ঢাকা ০৩:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জেন-জি’দের আন্দোলনের মুখে আরেক দেশের সরকার পতন

বিদ্যুৎ ও পানি সংকটের বিরুদ্ধে জেনারেশন জেড বা জেন-জিদের আন্দোলনের মুখে সরকার ভেঙে দিয়েছেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে রাজোয়েলিনা।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন।

ভাষণে রাজোয়েলিনা বলেন, ‘সরকারের ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চাইছি। সরকারের সদস্যরা যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে থাকেন, তবে আমরা স্বীকার করছি এবং দুঃখ প্রকাশ করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি রাগ, দুঃখ এবং বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ সমস্যার কারণে যে কষ্ট হয়েছে তা বুঝি। আমি আহ্বান শুনেছি, কষ্ট অনুভব করেছি, দৈনন্দিন জীবনের ওপর প্রভাব বুঝেছি।’

গত বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) থেকে পূর্ব আফ্রিকার দেশ মাগাগাস্কারে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘জেন জি’ নামে পরিচিত এ বিক্ষোভ রাজধানী আন্তানানারিভো থেকে শুরু হলেও ধীরে ধীরে আটটি শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

বিদ্যুৎ–জ্বালানি মন্ত্রীকে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে বরখাস্ত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা কিন্তু বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ও তার পুরো সরকারকে পদত্যাগের দাবি তোলেন।

সোমবার আবারও হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসলে প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করেছেন ও সরকার ভেঙে দিয়েছেন এবং আগামী তিন দিনের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে। এরপর নতুন সরকার গঠন করা হবে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশটিতে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘জেন জি’ নামে পরিচিত এ বিক্ষোভ রাজধানী আন্তানানারিভো থেকে শুরু হলেও এখন আটটি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক নিরাপত্তা বাহিনীর “অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগের” নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, অন্তত ২২ জন নিহত এবং ১০০ জন আহত হয়েছেন। তিনি জানান, আটক ও মারধরের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এমনকি সরাসরি গুলিও চালানো হয়েছে।

তবে মাদাগাস্কারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের দেওয়া পরিসংখ্যানকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, এসব তথ্য ‘‘গুজব বা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে” সামনে আনা হয়েছে।

এদিকে, সহিংসতা ও লুটপাটের খবরের পর পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির রাজধানীতে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে কেবল বিক্ষোভকারীরা নয়, সাধারণ পথচারীও রয়েছেন। আবার অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন বিক্ষোভ-পরবর্তী সহিংসতা ও লুটপাটে।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর ১৯৬০ সাল থেকে মাদাগাস্কার একাধিক গণঅভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়েছে। ২০০৯ সালের গণবিক্ষোভে সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং রাজোয়েলিনা ক্ষমতায় আসেন। ২০২৩ সালে তৃতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার জন্য এবারের আন্দোলনই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জেন-জি’দের আন্দোলনের মুখে আরেক দেশের সরকার পতন

Update Time : ০৬:১৮:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিদ্যুৎ ও পানি সংকটের বিরুদ্ধে জেনারেশন জেড বা জেন-জিদের আন্দোলনের মুখে সরকার ভেঙে দিয়েছেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে রাজোয়েলিনা।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন।

ভাষণে রাজোয়েলিনা বলেন, ‘সরকারের ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চাইছি। সরকারের সদস্যরা যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে থাকেন, তবে আমরা স্বীকার করছি এবং দুঃখ প্রকাশ করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি রাগ, দুঃখ এবং বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ সমস্যার কারণে যে কষ্ট হয়েছে তা বুঝি। আমি আহ্বান শুনেছি, কষ্ট অনুভব করেছি, দৈনন্দিন জীবনের ওপর প্রভাব বুঝেছি।’

গত বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) থেকে পূর্ব আফ্রিকার দেশ মাগাগাস্কারে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘জেন জি’ নামে পরিচিত এ বিক্ষোভ রাজধানী আন্তানানারিভো থেকে শুরু হলেও ধীরে ধীরে আটটি শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

বিদ্যুৎ–জ্বালানি মন্ত্রীকে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে বরখাস্ত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা কিন্তু বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ও তার পুরো সরকারকে পদত্যাগের দাবি তোলেন।

সোমবার আবারও হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসলে প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করেছেন ও সরকার ভেঙে দিয়েছেন এবং আগামী তিন দিনের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে। এরপর নতুন সরকার গঠন করা হবে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশটিতে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘জেন জি’ নামে পরিচিত এ বিক্ষোভ রাজধানী আন্তানানারিভো থেকে শুরু হলেও এখন আটটি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক নিরাপত্তা বাহিনীর “অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগের” নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, অন্তত ২২ জন নিহত এবং ১০০ জন আহত হয়েছেন। তিনি জানান, আটক ও মারধরের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এমনকি সরাসরি গুলিও চালানো হয়েছে।

তবে মাদাগাস্কারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের দেওয়া পরিসংখ্যানকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, এসব তথ্য ‘‘গুজব বা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে” সামনে আনা হয়েছে।

এদিকে, সহিংসতা ও লুটপাটের খবরের পর পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির রাজধানীতে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে কেবল বিক্ষোভকারীরা নয়, সাধারণ পথচারীও রয়েছেন। আবার অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন বিক্ষোভ-পরবর্তী সহিংসতা ও লুটপাটে।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর ১৯৬০ সাল থেকে মাদাগাস্কার একাধিক গণঅভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়েছে। ২০০৯ সালের গণবিক্ষোভে সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং রাজোয়েলিনা ক্ষমতায় আসেন। ২০২৩ সালে তৃতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার জন্য এবারের আন্দোলনই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।