ঢাকা ১০:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ Logo কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়: তারেক রহমান Logo আগামীকাল থেকে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা Logo বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হবে আ,লীগ ও  জাতীয় পার্টি–নুরুল হক নুর Logo শীতের আগমনে কুয়াশার চাদরে ঢাকা  সৈয়দপুর শহর Logo পাবনা ৪ আসনে বিএনপি’র হাবিবকে সমর্থন করেও বিপক্ষে গেলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী জাকারিয়া পিন্টু Logo গণভোট নিয়ে দলগুলো ঐকমত্যে না এলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব Logo ড. ইউনূসকে শব্দ চয়নে সতর্ক থাকার আহ্বান ভারতের Logo সংবিধানে গণভোট নেই, কথায় কথায় রাস্তায় নামবেন না: আমীর খসরু Logo সাপের কামড়ের ওষুধ সব উপজেলায় পাঠানোর নির্দেশ

কম খরচে দেশীয় প্রযুক্তিতে রেল লাইন কাটার যন্ত্র উদ্ভাবন করে নজর কাড়লেন রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী

কম খরচে দেশীয় প্রযুক্তিতে রেললাইন কাটার অত্যাধুনিক একটি যন্ত্র তৈরি করে আলোচনায় এসেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী -২ নাজিব কায়সার বিন্দু। এর আগে জার্মানি থেকে যে মেশিন বেশি টাকায় আমদানি করতে হতো, সেটি এখন মাত্র ২৭ হাজার ৫০০ টাকায় দেশেই তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এই রেল কাটিং মেশিন দিয়ে মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ডে একটি রেল প্রস্থ বরাবর কাঁটা যায়। খরচ হবে মাত্র সাড়ে ২৭ হাজার টাকা।

রেল চলাচল করতে গিয়ে কোন কারণবশতো রেললাইনে ট্রেন লাইনচ্যূত হওয়ার পর রেললাইন ফাঁটল দেখা দেয়। আবার কখনো প্রচণ্ড গরমে রেললাইন ভেঙ্গেও যায়। এসময় রেললাইন মেরামত করে ট্রেন যাত্রীদের ভ্রমণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে রেল প্রস্থ বরাবর কাঁটতে ‘রেল কাটিং মেশিন’ খুব প্রয়োজন হয়ে ওঠে।

রেল কাটিং মেশিনগুলো জার্মানি থেকে আমদানি করলে দাম পড়তো প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। সেই মেশিন দিয়ে রেললাইন কাঁটতে কয়েক মিনিট সময় লাগত।

প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু , পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের  পাকশী বিভাগে বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ হিসেবে পাবনার ঈশ্বরদীর উপজেলার রেলওয়ের বিভাগীয় সদর দপ্তর পাকশীতে কর্মরত রয়েছেন।

প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে প্রথম যোগদান করেন।

জানা যায়, প্রকৌশলী নাজিব কায়সার ১৯৮৯ সালের ২৬ জানুয়ারী রাজশাহীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৯৪ সালে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর  নর্থ বেঙ্গল চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে বাবার চাকুরীর বদলী সূত্রে ঠাকুরগাঁও চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় ও ২০০৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে শ্যামপুর চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করেন৷ ২০০৫ সালে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ কৃতিত্ব অর্জন করেন। ২১ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে নাজিব কায়সার ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষার্থী।

শিক্ষা জীবনে তিনি ২০০৫- ০৬ সেশনে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে স্নাতক পাস করে ৩৩ তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।
নাজিব কায়সার বিন্দুর পিতা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশন এর মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। নাজিমুল হক-লুৎফেয়ারা বেগম দম্পত্তির একমাত্র সন্তান তিনি।

নাজিব কায়সার বিন্দু ছোটবেলা থেকে বেশ দুরন্ত ছিলেন। খেলাধূলোর প্রতি ঝোঁক ছিল অনেক, চঞ্চল প্রকৃতির হলেও খুব স্বাধীন ছিল না ছাত্রজীবন। মা-বাবার রক্তচক্ষুকে অনেক ভয় পেতেন। নাজিব কায়সারের স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে তিনি ক্রিকেটার হবেন। কৈশোরে স্কুল পালিয়ে প্রায়  তিনি ক্রিকেট খেলতেন। ওইসময় ক্রিকেটার হবে ছেলে, এটা মা-বাবা পছন্দ করতেন না।

