
পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চরের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ভয়, সন্ত্রাস ও অস্ত্রের ত্রাস জারি রাখা কাকন বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবশেষে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে— ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’। রবিবার ভোর ৪টা থেকেই পাবনার ঈশ্বরদী, আমিনপুর, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নদীচর এলাকায় এ অভিযানের শুরু হয়। এখন পর্যন্ত টানা চলছে সাঁড়াশি অভিযান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কাকন বাহিনী বিগত কয়েক বছর ধরে চরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায়, বালু লুট এবং কৃষকদের ফসল লুট করে আসছিল। অপকর্মের প্রতিবাদ করলে যেকোনো মুহূর্তে বন্দুক উঁচিয়ে গুলি চালানো ছিল তাদের স্বাভাবিক কাজ। সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর পদ্মার চরে খড় কাটাকে কেন্দ্র করে কাকন বাহিনীর গুলিতে তিন কৃষক নিহত হন। এই হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড জনমনে ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ ছড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয় কঠোর অভিযান।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার সরকার জানিয়েছেন, অভিযানে এখন পর্যন্ত চরের বিভিন্ন ঝোপঝাড় ও পরিত্যক্ত ঘাঁটি থেকে দুটি শুটারগান, চাইনিজ কুড়াল, বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “অভিযান এখনো চলমান।ড্রোন দিয়ে কাশবন, কলাবাগান ও জঙ্গলের ভেতর নজরদারি চালানো হচ্ছে। অভিযান শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।”
এদিকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, এখন পর্যন্ত ৫টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, অসংখ্য দেশীয় অস্ত্র, মাদক ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। বাহিনীর ২১ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
চর দিয়াড় বাহাদুরপুরের মৎস্যজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ যাদের ধরে নিয়ে গেছে, তারা প্রায় সবাই কাকন বাহিনীর সঙ্গে জড়িত।
জানা গেছে, ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’-এ পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএনসহ বিভিন্ন ইউনিটের মোট ১২০০ সদস্য অংশগ্রহণ করছে। চরে বৈরী ভৌগোলিক পরিবেশ, চরাঞ্চলের পথঘাট ও নদীর প্রবাহ সব মিলিয়ে অভিযানকে চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
চরের সাধারণ কৃষক ও জেলেরা এ অভিযানে স্বস্তি প্রকাশ করে বলছেন, “বছরের পর বছর আমরা আতঙ্কে ছিলাম। মাঠে ফসল তুলতেও ভয় লাগত। এই অভিযান যদি সম্পূর্ণ হয়, তবে আমাদের বেঁচে থাকার রাস্তা খুলবে।”
উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর চরে খড় কাটাকে কেন্দ্র করে কাকন বাহিনীর গোলাগুলিতে ৩ জন নিহত হয়।
Reporter Name 


















