
পাবনার ঈশ্বরদীর বাজারে হঠাৎ লাগামহীন হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের দাম। ঈশ্বরদী বাজার ও গ্রামাঞ্চলের খুচরা বাজারে পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত পাঁচ দিন আগে মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
কাঁচা বাজারের আড়তদারর এবং ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মূলত দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ছে।
গতকাল মঙ্গলবার ( ৪ নভেম্বর) ঈশ্বরদীর হাট বাজারে পেঁয়াজ মান ভেদে১০০ টাকা থেকে১০৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আজ বুধবার (৫ নভেম্বর ) উপজেলার ঈশ্বরদী শহর, বাঁশেরবাদা,আওতাপাড়া, আরামবাড়িয়া, বড়ইচারা, জয়নগর, সাহাপুর, দাশুড়িয়া, পাকশী, রূপপুর, মুলাডুলি ও ঈশ্বরদী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। অপেক্ষাকৃত কম ভালো মানেরটা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে এইসব কম মানের পিঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
কৃষক,ব্যবসায়ী ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। স্থানীয় উৎপাদন থেকেই চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ হচ্ছে বাজারে। তবে এখন মৌসুমের শেষে মজুদ কমে আসায় বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। বছরজুড়ে স্থিতিশীল থাকলেও পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পাইকারি পর্যায়ে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৭২ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলাগুলোয় দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন ঈশ্বরদীর কাঁচামালের ব্যবসায়ীরা। তারা আরও বলেন,পেঁয়াজ উৎপাদনের এলাকা পাবনাতেই গত দুদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
ঈশ্বরদী পৌর শহর বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবুল হাসেম বলেন, গত দশ মাস দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকায় দাম স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে মোকামগুলোয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে মসলাপণ্যটির দামে।’
উপজেলার আরামবাড়িয়া বাজারের কাঁচামালের ব্যবসায়ী মিলন ও খোকন বলেন, ডিসেম্বরের শেষার্ধে কিংবা জানুয়ারির শুরুতে দেশে মুড়িকাটা পেঁয়াজের উত্তোলন মৌসুম শুরু হবে। ফলে আগামী অন্তত দুই মাস দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ধারাবাহিকভাবে কমবে। এ কারণে সামনের দুই মাস পেঁয়াজের বাজার চড়া থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
কৃষক, ব্যবসায়ী ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে রবি মৌসুম শুরু হয় অক্টোবরের মাঝামাঝি। এরই মধ্যে পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় পেঁয়াজের রোপণ মৌসুম শুরু হয়েছে। বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারণে রোপণ কয়েকদিন দেরিতে শুরু হওয়ার পড়ে। আবার নতুন করে গত কয়েকদিন আগে পেঁয়াজ রোপনের এলাকা গুলোতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে লাগানো পেঁয়াজ নষ্ট হয়। ওইসব জমিতে কৃষকদের আবার নতুন করে পেঁয়াজ লাগানো হচ্ছে। এতে হঠাৎ করেই সরবরাহ কমে যায়। নতুন পেঁয়াজ আসতেও কিছুটা বেশি সময় লাগবে। ওই সময় পর্যন্ত বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না করা গেলে দেশে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে পেঁয়াজ আমদানির আইপি (আমদানি অনুমোদন) দেয়া না হলে সামনের দিনে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা আরো বলছেন, দীর্ঘদিন মাচায় মজুদ থাকায় শুকিয়ে পেঁয়াজের ওজন কমে যায়। এ কারণে বর্তমানে ব্যাপারী ও কৃষক পর্যায় থেকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের সময় মুনাফা বজায় রাখতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এতেও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।
দেশে দুই ধাপে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। রবি মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজের চারা (মুড়িকাটা) রোপণ করা হয়। এ জাতের পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। উৎপাদন মৌসুমেই এসব পেঁয়াজ বিক্রি ও ভোগ করে সাধারণ ভোক্তারা। মুড়িকাটা পেঁয়াজ উত্তোলন শেষ হলে একই জমিতে কৃষক হালি বা বীজ পেঁয়াজ রোপণ করেন। এ পেঁয়াজ মাচা বা বিভিন্ন সংরক্ষণ ঘরে দীর্ঘদিন মজুদ রাখা হয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশে পেঁয়াজ আমদানিতে আইপি দিচ্ছে না সরকার। এতে বাজার দেশীয় উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে এবং একটা নির্দিষ্ট দামে পৌঁছে পেঁয়াজের দাম স্থির ছিল। কিন্তু এখন মৌসুম শেষ হয়ে আসায় দাম কিছুটা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল মমিন বলেন, এবার অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের আগাম পেঁয়াজ বাজারে আসেনি। কৃষকের মাঠে এবং তাদের কাছে পেঁয়াজের মজুদ কমে গিয়েছে। তবে এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষক ও ব্যাপারী পর্যায়ে ভালো লাভ পাওয়ায় আগামী মৌসুমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক কৃষক আগের তুলনায় বাড়তি জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছেন।’ ফলে মৌসুমের শেষ দিকে দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও পেঁয়াজের দেশীয় উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।
আলমাস আলী, ঈশ্বরদী (পাবনা ) প্রতিবেদক 


