একমাত্র সন্তানকে নিয়ে পরিবারের স্বপ্ন ছিল, তাদের একমাত্র সন্তান সরকারী চাকুরীজীবী হবে। আর তাই কৈশোরে মায়ের শাষনে পড়াশুনার চাপে বিন্দুর বুঝতে বাঁকি থাকে না, তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন অধরা। পরে সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার আশায় নিজের লক্ষ্যটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। অবশেষে মায়ের শাষণ আর ভালোবাসার উৎসাহ নিয়ে ৩৩তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করে তিনি বিসিএস (রেলওয়ে প্রকৌশল) ক্যাডার প্রাপ্ত পান।

পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ নাজিব কায়সার বিন্দু  জানান, এই রেল কাটিং মেশিনের বিশেষত্ব হলো, এই মেশিনে যেকোন সাইজের কাটিং ডিস্ক ব্যবহার করা যায়। মেশিনটি রেললাইনে ট্রেন লাইনচ্যূত কিংবা কোন দূর্ঘটনা ঘটলে রেল কর্মচারীদের তাৎক্ষণিক দ্রুতসময়ে রেললাইন কাঁটতে সাহায্য করে। মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময়ে রেলকে দ্বিখণ্ডিত করা যায়।

৭ দশমিক  ৫  হর্স পাওয়ার বিশিষ্ট প্রেট্রোল ইঞ্জিন দ্বারা মেশিনটি পরিচালিত হয়। এটা একটি পোর্টেবল মেশিন, যার ওজন প্রায় ৩৫ কেজি। পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ নাজিব কায়সার  বিন্দু আরও জানান, আগে যতগুলো রেল কাটিং মেশিন কেনা হয়েছে সেগুলো জার্মানি থেকে আমদানি করা। যার দাম ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। আবার বিদেশ থেকে নিয়ে আসতেও সময় লাগতো। সেই মেশিন দিয়ে রেললাইন কাটতে বেশ সময় লাগতো। কিন্তু আমার উদ্ভাবন করা মেশিন দ্বারা মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময়ে একটি রেল প্রস্থ বরাবর কাঁটা যায়।

প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু আরও জানান, মেশিনটি তৈরী করা হয়েছে ঈশ্বরদীস্থ প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারীদের দিয়ে। প্রথম বানানো বলে বেশি সময় লেগেছে। এই রেল কাটিং মেশিন বানাতে সর্বোচ্চ পাঁচদিন সময় লাগবে, যদি যন্ত্রাংগুলো বাজারে সহজে পাওয়া যায়।

প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু বলেন, আমি দেশকে ভালোবাসি। তাই দেশের টাকা দেশে রাখার ইচ্ছে থেকে আমার মুলত দেশীয় প্রযুক্তিতে রেল কাটিং বানানোর ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন থেকেই। সেই ইচ্ছেকে বাস্তবেই রূপ দিয়েছি।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবু জাফর জানান, ব্রিটিশ আমলে হেচকো ব্লেড দিয়ে রেললাইন কাঁটতে ১ থেকে দেড় ঘন্টা সময় ব্যায় হতো। জার্মানি থেকে আমদানী করা মেশিনে কয়েক মিনিট সময় লাগতো, দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই কাটিং মেশিনটি দিয়ে আমরা ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় একটি রেলকে প্রস্থ বরাবর কাঁটতে পারছি, এতে আমাদের সময় সাশ্রয় হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) লিয়াকত শরীফ খান জানান, কম খরচে, দেশীয় প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তায় রেল কাটিং মেশিন উদ্ভাবন করা হয়েছে। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারীরা পরিক্ষামুলকভাবে ওই কাটিং মেশিন দিয়ে কাজ করছে। যদি টেকসই হয়, তাহলে ঈশ্বরদী ওয়ার্কসপ থেকে সরকারী খরচে রেল কাটিং মেশিন তৈরী করা হবে।

উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু এই উদ্ভাবনের প্রশংসা করেছেন। তাদের মতে, মাঠপর্যায়ে সফল প্রমাণিত হলে এটি পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চল উভয় অঞ্চলের রেলওয়ে কারখানায় সরবরাহ করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ

কম খরচে দেশীয় প্রযুক্তিতে রেল লাইন কাটার যন্ত্র উদ্ভাবন করে নজর কাড়লেন রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী

Update Time : ১০:১৬:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

কম খরচে দেশীয় প্রযুক্তিতে রেললাইন কাটার অত্যাধুনিক একটি যন্ত্র তৈরি করে আলোচনায় এসেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী -২ নাজিব কায়সার বিন্দু। এর আগে জার্মানি থেকে যে মেশিন বেশি টাকায় আমদানি করতে হতো, সেটি এখন মাত্র ২৭ হাজার ৫০০ টাকায় দেশেই তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এই রেল কাটিং মেশিন দিয়ে মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ডে একটি রেল প্রস্থ বরাবর কাঁটা যায়। খরচ হবে মাত্র সাড়ে ২৭ হাজার টাকা।

রেল চলাচল করতে গিয়ে কোন কারণবশতো রেললাইনে ট্রেন লাইনচ্যূত হওয়ার পর রেললাইন ফাঁটল দেখা দেয়। আবার কখনো প্রচণ্ড গরমে রেললাইন ভেঙ্গেও যায়। এসময় রেললাইন মেরামত করে ট্রেন যাত্রীদের ভ্রমণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে রেল প্রস্থ বরাবর কাঁটতে ‘রেল কাটিং মেশিন’ খুব প্রয়োজন হয়ে ওঠে।

রেল কাটিং মেশিনগুলো জার্মানি থেকে আমদানি করলে দাম পড়তো প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। সেই মেশিন দিয়ে রেললাইন কাঁটতে কয়েক মিনিট সময় লাগত।

প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু , পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের  পাকশী বিভাগে বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ হিসেবে পাবনার ঈশ্বরদীর উপজেলার রেলওয়ের বিভাগীয় সদর দপ্তর পাকশীতে কর্মরত রয়েছেন।

প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে প্রথম যোগদান করেন।

জানা যায়, প্রকৌশলী নাজিব কায়সার ১৯৮৯ সালের ২৬ জানুয়ারী রাজশাহীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৯৪ সালে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর  নর্থ বেঙ্গল চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে বাবার চাকুরীর বদলী সূত্রে ঠাকুরগাঁও চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় ও ২০০৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে শ্যামপুর চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করেন৷ ২০০৫ সালে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ কৃতিত্ব অর্জন করেন। ২১ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে নাজিব কায়সার ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষার্থী।

শিক্ষা জীবনে তিনি ২০০৫- ০৬ সেশনে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে স্নাতক পাস করে ৩৩ তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।
নাজিব কায়সার বিন্দুর পিতা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশন এর মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। নাজিমুল হক-লুৎফেয়ারা বেগম দম্পত্তির একমাত্র সন্তান তিনি।

নাজিব কায়সার বিন্দু ছোটবেলা থেকে বেশ দুরন্ত ছিলেন। খেলাধূলোর প্রতি ঝোঁক ছিল অনেক, চঞ্চল প্রকৃতির হলেও খুব স্বাধীন ছিল না ছাত্রজীবন। মা-বাবার রক্তচক্ষুকে অনেক ভয় পেতেন। নাজিব কায়সারের স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে তিনি ক্রিকেটার হবেন। কৈশোরে স্কুল পালিয়ে প্রায়  তিনি ক্রিকেট খেলতেন। ওইসময় ক্রিকেটার হবে ছেলে, এটা মা-বাবা পছন্দ করতেন না।

