ঢাকা ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ Logo কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়: তারেক রহমান Logo আগামীকাল থেকে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা Logo বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হবে আ,লীগ ও  জাতীয় পার্টি–নুরুল হক নুর Logo শীতের আগমনে কুয়াশার চাদরে ঢাকা  সৈয়দপুর শহর Logo পাবনা ৪ আসনে বিএনপি’র হাবিবকে সমর্থন করেও বিপক্ষে গেলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী জাকারিয়া পিন্টু Logo গণভোট নিয়ে দলগুলো ঐকমত্যে না এলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব Logo ড. ইউনূসকে শব্দ চয়নে সতর্ক থাকার আহ্বান ভারতের Logo সংবিধানে গণভোট নেই, কথায় কথায় রাস্তায় নামবেন না: আমীর খসরু Logo সাপের কামড়ের ওষুধ সব উপজেলায় পাঠানোর নির্দেশ

ভূয়া ভাউচারে স্বাক্ষর না করায় সভাপতিকেই বাদ দিলেন মহাদেবপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ

নওগাঁর মহাদেবপুরে ভূয়া ভাউচারে স্বাক্ষর না করায় খোদ সভাপতিকেই বাদ দিয়ে দিলেন এক মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। সভাপতি যে কোন ধরনের ভূয়া ভাউচারে স্বাক্ষর না করে সঠিক ভাউচার প্রস্তুতের পরামর্শ দেয়ায় মাদ্রাসার বিপুল সম্পদ আত্মসাতের পরিকল্পনা ভেস্তে যায় তার। এই ঘটনার পর সভাপতির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অবৈধভাবে মাইকিং করে আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ ডেকে নতুন সভাপতির নাম প্রস্তাব করে তা রেজুলেশন আকারে নিয়ে অনুমোদনের জন্য বোর্ডে পাঠান।
সম্প্রতি উপজেলার হাতুড় ইউনিয়নের মির্জাপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম ঘটিয়েছেন এমন কান্ড। স্থানীয়রা বলছেন এই সভাপতি বহাল থাকলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম কখনোই অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাবেন না, এই আশঙ্কায় এতসব কান্ড ঘটিয়েছেন তিনি। এসংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পাবার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে বোর্ড কর্তপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই মাদ্রাসার ৪০ বিঘা জমি রয়েছে। এসব জমি থেকে আসা বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। মাদ্রাসার দুটি পুকুর থেকে বাৎসরিক আয় আসে তিন লক্ষ টাকা। মাদ্রাসায় ৭টি পদে নিয়োগ দিয়ে এক কোটি ৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে গত ১৩ বছরে আয় হয়েছে দুই কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু মাদ্রাসায় তহবিলে জমা দেয়া হয়েছে মাত্র এক কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। বাকি এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এছাড়া মাদ্রাসার আলিম বিভাগ এমপিওভূক্তির জন্য সাবেক এমপি ছলিম উদ্দিন তরফদারকে ঘুষ দিয়েছেন সাবেক অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলামের এমন একটি কলরেকর্ড ফাঁস হয়। শামসুল হক ও খোরশেদ আলম নামে এলাকার দুজন এসবের প্রতিবাদ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অভিযোগ দিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শামসুল হককে সভাপতি ও খোরশেদ আলমকে অভিভাবক সদস্য মনোনীত করে ওই মাদ্রাসার চার সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি নির্বাচনের জন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর এডহক কমিটি ও অন্যান্য সদস্যদের ২০ জনের উপস্থিতিতে ডাকা সভায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি হিসেবে শামসুল হক, সোহেল রানা ও মাহফুজুর রহমানের নাম প্রস্তাব করা হয়।
নিয়মানুযায়ী তিনজনের নাম পাঠানো হলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ এদের মধ্যে থেকে যেকোন একজনকে সভাপতি পদে অনুমোদন দেয়। কিন্তু অধ্যক্ষ এটি বোর্ডে না পাঠিয়ে মাইকিং করে গ্রামবাসীদের ডেকে নতুন করে রেজুলেশন করে সভাপতি পদের তালিকায় ১নম্বরে থাকা শামসুল হকের নাম বাদ দিয়ে ২নম্বরে থাকা সোহেল রানা, মাহফুজুর রহমান ও নতুন করে আজিজার রহমানের নাম বোর্ডে পাঠান। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই সভায় এডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য খোরশেদ আলমকেও ডাকা হয়নি বলে জানান।

শামসুল হক অভিযোগ করেন যে, তার নাম রেজুলেশনের পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম শামসুলের ব্যক্তিগত খরচ হয়েছে বলে বেশ কয়েকটি ভূয়া ভাউচারে স্বাক্ষর করতে বলেন। কিন্তু যে যে খাতে খরচ হয়েছে তার সঠিক ভাউচার উপস্থাপনের পরামর্শ দেন তিনি। এরপরই তিনি এলাকায় মাইকিং করেন। তিন বলেন, ভূয়া ভাউচারের মধ্যে ছিল ইতিপূর্বে এডহক কমিটি গঠন করতে খরচ হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ টাকা, দাখিল পাশ করা প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী আনা বাবদ ২০ হাজার টাকা ইত্যাদি। এগুলো কোনটাই খরচ হয়নি।

এবিষয়ে শামসুল হক বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দেন। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্তের জন্য মহাদেবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার ফরিদুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে তিনি বিষয়টি তদন্ত করছেন।

