ঢাকা ০৩:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo দৈনিক বার্তার অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার প্রকাশনার সফলতা কামনা করলেন রোকেয়া রাজ্জাক জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার Logo পাবনা-৩ আসনে বিএনপির জনসমুদ্রে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবী Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু
মাজারে হামলার ঘটনায় আতঙ্ক কাটেনি,

‘মব সন্ত্রাস’ নিয়ে আবারো প্রশ্নের মুখে সরকার

মাজারের বন্ধ গেটের সামনে পুলিশের পাহারা। মাঝেমধ্যে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীর ভ্রাম্যমাণ দল। কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত মাজারটি দেখতে ভিড় করছেন আশপাশের অনেকেই। সব মিলিয়ে থমথমে পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারাও।

শুক্রবার হামলা-ভাঙচুরের পর শনিবার সকাল থেকে এমনটাই দেখা গেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ এলাকার নুরাল হকের যেখানে কবর ছিল, সেখানকার দৃশ্য। স্থানীয়ভাবে এটি ‘নুরুল পাগলার মাজার’ নামে পরিচিত।

এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ হামলা করেছিল মাজারটিতে। আবারো এমন হামলা হয় কিনা এমন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।

এদিকে, এই ঘটনায় সরকারি কাজে বাঁধা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা সাড়ে তিন হাজার আসামি করে শনিবার একটি মামলা করেছে পুলিশ।

নুরাল হকের মাজারের মত শুক্রবার হামলা হয়েছে রাজশাহীর পবা উপজেলার একটি খানকা শরিফে। সেখানেও দলবদ্ধ মব তৈরি করে পুলিশের সামনেই ভাঙচুর চালানো হয়।

কেবল মাজারে নয় ধর্ম অবমাননা কিংবা রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে ঢাকা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি দলবদ্ধ হামলার বা বিশৃঙ্খলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

এসব ঘটনার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আবারো। মবের বিরুদ্ধে সরকারের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করছেন কেউ কেউ।

অনেকেই অভিযোগ করছেন, ‘মব সন্ত্রাস’ এর বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিলেও বাস্তবে এ নিয়ে কঠোর ভূমিকা রাখতে পারেনি সেনাবাহিনীও।

অপরাধের সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পুলিশ এবং সরকার উভয়কেই সংকটে ফেলছে বলে মনে করে বিশ্লেষকদের অনেকে। তারা বলছেন, ব্যবস্থা নিলে যদি কিছু হয়, এমন চিন্তা কাজ করছে সবার মধ্যেই।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যাক্তি। সরকারের ভূমিকাও এক্ষেত্রে শক্তিশালী নয় বলেই মনে করেন তারা।

“রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক যে উদ্দেশ্যেই হোক, মব সন্ত্রাস করে একবার ছাড় পেলে সেই সুযোগ বারবারই নেয়ার শঙ্কা থাকে, আর বাংলাদেশে এখন সেটিই হচ্ছে,” বলে মনে করেন সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক।

“ছোঁয়াচে রোগের মতো সমাজে মব কালচার ছড়িয়ে পড়ছে,” বলেও মনে করেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ অবশ্য মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা ঠিক করতে চাইলে পুলিশকে দিয়েই শুরু করা প্রয়োজন। তিনি বলছেন, “কাজ করলে চাকরি হারানোর বা জেলে যাওয়ার শঙ্কা থাকবে না এই নিশ্চয়তা না পেলে তারা কাজ করবে কিভাবে?”

“অন্যায় করলে পুলিশেরও আইন অনুযায়ী বিচার করেন কিন্তু তাদের সঙ্গে অন্যায়ের বিচারও তো করতে হবে,” বলেন মনজিল মোরসেদ।

মাজারে হামলা-ভাঙচুর, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা, রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে হেনস্তা একের পর এক এমন সব ঘটনায় নিজেদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এমন সব ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

রাজবাড়ী ও রাজশাহীতে মাজার ও খানকাহ শরীফে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আগে থেকে তথ্য থাকার পরও তা থামাতে বা বন্ধ করতে পারেনি পুলিশ।

গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার মাজার ঘিরে দীর্ঘদিনের সমস্যা কেনো জিইয়ে রাখা হয়েছিল, এমন প্রশ্নও তুলেছেন স্থানীয়দের কেউ কেউ।

