ঢাকা ০৯:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা Logo মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা
১০০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তর করার  দাবি

মান্দায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা: ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসক মাত্র চারজন

নওগাঁর মান্দা উপজেলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে বেশির ভাগ পদে চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। টিএইচওসহ মাত্র চারজন চিকিৎসক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

চরম চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কট থাকায় সাড়ে পাঁচ লাখ জনসংখ্যার বৃহত্তম এ উপজেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরেই কাঙ্ক্ষিত মানের চিকিৎসানসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এছাড়া এতো বড় উপজেলার জন্য দ্রুত ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তর করার জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
আয়তনে ও জনসংখ্যায় নওগাঁর সবচেয়ে বড় উপজেলা মান্দা। ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ জন রোগী বহির্বিভাগে টিকিট কাটে। এ ছাড়া জরুরি ও অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নেয় আরও অন্তত ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী।
শুধু তাই নয়, উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হবার ফলে ব্যাপক জনবল সঙ্কটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা এখানকার অসহায় দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর রোগি ও তাদের স্বজনরা। দ্রুতই চিকিৎসক পদ সহ সব জনবল সঙ্কট নিরসনের দাবি উপজেলাবাসীর।
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ৬০-৭০ জন রোগী টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। টিকিট না কেটে চিকিৎসকের খোঁজখবর নিচ্ছেন আরো অন্তত  ৫০/৬০ জন। বহির্বিভাগের দুটি কক্ষে রোগী দেখছেন দুইজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
 এছাড়া টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে প্রতিটি বিভাগে রয়েছে রোগীদের উপচেপড়া ব্যাপক ভিড়। বহির্বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তারদের সামনে অনেক লম্বা লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অসহায় এসব রোগীরা তাদের কাঙ্খিত মানের চিকিৎসা  সেবা পাচ্ছেন না। ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ কাউন্টারেই কোন চিকিৎসক নেই। এছাড়া ইর্মাজেন্সি বিভাগে একজন ডাক্তার কর্তব্যরত। তবে সেখানেও প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
প্রসূতি মা ও শিশুরা সেবা নিতে এসে চিকিৎসক না পেয়ে বাড়ি ফিরে  যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সিজারিয়ান অপারেশনও দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স রাখার গ্যারেজে বাইরে থেকে তালা দেওয়া। এছাড়া হাসপাতাল চত্বরে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে দুটি অ্যাম্বুলেন্স। ফলে সঙ্কটাপন্ন রোগিদের রাজশাহী ও নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর কাজে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে অধিক অর্থের বিনিময়ে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের রাহেলা বিবি ও ফুলজান বিবি, ছোটবেলালদহ গ্রামের নিজাম উদ্দিন ও মোস্তফা, খুদিয়াডাঙ্গা গ্রামের সুমন কুমার, বড়পই গ্রামের শহিদুল ইসলাম ও চাম্পা খাতুনসহ দশ/বারোজনের সাথে কথা হয়।
 অনেক রোগী বলেন, হাসপাতালে আর আগের মতো কোন চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে সেবা না নিয়েই অনেক সময় বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।
তাঁদের আরো অভিযোগ এখানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের (প্রেসক্রিপশন) বেশির ভাগ ওষুধই হাসপাতালের বাইরে থেকে চড়া দামে কিনতে হয়।
উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী মণ্ডল কিছুদিন আগে হঠাৎ করে পড়ে যান, তখন তাকে প্রথমে মান্দা ও পরে রাজশাহী নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়।
