ঢাকা ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo তানোর-গোদাগাড়ীতে প্রার্থী ঘোষণায় সরগরম বিএনপির তৃণমূল Logo বিএনপিতে ফেরায় সংবর্ধিত হলেন কমেট চৌধুরী Logo ঈশ্বরদীতে ক্ষুধায় বাবা মায়ের কবরের কাছে গিয়ে খাবার চাওয়া সাগরের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান Logo জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ১৮ প্রকল্প অনুমোদন Logo দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প  গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না দুই বছরেও Logo আটঘরিয়া জ্যামীর আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ মিছিল, প্রশাসনে স্মারকলিপি প্রদান Logo দৈনিক বার্তার অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার প্রকাশনার সফলতা কামনা করলেন রোকেয়া রাজ্জাক জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার Logo পাবনা-৩ আসনে বিএনপির জনসমুদ্রে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবী Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি

খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে মারা যেতে পারে শিশুসহ রোহিঙ্গারা: ডব্লিউএফপি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৪৪:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
  • ৩৩ Time View

বাংলাদেশে আশ্রিত ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য নভেম্বরের পর খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে-এমন ভয়াবহ সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।

অর্থসংকট কাটাতে না পারলে ডিসেম্বর থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা খাবারহীন হয়ে পড়বে। এতে অপুষ্টির হার আরও বেড়ে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংস্থাটি।

ডব্লিউএফপির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোমেনিকো স্কালপেলি বলেন, “আমাদের হাতে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহের অর্থ আছে। এরপর থেকে ১২ লাখ মানুষের জন্য কোনো খাবার থাকবে না। ন্যূনতম রেশন চালু রাখতে আমাদের জরুরি ভিত্তিতে অন্তত ১৭৩ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।”

তিনি জানান, বর্তমানে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী মাসে ১২ ডলারের (প্রায় ১,৫০০ টাকা) রেশনে যে খাবার পান, তার মধ্যে রয়েছে—৬৫০ টাকায় ১৩ কেজি চাল, ১৮০ টাকায় এক লিটার তেল, ১৯ টাকায় আধা কেজি লবণ, ২৩ টাকা ৪০ পয়সায় ২০০ গ্রাম লাল মরিচ, ৫৩ টাকায় পাঁচটি ডিম, ২৬ টাকায় ৪০০ গ্রাম পেঁয়াজ, ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায় ৫০০ গ্রাম মসুর ডাল, ১০৯ টাকায় এক কেজি চিনি, ১১৩ টাকায় ৫১০ গ্রাম তেলাপিয়া মাছ, ১৪ টাকা ৭০ পয়সায় এক কেজি আলু, ১৭২ টাকায় এক কেজি মুরগির মাংস এবং ৩৯ টাকায় এক কেজি আমড়া।

কিন্তু রেশন কমে ৬ ডলারে নামলে খাবার তালিকা দাঁড়াবে—৪০০ টাকায় ৮ কেজি চাল, ১২৭ টাকায় ১.৩৩ কেজি ডাল, ১৮০ টাকায় এক লিটার সয়াবিন তেল, ১০ টাকায় ৩০০ গ্রাম লবণ এবং ১২ টাকায় ১০০ গ্রাম লাল মরিচ। স্কালপেলি সতর্ক করে বলেন, “রেশন অর্ধেকে নামলে অপুষ্টি ভয়াবহ আকার নেবে, শিশুরা মারা যাবে।”

শরণার্থী শিবিরের এক রোহিঙ্গা পুরুষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই সামান্য সহায়তায় পরিবারগুলো এক বেলা না খেয়ে এবং ধার-দেনা করে চলে। যদি আরও কমে যায়, তাহলে অপুষ্টি বাড়বে, আর মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়বে।”

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার জানান, কূটনীতিক, জাতিসংঘ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও এনজিও প্রতিনিধি মিলে প্রায় ১০০ জনের একটি প্রতিনিধি দল ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, “ডব্লিউএফপি তাদের স্পষ্ট বার্তা জানিয়েছে, অর্থ না এলে নভেম্বরের পর খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ক্যাম্পে বিশৃঙ্খলা, এমনকি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান রেশনই অপর্যাপ্ত। তা আরও কমানো হলে মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ আকার নেবে। একা বাংলাদেশের পক্ষে এটি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, এমনকি জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর পক্ষেও নয়। অর্থ ছাড়া সহায়তা কার্যক্রম চালানো অসম্ভব।”

আজাদ মজুমদার আরও জানান, “আসন্ন সংকট সরাসরি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিনিধিদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিন ক্যাম্পে নেওয়া  হয়েছে, যাতে তারা এই আবেদন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও দাতা দেশগুলোর কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।”

মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন এবং রাখাইনে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির নির্বিচার হামলা, অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা ও ধর্ষণসহ চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনই এই সংকটের মূল কারণ। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত  খাদ্য ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল।

