ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের ‘ট্যারিফ’ আদালতে অবৈধ ঘোষণা

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের উপর ‘ট্যারিফ’ বা শুল্ক আরোপ করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি হিসেবে জরুরি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে শুক্রবার রায় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আপিল আদালত।

মার্কিন আপিল আদালত জানিয়েছে যে,- আমেরিকার সাথে বাণিজ্য রয়েছে এমন প্রায় প্রতিটি দেশের উপর যে তথাকথিত ‘রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ’ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে তা অবৈধ।

গত মে মাসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের একটি রায়ও বহাল রেখেছে আমেরিকান ফেডারেল আদালত। যেখানে ট্রাম্পে যুক্তি দেখিয়েছিলেন- তিনি জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের অধীনে এই ‘ট্র্যারিফের’ অনুমোদন দিয়েছেন, যা প্রত্যাখ্যান করেছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত।

যদিও আদালত এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক স্থগিত করেনি বরং বলেছে যে এটি অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বহাল থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সরকারকে আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

আদালত বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপ করেছেন, সেই ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়নি। নিম্ন আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ৭-৪ ভোটে সমর্থন করেছে আপিল আদালত।

আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (IEEPA)- ব্যবহার করে ট্রাম্প যে শুল্ক নীতি গ্রহণ করেছেন, বিচারকরা বলছেন- “শুল্ক, কর বা এই রকম কিছু কিছু আরোপের ক্ষমতা, এই আইনে প্রেসিডেন্টকে এত ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি”।

ট্রাম্প তাৎক্ষণিকভাবে আপিল আদালতের রায়ের সমালোচনা করেছেন, রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন এই রায় “অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট” এবং দেশের জন্য “বিপর্যয়”।

এই রায় “যদি বহাল থাকে, তাহলে এই সিদ্ধান্ত আক্ষরিক অর্থেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেবে,” ।

আইইইপিএ (IEEPA)- কয়েক দশক ধরে প্রচলিত একটি আইন, যা ট্রাম্প তার দুই মেয়াদেই বারবার প্রয়োগ করেছেন। মূলত এই আইন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জাতীয় জরুরি অবস্থা বা বিদেশি বড় কোন হুমকির পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা দিয়েছে।

১৯৭৭ সালের এই আইনে বলা হয়েছে যে, একজন প্রেসিডেন্ট “জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি বা অর্থনীতির জন্য অস্বাভাবিক এবং মারাত্মক হুমকি, যা পুরোপুরি বা আংশিক আমেরিকার বাইরে থেকে তৈরি হতে পারে, তার সম্পূর্ণ বা উল্লেখযোগ্য অংশ মোকাবেলার জন্য কয়েকটি অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারেন।”

এই আইনটি রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা এবং জো বাইডেন উভয়ই ব্যবহার করেছিলেন। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর, রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য এই আইনটি ব্যবহার করেছিলেন ওবামা। আট বছর পর ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় রাশিয়ার আক্রমণের পর আবারও আইনটি ব্যবহার করেছিলেন বাইডেন।

কিন্তু আপিল আদালত তার রায়ে বলেছে যে এই জরুরি আইন “আমেরিকার প্রেসিডেন্টিকে এতো বিস্তৃত শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয়নি, এই ক্ষমতা রয়েছে কংগ্রেসের।”

যদিও IEEPA আমেরিকার রাষ্ট্রপতির শুল্ক আরোপের ক্ষমতার স্পষ্ট সীমা নির্ধারণও করে দেয়নি।

ট্রাম্প যখন তার বিশ্বব্যাপী শুল্ক নীতির ঘোষণা করেছিলেন, তখন তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং তাই এটি একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা।

আমেরিকার ফেডারেল আপিল আদালতের এই রায় ট্রাম্পের জন্য বড় একটি ধাক্কা, পাশাপাশি মার্কিন অর্থনীতিতে এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়তে পারে, যার রেশ বিশ্ব বাজারেও পড়তে পারে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন বিজনেস স্কুলের অর্থনীতিবিদ ডকটর লিন্ডা ইউয়েহ বিবিসি রেডিও ফোরের-এর টুডে প্রোগ্রামে বলেন, ” এখন বহু ব্যবসা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।”

