ঢাকা ০৪:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘতম শাটডাউন অবসানের পথ খুঁজছেন সিনেটররা Logo যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি ফ্লাইট বাতিল Logo সারাদেশে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি, শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি Logo নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ Logo কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়: তারেক রহমান Logo আগামীকাল থেকে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা Logo বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হবে আ,লীগ ও  জাতীয় পার্টি–নুরুল হক নুর Logo শীতের আগমনে কুয়াশার চাদরে ঢাকা  সৈয়দপুর শহর Logo পাবনা ৪ আসনে বিএনপি’র হাবিবকে সমর্থন করেও বিপক্ষে গেলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী জাকারিয়া পিন্টু Logo গণভোট নিয়ে দলগুলো ঐকমত্যে না এলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব
আচরণবিধিমালা চূড়ান্ত করল নির্বাচন কমিশন

ভোটের প্রচারে কোনো পোস্টার থাকবে না, বিলবোর্ড সীমিত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:০৫:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৩ Time View

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের প্রচারে পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়া রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক, পিভিসি বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অন্য কোনো উপাদানে তৈরি লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ফেস্টুন বা ব্যানার করা যাবে না। একই সঙ্গে প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহার সীমিত থাকবে। একজন প্রার্থী এক সংসদীয় আসনে ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন না। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় এসব কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে।

গত মঙ্গলবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী প্রস্তাবের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে আরপিওর মতো আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করার প্রয়োজন নেই। আইন অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের ভেটিং হয়ে গেলে ইসি গেজেট আকারে জারি করতে পারবে।
ভোটের প্রচারে পোস্টারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে প্রণীত রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার খসড়ায় দল ও সংশ্লিষ্টদের মতামত চেয়েছিল ইসি। অন্তত সাদাকালো পোস্টারে প্রচারের সুযোগ রাখার সুপারিশ করেছিল অনেকগুলো দল। সেই সুপারিশও আমলে নেয়নি ইসি। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব প্রচারণা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক, পিভিসি বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সমকালকে বলেছেন, ভোটের প্রচারে পোস্টার ব্যবহার বন্ধের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছিল। এতে ইসি একমত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না। এবার যুক্ত করা হয়েছে। তবে এটার ব্যবহার সীমিত করে দিতে চেয়েছি আমরা। এদিকে ব্যানার ও ফেস্টুনের ব্যবহার নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।’

নতুন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী বিলবোর্ডে প্রচারণার অংশের আয়তন অনধিক ১৬/৯ ফুট হবে। এ ছাড়া বিলবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে জনসাধারণ বা যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না এবং পরিবেশ বা নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এমনভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করা যাবে না।

এমন প্রস্তাব করার পেছনে ইসির যুক্তি– বিলবোর্ড তৈরিতে বেশি টাকা ব্যয় হয়। একজন প্রার্থী অসংখ্য বিলবোর্ড ব্যবহার করলে তার নির্বাচনী ব্যয়সীমা অতিক্রম করতে পারে। এ ছাড়া বিলবোর্ডের কারণে প্রার্থীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়াসহ পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।

নির্বাচনী প্রচারে একজন প্রার্থী ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন না– এমন বিষয় আচরণ বিধিমালায় যুক্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘এমন একটি বিষয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় আছে।’

এদিকে আরপিওর সংশোধনী প্রস্তাবে বিলবোর্ড বিষয়ে ইসি বলেছে, শুধু ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলোর ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। তবে আলোকসজ্জার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
গত ২৯ জুন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন। পরে এ বিষয়ে নাগরিকদের মতামত জানাতে ১০ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় তারা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিএনপিসহ ৭টি দল এবং বিভিন্ন ব্যক্তি মতামত দেন। ১১ আগস্ট ইসির সভায় আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকেও আমলে নেওয়া হয়।

ইসি বলছে, এই আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে আগে প্রার্থীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নেওয়া হতো। এবার দলের কাছ থেকেও অঙ্গীকারনামা নেবে ইসি। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওতে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে। আগে আচরণবিধিতে আরপিওর অনুচ্ছেদটি ছিল না। এটা এবার যুক্ত করা হয়েছে।

আরও যত বিধান
আচরণ বিধিমালায় প্রচারণার সময় রাখা হয়েছে তিন সপ্তাহ। সব প্রার্থীর একমঞ্চে প্রচারণার বিষয়টি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট আসনের সব প্রার্থীকে নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে এক দিনে তাদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন।

