ঢাকা ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত

দুর্গাপুরে এলজিইডির সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম, সপ্তাহ পার না হতেই উঠে যাচ্ছে পিচ-কার্পেটিং

পা দিয়ে ডলা দিলে কিংবা হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। হাতের চাপে ঝরে পড়ছে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ।
স্থানীয়দের ক্ষোভ, রাস্তা কার্পেটিং করার পরদিন থেকে পাথর পিচ উঠে যাচ্ছে। এটা রাস্তা নির্মাণ নয়- যেন এটা দুর্নীতির জ্যান্ত দলিল। অথচ কর্তৃপক্ষ বলছে- সড়ক নির্মাণে ন্যূনতম ত্রুটি ধরা পড়লে সড়কটি পুনঃনির্মাণ করা হবে। যা রীতিমতো হাস্যকর।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার তিওড়কুড়ি ভায়া পাঁচুবাড়ি হয়ে দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় ৪ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাকা রাস্তায় গেলে দেখা মেলে এমন চিত্রের। সপ্তাহ খানেক আগে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। অথচ এখনো সড়কের বিভিন্ন অংশে হাত দিতেই দিব্বি উঠে আসছে পিচ-পাথরের ঢালাই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের বিটুমিন থেকে শুরু করে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি সড়ক ভালোভাবে পরিষ্কার না করেই ঢালাই দেয়া হয়েছে। এছাড়া কালি ও পোড়া মবিল মিশ্রিত বিটুমিন ব্যবহার করায় পিচ-পাথরের কার্পেটিং জমাট বাঁধেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দরপত্র আহ্বান করার পর চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স এই কাজের দায়িত্ব পান। কাজ তদারকির দায়িত্বে ছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ওয়াসিম হোসেন।
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং কয়েক দফায় সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে কাজ শেষ করা হয়। এই কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৬ টাকা। অথচ সদ্য নির্মিত এই সড়কটির বয়স সপ্তাহের মাথায় ঝুরঝুর করে খসে পড়ছে পাথর।
স্থানীয় অধ্যাপক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘রাস্তায় ঠিকমতো পিচ দেয়া হয়নি। এভাবে কাজ করলে সড়কটি এক বছরও টিকবে না। বৃষ্টি হলে পুরো রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবে।’
ভ্যানচালক আবু বক্কর অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে সড়ক নির্মাণে। অথচ ঠিকাদার আর প্রকৌশলীরা ভাগাভাগি করে নিম্নমানের কাজ করছেন। সপ্তাহ না যেতেই পিচ-পাথর উঠে যাচ্ছে। এ রাস্তায় ভ্যান গাড়ি চলাই দুঃসাধ্য।’
জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, ‘পা দিয়ে ঘষা দিলেই পাথর উঠে আসে। পরিমাণ মতো পিচ বা বিটুমিন ব্যবহার করা হয়নি। সঠিকভাবে রোলার ব্যবহারও করা হয়নি। এই সড়ক কদিন টিকে দেখি।’
দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে দায়সারা কাজ শেষ করে গেছে। উপজেলা থেকে কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে কাজ তদারকি করতে দেখা যায়নি। ফলে এখন হাত দিয়ে টান দিলেই পিচ উঠে যাচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় এক ঠিকাদার জানান, সড়ক তৈরির সময় সঠিক অনুপাতে বিটুমিন সহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার না করলে এমনটা ঘটে। এর ফলে উপরের স্তর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সড়কটি স্থায়িত্ব হারায়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ওয়াসিম হক বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে কাজ হয়েছে। আমাদের ম্যানেজার মকদুম সাহেব আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।’
ওয়াসিমের কথা মতো অবশ্য সেই মকদুম সাহেব সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মাশুক-ই মোহাম্মদ দাবি করেন, সড়কটিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘ল্যাব পরীক্ষায় অনিয়ম প্রমাণিত হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে যাওয়ার পর কি ধরনের ব্যবস্থা নিবেন সেটা অবশ্য বলেননি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ওই সড়কটি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি তিনি অবগত। ‘উপজেলা প্রকৌশলীকে তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সড়ক নির্মাণে ন্যূনতম ত্রুটি ধরা পড়লে সড়কটি পুনঃনির্মাণ করা হবে।’
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার

দুর্গাপুরে এলজিইডির সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম, সপ্তাহ পার না হতেই উঠে যাচ্ছে পিচ-কার্পেটিং

Update Time : ১০:২৫:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পা দিয়ে ডলা দিলে কিংবা হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। হাতের চাপে ঝরে পড়ছে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ।
স্থানীয়দের ক্ষোভ, রাস্তা কার্পেটিং করার পরদিন থেকে পাথর পিচ উঠে যাচ্ছে। এটা রাস্তা নির্মাণ নয়- যেন এটা দুর্নীতির জ্যান্ত দলিল। অথচ কর্তৃপক্ষ বলছে- সড়ক নির্মাণে ন্যূনতম ত্রুটি ধরা পড়লে সড়কটি পুনঃনির্মাণ করা হবে। যা রীতিমতো হাস্যকর।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার তিওড়কুড়ি ভায়া পাঁচুবাড়ি হয়ে দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় ৪ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাকা রাস্তায় গেলে দেখা মেলে এমন চিত্রের। সপ্তাহ খানেক আগে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। অথচ এখনো সড়কের বিভিন্ন অংশে হাত দিতেই দিব্বি উঠে আসছে পিচ-পাথরের ঢালাই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের বিটুমিন থেকে শুরু করে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি সড়ক ভালোভাবে পরিষ্কার না করেই ঢালাই দেয়া হয়েছে। এছাড়া কালি ও পোড়া মবিল মিশ্রিত বিটুমিন ব্যবহার করায় পিচ-পাথরের কার্পেটিং জমাট বাঁধেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দরপত্র আহ্বান করার পর চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স এই কাজের দায়িত্ব পান। কাজ তদারকির দায়িত্বে ছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ওয়াসিম হোসেন।
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং কয়েক দফায় সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে কাজ শেষ করা হয়। এই কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৬ টাকা। অথচ সদ্য নির্মিত এই সড়কটির বয়স সপ্তাহের মাথায় ঝুরঝুর করে খসে পড়ছে পাথর।
স্থানীয় অধ্যাপক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘রাস্তায় ঠিকমতো পিচ দেয়া হয়নি। এভাবে কাজ করলে সড়কটি এক বছরও টিকবে না। বৃষ্টি হলে পুরো রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবে।’
ভ্যানচালক আবু বক্কর অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে সড়ক নির্মাণে। অথচ ঠিকাদার আর প্রকৌশলীরা ভাগাভাগি করে নিম্নমানের কাজ করছেন। সপ্তাহ না যেতেই পিচ-পাথর উঠে যাচ্ছে। এ রাস্তায় ভ্যান গাড়ি চলাই দুঃসাধ্য।’
জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, ‘পা দিয়ে ঘষা দিলেই পাথর উঠে আসে। পরিমাণ মতো পিচ বা বিটুমিন ব্যবহার করা হয়নি। সঠিকভাবে রোলার ব্যবহারও করা হয়নি। এই সড়ক কদিন টিকে দেখি।’
দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে দায়সারা কাজ শেষ করে গেছে। উপজেলা থেকে কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে কাজ তদারকি করতে দেখা যায়নি। ফলে এখন হাত দিয়ে টান দিলেই পিচ উঠে যাচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় এক ঠিকাদার জানান, সড়ক তৈরির সময় সঠিক অনুপাতে বিটুমিন সহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার না করলে এমনটা ঘটে। এর ফলে উপরের স্তর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সড়কটি স্থায়িত্ব হারায়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ওয়াসিম হক বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে কাজ হয়েছে। আমাদের ম্যানেজার মকদুম সাহেব আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।’
ওয়াসিমের কথা মতো অবশ্য সেই মকদুম সাহেব সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মাশুক-ই মোহাম্মদ দাবি করেন, সড়কটিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘ল্যাব পরীক্ষায় অনিয়ম প্রমাণিত হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে যাওয়ার পর কি ধরনের ব্যবস্থা নিবেন সেটা অবশ্য বলেননি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ওই সড়কটি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি তিনি অবগত। ‘উপজেলা প্রকৌশলীকে তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সড়ক নির্মাণে ন্যূনতম ত্রুটি ধরা পড়লে সড়কটি পুনঃনির্মাণ করা হবে।’