“গত ২৩শে অগাস্ট নুরাল পাগলার মৃত্যুর পর থেকেই মাজারটি ঘিরে একটি উত্তেজনা ছিল। সময়মতো ব্যবস্থা না নেয়াই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলেই মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুড়ান মোল্লাপাড়া এলাকার একজন বাসিন্দা।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, একসময় নিজেকে ইমাম মাহাদি বলে দাবি করেছিলেন নুরুল হক নামে ওই ব্যক্তি। এমনকি মৃত্যুর পর তার মরদেহ ওই মাজারের ভেতরে মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। যা নিয়ে তখন থেকেই ক্ষোভ জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় আলেম সমাজ। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে ওই মাজারে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ তোলা হয়।

এছাড়া বৃহস্পতিবারের মধ্যে কবর সমতল করাসহ বিভিন্ন দাবি না মানলে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি।

মাজারটির সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছিল বিবাদমান দুই পক্ষের। শুক্রবার জুমার নামাজের পর অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে এমন শঙ্কা থেকে সতর্ক অবস্থানও নিয়েছিল পুলিশ, কিন্তু কাজ হয়নি।

গোয়ালন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলছেন, “হামলার দিন মাজারের মূল পয়েন্টে দুইজন এডিশনাল এসপি ও আমিসহ অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলাম। সোনালী ব্যাংক মোড়, বড় মসজিদ মোড়, ওয়ালটন মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের উপস্থিতি ছিল।”

পরিস্থিতি সকাল থেকে শান্ত ছিল। তবে, নামাজের পর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশের কথা বলে হঠাৎই দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে মাজারে হামলা করা হয় বলে  জানান রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম।

সংঘাত থামাতে প্রশাসন তৎপর ছিল বলে দাবি করেছেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তারও। তিনি বলছেন, নুরুল হকের মৃত্যুর পর উপজেলার ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি ও মাজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেও কোনো সমাধানে পৌছানো সম্ভব হয়নি।

“ওনারা বারবার সময় নিয়েছেন, পরিবারের লোকজন সময় নিয়ে কালক্ষেপণ করেছেন, উল্টো তাদেরকে বারবার সময় দেয়ায় আমরাই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিলাম,” বলেন সুলতানা আক্তার।

সেখানে মাজারের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা এবং কবর সমতল করার জন্য দাবি তুলেছিল ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। এ নিয়ে মাজার কমিটির সাথে তাদের আলোচনা চলছিল বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।

এদিকে, রাজশাহীর পবায় খানকা শরিফে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাদের দাবি, হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

জানা গেছে, ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ওই খানকায় তিন দিনের আয়োজন ছিল। বৃহস্পতিবার থেকে অনেকেই সেখানে অংশ নিতে এসেছিলেন। তবে, কয়েকদিন যাবৎ কিছু মানুষ এই আয়োজনে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

রাজশাহীর গণমাধ্যমকর্মী মতিউর মর্তুজা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “জুমার নামাজের পর হামলা হতে পারে এমন তথ্য শোনা যাচ্ছিল। এই শঙ্কা থেকে বাড়তি পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছিল ওই এলাকায়।”

যারাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান।

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে করা প্রশ্নে জবাবে তিনি বি বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের কাছে লিখিতভাবে জানালে আমরা এটার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”

কেবল মাজারে হামলা নয় সম্প্রতি মব সন্ত্রাসের আরো কয়েকটি ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত ২৮শে অগাস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মে আলোচনা অনুষ্ঠানে “জুলাই যোদ্ধা” পরিচয়ে মব সৃষ্টি করে আলোচকদের হেনস্তা করে অনুষ্ঠান পণ্ড করে একদল ব্যক্তি। কিন্তু হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং হামলার শিকার ব্যক্তিদের ১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এর আগে গত নয়ই অগাস্ট রংপুরের তারাগঞ্জে রূপলাল দাস ও প্রদীপ লাল নামে দুই ব্যক্তিকে মব তৈরি করে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।

একই জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার একটি গ্রামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে বহিরাগত হামলাকারীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় গত ২৬ ও ২৭ জুলাই। সেখানে উপস্থিত থাকলেও বিশৃঙ্খল জনতাকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

