পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মনদীর নৌ চ্যানেলের ইজারা দ্বন্দ্বে গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২ জন। "আল্লাহ আমার একমাত্র সন্তানের প্রাণ ভিক্ষা দাও, আমার বুকের মানিককে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও" - আমি আর কিছু চায় না।" তাগো গুলি লাইগ্গা আমার নাতি হাসপাতালে ভর্তি। আমার ছেলে তো তাদের কোন ক্ষতি করে নাই। তবে তারা কেন গুলি করলো? আমরা সাধারন মানুষ আমাদের উপর এত নির্যাতন কেন? গুলিবিদ্ধ অপর যুবক সজিবের দাদী মোছা. রিজিয়া খাতুন আরও বলছিলেন, তাগো গুলি লাইগ্গা আমার নাতি হাসপাতালে ভর্তি। কি দোষ করছিলাম আমরা, কির লাইগ্গা হেগো পাড়ায় আইয়া বাড়ি করছিল্যাম। গরিবদের উপর তাগো এত অত্যাচার কির লাইগ্গা? আমার নাতিডার উপর গুলি করবার বিচাই চাই।
বৃহস্পতিবার (০৯) অক্টোবর সকাল সাড়ে এগারোটায় ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী সাড়া ইউনিয়নের ক্যানেল পাড়া এলাকায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে গুলিবিদ্ধ যুবক নিজামের(২৫) মা ফাহিমা খাতুন ও গুলিবিদ্ধ সজিবের (৩০) দাদী রিজিয়া বেগম এমন আর্তনাদ করছিলেন। তাদের আর্তনাদে ভারী এখন পাবনার ঈশ্বরদীর পদ্মার তীরবর্তী সাড়া ইউনিয়নের ক্যানেল পাড়া এলাকা।
মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে অতর্কিত গুলিবর্ষণে প্রশাসনের চরম অবহেলা ও ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে নিন্দা জানান স্থানীয় এলাকাবাসী। স্থানীয় এলাকাবাসী আরো বলেন,শুধু তাই নয় পদ্মার সাড়াঘাট এলাকায় নৌ চ্যানেলের ইজারা ও খাজনা আদায় বৈধ থাকার পরও অপর পক্ষের সন্ত্রাসীদের এমন কর্মকান্ডে প্রশাসনের মদদ রয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ অক্টোবর উপজেলার সাড়াঘাটের ক্যানেলপাড়া এলাকায় পদ্মার নৌ- চ্যানেলের খাজনা আদায়ের দ্বন্দ্বে ইজারাদার ও এটি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মেহেদী হাসানের লোকজনের উপর অপর পক্ষ গ্রুপ অন সার্ভিসেস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী খান্দকার সোহেল গ্রুপের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী অতর্কিত গুলিবর্ষণ করেন। এতে স্থানীয় দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে বর্তমানে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মহাখালী বক্ষব্যাধী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
হঠাৎ করে এমন গোলাগুলির ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে ব্যাপক আতংক বিরাজ করছে। মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, শুধুমাত্র প্রশাসনের অবহেলা আর ব্যর্থতার কারনে এ ঘটনা ঘটেছে। এ দায় প্রশাসন কোন ভাবেই এড়াতে পারেনা।
ঈশ্বরদীর লক্ষীকুন্ডা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছি। বর্তমানে নদী এলাকায় আমাদের একটি টহল টিম রয়েছে। আশা করছি এ ধরনের আর কোন ঘটনা ঘটবেনা।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, তারা আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনছে তা সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন। আমি একদমই নতুন, ঠিকমত কোন বিষয়ই এখনও জেনে-বুঝে উঠতে পারি নাই। তবে শুনছি পদ্মা নদীর অভ্যন্তরে একটি গ্রুপ রয়েছে যারা বালুমহল দখলে নিতে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমি ইতিমধ্যে নৌ-পুলিশসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি।