ঢাকা ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ Logo কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়: তারেক রহমান Logo আগামীকাল থেকে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা Logo বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হবে আ,লীগ ও  জাতীয় পার্টি–নুরুল হক নুর Logo শীতের আগমনে কুয়াশার চাদরে ঢাকা  সৈয়দপুর শহর Logo পাবনা ৪ আসনে বিএনপি’র হাবিবকে সমর্থন করেও বিপক্ষে গেলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী জাকারিয়া পিন্টু Logo গণভোট নিয়ে দলগুলো ঐকমত্যে না এলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব Logo ড. ইউনূসকে শব্দ চয়নে সতর্ক থাকার আহ্বান ভারতের Logo সংবিধানে গণভোট নেই, কথায় কথায় রাস্তায় নামবেন না: আমীর খসরু Logo সাপের কামড়ের ওষুধ সব উপজেলায় পাঠানোর নির্দেশ

পাবনা প্রকল্পের ডি-২ ক্যানেলে সোঁতি জালের বাঁধ ২০ বিলের ১৫ হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা 

বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা সেচ প্রকল্পের ডি-২ নিস্কাশন ক্যানেলে সোঁতি জাল, বাঁশ ও চাটাইয়ের বাঁধ দেয়ায় ২০টি বিলের প্রায় ১৫ হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্ট হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা সময় মতো পাঁকা আমন ধান কাটা পেঁয়াজসহ অন্যান্য রবিশস্যের আবাদ করতে পারছেন না বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নে বড়গ্রাম দত্তপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ডি-২ কাগেশ্বরী প্রধান নিষ্কাশন ক্যানেলে বাঁশ, চাটাই ও সোঁতি জালের বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে পানি নিস্কাশন বাধাগ্রস্থ হওয়ায় ২০টি বিলের প্রায় ১৫ হাজার বিঘা আমন ধানের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব জমিতে ধান কাটতে দেরি হওয়ায় পাঁকা ধান জমিতেই ঝড়ে পড়ছে। পেঁয়াজসহ অন্যান্য রবিশস্যের আবাদ বিলম্বিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, কাগেশ্বরী নদীকে ১৯৯২ সালে প্রধান নিষ্কাশন ক্যানেলে (ডি-২) রূপান্তরিত করা হয়। এই নদীর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার অন্তত ২০টি বিলের। বর্ষা মৌসুমে এসব বিলসহ নিচু এলাকার পানি এই ক্যানেলের মাধ্যমে যমুনা নদীতে নিষ্কাশিত হয়। বিলের পানি নিষ্কাশিত হওয়ার পর আমন ধান কেটে পেঁয়াজসহ রবিশস্যের আবাদ করা হয়।
কৃষকেরা জানান, প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ দিকে জমি থেকে পানি নেমে যায়। কিন্তু এ বছর উপজেলার নন্দনপুর, গৌরীগ্রাম, করমজা, কাশীনাথপুর, ক্ষেতুপাড়া ও বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের অন্তত ২৫টির বেশি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বিঘা আমন খেতে এখনো এক থেকে ছয় ফুট পানি জমে আছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ডি-২ প্রধান নিষ্কাশন ক্যনেলের করমজা ইউনিয়নের বড়গ্রামের দত্তপাড়ায় বাঁশ, পলিথিন ও চাটাই দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই বাঁধের সঙ্গে সোঁতি জাল স্থাপন করে অবাধে পোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকারের মাছ ধরা হচ্ছে। এই বাঁধের কারণে পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলার আফড়া গ্রামের কৃষক নেকবার সরদার বলেন, পেঁয়াজ আবাদের সময় পার হয়া যাতেছে। কিন্তু জমিতে পানি থাকায় আমাগরে গ্রামের কেউই তা আবাদ করব্যার পারতেছি না। তা ছাড়া জমির আমন ধান পাকার পরে তাও কাটব্যার পারতেছি না।