দৈনিক বার্তার অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার প্রকাশনার সফলতা কামনা করলেন রোকেয়া রাজ্জাক জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার

মাজারে হামলার ঘটনায় আতঙ্ক কাটেনি,

‘মব সন্ত্রাস’ নিয়ে আবারো প্রশ্নের মুখে সরকার

Update Time : ০৭:২২:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মাজারের বন্ধ গেটের সামনে পুলিশের পাহারা। মাঝেমধ্যে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীর ভ্রাম্যমাণ দল। কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত মাজারটি দেখতে ভিড় করছেন আশপাশের অনেকেই। সব মিলিয়ে থমথমে পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারাও।

শুক্রবার হামলা-ভাঙচুরের পর শনিবার সকাল থেকে এমনটাই দেখা গেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ এলাকার নুরাল হকের যেখানে কবর ছিল, সেখানকার দৃশ্য। স্থানীয়ভাবে এটি ‘নুরুল পাগলার মাজার’ নামে পরিচিত।

এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ হামলা করেছিল মাজারটিতে। আবারো এমন হামলা হয় কিনা এমন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।

এদিকে, এই ঘটনায় সরকারি কাজে বাঁধা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা সাড়ে তিন হাজার আসামি করে শনিবার একটি মামলা করেছে পুলিশ।

নুরাল হকের মাজারের মত শুক্রবার হামলা হয়েছে রাজশাহীর পবা উপজেলার একটি খানকা শরিফে। সেখানেও দলবদ্ধ মব তৈরি করে পুলিশের সামনেই ভাঙচুর চালানো হয়।

কেবল মাজারে নয় ধর্ম অবমাননা কিংবা রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে ঢাকা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি দলবদ্ধ হামলার বা বিশৃঙ্খলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

এসব ঘটনার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আবারো। মবের বিরুদ্ধে সরকারের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করছেন কেউ কেউ।

অনেকেই অভিযোগ করছেন, ‘মব সন্ত্রাস’ এর বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিলেও বাস্তবে এ নিয়ে কঠোর ভূমিকা রাখতে পারেনি সেনাবাহিনীও।

অপরাধের সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পুলিশ এবং সরকার উভয়কেই সংকটে ফেলছে বলে মনে করে বিশ্লেষকদের অনেকে। তারা বলছেন, ব্যবস্থা নিলে যদি কিছু হয়, এমন চিন্তা কাজ করছে সবার মধ্যেই।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যাক্তি। সরকারের ভূমিকাও এক্ষেত্রে শক্তিশালী নয় বলেই মনে করেন তারা।

“রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক যে উদ্দেশ্যেই হোক, মব সন্ত্রাস করে একবার ছাড় পেলে সেই সুযোগ বারবারই নেয়ার শঙ্কা থাকে, আর বাংলাদেশে এখন সেটিই হচ্ছে,” বলে মনে করেন সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক।

“ছোঁয়াচে রোগের মতো সমাজে মব কালচার ছড়িয়ে পড়ছে,” বলেও মনে করেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ অবশ্য মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা ঠিক করতে চাইলে পুলিশকে দিয়েই শুরু করা প্রয়োজন। তিনি বলছেন, “কাজ করলে চাকরি হারানোর বা জেলে যাওয়ার শঙ্কা থাকবে না এই নিশ্চয়তা না পেলে তারা কাজ করবে কিভাবে?”

“অন্যায় করলে পুলিশেরও আইন অনুযায়ী বিচার করেন কিন্তু তাদের সঙ্গে অন্যায়ের বিচারও তো করতে হবে,” বলেন মনজিল মোরসেদ।

মাজারে হামলা-ভাঙচুর, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা, রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে হেনস্তা একের পর এক এমন সব ঘটনায় নিজেদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এমন সব ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

রাজবাড়ী ও রাজশাহীতে মাজার ও খানকাহ শরীফে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আগে থেকে তথ্য থাকার পরও তা থামাতে বা বন্ধ করতে পারেনি পুলিশ।

গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার মাজার ঘিরে দীর্ঘদিনের সমস্যা কেনো জিইয়ে রাখা হয়েছিল, এমন প্রশ্নও তুলেছেন স্থানীয়দের কেউ কেউ।

