ঢাকা ০৯:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা Logo মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা

‘যায়যায়দিন’ প্রকাশনা হারিয়ে নতুন পত্রিকার চিন্তা এইচআরসি গ্রুপের

ঢাকা : দৈনিক যায়যায়দিন প্রকাশনার অনুমতি (ডিক্লেয়ারেশন) আইন অনুযায়ী এখন পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের হাতে ফিরে গেলো। এতদিন পত্রিকাটি ছিল এইচআরসি গ্রুপের মালিকানায়।

টানা প্রায় ১৮ বছর যায়যায়দিনের প্রকাশক ও মুদ্রাকর থাকা শিল্পপতি সাঈদ হোসেন চৌধুরী এখন নতুন পত্রিকা বাজারে আনার পরিকল্পনা করছেন। এইচআরসি আর যায়যায়দিন নয়, অন্য পত্রিকা খুঁজছে।

এইচআরসির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যায়যায়দিনের ডিক্লেয়ারেশন শফিক রেহমানের হাতে চলে যাওয়ার বিষয়ে তারা আইনি লড়াই করবেন। এ লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ী না হলে নতুন দৈনিক পত্রিকা বাজারে আনবে এইচআরসি গ্রুপ। যায়যায়দিনে এখন যারা কর্মরত আছেন, তারা যেন বেকার হয়ে না পড়েন, সেজন্যই কর্তৃপক্ষ এমন পরিকল্পনা করছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তারা জানান, এইচআরসির মালিকানায় যায়যায়দিন ছাড়াও আরো দুটি পত্রিকার ডিক্লেয়ারেশন (ঘোষণাপত্র) আছে। এর মধ্যে একটি ইংরেজি দৈনিক, আরেকটি বাংলা সাপ্তাহিক।

ইংরেজি দৈনিকটির নাম ‘বিজনেস টাইমস’ আর বাংলাটির নাম ‘সাপ্তাহিক প্রতিচ্চিত্র’। ইংরেজি পত্রিকাটি নতুন আঙ্গিকে প্রকাশের চিন্তা করছেন এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও যায়যায়দিনের সম্পাদকমণ্ডলীর সাবেক সভাপতি সাঈদ হোসেন চৌধুরী।

সাপ্তাহিক প্রতিচ্চিত্রকে দৈনিক হিসেবে ছাপানো যায় কী না, সেই চিন্তাও করছে এইচআরসি। এ জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিচ্চিত্রকে দৈনিক হিসেবে প্রকাশের জন্য শিগগিরই অনুমতি চাওয়া হবে।

যায়যায়দিনে কর্মরত শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শফিক রেহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে পত্রিকাটির প্রকাশনার অনুমতি বাতিল হওয়ায় ও প্রকাশনার অনুমতি তার হাতে চলে যাওয়ায় তারা এখন বেকারত্বের কবলে পড়ছেন। বিভিন্ন বিভাগে মিলিয়ে শতাধিক লোক যায়যায়দিনে কর্মরত আছেন বলে তারা জানান।

জানা যায়, ছাপা পত্রিকার প্রকাশনার অনুমতি শফিক রেহমানের দখলে থাকলেও যায়যায়দিনের অনলাইন সংস্করণ এখনো চালু রেখেছে এইচআরসি গ্রুপ। পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে আজ বুধবারও (১৯শে মার্চ) সংবাদ আপলোড হয়।

গত ১২ই মার্চ যায়যায়দিনের ডিক্লেয়ারেশন (প্রকাশনার অনুমতি) বাতিল করে সরকার। প্রকাশের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে পত্রিকাটির সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়।

পত্রিকাটি প্রকাশের জন্য যে অনুমোদিত ছাপাখানা রয়েছে, সেখান থেকে ছাপা হচ্ছে না; কিন্তু প্রিন্টার্স লাইনে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে মর্মে শফিক রেহমান অভিযোগ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার পর এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পত্রিকাটি মুদ্রণের ডিক্লেয়ারেশন বা ঘোষণাপত্র বাতিল হয়।