একমাত্র সন্তানকে নিয়ে পরিবারের স্বপ্ন ছিল, তাদের একমাত্র সন্তান সরকারী চাকুরীজীবী হবে। আর তাই কৈশোরে মায়ের শাষনে পড়াশুনার চাপে বিন্দুর বুঝতে বাঁকি থাকে না, তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন অধরা। পরে সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার আশায় নিজের লক্ষ্যটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। অবশেষে মায়ের শাষণ আর ভালোবাসার উৎসাহ নিয়ে ৩৩তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করে তিনি বিসিএস (রেলওয়ে প্রকৌশল) ক্যাডার প্রাপ্ত পান।

পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ নাজিব কায়সার বিন্দু  জানান, এই রেল কাটিং মেশিনের বিশেষত্ব হলো, এই মেশিনে যেকোন সাইজের কাটিং ডিস্ক ব্যবহার করা যায়। মেশিনটি রেললাইনে ট্রেন লাইনচ্যূত কিংবা কোন দূর্ঘটনা ঘটলে রেল কর্মচারীদের তাৎক্ষণিক দ্রুতসময়ে রেললাইন কাঁটতে সাহায্য করে। মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময়ে রেলকে দ্বিখণ্ডিত করা যায়।

৭ দশমিক  ৫  হর্স পাওয়ার বিশিষ্ট প্রেট্রোল ইঞ্জিন দ্বারা মেশিনটি পরিচালিত হয়। এটা একটি পোর্টেবল মেশিন, যার ওজন প্রায় ৩৫ কেজি। পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ নাজিব কায়সার  বিন্দু আরও জানান, আগে যতগুলো রেল কাটিং মেশিন কেনা হয়েছে সেগুলো জার্মানি থেকে আমদানি করা। যার দাম ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। আবার বিদেশ থেকে নিয়ে আসতেও সময় লাগতো। সেই মেশিন দিয়ে রেললাইন কাটতে বেশ সময় লাগতো। কিন্তু আমার উদ্ভাবন করা মেশিন দ্বারা মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময়ে একটি রেল প্রস্থ বরাবর কাঁটা যায়।

প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু আরও জানান, মেশিনটি তৈরী করা হয়েছে ঈশ্বরদীস্থ প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারীদের দিয়ে। প্রথম বানানো বলে বেশি সময় লেগেছে। এই রেল কাটিং মেশিন বানাতে সর্বোচ্চ পাঁচদিন সময় লাগবে, যদি যন্ত্রাংগুলো বাজারে সহজে পাওয়া যায়।

প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু বলেন, আমি দেশকে ভালোবাসি। তাই দেশের টাকা দেশে রাখার ইচ্ছে থেকে আমার মুলত দেশীয় প্রযুক্তিতে রেল কাটিং বানানোর ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন থেকেই। সেই ইচ্ছেকে বাস্তবেই রূপ দিয়েছি।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবু জাফর জানান, ব্রিটিশ আমলে হেচকো ব্লেড দিয়ে রেললাইন কাঁটতে ১ থেকে দেড় ঘন্টা সময় ব্যায় হতো। জার্মানি থেকে আমদানী করা মেশিনে কয়েক মিনিট সময় লাগতো, দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই কাটিং মেশিনটি দিয়ে আমরা ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় একটি রেলকে প্রস্থ বরাবর কাঁটতে পারছি, এতে আমাদের সময় সাশ্রয় হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) লিয়াকত শরীফ খান জানান, কম খরচে, দেশীয় প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তায় রেল কাটিং মেশিন উদ্ভাবন করা হয়েছে। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারীরা পরিক্ষামুলকভাবে ওই কাটিং মেশিন দিয়ে কাজ করছে। যদি টেকসই হয়, তাহলে ঈশ্বরদী ওয়ার্কসপ থেকে সরকারী খরচে রেল কাটিং মেশিন তৈরী করা হবে।

উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বিন্দু এই উদ্ভাবনের প্রশংসা করেছেন। তাদের মতে, মাঠপর্যায়ে সফল প্রমাণিত হলে এটি পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চল উভয় অঞ্চলের রেলওয়ে কারখানায় সরবরাহ করা হবে।