রাজশাহীর তানোর থেকে মোহনপুর চলাচলের রিপিয়ারিং সড়কটি ভেঙ্গে খানাখন্দে ভরপুর হয়ে পড়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সড়ক জনপথ বিভাগের (সওজ) সড়কটি সম্প্রতি গেলো দেড়মাস আগে রিপিয়ারিং করা হয়। কিন্তু
রিপিয়ারিং কাজে সংশ্লিষ্টরা নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় বর্তমানে এতো সল্প সময়ে সড়কটি ভেঙ্গে বিভিন্ন স্থানে
ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে ভ্যানযোগে যাতায়াতের সময় এমন দূশ্য দেখা গেছে।
তবে, বর্তমানে তানোরের কাশিম বাজার হতে পবার বায়া বাজার পর্যন্ত এলজিইডির রাস্তাটি ভেঙ্গে পড়ায় বিকল্প রাস্তা
হিসেবে তানোর-মোহনপুর সওজের সড়কটি চলাচলে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন যানবাহন চালক ও পথচারীরা। বহু পুরাতন এই
রাস্তা দিয়েই এক সময়ে রাজশাহী নগরীতে চলাচল করতেন এ অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে সব পাল্টে গেছে। এই
সড়কটি এখন মানুষের শুধু বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানোর সদর থেকে মোহনপুর থানামোড় পর্যন্ত সড়কটির দৈঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। কিন্তু এ
সড়কের প্রস্থ কোথাও মোটা ও সরু রয়েছে। প্রস্থের সঠিক তথ্য দিতে পারেনি কেউ। সম্প্রতি দেড়মাস আগে সড়কটির বিভিন্ন
স্থানে রিপিয়ারিং করা হয়। এই সড়কের তানোর সদর থেকে কাশিম বাজার পর্যন্ত প্রায় স্থানে রাস্তার দু’ধার ভেঙ্গে ছোট বড়
গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া সড়কটিতে গাছের ডালপালা ও ঝোপ জঙ্গল বেড়ে এক থেকে দেড় ফিট গিলে ফেলেছে রাস্তা।
এরপরও এসব গাছের ডালপালা ও ঝোপ জঙ্গল পরিস্কার করার ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটবড়
দূর্ঘনা। অপরদিকে, মোহনপুর উপজেলার খানপুর ও আমরাইল-পুল্লাকুড়ি নামক স্থানে বৃষ্টির পানি রাস্তার ওপর দিয়েই নামছে।
মূলত সেখানে ভারী বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে, সড়কের ওপরে
অপরিকল্পিত ভাবে বেশ কয়েক স্থানে বড় বড় ইট ফেলা হয়েছে। তাতে বিভিন্ন অটোভ্যান, উল্কাগাড়ী ও ট্রাক পিকআপ বেধেঁ
স্বাভাবিক চলাচলে যানবাহন আটকা পড়ছে বলে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
নির্বাহী প্রকৌশলীর অভিমত, এ সড়কটি রিপিয়ারিং কাজে কোন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়নি। এজন্য কোন অর্থও বরাদ্দ
হয়নি। কেবল অফিসের গাড়ি আর লোকবল ও জিনিসপত্র ব্যবহার করে রিপিয়ারিং করা হচ্ছে। তবে, সওজের রাজশাহী অফিসের বেশ কয়েকজন স্টাফ নিশ্চিত করেছেন- প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্যে অতিগোপনে কোটেশন বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে সওজের রাজশাহী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তার পছন্দের ঠিকাদার নিযুক্ত করে এই সড়ক রিপিয়ারিং কাজের সিংহ ভাগ অর্থ তসরুফ করেছেন তিনি। ফলে দেড় মাসেই সড়কটি ভেঙ্গে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই অঞ্চলের হাজারো মানুষ বলে জানান আমরাইল-পুল্লাকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা মহসিন ও মেছের আলী।
এনিয়ে এক ভ্যানচালক রুস্তম আলী বলেন, প্রায় দেড় মাস আগে তানোর-মোহনপুর সড়কটির বিভিন্ন স্থানের গর্তে পাথর
বিছিয়ে তার ওপর পোড়া মবেলের ন্যায় গন্ধ বিশিষ্ট বস্তু দ্বারা মেরামত করা হয়। এরপর কিছুদিন হালকা ও ভারী যানবাহন
চলাচলে ভেঙ্গে পড়েছে রাস্তাটি। ফলে পানি নামার কোন ব্যবস্থা না থাকায় এই সড়কের আমরাইল-পুল্লাকুড়ি নামক স্থানে বেশি
ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বৃষ্টির পানি রাস্তার ওপর দিয়েই নামছে। এতে প্রায়ই মালবাহী যানবাহন উল্টে যাচ্ছে।
ফলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যানবাহন চালক ও যাত্রীদের। এ থেকে আমরা মুক্তি পেতে তানোর ও মোহনপুরের অফিস পাড়ায়
গিয়ে রাস্তার কর্তৃপক্ষকে তার কোন খোঁজ পায়নি। তাই অভিযোগ জানানো সম্ভব হয়নি বলে আক্ষেপ করেন তিনি ছাড়াও বেশ
কয়েকজন অটোভ্যান, উল্কাগাড়ী ও ট্রাক পিকআপ চালক।
এব্যাপারে রাজশাহী সওজের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহেদুর রহমানের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে সাংবাদিক
পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত আছি বলে সংযোগ বিছিন্ন করেন এই প্রকৌশলী। পরে সওজের রাজশাহী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী
সানজিদা আফরীন ঝিনুকের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন- তানোর টু মোহনপুর যাতায়াতের সড়কটি রিপিয়ারিং কাজে কোন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়নি। এজন্য কোন অর্থও বরাদ্দ হয়নি। কেবল অফিসের গাড়ি আর লোকবল ও জিনিসপত্র ব্যবহার করে রিপিয়ারিং করা হয়েছে। তবে, কোন বিজ্ঞপ্তি ছাড়া অফিসের গাড়ি আর লোকবল ও জিনিসপত্র ব্যবহার করে এতো টাকার রিপিয়ারিং কাজ করা যায় কিভাবে এমন প্রশ্নে এড়িয়ে গেছেন এই নির্বাহী প্রকৌশলী।