈঠক করছি৷ আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই,’’ বলেন তিনি৷

জামায়াতের সঙ্গে কোনো বৈঠক বা আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সে বিষয়টি আমার জানা নেই৷ আরো উপরের নেতারা বলতে পারবেন৷’’

বিএনপি জামায়তের সম্পর্কের বিষয়টি দুইটি সমীকরণ থেকে দেখছেন  রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান ৷ তিনি বলেন,  আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না, এটা একটা বিষয়৷ আরেকটি বিষয় হলো, আগে বিএনপির কাছে জামায়াত যতটা প্রয়োজনীয় ছিলো আমার মনে হয় এখন ততটা নয়৷ জামায়াতের পপুলার ভোটের পার্সেন্টেজ কখনো খুব বেশি ছিল না৷ যদি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় তখন একশ’র মতো আসন আছে সেখানে জামায়াতের ৩০-৪০ হাজার ভোট আছে৷ তখন ওই ভোট নিয়ামক হয়ে ওঠে৷ তখন জামায়াত বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে৷ সেই অবস্থা এখন আর নাই৷ জামায়াত চাইছে সংস্কার, বিচার এসব দিয়ে নির্বাচনটা দেরি করতে৷ তাদের ধারনা এতে তাদের অবস্থান ভালো হবে৷’’

‘‘তবে বিএনপি এখন জামায়াতের সথে সম্পর্কটা রাখতে চাইছে যাতে নির্বাচন বিলম্বিত না হয়৷ জামায়াতের আমির লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ফেরার পর বললেন, তারা রোজার আগে নির্বাচন চায়৷ কিন্তু পরে আবার বলল সংস্কার ও বিচারের আগে নির্বাচন হবে না৷ জামায়াতকে বোঝা কঠিন৷ তারা এখন আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চায়৷  আসলে তারা তাদের প্রতিপক্ষকে নানাভাবে টেনশনের মধ্যে রাখতে চায়৷ তাদের ওপরও তাই নির্ভর করা কঠিন৷’’

এবিষয়ে জামায়াতের কোনো নেতার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে জামায়াতের এক নেতা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেন, ‘‘আমরা আসলে সংস্কার, নির্বাচন, বিচার সবই চাই৷ সেটা করতে হলে এই সরকারের যে যৌক্তিক সময় দরকার সেটা আমরা দেব৷ আর নির্বাচনে জোট নিয়ে এখনই জামায়াত চিন্তা করছে না৷ ৩০০ আসনেই আমাদের প্রার্থী দেয়ার সক্ষমতা আছে৷’’

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবার নির্বাচনে  ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর একটি জোট গঠন করতে চায়৷

দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘‘আমরা ধারবাহিকভাবে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি৷ একটি বড় ইসলামি রাজনৈতি দল  হিসাবে অবশ্যই এনিয়ে আমরা জামায়াতের সঙ্গে কথা বলব৷ তবে তাদের কী চিন্তা আছে তা আমরা এখনো জানি না৷’’