ঢাকা ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo তানোর-গোদাগাড়ীতে প্রার্থী ঘোষণায় সরগরম বিএনপির তৃণমূল Logo বিএনপিতে ফেরায় সংবর্ধিত হলেন কমেট চৌধুরী Logo ঈশ্বরদীতে ক্ষুধায় বাবা মায়ের কবরের কাছে গিয়ে খাবার চাওয়া সাগরের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান Logo জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ১৮ প্রকল্প অনুমোদন Logo দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প  গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না দুই বছরেও Logo আটঘরিয়া জ্যামীর আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ মিছিল, প্রশাসনে স্মারকলিপি প্রদান Logo দৈনিক বার্তার অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার প্রকাশনার সফলতা কামনা করলেন রোকেয়া রাজ্জাক জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার Logo পাবনা-৩ আসনে বিএনপির জনসমুদ্রে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবী Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি

সাক্ষী হয়ে আসামিদের ফাঁসি চাইলেন শহীদ আনাসের অশ্রুসিক্ত মা

জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে নিহত দশম শ্রেণির ছাত্র শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দিপ্তী ছয়জনকে হত্যার এই মামলার সাক্ষী হয়ে আসামিদের ফাঁসি চাইলেন।

আজ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ দেয়া সাক্ষীর জবানবন্দিতে ছেলে হারা এই মা বলেন, আনাস গেন্ডারিয়া আদর্শ একাডেমির দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। ২০২৫ সালে জুলাই মাসে আন্দোলনকারী নিরস্ত্র ছাত্রজনতারকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছিল, তখন আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছিল। ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট সকাল বেলা আনসকে ঘরে না পেয়ে তার রুমে যাই।  সেখানে পড়ার টেবিলে একটি চিঠি পাই। চিঠিতে লেখা ছিল সে মিছিলে যাচ্ছে। সে নিজেকে আটকাতে পারে নাই। চিঠিতে আরও লিখেছে, আমার ভাইয়েরা ভবিষৎ প্রজম্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেধে রাজপথে সংগ্রাম করে যাচ্ছে, অকাতরে নিজের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। একদিনতো মরতে হবে। তাই মৃত্যুর ভয়ে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে গুলি খেয়ে মৃত্যু অধিক শ্রেয়। যে অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয় সেই প্রকৃত মানুষ। যদি বেঁচে না ফিরি কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হইয়ো। চিঠিটি আনাস আমাকে উদ্দেশ্য করে লিখ (এপর্যায়ে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন শহীদ আনাসের মা)।

জবানবন্দিতে আনাসের মা বলেন, ঐদিন (৫ আগস্ট) আন্দোলনকারীদের লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ছিল। আমি এবং আমার স্বামী আশেপাশে আনাসকে খুজি কিন্তু পাচ্ছিলাম না। দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে আমার ফোনে কল আসে। সে বলে যে আপনাদের কেউ কি আন্দোলনে গিয়েছে? আমি বলি আমার ছেলে গিয়েছে। সে আমাকে দ্রুত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলে। সে আরও বলে আপনার ছেলের ফোনে আপনার নাম্বার সেইভ করা ছিল। সেখানে গিয়ে দেখি আমার ছেলে রক্তাত্ত অবস্থায় স্টেচারে পড়ে আছে (এসময় সাক্ষী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)। আমি আনাসকে জড়িয়ে ধরি। তখন সৌরভ নামের একটি ছেলে যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে  গিয়েছিল সে আমাদেরকে জানায়, আন্দোলন চলাকালে চানখারপুলে পুলিশ টার্গেট করে গুলি করেছিল।

আনাসের মা বলেন, সৌরভ আনাসের ব্যবহৃত ফোন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকেট ও মৃত্যুর সনদপত্র আমাকে প্রদান করে। মৃত্যু সনদে আনাসের মৃত্যুর কারণ গানশট ও ব্রট ডেড লেখা ছিল। এরপর একটি অটো রিকসায় আনাসেকে কোলে নিয়ে আমরা বাসায় আসি। আনাসের রক্তে আমাদের কাপড় ভিজে যায়। বাসায় আসার পর এলাকাবাসী আনাসের লাশ নিয়ে মিছিল করে। মিছিলে তারা বলে ‘আমার ভাই মরলো কেন, খুনি হাসিনা জবাব দে। একপর্যায়ে আসরের নামাজের পর গেন্ডারিয়া ধুপখোলা মাঠে আনাসের নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আনাসের বাবার কাছ থেকে জানাতে পারি আন্দোলন চলাকালে চানখারপুলে পুলিশের গুলিতে নিহত মেহেদী হাসান জুনায়েদকেও সেখানে জানাজায় জন্য আনা হয়। দুজনের নামাজের জানাজা একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। আনাসকে গোসল দেওয়া হয়নি। স্থানীয় একজন মাওলানার পরামর্শে আনাসকে রক্তাত্ত কাপড়ে শহীদি মর্যাদায় দাফন করা হয়।