গণমাধ্যমে নির্বাচনী সংলাপে অংশ নিতে পারবেন প্রার্থী ও তার প্রতিনিধিরা। তবে কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।

এতে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (ভিভিআইপি) তালিকায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যোগ করা হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়রসহ সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তির পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ফলে তারা প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামতে পারবেন না। তাদের জন্য বিভিন্ন সরকারি সুবিধা, যেমন– সার্কিট হাউস, ডাকবাংলো ও রেস্ট হাউস ব্যবহারে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থীরা কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সমিতি থেকে সংবর্ধনা নিতে পারবেন না।

প্রচার ও ভোট গ্রহণের সময় ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ জাতীয় যন্ত্র ব্যবহারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন। তবে হেলিকপ্টার থেকে কোনো লিফলেট, ব্যানার বা প্রচারসামগ্রী বিতরণ বা ঝোলানো যাবে না। এর আগে কেবল দলীয় প্রধান বা সমপর্যায়ের নেতাদেরই হেলিকপ্টার ব্যবহারের অনুমতি ছিল।

কোনো প্রার্থী বা তাঁর সমর্থকরা কোনো ভোটকেন্দ্রের ১৮০ মিটারের মধ্যে ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে পারবেন না। ভোটার স্লিপের আয়তন ১২ সেন্টিমিটার গুণন ৮ সেন্টিমিটারের বেশি হতে পারবে না। টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে অতীতে বিধিনিষেধ ছিল, এবার একটু শিথিল মনোভাব দেখানো হয়েছে। মাইকে প্রচারের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলে রাখতে হবে। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করার অনুমতি থাকবে।

নির্বাচনী প্রচারসহ যে কোনো বিষয়ে সামাজিক মাধ্যম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) ব্যবহার করে কোনো ধরনের কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ঘৃণ্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উস্কানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। এগুলো করা হলে কেবল প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল নয়, গণমাধ্যমও শাস্তির মুখে পড়বে। প্রার্থী বা তার এজেন্ট বা দলের সামাজিক মাধ্যমের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডি এবং অন্যান্য পরিচয়-সংক্রান্ত তথ্য প্রচার শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ব্যাপারে বিদেশি বিনিয়োগ আনা যাবে না।

প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি বা সদস্য পদে থাকলে পদত্যাগ করতে হবে। আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেসঙ্গে আগের বিধান অনুযায়ী ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নারীদের লক্ষ্য করে সাইবার বুলিং রোধ করা এবং বিদেশে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সশরীরে প্রচারণা না চালানোর বিধানও করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘতম শাটডাউন অবসানের পথ খুঁজছেন সিনেটররা

আচরণবিধিমালা চূড়ান্ত করল নির্বাচন কমিশন

ভোটের প্রচারে কোনো পোস্টার থাকবে না, বিলবোর্ড সীমিত

Update Time : ০৭:০৫:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের প্রচারে পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়া রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক, পিভিসি বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অন্য কোনো উপাদানে তৈরি লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ফেস্টুন বা ব্যানার করা যাবে না। একই সঙ্গে প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহার সীমিত থাকবে। একজন প্রার্থী এক সংসদীয় আসনে ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন না। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় এসব কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে।

গত মঙ্গলবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী প্রস্তাবের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে আরপিওর মতো আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করার প্রয়োজন নেই। আইন অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের ভেটিং হয়ে গেলে ইসি গেজেট আকারে জারি করতে পারবে।
ভোটের প্রচারে পোস্টারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে প্রণীত রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার খসড়ায় দল ও সংশ্লিষ্টদের মতামত চেয়েছিল ইসি। অন্তত সাদাকালো পোস্টারে প্রচারের সুযোগ রাখার সুপারিশ করেছিল অনেকগুলো দল। সেই সুপারিশও আমলে নেয়নি ইসি। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব প্রচারণা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক, পিভিসি বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সমকালকে বলেছেন, ভোটের প্রচারে পোস্টার ব্যবহার বন্ধের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছিল। এতে ইসি একমত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না। এবার যুক্ত করা হয়েছে। তবে এটার ব্যবহার সীমিত করে দিতে চেয়েছি আমরা। এদিকে ব্যানার ও ফেস্টুনের ব্যবহার নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।’

নতুন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী বিলবোর্ডে প্রচারণার অংশের আয়তন অনধিক ১৬/৯ ফুট হবে। এ ছাড়া বিলবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে জনসাধারণ বা যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না এবং পরিবেশ বা নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এমনভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করা যাবে না।

