পুলিশের পোশাকে আইন রক্ষক, কিন্তু ভেতরে অন্য এক কাহিনী। বর্তমানে কক্সবাজার টেকনাফে (ডিএসবি) কর্মরত এএসআই মো. মাসুদ আলমকে ঘিরে উঠে আসছে বিস্ময়কর সব অভিযোগ। এক সাধারণ কনস্টেবল থেকে যাত্রা শুরু করা এই কর্মকর্তা কীভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হলেন, কীভাবে ঘুষ-বাণিজ্য আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তার এমন উথ্থান ঘটল এই রহস্য এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
সূত্রে জানা যায়, মো. মাসুদ আলম পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে তিনি এএসআই পদে অধিষ্ঠিত হন। দীর্ঘদিন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিশেষ শাখা (এসবি)-তে কর্মরত থাকার সময় থেকেই অভিযোগ, তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একসময় পতিত আওয়ামী সরকারের দুজন ক্ষমতাশালী মন্ত্রীর গানম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন মাসুদ আলম। তবে গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তাকে বদলি করে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার ডিএসবি শাখায় পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার বিবির বাগিচা এলাকায় বসবাস করছেন এবং বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা ওসি মাজাহারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এএসআই মাসুদ আলমের সম্পদের আড়ালে লুকানো অনেক রহস্য। যাত্রাবাড়ীতে ওসি মাজাহারের বাড়ির পাশেই নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে মাসুদ আলম উচ্চ মূল্যে একটি ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কাজলা স্কুল গলির ভিতরে মদিনা মসজিদের বিপরীতে একটি একতলা বাড়ি কিনেছেন। এছাড়া নিজের উপজেলার বাকেরগঞ্জে নাম-বেনামে একাধিক সম্পদ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি নিজেকে বারবার দানবীর হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। অভিযোগ রয়েছে, টেকনাফে বদলি হওয়া সত্ত্বেও মোটা অঙ্কের অর্থে আবার ঢাকায় পোস্টিং নেওয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, “একজন এএসআই হয়ে এতো সম্পদ আর প্রভাব… এটা স্বাভাবিক হতে পারে না। তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।”
প্রতিবেদন প্রকাশ করার স্বার্থে এই বিষয় নিয়ে প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত এএসআই মাসুদ আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে সাংবাদিককে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করেন এবং সংবাদ প্রকাশ না করার করজোড়ে অনুরোধ জানান। কিন্তু সাংবাদিক অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে, তিনি বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে শুরু করেন। শুধু নয় এমনকি এই প্রতিবেদককে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে সংবাদ প্রকাশ ঠেকানোর চেষ্টাও করেন।
আইনের পোশাকে থাকা ব্যক্তির হাতে সাংবাদিক হুমকির শিকার হওয়া গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য এক অশনি সংকেত। প্রশাসনের দ্রুত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপই এই ঘটনার সঠিক জবাব হতে পারে — এমনটাই মনে করছেন সাধারণ মানুষ ও সংবাদকর্মীরা।
একজন সাধারণ কনস্টেবল থেকে এএসআই হওয়া মাসুদ আলমের এই উত্থান কি কেবল ভাগ্যের খেলা, নাকি ক্ষমতার অপব্যবহার নাকি সীমাহীন দুর্নীতি,তা এখনো অজানা। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রশ্নগুলো থেকে যাচ্ছে অমীমাংসিত—কিন্তু নিশ্চিত একটিই, পুলিশি পোশাকে এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দেশের সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। (চলবে)