খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করে পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর সাঁড়াঘাট এলাকায় ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ইজারাদারদের দুই পক্ষের মধ্যে ফিল্মি স্টাইলে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় দুইজন পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরা হলেন পাকশী হঠাৎ পাড়ার বাবুল হালদারের ছেলে মো. সজীব হালদার (২৫) এবং মোহাম্মদ হোসেন আলীর ছেলে নিজাম হোসেন (৩০)।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীর ঘাট এলাকায় আধা ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ দুজনকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও গোলাগুলিতে নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি বাড়িঘরের টিনের চাল বেড়া ছিদ্র হয়ে যায়। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার নাফিজা খানম বলেন, সজীব হালদার (২৫) পিতা বাবুল হালদার ও নিজাম হোসেন (৩০) পিতা মোহাম্মদ হোসেন আলী আজ সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ার কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ঈশ্বরদী লক্ষীকুন্ডা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম গোলাগুলির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পদ্মানদীতে ইজারাদারদের টোল আদায় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুইপক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাটি ঘটেছে। তবে বর্তমানে ঘাটে পুলিশের উপস্থিতির কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
নৌপুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার দুপুর তিনটার দিকে পাকশী কুষ্টিয়া এলাকার তরিয়া মহলের ইজারাদার মেসার্স এটি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মেহেদী হাসানের লোকজন রানা খড়িয়া তরিয়া মহাল ঘাটে টোল তুলছিল। এ সময় প্রতিপক্ষ কুষ্টিয়ার গ্রুপঅন সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের সহকারি পরিচালক খন্দকার সোহেলের লোকজন নদীপথে একটি স্পিডবোট ও দুইটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সশস্ত্র অবস্থায় ঈশ্বরদীর পাকশী হঠাৎপাড়া নদীঘাটে এসে ফিল্মি স্টাইলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। তারা সাঁড়া পাঁচ নম্বর হঠাৎ পাড়া ঘাট এলাকায় প্রায় ৩০ মিনিট ধরে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এতে নদীর পাড়ের বেশকিছু বাড়ি টিনের চাল এবং বেড়া ফুটো হয়ে যায়। এ সময় দুজন পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা মেহেদী পক্ষের একটি স্পিডবোট ও একটি নৌকা নিয়ে যায়।
এটি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, কুষ্টিয়ার গ্রুপ অন সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের সহকারী পরিচালক খন্দকার সোহেল বিআইডব্লিউটি এ কর্তৃক পাকশি হতে গোলন্দঘাট পর্যন্ত নৌ চ্যানেল ইজারাদার। রানাখড়িয়া তরিয়া মহাল ঘাটের আমি বৈধ ইজারাদার। আমার লোকজন এই ঘাটে টোল তুলছিল। সে সময় সোহেলের লোকজন একটি স্পিডবোট ও কয়েকটি নৌকা নিয়ে ঘাটে এসে আমাদের লোকজনের উপর গুলি বর্ষণ করে। ফিরে যাওয়ার সময় আমাদের একটি স্পিডবোট এবং একটি নৌকা নিয়ে যায়।
অভিযুক্ত খন্দকার সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, পদ্মা নদীর ইজারা ও চাঁদা আদায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগেও এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আধিপত্য নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। এ বিষয়ে নৌ পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।