ঢাকা ০৭:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা Logo মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা Logo দুর্গাপুরে ‎রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন  Logo শীতের গন্ধ, তাপমাত্রা কমছে প্রতিদিন দুই ডিগ্রি ঈশ্বরদীতে দোকানে উঠছে শীতের সোয়েটার-জ্যাকেট, কম্বল Logo পদ্মার চরজুড়ে চলছে ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ Logo নীলফামারীতে চার দফা দাবী বাস্তবায়নে বিসিএস প্রভাষক পরিষদের মানবন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স রোগে ৮ জন আক্রান্ত 

রংপুরের পীরগাছা-কাউনিয়া ও  মিঠাপুকুর উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগী পাওয়া গেছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞরা জেলার পীরগাছার আটজন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করেছেন এবং মিঠাপুকুর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন সুত্রে জানা যায়, গত জুন জুলাই ও সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে পীরগাছায় দুই শতাধিক গরু অ্যানথ্রাক্সে মারা যায়। সেই সাথে জুলাই ও সেপ্টেম্বরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন। একই সময়ে অ্যানথ্রাক্স রোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তি আক্রান্ত হন। এরপরেই নড়েচরে বসে স্বাস্থ্যবিভাগ। অন্যদিকে পীরগাছার অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পরে সরকারের আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করে। আইইডিসিআর বলছে, ফ্রিজে রাখা গরুর মাংসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিয়ার।
আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন বলেন, বিভিন্নভাবে পীরগাছার ১২ জনের নমুনা পরীক্ষা সংগ্রহ করা হয়। সেই ১২ জনের মধ্য থেকে ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের তেমন কোন সংক্রমণ ছিল না আগে। গরুর পাশাপাশি ছাগলের মাংসেরও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শনাক্ত হওয়ায় মানুষের মধ্যে এই স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত জানান, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে গত দুই মাসে প্রায় ৩০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেনি, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন এ রকম ২০ জন রোগীর তথ্য আছে বলে জানান তিনি।
অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে পীরগাছার দুজনের মৃত্যু নিয়ে তানভীর হাসনাত বলেন, মারা যাওয়া দুজনের মেডিকেল রিপোর্ট তারা (আইইসিডিআর) দেখেছেন। এ দুইজনের মৃত্যু অ্যানথ্রাক্সের কারণে হয়নি। তবে ওই দুজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছিল।
এদিকে মিঠাপুকুরের ইমাদপুর ইউনিয়নের রহমতপুর বাজারের আমাইপুর গ্রামের গরুর মাংসের স্যাম্পল প্রাণিসম্পদ অফিসে পরীক্ষায় অ্যানথ্রাক্স পজিটিভ এসেছে। একই প্রাণী প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সম্পৃক্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তির আইইডিসিআর এ পাঠানো নমুনা পরীক্ষা করে জানা গেছে, তারাও অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ বলে জানা গেছে।
অ্যানথ্রাক্স নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকসহ সচেতন সমাজ। তারা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কেননা এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না বলে নিশ্চিত করেছেন তারা।

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা: শাহীন সুলতানা বলেন, শুরুতেই শুধু পীরগাছায় ছিলো যা পরবর্তী সময়ে কাউনিয়া ও মিঠাপুকুরেও আমরা একই ধরনের উপসর্গের রোগী পেয়েছি। ইতিমধ্যে আরও ৮ জনের নমুনা আইইসিডিআরে পাঠানো হয়েছে। সেটার রিপোর্ট এখনো আমাদের কাছে আসেনি। আসলে বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সচেতনতা বিষয়ে তিনি বলেন অসুস্থ গবাদিপশু জবাই ও অসুস্থ প্রাণীর মাংস না খাওয়াই ভালো। যারা আ্যনথ্রাক্সে আক্রান্ত আছেন, তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে চিকিৎসার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। এ সংক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ভালোভাবে দিতে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, রংপুর জেলায় ১৩ লাখের বেশি গরু, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। আ্যনথ্রাক্সে এর হাত থেকে রক্ষা পেতে গত ২৬ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও রংপুর সদরে ১ লাখ ৬৫ হাজার গবাদিপশুকে অ্যানথ্যাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। অ্যানথ্যাক্স নিয়ে আতঙ্কের কোন কারণ নেই। ইতিমধ্যে প্রাণিসম্পদ বিভাগ মসজিদ, মন্দির, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সচেতনতা কাযক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতিরোধী টীকা ব্যবহারের পর থেকে নতুন করে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশু পাওয়া যায়নি।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স রোগে ৮ জন আক্রান্ত 

