ঢাকা ০৭:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে  ঈশ্বরদীতে আলোচনা সভা ও কর্মী সমাবেশ Logo জাতির প্রকৃত শক্তি কেবল তার প্রাকৃতিক সম্পদে নয়: প্রধান উপদেষ্টা Logo তিস্তা নদী রক্ষায় তরুণ-তরুণীদের ফ্ল্যাশমব Logo ইসি শতভাগ প্রস্তুত: ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব Logo চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে  ১২ কোটি টাকার স্বর্ণ আত্মসাতের ঘটনায় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন সম্মেলন Logo পাবনা-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী তুহিনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর আন্দোলনের ডাক Logo ফেসবুকে ভাইরালকৃত সাগরের পাশে দাঁড়ালেন ঈশ্বরদীর ইউ এন ও মনিরুজ্জামান Logo ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না: প্রেস সচিব Logo গণতন্ত্রকে আবারও ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল Logo নবীনগরে গুলিকরে দুইজনকে হত্যার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা

শেষ দিনেও মুখরিত আখড়াবাড়ী, লালনের দীক্ষা নিয়ে বাড়ি ফিরবেন ভক্তরা

বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় আয়োজিত তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব আজ শেষ হচ্ছে।গত দুদিন লালন ভক্ত, অনুসারী বাউল-ফকিরদের গান, সাধুসঙ্গ, ভাব আলোচনাসহ নানা কর্মকাণ্ডে মুখর ছিল আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ। রোববার ভাঙবে সেই মিলনমেলা।

শনিবার সকালে বাল্যসেবায় দই ও চিড়া নাশতা দেওয়া হয় বাউলদের। দুপুরে পুণ্যসেবায় ভাত, ডাল, সবজি, মাছ ও দধি খান তারা। লালন একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক উপস্থিত থেকে বাউলদের পুণ্যসেবা তুলে দেন।এর পর লালন মতে দীক্ষিতদের শিষ্যত্ব দেন তাদের নিজ নিজ গুরুরা। এসব লৌকিক রীতির মধ্য দিয়ে শেষ হয় লালন শাহের তিরোধান দিবসে বাউল ও ভক্তদের মূল অনুষ্ঠান সাধুসঙ্গ।

 

এদিকে, প্রতিনিয়ত আখড়াবাড়ির ভেতরে খন্ড খন্ড সাধু আস্তানায় গানে গানে লালন দর্শনের প্রচার চলছে। গতকাল রাতে আখড়াবাড়ির বাইরে মূল মঞ্চে বসে লালন দর্শনের আলোচনা ও গান ও বানী প্রচার। লালন একাডেমির মাঠে চলছে বাউল মেলা। এক মহা সম্মিলনিতে মেতে উঠেছেন সবাই।

সাধুসঙ্গ সাঙ্গ হলেও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তিন দিনের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হবে আজ মধ্যরাতে। তবে স্মরণোৎসবকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া গ্রামীণ মেলা চলবে আরও কয়েকদিন।

এবছর স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ভক্তরা ভবের হাটে ভিড় করেছেন। দেশি-বিদেশি ভক্ত, বাউল, ফকির ও লালন অনুসারীরা আখড়াবাড়িতে অবস্থান নিয়ে মানুষ ভজনার মধ্যদিয়ে জ্ঞান অর্জন করছেন।লালন ভক্ত ও অনুসারীরা বলছেন, গতকাল সকাল থেকে সাধু সঙ্গে বাল্য, রাখাল ও পণ্য সেবার মধ্য দিয়ে মনের হিংসা, রাগ দূর করতে মহাগুরু লালনের দ্বারস্থ হচ্ছেন তারা। এভাবেই তারা নিজেদেরকে খাঁটি করে তুলছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, গাড়ী থেকে নেমে দল ধরে হাটছে প্রায় ১ কিলো রাস্তা হাজার হাজার মানুষ।  পুরো আখড়াবাড়িতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।  দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সাধু, বাউল, লালনভক্ত আর অনুসারীদের গান আর আলোচনার মধ্যে দিয়ে ভাব বিনিময়ে মুখর ছিল আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ। সাধুসঙ্গ শেষে কেউ কেউ আবার ফিরে চলেছেন আপন ঠিকানায়।

লালন একাডেমির প্রবেশপথের দু’পাশে, লালন সাঁইর মাজার প্রাঙ্গণ, আখড়াবাড়ি, মওলার বটতলাসহ মেলার মাঠ হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। আখড়াবাড়ির ভেতরে হাজার হাজার বাউল ও লালন অনুসারীর অনেকে সাদা কাপড় পরিহিত ছিল আবার অনেকে অন্য পোশাকেও ছিলে। দুপুরে তাদের আয়োজকদের পক্ষ থেকে পুণ্যসেবার রীতি অনুযায়ী সাধু-গুরুরা সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন।

বাউল বলেন, লালনের দর্শনে মানুষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের ‘মনের মানুষ’ বা ‘আসল মানুষ’ এর কোনো ধর্ম, বর্ণ, বা লিঙ্গ নেই এবং এই ‘মানুষ’ বা ঈশ্বরই মানুষের মধ্যে বাস করেন। লালন তাই গান গেয়েছেন, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, যার অর্থ হলো মানুষকে ভালোবাসলে নিজে খাঁটি মানুষ হওয়া যায়।