শুল্কের লক্ষ্য হলো দেশিয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিদেশি পণ্য কেনা থেকে বিরত রাখা, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রভাবিত হবে।

মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি গ্রহণ করবে কিনা তা দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অপেক্ষা করবে ধারণা করা হচ্ছে। এই মামলায় সুপ্রিমকোর্টের রায় না আসা পর্যন্ত এসব দেশ হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্যবসা পরিচালনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিতে পারে।

“যদি এটি ঘটে, তাহলে এটি বিশ্ব অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে ধীর করে দিতে পারে”, বলেন ডঃ ইউয়েহ ।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, যদি সুপ্রিম কোর্ট ফেডারেল আপিল আদালতের সিদ্ধান্ত বাতিল করে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ নেয়, তাহলে এটি এমন একটি নজির স্থাপন করতে পারে যা ট্রাম্পকে আরও বেপরোয়া করে তুলবে এবং এখনকার চেয়ে আরও কঠোর ভাবে IEEPA-ব্যবহরে উৎসাহিত করবে।

শুল্ক নিয়ে এ মামলাটি এখন সম্ভবত সর্বোচ্চ মার্কিন আদালতে যাবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তার ট্রুথ সোশ্যালে আপিল আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন- “আমাদের বেপরোয়া এবং অজ্ঞ রাজনীতিবিদের কারণে আমাদের বিরুদ্ধে শুল্ককে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের সহায়তায়, আমরা আমাদের জাতির সুবিধার্থে সেগুলি (শুল্ক) ব্যবহার করব এবং আমেরিকাকে আবার ধনী, ও শক্তিশালী তুলব!”

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীল বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে তাদের রায় ট্রাম্পের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কারণ নয়জন বিচারপতির মধ্যে ছয়জনকে রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতিরা নিয়োগ করেছিলেন, যার মধ্যে আবার তিনজনকে ট্রাম্প তার প্রথমবার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরপর নিয়োগ দিয়েছিলেন।

কিন্তু উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপতিদের সমালোচনা করে রায় দেওয়ার ইতিহাসও আছে। যখন তারা মনে করেছে কংগ্রেস দ্বারা সরাসরি অনুমোদিত নয় প্রেসিডেন্টের এমন নীতিগুলি মার্কিন রাষ্ট্রব্যবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব ফেলবে।

উদাহরণস্বরূপ, জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালীন, উচ্চ আদালত বিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্বারা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন সীমিত করার জন্য বিদ্যমান আইন ব্যবহার করার এবং লক্ষ লক্ষ আমেরিকানদের জন্য ছাত্র ঋণ ক্ষমা করতে ডেমোক্র্যাটিক প্রচেষ্টাকে আটকে দিয়েছিলো।

ফেডারেল আপিল আদালত ট্রাম্পের ট্যারিফ বা শুল্ক নীতি অবৈধ বলে রায় দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সময় দিয়েছে। যার ফলে মার্কিন অর্থনীতি এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তার বাণিজ্য সম্পর্কে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

যদি সুপ্রিম কোর্ট আপিল আদালতের রায় বহাল রাখে তাহলে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যে একটা আর্থিক অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

শুল্ক আরোপ করে আমেরিকা আমদানি করের মাধ্যমে যে বিলিয়ন বিলিয়ন সংগ্রহ করেছে তা ফেরত দিতে হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

আবার এটি প্রশ্নও তুলতে পারে যে যুক্তরাজ্য, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ কিছু দেশ আগস্টের বেঁধে দেওয়া সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিগুলি করেছে, সেগুলোর কী হবে?

এছাড়া যেসব দেশের সাথে বর্তমানে আলোচনা চলছে সে বাণিজ্য চুক্তিগুলির ভবিষ্যৎ বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে যেতে পারে।

যদি সুপ্রিমকোর্টে আপিল আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে, তাহলে চুক্তিভঙ্গকারী হিসেবে ট্রাম্পের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এবং খ্যাতিতে বিরাট আঘাত হানবে।

কিন্তু যদি সুপ্রিম কোর্ট এটি বাতিল করে, তাহলে এর ফলাফল হবে পুরোপুরি বিপরীত, তখন ট্রাম্প হয়ে উঠবেন অপ্রতিরোধ্য।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ট্রাম্পের ‘ট্যারিফ’ আদালতে অবৈধ ঘোষণা

