ঢাকা ০৯:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা Logo মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা

বিদেশি কূটনীতিকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করতেন মেঘনা!

ঢাকা: সৌদি আরবের সদ্য বিদায়ি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন ঈসা আল দুহাইলানকে ব্ল্যাকমেইল ও অর্থ আদায়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন মডেল ও ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ ২০২০’ বিজয়ী মেঘনা আলম। বিষয়টি ঘিরে শুরু হয়েছে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা এবং প্রশাসনিক অস্থিরতা।

স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, মেঘনা আলম ও তার সহযোগীরা উচ্চপদস্থ বিদেশি কূটনীতিকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন। চক্রটির অন্যতম হোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মানব পাচার চক্রের মাথা দেওয়ান সমীর (৫৮)।

টার্গেটে ছিলেন সৌদি রাষ্ট্রদূত, দাবি করা হয় ৫০ লাখ ডলার

গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে, গত বছরের জানুয়ারিতে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পরিচয় হয় মেঘনার, যা পরে গড়ায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে। এরপর মডেল মেঘনা আলম রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫০ লাখ মার্কিন ডলার) দাবি করেন। এই দাবির জন্য মূল চাপ সৃষ্টি করতেন দেওয়ান সমীর।

রাষ্ট্রদূত বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিযোগ করেন, যা পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে ডিবিকে জানানো হয়। গোপন তদন্ত শেষে গত ৯ এপ্রিল রাতে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ মেঘনাকে গ্রেফতার করে। এরপর আদালতের আদেশে তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের জন্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

সমীরের ‘প্রেম ফাঁদ’ অপারেশন

রিমান্ডে নেওয়া দেওয়ান সমীর বর্তমানে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে আছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিনি সুন্দরী মেয়েদের ব্যবহার করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলতেন। গোপনে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করতেন।

সমীর কাওয়ালী নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং সানজানা নামের একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের মালিক, যা মানব পাচারে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

মেঘনা আলমের অতীত ও ব্যক্তিগত জীবন

মেঘনার পরিবার জানায়, তারা তিন দশক আগে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসেন। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে এইচএসসি এবং পরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। ২০২০ সালে ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ খেতাব জয় করেন। মডেলিংয়ের পাশাপাশি তিনি উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করছিলেন।

মেঘনার পরিবারের দাবি, রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার গোপনে বাগদান হয় ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর। যদিও এ সম্পর্কিত কোনো প্রামাণ্য দলিল দেখাতে পারেননি তারা।

হাইকোর্টে রুল, ডিবি প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া

গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ও আইনগত বৈধতা নিয়ে মেঘনার বাবার করা রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছেন। এতে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার, ২৪ ঘণ্টার বেশি ডিবি হেফাজতে রাখা, আইনজীবীর সুযোগ না দেওয়া এবং আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে।

এই ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে পদচ্যুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

সামাজিক ভাবমূর্তি

সূত্র জানিয়েছে, মেঘনার ঘনিষ্ঠতা কেবল একজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে নয়, আরও কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গেও ছিল, যা দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও কূটনৈতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত

বিদেশি কূটনীতিকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করতেন মেঘনা!

Update Time : ০৮:৫৪:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
ঢাকা: সৌদি আরবের সদ্য বিদায়ি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন ঈসা আল দুহাইলানকে ব্ল্যাকমেইল ও অর্থ আদায়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন মডেল ও ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ ২০২০’ বিজয়ী মেঘনা আলম। বিষয়টি ঘিরে শুরু হয়েছে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা এবং প্রশাসনিক অস্থিরতা।

স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, মেঘনা আলম ও তার সহযোগীরা উচ্চপদস্থ বিদেশি কূটনীতিকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন। চক্রটির অন্যতম হোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মানব পাচার চক্রের মাথা দেওয়ান সমীর (৫৮)।

টার্গেটে ছিলেন সৌদি রাষ্ট্রদূত, দাবি করা হয় ৫০ লাখ ডলার

গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে, গত বছরের জানুয়ারিতে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পরিচয় হয় মেঘনার, যা পরে গড়ায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে। এরপর মডেল মেঘনা আলম রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫০ লাখ মার্কিন ডলার) দাবি করেন। এই দাবির জন্য মূল চাপ সৃষ্টি করতেন দেওয়ান সমীর।

রাষ্ট্রদূত বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিযোগ করেন, যা পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে ডিবিকে জানানো হয়। গোপন তদন্ত শেষে গত ৯ এপ্রিল রাতে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ মেঘনাকে গ্রেফতার করে। এরপর আদালতের আদেশে তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের জন্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

সমীরের ‘প্রেম ফাঁদ’ অপারেশন

রিমান্ডে নেওয়া দেওয়ান সমীর বর্তমানে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে আছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিনি সুন্দরী মেয়েদের ব্যবহার করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলতেন। গোপনে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করতেন।

সমীর কাওয়ালী নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং সানজানা নামের একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের মালিক, যা মানব পাচারে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

মেঘনা আলমের অতীত ও ব্যক্তিগত জীবন

মেঘনার পরিবার জানায়, তারা তিন দশক আগে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসেন। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে এইচএসসি এবং পরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। ২০২০ সালে ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ খেতাব জয় করেন। মডেলিংয়ের পাশাপাশি তিনি উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করছিলেন।

মেঘনার পরিবারের দাবি, রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার গোপনে বাগদান হয় ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর। যদিও এ সম্পর্কিত কোনো প্রামাণ্য দলিল দেখাতে পারেননি তারা।

হাইকোর্টে রুল, ডিবি প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া

গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ও আইনগত বৈধতা নিয়ে মেঘনার বাবার করা রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছেন। এতে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার, ২৪ ঘণ্টার বেশি ডিবি হেফাজতে রাখা, আইনজীবীর সুযোগ না দেওয়া এবং আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে।

এই ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে পদচ্যুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

সামাজিক ভাবমূর্তি

সূত্র জানিয়েছে, মেঘনার ঘনিষ্ঠতা কেবল একজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে নয়, আরও কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গেও ছিল, যা দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও কূটনৈতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।