আনাসের মা জবানবন্দিতে বলেন, আন্দোলনে আনাসের সঙ্গে থাকা সৌরভ ও অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে জানতে পারি যে ৫ আগস্ট আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে হাজার হাজার আন্দোলনকারী শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে চানখারপুল এলাকায়  পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ তখন সাউন্ড গ্রেনেড , রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়তে থাকে। তারা তখন জীবন বাঁচাতে নবাব কাটারা গলিশ বিভিন্ন গলির মুখে আশ্রয় নেয়। আনাস নবাবকাটারা গলিতে আশ্রয় নিলে সেখানে একজন পুলিশ আনাসকে লক্ষ্য করে গুলি করে। একটি গুলি আনাসের বুকের বা পাশে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে আনাস মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গুলিবিদ্ধ আনাসকে তার সঙ্গের আন্দোলনকারীরা রিক্সায় করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন রাব্বীসহ আরও অনেকে এই হত্যার দৃশ্যের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে। সে ভিডিও সংবলিত পেনড্রাইভ, আনাসের চিঠি, রক্তাত্ত জামা-কাপড়, মৃত্যুর সনদ ও জরুরি বিভাগের টিকেট ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়েছে।

জবানবন্দিতে আনাসের মা বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, পত্রপত্রিকা ও বিভিন্ন সিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি, আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ‍ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান ও সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নির্দেশে এবং আক্তারুল ইসলামের নেতৃত্বে এসি ইমরুল, ওসি আরশাদের উপস্থিতেতে কনেস্টেবল সুজন, ইমাজ ও নাসিবুল নির্বিচারে ছাত্রজনতার ওপর গুলি চালায়। তাদের গুলিতে আনাস, জুনায়েদ, রাকিব,ইয়াকুব,  মামুন ও মানিক শহীদ হয়।

আনাসের মা বলেন, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের ও আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশে উপরোক্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। আমি হত্যাকারিদের ফাঁসি চাই।

এই মামলায় আজকে পর্যন্ত ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়ছেন। আজ ট্র‍্যাইব্যুনালে প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম সহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরবর্তীতে শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ।

এই মামলায় যে আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তারা হলে- সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। এই আসামির মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক। অন্য চারজন গ্রেপ্তার। গ্রেপ্তার চারজনকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দু’টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

তানোর-গোদাগাড়ীতে প্রার্থী ঘোষণায় সরগরম বিএনপির তৃণমূল

সাক্ষী হয়ে আসামিদের ফাঁসি চাইলেন শহীদ আনাসের অশ্রুসিক্ত মা

Update Time : ০৭:৫৭:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে নিহত দশম শ্রেণির ছাত্র শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দিপ্তী ছয়জনকে হত্যার এই মামলার সাক্ষী হয়ে আসামিদের ফাঁসি চাইলেন।

আজ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ দেয়া সাক্ষীর জবানবন্দিতে ছেলে হারা এই মা বলেন, আনাস গেন্ডারিয়া আদর্শ একাডেমির দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। ২০২৫ সালে জুলাই মাসে আন্দোলনকারী নিরস্ত্র ছাত্রজনতারকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছিল, তখন আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছিল। ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট সকাল বেলা আনসকে ঘরে না পেয়ে তার রুমে যাই।  সেখানে পড়ার টেবিলে একটি চিঠি পাই। চিঠিতে লেখা ছিল সে মিছিলে যাচ্ছে। সে নিজেকে আটকাতে পারে নাই। চিঠিতে আরও লিখেছে, আমার ভাইয়েরা ভবিষৎ প্রজম্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেধে রাজপথে সংগ্রাম করে যাচ্ছে, অকাতরে নিজের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। একদিনতো মরতে হবে। তাই মৃত্যুর ভয়ে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে গুলি খেয়ে মৃত্যু অধিক শ্রেয়। যে অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয় সেই প্রকৃত মানুষ। যদি বেঁচে না ফিরি কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হইয়ো। চিঠিটি আনাস আমাকে উদ্দেশ্য করে লিখ (এপর্যায়ে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন শহীদ আনাসের মা)।