যায়যায়দিন শফিক রেহমানের গড়া পত্রিকা। সাপ্তাহিক সন্ধানী পত্রিকায় (এখন প্রকাশনায় নেই) তিনি ‘যায়যায়দিন’ শিরোনামে কলাম লিখতেন। দর্শন শাস্ত্রের পণ্ডিত অধ্যাপক সাঈদুর রহমানের ছেলে সাংবাদিক শফিক রেহমান এ নামেই ১৯৮৪ সালে, পতিত স্বৈরাচারী এরশাদের সরকারের আমলে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি দেশে ভালোবাসা দিবসের প্রবর্তন করে।

২০০৭ সালে তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপে যায়যায়দিন পত্রিকা ছাড়তে বাধ্য হন শফিক রেহমান। বিষয়টি ২০০৮ সালের আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনেও ঠাঁই পায়। এর ১৮ বছর পর পুনরায় পত্রিকাটি নিজের নামে ফিরে পেলেন তিনি।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সরকার আমলে মামলায় জড়িয়ে দেশ ছাড়া হওয়া শফিক রেহমান গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে ফিরে যায়যায়দিন ফিরে পাওয়ার তৎপরতা শুরু করেন। ২০০৬ সালে বড় পরিসরে যায়যায়দিন দৈনিক হিসেবে যাত্রা করে। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ‘যায়যায়দিন মিডিয়াপ্লেক্স’ও গড়ে তোলেন তিনি।

দৈনিক হিসেবে প্রকাশনা শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে বিএনপির সরকারের মেয়াদ শেষে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পত্রিকাটির বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মীকে ছাঁটাই করেন শফিক রেহমান। তা নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাকে। এরপর এক পর্যায়ে যায়যায়দিনের কর্তৃত্ব হারান তিনি। পত্রিকাটি চলে যায় এইচআরসির অধীনে।

যায়যায়দিন হারালেও আওয়ামী লীগের সরকার আমলের শুরুতে দেশে থেকে ‘মৌচাকে ঢিল’ নামে একটি পত্রিকা চালিয়ে যাচ্ছিলেন শফিক রেহমান। সূত্র : সুখবর ডটকম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত

‘যায়যায়দিন’ প্রকাশনা হারিয়ে নতুন পত্রিকার চিন্তা এইচআরসি গ্রুপের

Update Time : ০৬:৪৬:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

ঢাকা : দৈনিক যায়যায়দিন প্রকাশনার অনুমতি (ডিক্লেয়ারেশন) আইন অনুযায়ী এখন পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের হাতে ফিরে গেলো। এতদিন পত্রিকাটি ছিল এইচআরসি গ্রুপের মালিকানায়।

টানা প্রায় ১৮ বছর যায়যায়দিনের প্রকাশক ও মুদ্রাকর থাকা শিল্পপতি সাঈদ হোসেন চৌধুরী এখন নতুন পত্রিকা বাজারে আনার পরিকল্পনা করছেন। এইচআরসি আর যায়যায়দিন নয়, অন্য পত্রিকা খুঁজছে।

এইচআরসির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যায়যায়দিনের ডিক্লেয়ারেশন শফিক রেহমানের হাতে চলে যাওয়ার বিষয়ে তারা আইনি লড়াই করবেন। এ লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ী না হলে নতুন দৈনিক পত্রিকা বাজারে আনবে এইচআরসি গ্রুপ। যায়যায়দিনে এখন যারা কর্মরত আছেন, তারা যেন বেকার হয়ে না পড়েন, সেজন্যই কর্তৃপক্ষ এমন পরিকল্পনা করছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তারা জানান, এইচআরসির মালিকানায় যায়যায়দিন ছাড়াও আরো দুটি পত্রিকার ডিক্লেয়ারেশন (ঘোষণাপত্র) আছে। এর মধ্যে একটি ইংরেজি দৈনিক, আরেকটি বাংলা সাপ্তাহিক।

ইংরেজি দৈনিকটির নাম ‘বিজনেস টাইমস’ আর বাংলাটির নাম ‘সাপ্তাহিক প্রতিচ্চিত্র’। ইংরেজি পত্রিকাটি নতুন আঙ্গিকে প্রকাশের চিন্তা করছেন এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও যায়যায়দিনের সম্পাদকমণ্ডলীর সাবেক সভাপতি সাঈদ হোসেন চৌধুরী।

