
ঐতিহাসিক জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপি, জামায়াত, গণ–অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, গণসংহতি, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা।
শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে তারা জাতীয় সনদে সই করেন। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বেলা সাড়ে ৪টায় এই অনুষ্ঠান শুরু হয়।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের বেশির ভাগ প্রধান রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকনসহ অনেকে।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে একটি জরুরি বৈঠক হয়। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ওই বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ শিরোনামের এই দলিলটি আগেই দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছিল। প্রায় ৪০ পৃষ্ঠার এই সনদে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ স্বাধীনতার পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলোর বিবরণ রয়েছে।
সনদে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭৫ সালের সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৭৮ সালে বহুদলীয় রাজনীতি পুনঃপ্রবর্তন ও ১৯৭৯ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে এলেও সেই অগ্রযাত্রা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
সনদে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, পরিবার ও গোষ্ঠীর প্রভাবাধীন হয়ে স্বৈরাচারী চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এতে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের টানা তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনেরও সমালোচনা করা হয়েছে– যেগুলো নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্বল করেছে, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দলিলে গত ১৬ বছরের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিফলনও তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান, যা “ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ”-এ রূপ নেয়।
সনদের শেষ অংশে সাত দফা প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক নীতি, আইনের শাসন ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলনে প্রকাশিত জনগণের আকাঙ্ক্ষা রক্ষার আহ্বান জানানো হয়েছে।