এলাকার কৃষকেরা জানান, সোঁতি জালের বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা স্থানীয় প্রভাবশালী। ফলে তাঁরা  ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পান না। তার প্রশাসনের উদ্যোগে বাঁধগুলো উচ্ছেদ করার দাবি জানান।
করমজা ইউনিয়নের বড়গ্রাম দত্তপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে নিষ্কাশন খালে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশ, পলিথিন, চাটাই ও সূক্ষ্ম জালের সাহায্যে সোঁতি জালের বাঁধ দেয়া হয়েছে। এতে পানি নিস্কাশন ব্যাহত হচ্ছে।
বড়গ্রাম দত্তপাড়া এলাকার করমজা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মালেক ও রেজাউলের ছত্রছায়ায় সোঁতি জালের বাঁধ দিয়েছে বক্স মন্ডলের ছেলে রাজু, বয়েজ খাঁর ছেলে আশরাফ আলী, রেজাউল খাঁর ছেলে আবুল খাঁ, আল মাহমুদ মোল্লার ছেলে বাশার মোল্লা।
তারা বলেন, বর্ষা শেষে বিলের পানি বের হওয়ার সময় এই এলাকায় প্রতি বছর সোঁতি জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। সেই হিসাবে আমরাও সোঁতি জালের বাঁধ দিয়েছি। আর সোঁতি জালের কারণে বিলের পানি নিস্কাশনে সমস্যা হচ্ছে না বলে তারা দাবি করেছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সামসুল রহমান জানান, আমরা এই সোঁতি জালের কথা শুনে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করি। জাল কেটে দিয়ে আসি এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করি। তারা জানায় তিন দিনের মধ্যে সকল বাশ অপসারণ করে নেবে। তারা যদি সেটা না করে তাহলে আমরা আবার ব্যবস্থা নিবো।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, এই সোঁতি জালের কারনে পানি নামতে সময় লাগবে যার প্রভাব কৃষকদের ফসলের উপর পরবে। তাই এই সোঁতি অতি জরুরী ভিত্তিতে অপসারণ করা দারকার।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিজু তামান্না বলেন, গতকাল বুধবার এসি ল্যান্ডকে পাঠানো হয়েছিল,  তারা সময় চেয়েছে। অতিদ্রুত তারা নিজেরা অপসারণ না করলে মৎস্য অফিসার, পানি উন্নয়ন বোর্ড, প্রশাসন একসাথে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ

পাবনা প্রকল্পের ডি-২ ক্যানেলে সোঁতি জালের বাঁধ ২০ বিলের ১৫ হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা 

Update Time : ০২:১৫:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা সেচ প্রকল্পের ডি-২ নিস্কাশন ক্যানেলে সোঁতি জাল, বাঁশ ও চাটাইয়ের বাঁধ দেয়ায় ২০টি বিলের প্রায় ১৫ হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্ট হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা সময় মতো পাঁকা আমন ধান কাটা পেঁয়াজসহ অন্যান্য রবিশস্যের আবাদ করতে পারছেন না বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নে বড়গ্রাম দত্তপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ডি-২ কাগেশ্বরী প্রধান নিষ্কাশন ক্যানেলে বাঁশ, চাটাই ও সোঁতি জালের বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে পানি নিস্কাশন বাধাগ্রস্থ হওয়ায় ২০টি বিলের প্রায় ১৫ হাজার বিঘা আমন ধানের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব জমিতে ধান কাটতে দেরি হওয়ায় পাঁকা ধান জমিতেই ঝড়ে পড়ছে। পেঁয়াজসহ অন্যান্য রবিশস্যের আবাদ বিলম্বিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, কাগেশ্বরী নদীকে ১৯৯২ সালে প্রধান নিষ্কাশন ক্যানেলে (ডি-২) রূপান্তরিত করা হয়। এই নদীর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার অন্তত ২০টি বিলের। বর্ষা মৌসুমে এসব বিলসহ নিচু এলাকার পানি এই ক্যানেলের মাধ্যমে যমুনা নদীতে নিষ্কাশিত হয়। বিলের পানি নিষ্কাশিত হওয়ার পর আমন ধান কেটে পেঁয়াজসহ রবিশস্যের আবাদ করা হয়।