সাপ্তাহিক প্রতিচ্চিত্রকে দৈনিক হিসেবে ছাপানো যায় কী না, সেই চিন্তাও করছে এইচআরসি। এ জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিচ্চিত্রকে দৈনিক হিসেবে প্রকাশের জন্য শিগগিরই অনুমতি চাওয়া হবে।

যায়যায়দিনে কর্মরত শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শফিক রেহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে পত্রিকাটির প্রকাশনার অনুমতি বাতিল হওয়ায় ও প্রকাশনার অনুমতি তার হাতে চলে যাওয়ায় তারা এখন বেকারত্বের কবলে পড়ছেন। বিভিন্ন বিভাগে মিলিয়ে শতাধিক লোক যায়যায়দিনে কর্মরত আছেন বলে তারা জানান।

জানা যায়, ছাপা পত্রিকার প্রকাশনার অনুমতি শফিক রেহমানের দখলে থাকলেও যায়যায়দিনের অনলাইন সংস্করণ এখনো চালু রেখেছে এইচআরসি গ্রুপ। পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে আজ বুধবারও (১৯শে মার্চ) সংবাদ আপলোড হয়।

গত ১২ই মার্চ যায়যায়দিনের ডিক্লেয়ারেশন (প্রকাশনার অনুমতি) বাতিল করে সরকার। প্রকাশের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে পত্রিকাটির সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়।

পত্রিকাটি প্রকাশের জন্য যে অনুমোদিত ছাপাখানা রয়েছে, সেখান থেকে ছাপা হচ্ছে না; কিন্তু প্রিন্টার্স লাইনে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে মর্মে শফিক রেহমান অভিযোগ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার পর এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পত্রিকাটি মুদ্রণের ডিক্লেয়ারেশন বা ঘোষণাপত্র বাতিল হয়।

যায়যায়দিন শফিক রেহমানের গড়া পত্রিকা। সাপ্তাহিক সন্ধানী পত্রিকায় (এখন প্রকাশনায় নেই) তিনি ‘যায়যায়দিন’ শিরোনামে কলাম লিখতেন। দর্শন শাস্ত্রের পণ্ডিত অধ্যাপক সাঈদুর রহমানের ছেলে সাংবাদিক শফিক রেহমান এ নামেই ১৯৮৪ সালে, পতিত স্বৈরাচারী এরশাদের সরকারের আমলে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি দেশে ভালোবাসা দিবসের প্রবর্তন করে।

২০০৭ সালে তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপে যায়যায়দিন পত্রিকা ছাড়তে বাধ্য হন শফিক রেহমান। বিষয়টি ২০০৮ সালের আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনেও ঠাঁই পায়। এর ১৮ বছর পর পুনরায় পত্রিকাটি নিজের নামে ফিরে পেলেন তিনি।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সরকার আমলে মামলায় জড়িয়ে দেশ ছাড়া হওয়া শফিক রেহমান গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে ফিরে যায়যায়দিন ফিরে পাওয়ার তৎপরতা শুরু করেন। ২০০৬ সালে বড় পরিসরে যায়যায়দিন দৈনিক হিসেবে যাত্রা করে। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ‘যায়যায়দিন মিডিয়াপ্লেক্স’ও গড়ে তোলেন তিনি।

দৈনিক হিসেবে প্রকাশনা শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে বিএনপির সরকারের মেয়াদ শেষে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পত্রিকাটির বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মীকে ছাঁটাই করেন শফিক রেহমান। তা নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাকে। এরপর এক পর্যায়ে যায়যায়দিনের কর্তৃত্ব হারান তিনি। পত্রিকাটি চলে যায় এইচআরসির অধীনে।

যায়যায়দিন হারালেও আওয়ামী লীগের সরকার আমলের শুরুতে দেশে থেকে ‘মৌচাকে ঢিল’ নামে একটি পত্রিকা চালিয়ে যাচ্ছিলেন শফিক রেহমান। সূত্র : সুখবর ডটকম।