“গত ২৩শে অগাস্ট নুরাল পাগলার মৃত্যুর পর থেকেই মাজারটি ঘিরে একটি উত্তেজনা ছিল। সময়মতো ব্যবস্থা না নেয়াই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলেই মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুড়ান মোল্লাপাড়া এলাকার একজন বাসিন্দা।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, একসময় নিজেকে ইমাম মাহাদি বলে দাবি করেছিলেন নুরুল হক নামে ওই ব্যক্তি। এমনকি মৃত্যুর পর তার মরদেহ ওই মাজারের ভেতরে মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। যা নিয়ে তখন থেকেই ক্ষোভ জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় আলেম সমাজ। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে ওই মাজারে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ তোলা হয়।

এছাড়া বৃহস্পতিবারের মধ্যে কবর সমতল করাসহ বিভিন্ন দাবি না মানলে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি।

মাজারটির সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছিল বিবাদমান দুই পক্ষের। শুক্রবার জুমার নামাজের পর অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে এমন শঙ্কা থেকে সতর্ক অবস্থানও নিয়েছিল পুলিশ, কিন্তু কাজ হয়নি।

গোয়ালন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলছেন, “হামলার দিন মাজারের মূল পয়েন্টে দুইজন এডিশনাল এসপি ও আমিসহ অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলাম। সোনালী ব্যাংক মোড়, বড় মসজিদ মোড়, ওয়ালটন মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের উপস্থিতি ছিল।”

পরিস্থিতি সকাল থেকে শান্ত ছিল। তবে, নামাজের পর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশের কথা বলে হঠাৎই দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে মাজারে হামলা করা হয় বলে  জানান রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম।

সংঘাত থামাতে প্রশাসন তৎপর ছিল বলে দাবি করেছেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তারও। তিনি বলছেন, নুরুল হকের মৃত্যুর পর উপজেলার ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি ও মাজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেও কোনো সমাধানে পৌছানো সম্ভব হয়নি।

“ওনারা বারবার সময় নিয়েছেন, পরিবারের লোকজন সময় নিয়ে কালক্ষেপণ করেছেন, উল্টো তাদেরকে বারবার সময় দেয়ায় আমরাই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিলাম,” বলেন সুলতানা আক্তার।

সেখানে মাজারের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা এবং কবর সমতল করার জন্য দাবি তুলেছিল ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। এ নিয়ে মাজার কমিটির সাথে তাদের আলোচনা চলছিল বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।

এদিকে, রাজশাহীর পবায় খানকা শরিফে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাদের দাবি, হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

জানা গেছে, ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ওই খানকায় তিন দিনের আয়োজন ছিল। বৃহস্পতিবার থেকে অনেকেই সেখানে অংশ নিতে এসেছিলেন। তবে, কয়েকদিন যাবৎ কিছু মানুষ এই আয়োজনে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

রাজশাহীর গণমাধ্যমকর্মী মতিউর মর্তুজা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “জুমার নামাজের পর হামলা হতে পারে এমন তথ্য শোনা যাচ্ছিল। এই শঙ্কা থেকে বাড়তি পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছিল ওই এলাকায়।”

যারাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান।

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে করা প্রশ্নে জবাবে তিনি বি বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের কাছে লিখিতভাবে জানালে আমরা এটার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”

কেবল মাজারে হামলা নয় সম্প্রতি মব সন্ত্রাসের আরো কয়েকটি ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত ২৮শে অগাস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মে আলোচনা অনুষ্ঠানে “জুলাই যোদ্ধা” পরিচয়ে মব সৃষ্টি করে আলোচকদের হেনস্তা করে অনুষ্ঠান পণ্ড করে একদল ব্যক্তি। কিন্তু হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং হামলার শিকার ব্যক্তিদের ১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এর আগে গত নয়ই অগাস্ট রংপুরের তারাগঞ্জে রূপলাল দাস ও প্রদীপ লাল নামে দুই ব্যক্তিকে মব তৈরি করে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।

একই জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার একটি গ্রামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে বহিরাগত হামলাকারীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় গত ২৬ ও ২৭ জুলাই। সেখানে উপস্থিত থাকলেও বিশৃঙ্খল জনতাকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।