এমন প্রস্তাব করার পেছনে ইসির যুক্তি– বিলবোর্ড তৈরিতে বেশি টাকা ব্যয় হয়। একজন প্রার্থী অসংখ্য বিলবোর্ড ব্যবহার করলে তার নির্বাচনী ব্যয়সীমা অতিক্রম করতে পারে। এ ছাড়া বিলবোর্ডের কারণে প্রার্থীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়াসহ পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।

নির্বাচনী প্রচারে একজন প্রার্থী ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন না– এমন বিষয় আচরণ বিধিমালায় যুক্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘এমন একটি বিষয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় আছে।’

এদিকে আরপিওর সংশোধনী প্রস্তাবে বিলবোর্ড বিষয়ে ইসি বলেছে, শুধু ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলোর ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। তবে আলোকসজ্জার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
গত ২৯ জুন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন। পরে এ বিষয়ে নাগরিকদের মতামত জানাতে ১০ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় তারা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিএনপিসহ ৭টি দল এবং বিভিন্ন ব্যক্তি মতামত দেন। ১১ আগস্ট ইসির সভায় আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকেও আমলে নেওয়া হয়।

ইসি বলছে, এই আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে আগে প্রার্থীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নেওয়া হতো। এবার দলের কাছ থেকেও অঙ্গীকারনামা নেবে ইসি। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওতে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে। আগে আচরণবিধিতে আরপিওর অনুচ্ছেদটি ছিল না। এটা এবার যুক্ত করা হয়েছে।

আরও যত বিধান
আচরণ বিধিমালায় প্রচারণার সময় রাখা হয়েছে তিন সপ্তাহ। সব প্রার্থীর একমঞ্চে প্রচারণার বিষয়টি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট আসনের সব প্রার্থীকে নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে এক দিনে তাদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন।

গণমাধ্যমে নির্বাচনী সংলাপে অংশ নিতে পারবেন প্রার্থী ও তার প্রতিনিধিরা। তবে কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।

এতে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (ভিভিআইপি) তালিকায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যোগ করা হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়রসহ সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তির পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ফলে তারা প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামতে পারবেন না। তাদের জন্য বিভিন্ন সরকারি সুবিধা, যেমন– সার্কিট হাউস, ডাকবাংলো ও রেস্ট হাউস ব্যবহারে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থীরা কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সমিতি থেকে সংবর্ধনা নিতে পারবেন না।

প্রচার ও ভোট গ্রহণের সময় ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ জাতীয় যন্ত্র ব্যবহারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন। তবে হেলিকপ্টার থেকে কোনো লিফলেট, ব্যানার বা প্রচারসামগ্রী বিতরণ বা ঝোলানো যাবে না। এর আগে কেবল দলীয় প্রধান বা সমপর্যায়ের নেতাদেরই হেলিকপ্টার ব্যবহারের অনুমতি ছিল।

কোনো প্রার্থী বা তাঁর সমর্থকরা কোনো ভোটকেন্দ্রের ১৮০ মিটারের মধ্যে ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে পারবেন না। ভোটার স্লিপের আয়তন ১২ সেন্টিমিটার গুণন ৮ সেন্টিমিটারের বেশি হতে পারবে না। টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে অতীতে বিধিনিষেধ ছিল, এবার একটু শিথিল মনোভাব দেখানো হয়েছে। মাইকে প্রচারের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলে রাখতে হবে। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করার অনুমতি থাকবে।

নির্বাচনী প্রচারসহ যে কোনো বিষয়ে সামাজিক মাধ্যম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) ব্যবহার করে কোনো ধরনের কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ঘৃণ্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উস্কানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। এগুলো করা হলে কেবল প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল নয়, গণমাধ্যমও শাস্তির মুখে পড়বে। প্রার্থী বা তার এজেন্ট বা দলের সামাজিক মাধ্যমের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডি এবং অন্যান্য পরিচয়-সংক্রান্ত তথ্য প্রচার শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ব্যাপারে বিদেশি বিনিয়োগ আনা যাবে না।

প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি বা সদস্য পদে থাকলে পদত্যাগ করতে হবে। আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেসঙ্গে আগের বিধান অনুযায়ী ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নারীদের লক্ষ্য করে সাইবার বুলিং রোধ করা এবং বিদেশে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সশরীরে প্রচারণা না চালানোর বিধানও করা হয়েছে।