
ভোলায় ঘুমন্ত মায়ের পাশ থেকে তাসফিয়া (১১ মাস বয়সী) এক কন্যা সন্তান চুরির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে গফুর আলী বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে। শিশুটি ওই বাড়ীর মাওলানা জামাল উদ্দিন ও কুলসুম দম্পতির ছোট মেয়ে।
সরেজমিনে পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের গফুর আলী বাড়ির বাসিন্দা মাওলানা জামাল পেশায় একজন ইমাম। তিনি কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরে একটি মসজিদে ইমামতি করেন এবং সেখানেই থাকেন। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে নিজ বসতঘরে শিশুটি তার মায়ের পাশে ঘুমিয়ে ছিল। একপর্যায়ে শিশুটির মা বিবি কুলসুম তাদের ঘরের কাছে মুরগির খামার দেখতে যান। সেখান থেকে ফিরে শিশুটিকে দুগ্ধ পান করান এবং ঘুমিয়ে যান। পরে ভোর ৫টার দিকে উঠে দেখেন শিশু তাসফিয়া তার পাশে নেই। শিশুর ঘুমানোর জায়গায় একটি কোলবালিশ কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। শিশু সন্তানকে হারিয়ে মা বিবি কুলসুম এখন পাগল প্রায়। পুরো বাড়ীতে একটি সন্তান হারানোর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিশু সন্তান না পেয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাড়ীর চারপাশে খুঁজতে থাকেন এবং পুরো গ্রামে মাইকিং করেন।
নিখোঁজ শিশু তাসপিয়ার ভাই আমানুল্লাহ বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমার মুরগির খামারের কাজ শেষে ঘরে ফিরে আমার বোন তাসফিয়াকে মায়ের পাশে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেছি। পরে আমি পাশের রুমে ঘুমিয়ে গেছি। ভোরে মা ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার পাশে তাসফিয়া নেই। তার জায়গায় কাঁথা মোড়ানো কোলবালিশ রয়েছে। ভোর থেকেই চারিদিকে খুঁজতেছি। শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোথাও তাসপিয়াকে পাইনি। তিনি আরো বলেন, আমাদের বসতঘর থেকে অন্য কোনো মালামাল চুরি হয়নি। বাড়িতে প্রায় ৩০-৪০টির মতো বসতঘর রয়েছে। অন্য ঘরের লোকজন আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে এক শিশুর কান্না শুনেছে, তারা ভেবেছে হয়তো পাশের ঘরের বাচ্চা কাঁদছে। যার কারণে তারা সাড়া দেয়নি। কে বা কারা আমার বোনকে ঘুমন্ত মায়ের পাশ থেকে নিয়ে গেছে তা কেউ দেখিনি। আমার বোনের দুই পায়ে জন্মগতভাবে শ্যাতি ও কপালের ওপরে সাদা চুল আছে। দ্রুত আমার বোনকে ফিরে পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাই।
শিশু তাসফিয়ার মা বিকি কুলসুম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, রাতের বেলা আমাদের মুরগির খামার দেশে এসে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শিশু তসফিয়াকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। রাতে দুগ্ধ খাওয়ানোর জন্য বেশ কয়েকবার শিশুটিকে সজাগ করার চেষ্টা করি, কিন্তু তাতেও তাসফিয়া না উঠায় ফের ঘুমিয়ে পড়ি। ভোর ৫টার দিকে উঠে দেখি তাসফিয়া আমার পাশে নেই। অনেক খোঁজা-খুঁজি করেছি তাকে এখনও পাইনি।
তাসফিয়ার বাবা মাওলানা জামাল উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আমার অন্যান্য সন্তান এবং ছোট সন্তান তাসফিয়াকে নিয়ে তার মা বিবি কুলসুম ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। এক পর্যায়ে রাতের বেলায় আমাদের ঘরের পাশেই মুরগির খামার দেখতে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে পুনরায় সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে ভোর বেলায় উঠে দেখেন তার পাশে সন্তান তাসফিয়া নেই। রাতের আঁধারে হয়তো বা কেউ ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং রাতের যে কোন সময় সন্তান নিয়ে সটকে পড়ে। যে বা যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমি তাদের বিচার এবং সন্তান যেন ফিরে পাই তার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।
ওই বাড়ীর বাসিন্দা বিবি আচিয়া, মো: আলাউদ্দিন, মো: সিরাজ ও মোসলে উদ্দিন বলেন, ঘুমন্ত মায়ের পাশ থেকে শিশুকে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা আমাদের গ্রামে আর ঘটেনি। এ ঘটনায় আমরা চিন্তিত। অতি দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ভোলা সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শাহাদাত মো: হাসনাইন পারভেজ সন্ধ্যায় বলেন, শিশু চুরির ঘটনা শুনেছি। সকালেই ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম গিয়েছে। পাশাপাশি আমি নিজে বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি, পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শরীফ হোসাইন, ভোলা ॥ 



















