রাজশাহীর চারঘাটে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি বানিয়ে হয়রানি করা ও জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে মামলার বাদীর বিরুদ্ধে। এই মামলায় জামিনে থাকা আটজন আসামি বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ তুলেছেন।
এর আগে গত সোমবার ওই মামলার বাদী রঞ্জু আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ তুলেছিলেন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ (চাঁদ) আওয়ামী লীগ-সমর্থক আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছেন।
আট আসামি বলছেন, হত্যাকান্ডের ঘটনার দিন আটজনের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। একমাত্র বিএনপি করার অপরাধেই তাদের হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। নিজ দলীয় নেতাকর্মী হওয়ার কারণে জেলা বিএনপির আহবায়ক সরল মনে বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষে সুপারিশ করেছেন। কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সুপারিশ করার মিথ্যা অভিযোগ তুলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
জানা যায়, ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর চারঘাট থানায় মামলাটি করেছিলেন উপজেলার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জু আহমেদ। এজাহারে বলা হয়েছিল, ৬ অক্টোবর মোটরসাইকেলে করে বাজারে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের ওপর হামলা করে। এতে রঞ্জুর ভাই মন্টু আহমেদ নিহত হন। আহত হন বাবা শামসুল হকসহ কয়েকজন। এ মামলায় আসামি রয়েছেন ২২ জন। গত ৩০ জুন রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলাটি প্রত্যাহারে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে আসামিপক্ষ। এতে আট আসামির পক্ষে সুপারিশ করেছেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সকালে চারঘাট থানা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আটজন আসামি সাংবাদিকদের সামনে তাদের এই অভিযোগ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার ১৪ নম্বর আসামি রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সাজদার রহমান বলেন, ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। হত্যাকান্ডের সাথে দু একজন জড়িত থাকলেও সে ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে ২২ জনকে আসামী করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন মারা গেছে। বাকি ১৭ জনের মধ্যে ৮ জন স্থানীয় বিএনপির সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী। শুধুমাত্র বিএনপি করার কারণে তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নির্দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। মামলার বাদী ও ১৮ জন সাক্ষী সকলেই আ'লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।
তিনি বলেন, আমি ঘটনার দিন প্রধান শিক্ষক হিসাবে স্কুলেই অবস্থান করছিলাম। অথচ আমাকে, আমার স্কুলের সভাপতি জুমারত আলীকে, সভাপতির ছেলে ইমাদাদুলসহ যারা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের আসামি করা হয়েছে। যেহেতু ঘটনার সময় বর্তমান জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ তৎকালীন চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এজন্য পুরো ঘটনা তিনি অবগত ছিলেন। পাঁচ আগষ্টের পর আমরা গ্রামবাসী তার বাড়িতে গেলে অনুরোধের এক পর্যায়ে তিনি অসহায় নেতাকর্মীদের বাঁচাতে সুপারিশ করেছেন। এখানে টাকা লেনদেনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অথচ সেই আ'লীগের দোসররা আবু সাঈদ চাঁদকে জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো শুরু করেছে।
মামলার আরেক আসামি ইমদাদুল ইসলাম বলেন, আমি ডাকরা কলেজের একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। ঘটনার দিন কলেজে থাকলেও আমাকে এবং আমার পিতাকে আসামী করা হয়েছে। মামলায় জামিনে থাকলেও আ'লীগ সরকার থাকাকালীন সময় কলেজে ঢুকতে পর্যন্ত দেয়নি। মিথ্যা মামলায় আমার সাজানো গোছানো সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুল সালাম বলেন, হত্যাকান্ডের পর পুরো গ্রামের বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িঘর লুটপাট করা হয়েছে। জমির ফসল পর্যন্ত কেটে নেওয়া হয়েছে। দুঃখ দূর্দশার কথা শুনে এবং বিষয়টি অবগত থাকায় গ্রামবাসীর অনুরোধে আবু সাঈদ চাঁদ ভাই সুপারিশ করেছেন। আসামিরা দীর্ঘ সময় আইন-আদালত করতে গিয়ে তিনবেলা খাবার জোটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বিপুল অংকের টাকা আবু সাঈদ চাঁদকে দিয়ে সুপারিশ করানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে কিছু ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এর আগে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী রঞ্জু আহমেদ দাবি করেছিলে, প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ–সমর্থিত চেয়ারম্যান ৯ বিঘা জমির বিনিময়ে মামলাটি আপসের প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি না হওয়ায় সম্প্রতি আবু সাঈদ চাঁদ নিজে তাঁদের বাড়িতে এসে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। রাজি না হওয়ায় তাঁর সমর্থকেরা তাঁকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, যার কারণে তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি আবু সাঈদ চাঁদের সুপারিশের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আপত্তি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য হত্যা মামলাটি বর্তমানে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ আদালতে বিচারাধীন। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৪ অক্টোবর যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।