Update Time : ০৭:২৮:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের উপর ‘ট্যারিফ’ বা শুল্ক আরোপ করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি হিসেবে জরুরি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে শুক্রবার রায় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আপিল আদালত।

মার্কিন আপিল আদালত জানিয়েছে যে,- আমেরিকার সাথে বাণিজ্য রয়েছে এমন প্রায় প্রতিটি দেশের উপর যে তথাকথিত ‘রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ’ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে তা অবৈধ।

গত মে মাসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের একটি রায়ও বহাল রেখেছে আমেরিকান ফেডারেল আদালত। যেখানে ট্রাম্পে যুক্তি দেখিয়েছিলেন- তিনি জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের অধীনে এই ‘ট্র্যারিফের’ অনুমোদন দিয়েছেন, যা প্রত্যাখ্যান করেছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত।

যদিও আদালত এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক স্থগিত করেনি বরং বলেছে যে এটি অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বহাল থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সরকারকে আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

আদালত বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপ করেছেন, সেই ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়নি। নিম্ন আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ৭-৪ ভোটে সমর্থন করেছে আপিল আদালত।

আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (IEEPA)- ব্যবহার করে ট্রাম্প যে শুল্ক নীতি গ্রহণ করেছেন, বিচারকরা বলছেন- “শুল্ক, কর বা এই রকম কিছু কিছু আরোপের ক্ষমতা, এই আইনে প্রেসিডেন্টকে এত ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি”।

ট্রাম্প তাৎক্ষণিকভাবে আপিল আদালতের রায়ের সমালোচনা করেছেন, রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন এই রায় “অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট” এবং দেশের জন্য “বিপর্যয়”।

এই রায় “যদি বহাল থাকে, তাহলে এই সিদ্ধান্ত আক্ষরিক অর্থেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেবে,” ।

আইইইপিএ (IEEPA)- কয়েক দশক ধরে প্রচলিত একটি আইন, যা ট্রাম্প তার দুই মেয়াদেই বারবার প্রয়োগ করেছেন। মূলত এই আইন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জাতীয় জরুরি অবস্থা বা বিদেশি বড় কোন হুমকির পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা দিয়েছে।

১৯৭৭ সালের এই আইনে বলা হয়েছে যে, একজন প্রেসিডেন্ট “জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি বা অর্থনীতির জন্য অস্বাভাবিক এবং মারাত্মক হুমকি, যা পুরোপুরি বা আংশিক আমেরিকার বাইরে থেকে তৈরি হতে পারে, তার সম্পূর্ণ বা উল্লেখযোগ্য অংশ মোকাবেলার জন্য কয়েকটি অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারেন।”

এই আইনটি রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা এবং জো বাইডেন উভয়ই ব্যবহার করেছিলেন। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর, রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য এই আইনটি ব্যবহার করেছিলেন ওবামা। আট বছর পর ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় রাশিয়ার আক্রমণের পর আবারও আইনটি ব্যবহার করেছিলেন বাইডেন।

কিন্তু আপিল আদালত তার রায়ে বলেছে যে এই জরুরি আইন “আমেরিকার প্রেসিডেন্টিকে এতো বিস্তৃত শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয়নি, এই ক্ষমতা রয়েছে কংগ্রেসের।”

যদিও IEEPA আমেরিকার রাষ্ট্রপতির শুল্ক আরোপের ক্ষমতার স্পষ্ট সীমা নির্ধারণও করে দেয়নি।

ট্রাম্প যখন তার বিশ্বব্যাপী শুল্ক নীতির ঘোষণা করেছিলেন, তখন তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং তাই এটি একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা।

আমেরিকার ফেডারেল আপিল আদালতের এই রায় ট্রাম্পের জন্য বড় একটি ধাক্কা, পাশাপাশি মার্কিন অর্থনীতিতে এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়তে পারে, যার রেশ বিশ্ব বাজারেও পড়তে পারে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন বিজনেস স্কুলের অর্থনীতিবিদ ডকটর লিন্ডা ইউয়েহ বিবিসি রেডিও ফোরের-এর টুডে প্রোগ্রামে বলেন, ” এখন বহু ব্যবসা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।”