কৃষকেরা জানান, প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ দিকে জমি থেকে পানি নেমে যায়। কিন্তু এ বছর উপজেলার নন্দনপুর, গৌরীগ্রাম, করমজা, কাশীনাথপুর, ক্ষেতুপাড়া ও বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের অন্তত ২৫টির বেশি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বিঘা আমন খেতে এখনো এক থেকে ছয় ফুট পানি জমে আছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ডি-২ প্রধান নিষ্কাশন ক্যনেলের করমজা ইউনিয়নের বড়গ্রামের দত্তপাড়ায় বাঁশ, পলিথিন ও চাটাই দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই বাঁধের সঙ্গে সোঁতি জাল স্থাপন করে অবাধে পোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকারের মাছ ধরা হচ্ছে। এই বাঁধের কারণে পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলার আফড়া গ্রামের কৃষক নেকবার সরদার বলেন, পেঁয়াজ আবাদের সময় পার হয়া যাতেছে। কিন্তু জমিতে পানি থাকায় আমাগরে গ্রামের কেউই তা আবাদ করব্যার পারতেছি না। তা ছাড়া জমির আমন ধান পাকার পরে তাও কাটব্যার পারতেছি না।
এলাকার কৃষকেরা জানান, সোঁতি জালের বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা স্থানীয় প্রভাবশালী। ফলে তাঁরা  ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পান না। তার প্রশাসনের উদ্যোগে বাঁধগুলো উচ্ছেদ করার দাবি জানান।
করমজা ইউনিয়নের বড়গ্রাম দত্তপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে নিষ্কাশন খালে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশ, পলিথিন, চাটাই ও সূক্ষ্ম জালের সাহায্যে সোঁতি জালের বাঁধ দেয়া হয়েছে। এতে পানি নিস্কাশন ব্যাহত হচ্ছে।
বড়গ্রাম দত্তপাড়া এলাকার করমজা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মালেক ও রেজাউলের ছত্রছায়ায় সোঁতি জালের বাঁধ দিয়েছে বক্স মন্ডলের ছেলে রাজু, বয়েজ খাঁর ছেলে আশরাফ আলী, রেজাউল খাঁর ছেলে আবুল খাঁ, আল মাহমুদ মোল্লার ছেলে বাশার মোল্লা।
তারা বলেন, বর্ষা শেষে বিলের পানি বের হওয়ার সময় এই এলাকায় প্রতি বছর সোঁতি জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। সেই হিসাবে আমরাও সোঁতি জালের বাঁধ দিয়েছি। আর সোঁতি জালের কারণে বিলের পানি নিস্কাশনে সমস্যা হচ্ছে না বলে তারা দাবি করেছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সামসুল রহমান জানান, আমরা এই সোঁতি জালের কথা শুনে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করি। জাল কেটে দিয়ে আসি এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করি। তারা জানায় তিন দিনের মধ্যে সকল বাশ অপসারণ করে নেবে। তারা যদি সেটা না করে তাহলে আমরা আবার ব্যবস্থা নিবো।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, এই সোঁতি জালের কারনে পানি নামতে সময় লাগবে যার প্রভাব কৃষকদের ফসলের উপর পরবে। তাই এই সোঁতি অতি জরুরী ভিত্তিতে অপসারণ করা দারকার।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিজু তামান্না বলেন, গতকাল বুধবার এসি ল্যান্ডকে পাঠানো হয়েছিল,  তারা সময় চেয়েছে। অতিদ্রুত তারা নিজেরা অপসারণ না করলে মৎস্য অফিসার, পানি উন্নয়ন বোর্ড, প্রশাসন একসাথে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।