এডহক কমিটির বৈধ রেজুলেশন বাদ দিয়ে কেন গ্রামের লোকদের ডাকতে হলো তার কোন জবাব দিতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শামসুল কোন কাগজে সই করছিলনা। এছাড়া সে পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি হোক এটা প্রভাবশালী গ্রামসবাীরা চান না। তাদের চাপেই তিনি এমনটি করেছেন। তবে বিষয়টি আইনসিদ্ধ হয়নি একথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ

ভূয়া ভাউচারে স্বাক্ষর না করায় সভাপতিকেই বাদ দিলেন মহাদেবপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ

Update Time : ১০:০০:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

নওগাঁর মহাদেবপুরে ভূয়া ভাউচারে স্বাক্ষর না করায় খোদ সভাপতিকেই বাদ দিয়ে দিলেন এক মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। সভাপতি যে কোন ধরনের ভূয়া ভাউচারে স্বাক্ষর না করে সঠিক ভাউচার প্রস্তুতের পরামর্শ দেয়ায় মাদ্রাসার বিপুল সম্পদ আত্মসাতের পরিকল্পনা ভেস্তে যায় তার। এই ঘটনার পর সভাপতির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অবৈধভাবে মাইকিং করে আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ ডেকে নতুন সভাপতির নাম প্রস্তাব করে তা রেজুলেশন আকারে নিয়ে অনুমোদনের জন্য বোর্ডে পাঠান।
সম্প্রতি উপজেলার হাতুড় ইউনিয়নের মির্জাপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম ঘটিয়েছেন এমন কান্ড। স্থানীয়রা বলছেন এই সভাপতি বহাল থাকলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম কখনোই অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাবেন না, এই আশঙ্কায় এতসব কান্ড ঘটিয়েছেন তিনি। এসংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পাবার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে বোর্ড কর্তপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই মাদ্রাসার ৪০ বিঘা জমি রয়েছে। এসব জমি থেকে আসা বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। মাদ্রাসার দুটি পুকুর থেকে বাৎসরিক আয় আসে তিন লক্ষ টাকা। মাদ্রাসায় ৭টি পদে নিয়োগ দিয়ে এক কোটি ৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে গত ১৩ বছরে আয় হয়েছে দুই কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু মাদ্রাসায় তহবিলে জমা দেয়া হয়েছে মাত্র এক কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। বাকি এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এছাড়া মাদ্রাসার আলিম বিভাগ এমপিওভূক্তির জন্য সাবেক এমপি ছলিম উদ্দিন তরফদারকে ঘুষ দিয়েছেন সাবেক অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলামের এমন একটি কলরেকর্ড ফাঁস হয়। শামসুল হক ও খোরশেদ আলম নামে এলাকার দুজন এসবের প্রতিবাদ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অভিযোগ দিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শামসুল হককে সভাপতি ও খোরশেদ আলমকে অভিভাবক সদস্য মনোনীত করে ওই মাদ্রাসার চার সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি নির্বাচনের জন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর এডহক কমিটি ও অন্যান্য সদস্যদের ২০ জনের উপস্থিতিতে ডাকা সভায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি হিসেবে শামসুল হক, সোহেল রানা ও মাহফুজুর রহমানের নাম প্রস্তাব করা হয়।
নিয়মানুযায়ী তিনজনের নাম পাঠানো হলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ এদের মধ্যে থেকে যেকোন একজনকে সভাপতি পদে অনুমোদন দেয়। কিন্তু অধ্যক্ষ এটি বোর্ডে না পাঠিয়ে মাইকিং করে গ্রামবাসীদের ডেকে নতুন করে রেজুলেশন করে সভাপতি পদের তালিকায় ১নম্বরে থাকা শামসুল হকের নাম বাদ দিয়ে ২নম্বরে থাকা সোহেল রানা, মাহফুজুর রহমান ও নতুন করে আজিজার রহমানের নাম বোর্ডে পাঠান। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই সভায় এডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য খোরশেদ আলমকেও ডাকা হয়নি বলে জানান।

শামসুল হক অভিযোগ করেন যে, তার নাম রেজুলেশনের পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম শামসুলের ব্যক্তিগত খরচ হয়েছে বলে বেশ কয়েকটি ভূয়া ভাউচারে স্বাক্ষর করতে বলেন। কিন্তু যে যে খাতে খরচ হয়েছে তার সঠিক ভাউচার উপস্থাপনের পরামর্শ দেন তিনি। এরপরই তিনি এলাকায় মাইকিং করেন। তিন বলেন, ভূয়া ভাউচারের মধ্যে ছিল ইতিপূর্বে এডহক কমিটি গঠন করতে খরচ হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ টাকা, দাখিল পাশ করা প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী আনা বাবদ ২০ হাজার টাকা ইত্যাদি। এগুলো কোনটাই খরচ হয়নি।

এবিষয়ে শামসুল হক বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দেন। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্তের জন্য মহাদেবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার ফরিদুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে তিনি বিষয়টি তদন্ত করছেন।

এডহক কমিটির বৈধ রেজুলেশন বাদ দিয়ে কেন গ্রামের লোকদের ডাকতে হলো তার কোন জবাব দিতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শামসুল কোন কাগজে সই করছিলনা। এছাড়া সে পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি হোক এটা প্রভাবশালী গ্রামসবাীরা চান না। তাদের চাপেই তিনি এমনটি করেছেন। তবে বিষয়টি আইনসিদ্ধ হয়নি একথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন তিনি।