Update Time : ০৭:১৬:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
রংপুরের পীরগাছা-কাউনিয়া ও  মিঠাপুকুর উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগী পাওয়া গেছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞরা জেলার পীরগাছার আটজন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করেছেন এবং মিঠাপুকুর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন সুত্রে জানা যায়, গত জুন জুলাই ও সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে পীরগাছায় দুই শতাধিক গরু অ্যানথ্রাক্সে মারা যায়। সেই সাথে জুলাই ও সেপ্টেম্বরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন। একই সময়ে অ্যানথ্রাক্স রোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তি আক্রান্ত হন। এরপরেই নড়েচরে বসে স্বাস্থ্যবিভাগ। অন্যদিকে পীরগাছার অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পরে সরকারের আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করে। আইইডিসিআর বলছে, ফ্রিজে রাখা গরুর মাংসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিয়ার।
আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন বলেন, বিভিন্নভাবে পীরগাছার ১২ জনের নমুনা পরীক্ষা সংগ্রহ করা হয়। সেই ১২ জনের মধ্য থেকে ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের তেমন কোন সংক্রমণ ছিল না আগে। গরুর পাশাপাশি ছাগলের মাংসেরও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শনাক্ত হওয়ায় মানুষের মধ্যে এই স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত জানান, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে গত দুই মাসে প্রায় ৩০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেনি, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন এ রকম ২০ জন রোগীর তথ্য আছে বলে জানান তিনি।
অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে পীরগাছার দুজনের মৃত্যু নিয়ে তানভীর হাসনাত বলেন, মারা যাওয়া দুজনের মেডিকেল রিপোর্ট তারা (আইইসিডিআর) দেখেছেন। এ দুইজনের মৃত্যু অ্যানথ্রাক্সের কারণে হয়নি। তবে ওই দুজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছিল।
এদিকে মিঠাপুকুরের ইমাদপুর ইউনিয়নের রহমতপুর বাজারের আমাইপুর গ্রামের গরুর মাংসের স্যাম্পল প্রাণিসম্পদ অফিসে পরীক্ষায় অ্যানথ্রাক্স পজিটিভ এসেছে। একই প্রাণী প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সম্পৃক্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তির আইইডিসিআর এ পাঠানো নমুনা পরীক্ষা করে জানা গেছে, তারাও অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ বলে জানা গেছে।
অ্যানথ্রাক্স নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকসহ সচেতন সমাজ। তারা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কেননা এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না বলে নিশ্চিত করেছেন তারা।

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা: শাহীন সুলতানা বলেন, শুরুতেই শুধু পীরগাছায় ছিলো যা পরবর্তী সময়ে কাউনিয়া ও মিঠাপুকুরেও আমরা একই ধরনের উপসর্গের রোগী পেয়েছি। ইতিমধ্যে আরও ৮ জনের নমুনা আইইসিডিআরে পাঠানো হয়েছে। সেটার রিপোর্ট এখনো আমাদের কাছে আসেনি। আসলে বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সচেতনতা বিষয়ে তিনি বলেন অসুস্থ গবাদিপশু জবাই ও অসুস্থ প্রাণীর মাংস না খাওয়াই ভালো। যারা আ্যনথ্রাক্সে আক্রান্ত আছেন, তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে চিকিৎসার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। এ সংক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ভালোভাবে দিতে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, রংপুর জেলায় ১৩ লাখের বেশি গরু, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। আ্যনথ্রাক্সে এর হাত থেকে রক্ষা পেতে গত ২৬ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও রংপুর সদরে ১ লাখ ৬৫ হাজার গবাদিপশুকে অ্যানথ্যাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। অ্যানথ্যাক্স নিয়ে আতঙ্কের কোন কারণ নেই। ইতিমধ্যে প্রাণিসম্পদ বিভাগ মসজিদ, মন্দির, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সচেতনতা কাযক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতিরোধী টীকা ব্যবহারের পর থেকে নতুন করে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশু পাওয়া যায়নি।