তিনি বলেন, লালনের গান শুধু সঙ্গীত নয়, বরং এটি মানব জীবন, আধ্যাত্মিকতা এবং আত্ম-অন্বেষণের একটি পথ। তিনি মনে করতেন, মানুষই হলো আসল, এবং এই মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই মুক্তি লাভ করা সম্ভব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে  ঈশ্বরদীতে আলোচনা সভা ও কর্মী সমাবেশ

শেষ দিনেও মুখরিত আখড়াবাড়ী, লালনের দীক্ষা নিয়ে বাড়ি ফিরবেন ভক্তরা

Update Time : ১০:২০:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় আয়োজিত তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব আজ শেষ হচ্ছে।গত দুদিন লালন ভক্ত, অনুসারী বাউল-ফকিরদের গান, সাধুসঙ্গ, ভাব আলোচনাসহ নানা কর্মকাণ্ডে মুখর ছিল আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ। রোববার ভাঙবে সেই মিলনমেলা।

শনিবার সকালে বাল্যসেবায় দই ও চিড়া নাশতা দেওয়া হয় বাউলদের। দুপুরে পুণ্যসেবায় ভাত, ডাল, সবজি, মাছ ও দধি খান তারা। লালন একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক উপস্থিত থেকে বাউলদের পুণ্যসেবা তুলে দেন।এর পর লালন মতে দীক্ষিতদের শিষ্যত্ব দেন তাদের নিজ নিজ গুরুরা। এসব লৌকিক রীতির মধ্য দিয়ে শেষ হয় লালন শাহের তিরোধান দিবসে বাউল ও ভক্তদের মূল অনুষ্ঠান সাধুসঙ্গ।

 

এদিকে, প্রতিনিয়ত আখড়াবাড়ির ভেতরে খন্ড খন্ড সাধু আস্তানায় গানে গানে লালন দর্শনের প্রচার চলছে। গতকাল রাতে আখড়াবাড়ির বাইরে মূল মঞ্চে বসে লালন দর্শনের আলোচনা ও গান ও বানী প্রচার। লালন একাডেমির মাঠে চলছে বাউল মেলা। এক মহা সম্মিলনিতে মেতে উঠেছেন সবাই।

সাধুসঙ্গ সাঙ্গ হলেও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তিন দিনের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হবে আজ মধ্যরাতে। তবে স্মরণোৎসবকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া গ্রামীণ মেলা চলবে আরও কয়েকদিন।

এবছর স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ভক্তরা ভবের হাটে ভিড় করেছেন। দেশি-বিদেশি ভক্ত, বাউল, ফকির ও লালন অনুসারীরা আখড়াবাড়িতে অবস্থান নিয়ে মানুষ ভজনার মধ্যদিয়ে জ্ঞান অর্জন করছেন।লালন ভক্ত ও অনুসারীরা বলছেন, গতকাল সকাল থেকে সাধু সঙ্গে বাল্য, রাখাল ও পণ্য সেবার মধ্য দিয়ে মনের হিংসা, রাগ দূর করতে মহাগুরু লালনের দ্বারস্থ হচ্ছেন তারা। এভাবেই তারা নিজেদেরকে খাঁটি করে তুলছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, গাড়ী থেকে নেমে দল ধরে হাটছে প্রায় ১ কিলো রাস্তা হাজার হাজার মানুষ।  পুরো আখড়াবাড়িতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।  দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সাধু, বাউল, লালনভক্ত আর অনুসারীদের গান আর আলোচনার মধ্যে দিয়ে ভাব বিনিময়ে মুখর ছিল আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ। সাধুসঙ্গ শেষে কেউ কেউ আবার ফিরে চলেছেন আপন ঠিকানায়।

লালন একাডেমির প্রবেশপথের দু’পাশে, লালন সাঁইর মাজার প্রাঙ্গণ, আখড়াবাড়ি, মওলার বটতলাসহ মেলার মাঠ হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। আখড়াবাড়ির ভেতরে হাজার হাজার বাউল ও লালন অনুসারীর অনেকে সাদা কাপড় পরিহিত ছিল আবার অনেকে অন্য পোশাকেও ছিলে। দুপুরে তাদের আয়োজকদের পক্ষ থেকে পুণ্যসেবার রীতি অনুযায়ী সাধু-গুরুরা সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন।

বাউল বলেন, লালনের দর্শনে মানুষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের ‘মনের মানুষ’ বা ‘আসল মানুষ’ এর কোনো ধর্ম, বর্ণ, বা লিঙ্গ নেই এবং এই ‘মানুষ’ বা ঈশ্বরই মানুষের মধ্যে বাস করেন। লালন তাই গান গেয়েছেন, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, যার অর্থ হলো মানুষকে ভালোবাসলে নিজে খাঁটি মানুষ হওয়া যায়।

তিনি বলেন, লালনের গান শুধু সঙ্গীত নয়, বরং এটি মানব জীবন, আধ্যাত্মিকতা এবং আত্ম-অন্বেষণের একটি পথ। তিনি মনে করতেন, মানুষই হলো আসল, এবং এই মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই মুক্তি লাভ করা সম্ভব।