ডব্লিউএফপি ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে,  রোহিঙ্গাদের খাবার নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে জরুরি মানবিক কাজ।  তারা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে চায়, কিন্তু তার আগ পর্যন্ত প্রতিদিনের খাবার তাদের টিকে থাকার একমাত্র ভরসা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

তানোর-গোদাগাড়ীতে প্রার্থী ঘোষণায় সরগরম বিএনপির তৃণমূল

খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে মারা যেতে পারে শিশুসহ রোহিঙ্গারা: ডব্লিউএফপি

Update Time : ০৫:৪৪:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশে আশ্রিত ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য নভেম্বরের পর খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে-এমন ভয়াবহ সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।

অর্থসংকট কাটাতে না পারলে ডিসেম্বর থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা খাবারহীন হয়ে পড়বে। এতে অপুষ্টির হার আরও বেড়ে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংস্থাটি।

ডব্লিউএফপির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোমেনিকো স্কালপেলি বলেন, “আমাদের হাতে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহের অর্থ আছে। এরপর থেকে ১২ লাখ মানুষের জন্য কোনো খাবার থাকবে না। ন্যূনতম রেশন চালু রাখতে আমাদের জরুরি ভিত্তিতে অন্তত ১৭৩ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।”

তিনি জানান, বর্তমানে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী মাসে ১২ ডলারের (প্রায় ১,৫০০ টাকা) রেশনে যে খাবার পান, তার মধ্যে রয়েছে—৬৫০ টাকায় ১৩ কেজি চাল, ১৮০ টাকায় এক লিটার তেল, ১৯ টাকায় আধা কেজি লবণ, ২৩ টাকা ৪০ পয়সায় ২০০ গ্রাম লাল মরিচ, ৫৩ টাকায় পাঁচটি ডিম, ২৬ টাকায় ৪০০ গ্রাম পেঁয়াজ, ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায় ৫০০ গ্রাম মসুর ডাল, ১০৯ টাকায় এক কেজি চিনি, ১১৩ টাকায় ৫১০ গ্রাম তেলাপিয়া মাছ, ১৪ টাকা ৭০ পয়সায় এক কেজি আলু, ১৭২ টাকায় এক কেজি মুরগির মাংস এবং ৩৯ টাকায় এক কেজি আমড়া।

কিন্তু রেশন কমে ৬ ডলারে নামলে খাবার তালিকা দাঁড়াবে—৪০০ টাকায় ৮ কেজি চাল, ১২৭ টাকায় ১.৩৩ কেজি ডাল, ১৮০ টাকায় এক লিটার সয়াবিন তেল, ১০ টাকায় ৩০০ গ্রাম লবণ এবং ১২ টাকায় ১০০ গ্রাম লাল মরিচ। স্কালপেলি সতর্ক করে বলেন, “রেশন অর্ধেকে নামলে অপুষ্টি ভয়াবহ আকার নেবে, শিশুরা মারা যাবে।”

শরণার্থী শিবিরের এক রোহিঙ্গা পুরুষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই সামান্য সহায়তায় পরিবারগুলো এক বেলা না খেয়ে এবং ধার-দেনা করে চলে। যদি আরও কমে যায়, তাহলে অপুষ্টি বাড়বে, আর মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়বে।”

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার জানান, কূটনীতিক, জাতিসংঘ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও এনজিও প্রতিনিধি মিলে প্রায় ১০০ জনের একটি প্রতিনিধি দল ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, “ডব্লিউএফপি তাদের স্পষ্ট বার্তা জানিয়েছে, অর্থ না এলে নভেম্বরের পর খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ক্যাম্পে বিশৃঙ্খলা, এমনকি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান রেশনই অপর্যাপ্ত। তা আরও কমানো হলে মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ আকার নেবে। একা বাংলাদেশের পক্ষে এটি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, এমনকি জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর পক্ষেও নয়। অর্থ ছাড়া সহায়তা কার্যক্রম চালানো অসম্ভব।”

আজাদ মজুমদার আরও জানান, “আসন্ন সংকট সরাসরি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিনিধিদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিন ক্যাম্পে নেওয়া  হয়েছে, যাতে তারা এই আবেদন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও দাতা দেশগুলোর কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।”

মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন এবং রাখাইনে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির নির্বিচার হামলা, অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা ও ধর্ষণসহ চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনই এই সংকটের মূল কারণ। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত  খাদ্য ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল।

ডব্লিউএফপি ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে,  রোহিঙ্গাদের খাবার নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে জরুরি মানবিক কাজ।  তারা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে চায়, কিন্তু তার আগ পর্যন্ত প্রতিদিনের খাবার তাদের টিকে থাকার একমাত্র ভরসা।