তার ছেলে সায়েদ আলী মণ্ডল  বলেন, ‘সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু না থাকায় রোগীদের বাড়তি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স মান্দা থেকে রাজশাহী কিংবা নওগাঁয় যেতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হতো। সেখানে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া গুনতে হচ্ছে।  চালকের অভাবে লাখ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্স অব্যাহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা খুবই হতাশাজনক। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অবহেলার কারণে এমনটা হচ্ছে।’
এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সেবা না মেলায় উপজেলার মানুষ অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ৮/১০ টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক জটিল রোগীরা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) ও নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে আবার হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ থাকায় রোগীদের রাজশাহী কিংবা নওগাঁতে আসা-যাওয়া করতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ১৪ টি ইউনিয়নে ১৫ টি সাব-সেন্টার/ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ সর্বমোট ৩৬ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র আটজন চিকিৎসক। ইতিমধ্যে পাঁচজন জন চিকিৎসক প্রেষণে বদলি হয়ে গেছেন।
বর্তমানে টিএইচওসহ মাত্র চারজন চিকিৎসক এ বৃহৎ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চরম পর্যায়ের হিমসিম খাচ্ছেন। এছাড়া কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে ৫০টি। কমিউনিটি হেলথ্ প্রোভাইডারেরও দুটি পদ শূন্য রয়েছে। তবে নার্সের ৩৫ টি পদের সবাই কর্তব্যরত আছেন। অফিস সহায়ক ও আয়া পদে একজন করে শূন্য।
বর্তমানে হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট(চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি অ্যান্ড অবস), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন),  জুনিয়র কনসালটেন্ট( অর্থোপেডিক),  জুনিয়র কনসালটেন্ট( কার্ডিওলজি)  জুনিয়র কনসালটেন্ট(ইএনটি) মেডিক্যাল অফিসার (হোমিওপ্যাথিক), ডেন্টাল সার্জন বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক নেই হাসপাতালটিতে।
এছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ের সাব সেন্টার/ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৮ জন মেডিক্যাল অফিসার ও  ৩ জন সহকারী সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে। টেকনেশিয়ানের অভাবে আলট্রাসনোগ্রামসহ বেশির ভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালটিতে একটি অত্যাধুনিক মেশিনসহ দু’টি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে কিন্তু জনবল না থাকায় তাও বন্ধ রয়েছে।
অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও  গত দুই বছর থেকে নেই কোন চালক। ‘দুই বছরের বেশি সময় আগে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্স চালক আবুল বাশার অবসরে যান। এরপর থেকেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকা সচল দুটি অ্যাম্বুলেন্সই ব্যবহার হচ্ছে না। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য তেলের যে বরাদ্দ সেটিও দেয়া হচ্ছে না। ফলে অ্যাম্বুলেন্সগুলো গ্যারেজেই অব্যবহৃত অবস্থায় দিনের পর দিন পড়ে আছে। অ্যাম্বুলেন্সের চালক নিয়োগ ও তেলের বরাদ্দ দেয়ার জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু  এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে মান্দা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মুহা: আনোয়ারুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে ২১ জন চিকিৎসকের পদের মধ্যে বর্তমানে মাত্র চারজন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। ফলে রোগিদের চিকিৎসা সেবা দিতে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বারবার জানানো হয়েছে। তবুও আজ পর্যন্ত কোন সমাধানে কোন অগ্রগতি হয়নি। চিকিৎসক সঙ্কট নিরসন না হলে রোগিদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা আমাদের পক্ষে কোনভাবেই আর কন্টিনিউ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা সিভিল সার্জন ডা: জাহিদ কামাল  বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে বেশ কিছু চিকিৎসক সঙ্কট আছে। এ সঙ্কট নিরসনে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে । শূন্যপদ পূরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সঙ্কট নিরসনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে চুড়ান্ত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত

১০০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তর করার  দাবি

মান্দায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা: ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসক মাত্র চারজন

Update Time : ০৫:১৯:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

নওগাঁর মান্দা উপজেলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে বেশির ভাগ পদে চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। টিএইচওসহ মাত্র চারজন চিকিৎসক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

চরম চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কট থাকায় সাড়ে পাঁচ লাখ জনসংখ্যার বৃহত্তম এ উপজেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরেই কাঙ্ক্ষিত মানের চিকিৎসানসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এছাড়া এতো বড় উপজেলার জন্য দ্রুত ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তর করার জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
আয়তনে ও জনসংখ্যায় নওগাঁর সবচেয়ে বড় উপজেলা মান্দা। ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ জন রোগী বহির্বিভাগে টিকিট কাটে। এ ছাড়া জরুরি ও অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নেয় আরও অন্তত ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী।
শুধু তাই নয়, উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হবার ফলে ব্যাপক জনবল সঙ্কটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা এখানকার অসহায় দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর রোগি ও তাদের স্বজনরা। দ্রুতই চিকিৎসক পদ সহ সব জনবল সঙ্কট নিরসনের দাবি উপজেলাবাসীর।
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ৬০-৭০ জন রোগী টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। টিকিট না কেটে চিকিৎসকের খোঁজখবর নিচ্ছেন আরো অন্তত  ৫০/৬০ জন। বহির্বিভাগের দুটি কক্ষে রোগী দেখছেন দুইজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
 এছাড়া টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে প্রতিটি বিভাগে রয়েছে রোগীদের উপচেপড়া ব্যাপক ভিড়। বহির্বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তারদের সামনে অনেক লম্বা লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অসহায় এসব রোগীরা তাদের কাঙ্খিত মানের চিকিৎসা  সেবা পাচ্ছেন না। ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ কাউন্টারেই কোন চিকিৎসক নেই। এছাড়া ইর্মাজেন্সি বিভাগে একজন ডাক্তার কর্তব্যরত। তবে সেখানেও প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
প্রসূতি মা ও শিশুরা সেবা নিতে এসে চিকিৎসক না পেয়ে বাড়ি ফিরে  যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সিজারিয়ান অপারেশনও দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স রাখার গ্যারেজে বাইরে থেকে তালা দেওয়া। এছাড়া হাসপাতাল চত্বরে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে দুটি অ্যাম্বুলেন্স। ফলে সঙ্কটাপন্ন রোগিদের রাজশাহী ও নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর কাজে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে অধিক অর্থের বিনিময়ে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের রাহেলা বিবি ও ফুলজান বিবি, ছোটবেলালদহ গ্রামের নিজাম উদ্দিন ও মোস্তফা, খুদিয়াডাঙ্গা গ্রামের সুমন কুমার, বড়পই গ্রামের শহিদুল ইসলাম ও চাম্পা খাতুনসহ দশ/বারোজনের সাথে কথা হয়।
 অনেক রোগী বলেন, হাসপাতালে আর আগের মতো কোন চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে সেবা না নিয়েই অনেক সময় বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।
তাঁদের আরো অভিযোগ এখানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের (প্রেসক্রিপশন) বেশির ভাগ ওষুধই হাসপাতালের বাইরে থেকে চড়া দামে কিনতে হয়।
উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী মণ্ডল কিছুদিন আগে হঠাৎ করে পড়ে যান, তখন তাকে প্রথমে মান্দা ও পরে রাজশাহী নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়।
তার ছেলে সায়েদ আলী মণ্ডল  বলেন, ‘সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু না থাকায় রোগীদের বাড়তি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স মান্দা থেকে রাজশাহী কিংবা নওগাঁয় যেতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হতো। সেখানে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া গুনতে হচ্ছে।  চালকের অভাবে লাখ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্স অব্যাহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা খুবই হতাশাজনক। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অবহেলার কারণে এমনটা হচ্ছে।’
এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সেবা না মেলায় উপজেলার মানুষ অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ৮/১০ টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক জটিল রোগীরা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) ও নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে আবার হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ থাকায় রোগীদের রাজশাহী কিংবা নওগাঁতে আসা-যাওয়া করতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ১৪ টি ইউনিয়নে ১৫ টি সাব-সেন্টার/ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ সর্বমোট ৩৬ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র আটজন চিকিৎসক। ইতিমধ্যে পাঁচজন জন চিকিৎসক প্রেষণে বদলি হয়ে গেছেন।
বর্তমানে টিএইচওসহ মাত্র চারজন চিকিৎসক এ বৃহৎ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চরম পর্যায়ের হিমসিম খাচ্ছেন। এছাড়া কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে ৫০টি। কমিউনিটি হেলথ্ প্রোভাইডারেরও দুটি পদ শূন্য রয়েছে। তবে নার্সের ৩৫ টি পদের সবাই কর্তব্যরত আছেন। অফিস সহায়ক ও আয়া পদে একজন করে শূন্য।
বর্তমানে হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট(চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি অ্যান্ড অবস), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন),  জুনিয়র কনসালটেন্ট( অর্থোপেডিক),  জুনিয়র কনসালটেন্ট( কার্ডিওলজি)  জুনিয়র কনসালটেন্ট(ইএনটি) মেডিক্যাল অফিসার (হোমিওপ্যাথিক), ডেন্টাল সার্জন বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক নেই হাসপাতালটিতে।
এছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ের সাব সেন্টার/ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৮ জন মেডিক্যাল অফিসার ও  ৩ জন সহকারী সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে। টেকনেশিয়ানের অভাবে আলট্রাসনোগ্রামসহ বেশির ভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালটিতে একটি অত্যাধুনিক মেশিনসহ দু’টি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে কিন্তু জনবল না থাকায় তাও বন্ধ রয়েছে।
অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও  গত দুই বছর থেকে নেই কোন চালক। ‘দুই বছরের বেশি সময় আগে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্স চালক আবুল বাশার অবসরে যান। এরপর থেকেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকা সচল দুটি অ্যাম্বুলেন্সই ব্যবহার হচ্ছে না। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য তেলের যে বরাদ্দ সেটিও দেয়া হচ্ছে না। ফলে অ্যাম্বুলেন্সগুলো গ্যারেজেই অব্যবহৃত অবস্থায় দিনের পর দিন পড়ে আছে। অ্যাম্বুলেন্সের চালক নিয়োগ ও তেলের বরাদ্দ দেয়ার জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু  এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে মান্দা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মুহা: আনোয়ারুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে ২১ জন চিকিৎসকের পদের মধ্যে বর্তমানে মাত্র চারজন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। ফলে রোগিদের চিকিৎসা সেবা দিতে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বারবার জানানো হয়েছে। তবুও আজ পর্যন্ত কোন সমাধানে কোন অগ্রগতি হয়নি। চিকিৎসক সঙ্কট নিরসন না হলে রোগিদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা আমাদের পক্ষে কোনভাবেই আর কন্টিনিউ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা সিভিল সার্জন ডা: জাহিদ কামাল  বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে বেশ কিছু চিকিৎসক সঙ্কট আছে। এ সঙ্কট নিরসনে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে । শূন্যপদ পূরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সঙ্কট নিরসনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে চুড়ান্ত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।