শুল্কের লক্ষ্য হলো দেশিয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিদেশি পণ্য কেনা থেকে বিরত রাখা, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রভাবিত হবে।

মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি গ্রহণ করবে কিনা তা দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অপেক্ষা করবে ধারণা করা হচ্ছে। এই মামলায় সুপ্রিমকোর্টের রায় না আসা পর্যন্ত এসব দেশ হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্যবসা পরিচালনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিতে পারে।

“যদি এটি ঘটে, তাহলে এটি বিশ্ব অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে ধীর করে দিতে পারে”, বলেন ডঃ ইউয়েহ ।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, যদি সুপ্রিম কোর্ট ফেডারেল আপিল আদালতের সিদ্ধান্ত বাতিল করে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ নেয়, তাহলে এটি এমন একটি নজির স্থাপন করতে পারে যা ট্রাম্পকে আরও বেপরোয়া করে তুলবে এবং এখনকার চেয়ে আরও কঠোর ভাবে IEEPA-ব্যবহরে উৎসাহিত করবে।

শুল্ক নিয়ে এ মামলাটি এখন সম্ভবত সর্বোচ্চ মার্কিন আদালতে যাবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তার ট্রুথ সোশ্যালে আপিল আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন- “আমাদের বেপরোয়া এবং অজ্ঞ রাজনীতিবিদের কারণে আমাদের বিরুদ্ধে শুল্ককে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের সহায়তায়, আমরা আমাদের জাতির সুবিধার্থে সেগুলি (শুল্ক) ব্যবহার করব এবং আমেরিকাকে আবার ধনী, ও শক্তিশালী তুলব!”

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীল বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে তাদের রায় ট্রাম্পের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কারণ নয়জন বিচারপতির মধ্যে ছয়জনকে রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতিরা নিয়োগ করেছিলেন, যার মধ্যে আবার তিনজনকে ট্রাম্প তার প্রথমবার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরপর নিয়োগ দিয়েছিলেন।

কিন্তু উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপতিদের সমালোচনা করে রায় দেওয়ার ইতিহাসও আছে। যখন তারা মনে করেছে কংগ্রেস দ্বারা সরাসরি অনুমোদিত নয় প্রেসিডেন্টের এমন নীতিগুলি মার্কিন রাষ্ট্রব্যবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব ফেলবে।

উদাহরণস্বরূপ, জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালীন, উচ্চ আদালত বিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্বারা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন সীমিত করার জন্য বিদ্যমান আইন ব্যবহার করার এবং লক্ষ লক্ষ আমেরিকানদের জন্য ছাত্র ঋণ ক্ষমা করতে ডেমোক্র্যাটিক প্রচেষ্টাকে আটকে দিয়েছিলো।

ফেডারেল আপিল আদালত ট্রাম্পের ট্যারিফ বা শুল্ক নীতি অবৈধ বলে রায় দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সময় দিয়েছে। যার ফলে মার্কিন অর্থনীতি এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তার বাণিজ্য সম্পর্কে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

যদি সুপ্রিম কোর্ট আপিল আদালতের রায় বহাল রাখে তাহলে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যে একটা আর্থিক অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

শুল্ক আরোপ করে আমেরিকা আমদানি করের মাধ্যমে যে বিলিয়ন বিলিয়ন সংগ্রহ করেছে তা ফেরত দিতে হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

আবার এটি প্রশ্নও তুলতে পারে যে যুক্তরাজ্য, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ কিছু দেশ আগস্টের বেঁধে দেওয়া সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিগুলি করেছে, সেগুলোর কী হবে?

এছাড়া যেসব দেশের সাথে বর্তমানে আলোচনা চলছে সে বাণিজ্য চুক্তিগুলির ভবিষ্যৎ বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে যেতে পারে।

যদি সুপ্রিমকোর্টে আপিল আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে, তাহলে চুক্তিভঙ্গকারী হিসেবে ট্রাম্পের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এবং খ্যাতিতে বিরাট আঘাত হানবে।

কিন্তু যদি সুপ্রিম কোর্ট এটি বাতিল করে, তাহলে এর ফলাফল হবে পুরোপুরি বিপরীত, তখন ট্রাম্প হয়ে উঠবেন অপ্রতিরোধ্য।