জবানবন্দিতে আনাসের মা বলেন, ঐদিন (৫ আগস্ট) আন্দোলনকারীদের লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ছিল। আমি এবং আমার স্বামী আশেপাশে আনাসকে খুজি কিন্তু পাচ্ছিলাম না। দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে আমার ফোনে কল আসে। সে বলে যে আপনাদের কেউ কি আন্দোলনে গিয়েছে? আমি বলি আমার ছেলে গিয়েছে। সে আমাকে দ্রুত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলে। সে আরও বলে আপনার ছেলের ফোনে আপনার নাম্বার সেইভ করা ছিল। সেখানে গিয়ে দেখি আমার ছেলে রক্তাত্ত অবস্থায় স্টেচারে পড়ে আছে (এসময় সাক্ষী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)। আমি আনাসকে জড়িয়ে ধরি। তখন সৌরভ নামের একটি ছেলে যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে  গিয়েছিল সে আমাদেরকে জানায়, আন্দোলন চলাকালে চানখারপুলে পুলিশ টার্গেট করে গুলি করেছিল।

আনাসের মা বলেন, সৌরভ আনাসের ব্যবহৃত ফোন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকেট ও মৃত্যুর সনদপত্র আমাকে প্রদান করে। মৃত্যু সনদে আনাসের মৃত্যুর কারণ গানশট ও ব্রট ডেড লেখা ছিল। এরপর একটি অটো রিকসায় আনাসেকে কোলে নিয়ে আমরা বাসায় আসি। আনাসের রক্তে আমাদের কাপড় ভিজে যায়। বাসায় আসার পর এলাকাবাসী আনাসের লাশ নিয়ে মিছিল করে। মিছিলে তারা বলে ‘আমার ভাই মরলো কেন, খুনি হাসিনা জবাব দে। একপর্যায়ে আসরের নামাজের পর গেন্ডারিয়া ধুপখোলা মাঠে আনাসের নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আনাসের বাবার কাছ থেকে জানাতে পারি আন্দোলন চলাকালে চানখারপুলে পুলিশের গুলিতে নিহত মেহেদী হাসান জুনায়েদকেও সেখানে জানাজায় জন্য আনা হয়। দুজনের নামাজের জানাজা একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। আনাসকে গোসল দেওয়া হয়নি। স্থানীয় একজন মাওলানার পরামর্শে আনাসকে রক্তাত্ত কাপড়ে শহীদি মর্যাদায় দাফন করা হয়।

আনাসের মা জবানবন্দিতে বলেন, আন্দোলনে আনাসের সঙ্গে থাকা সৌরভ ও অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে জানতে পারি যে ৫ আগস্ট আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে হাজার হাজার আন্দোলনকারী শহীদ মিনারে যাওয়ার পথে চানখারপুল এলাকায়  পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ তখন সাউন্ড গ্রেনেড , রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়তে থাকে। তারা তখন জীবন বাঁচাতে নবাব কাটারা গলিশ বিভিন্ন গলির মুখে আশ্রয় নেয়। আনাস নবাবকাটারা গলিতে আশ্রয় নিলে সেখানে একজন পুলিশ আনাসকে লক্ষ্য করে গুলি করে। একটি গুলি আনাসের বুকের বা পাশে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে আনাস মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গুলিবিদ্ধ আনাসকে তার সঙ্গের আন্দোলনকারীরা রিক্সায় করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন রাব্বীসহ আরও অনেকে এই হত্যার দৃশ্যের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে। সে ভিডিও সংবলিত পেনড্রাইভ, আনাসের চিঠি, রক্তাত্ত জামা-কাপড়, মৃত্যুর সনদ ও জরুরি বিভাগের টিকেট ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়েছে।

জবানবন্দিতে আনাসের মা বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, পত্রপত্রিকা ও বিভিন্ন সিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি, আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ‍ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান ও সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নির্দেশে এবং আক্তারুল ইসলামের নেতৃত্বে এসি ইমরুল, ওসি আরশাদের উপস্থিতেতে কনেস্টেবল সুজন, ইমাজ ও নাসিবুল নির্বিচারে ছাত্রজনতার ওপর গুলি চালায়। তাদের গুলিতে আনাস, জুনায়েদ, রাকিব,ইয়াকুব,  মামুন ও মানিক শহীদ হয়।

আনাসের মা বলেন, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের ও আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশে উপরোক্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। আমি হত্যাকারিদের ফাঁসি চাই।

এই মামলায় আজকে পর্যন্ত ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়ছেন। আজ ট্র‍্যাইব্যুনালে প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম সহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরবর্তীতে শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ।

এই মামলায় যে আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তারা হলে- সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। এই আসামির মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক। অন্য চারজন গ্রেপ্তার। গ্রেপ্তার চারজনকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দু’টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।