ঢাকা ০৫:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ Logo কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়: তারেক রহমান Logo আগামীকাল থেকে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা Logo বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হবে আ,লীগ ও  জাতীয় পার্টি–নুরুল হক নুর Logo শীতের আগমনে কুয়াশার চাদরে ঢাকা  সৈয়দপুর শহর Logo পাবনা ৪ আসনে বিএনপি’র হাবিবকে সমর্থন করেও বিপক্ষে গেলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী জাকারিয়া পিন্টু Logo গণভোট নিয়ে দলগুলো ঐকমত্যে না এলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব Logo ড. ইউনূসকে শব্দ চয়নে সতর্ক থাকার আহ্বান ভারতের Logo সংবিধানে গণভোট নেই, কথায় কথায় রাস্তায় নামবেন না: আমীর খসরু Logo সাপের কামড়ের ওষুধ সব উপজেলায় পাঠানোর নির্দেশ

হেলিকপ্টারের দড়িতে ঝুলে পালালেন নেপালের মন্ত্রীরা

সহিংসতায় ভেঙে পড়েছে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি। সেনারা গতকাল থেকে রাজধানীর রাস্তায় টহল দিচ্ছে এবং মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কয়েকদিনের সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার পর দেশজুড়ে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার কয়েক হাজার তরুণ বিক্ষোভে যোগ দেয়। ‘জেন জি’ নেতৃত্বাধীন এই বিক্ষোভকারীরা সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়ি ভাঙচুর করে এবং পার্লামেন্ট ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী পৃত্বি সুব্বা গুরুঙের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়, উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পোড়েলের বাসভবনে ইটপাটকেল ছোড়ে। এছাড়া নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংকের গভর্নর বিশ্ব পোড়েল এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকের বাড়িতেও হামলা চালায়।

এক ভিডিওতে দেখা যায়, অর্থমন্ত্রীকে রাস্তায় ধাওয়া করে বিক্ষোভকারীরা লাথি মেরে আঘাত করছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অর্জু রানা দেওবা এবং তার স্বামী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নেপালি কংগ্রেস প্রধান শেরবাহাদুর দেওবার বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে জনতা। সেখানে শেরবাহাদুর দেওবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়। পরে সেনারা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে মন্ত্রী ও তাদের পরিবারকে উদ্ধার করা হচ্ছে। উদ্ধার দড়িতে ঝুলে থাকা অবস্থায় তাদের উড়তে দেখা যায় কাঠমান্ডুর একটি হোটেলের ওপর দিয়ে। একই সময়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে থাকে।

কারাগারের ভেতরও দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। বন্দিরা কারাগারের ভবনে আগুন লাগায় এবং প্রধান ফটক ভেঙে বাইরে আসার চেষ্টা করে। তবে সেনারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং বন্দিদের অন্য কারাগারে সরিয়ে নেয়।

এই সহিংসতার সূচনা হয় সরকারের সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার পর। ফেসবুক, এক্স ও ইউটিউব বন্ধ করে দেওয়া হয়, কারণ সরকার দাবি করে এসব প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন ও সরকারি তদারকিতে আসতে রাজি হয়নি।

এই সিদ্ধান্তের পর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তরুণরা অভিযোগ করে, রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে অথচ সাধারণ তরুণরা চাকরি খুঁজে পাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছর নেপালে যুব বেকারত্ব ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। সরকারের হিসাবে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি তরুণ কাজের সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্য বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে পাড়ি জমাচ্ছে।

বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিলে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে চলে যান। সেনারা এখন রাজধানীতে টহল দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ

হেলিকপ্টারের দড়িতে ঝুলে পালালেন নেপালের মন্ত্রীরা

Update Time : ০৫:৪৪:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সহিংসতায় ভেঙে পড়েছে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি। সেনারা গতকাল থেকে রাজধানীর রাস্তায় টহল দিচ্ছে এবং মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কয়েকদিনের সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার পর দেশজুড়ে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার কয়েক হাজার তরুণ বিক্ষোভে যোগ দেয়। ‘জেন জি’ নেতৃত্বাধীন এই বিক্ষোভকারীরা সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়ি ভাঙচুর করে এবং পার্লামেন্ট ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী পৃত্বি সুব্বা গুরুঙের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়, উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পোড়েলের বাসভবনে ইটপাটকেল ছোড়ে। এছাড়া নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংকের গভর্নর বিশ্ব পোড়েল এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকের বাড়িতেও হামলা চালায়।

এক ভিডিওতে দেখা যায়, অর্থমন্ত্রীকে রাস্তায় ধাওয়া করে বিক্ষোভকারীরা লাথি মেরে আঘাত করছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অর্জু রানা দেওবা এবং তার স্বামী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নেপালি কংগ্রেস প্রধান শেরবাহাদুর দেওবার বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে জনতা। সেখানে শেরবাহাদুর দেওবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়। পরে সেনারা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে মন্ত্রী ও তাদের পরিবারকে উদ্ধার করা হচ্ছে। উদ্ধার দড়িতে ঝুলে থাকা অবস্থায় তাদের উড়তে দেখা যায় কাঠমান্ডুর একটি হোটেলের ওপর দিয়ে। একই সময়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে থাকে।

কারাগারের ভেতরও দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। বন্দিরা কারাগারের ভবনে আগুন লাগায় এবং প্রধান ফটক ভেঙে বাইরে আসার চেষ্টা করে। তবে সেনারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং বন্দিদের অন্য কারাগারে সরিয়ে নেয়।

এই সহিংসতার সূচনা হয় সরকারের সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার পর। ফেসবুক, এক্স ও ইউটিউব বন্ধ করে দেওয়া হয়, কারণ সরকার দাবি করে এসব প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন ও সরকারি তদারকিতে আসতে রাজি হয়নি।

এই সিদ্ধান্তের পর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তরুণরা অভিযোগ করে, রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে অথচ সাধারণ তরুণরা চাকরি খুঁজে পাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছর নেপালে যুব বেকারত্ব ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। সরকারের হিসাবে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি তরুণ কাজের সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্য বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে পাড়ি জমাচ্ছে।

বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিলে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে চলে যান। সেনারা এখন রাজধানীতে টহল দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।