ঢাকা ০৩:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার Logo ৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি নিউরো ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম ভোগান্তি Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত

সৈয়দপুরে গম সংকটে আটা-ময়দার মিল বন্ধ

সারাদেশের ন্যায় সৈয়দপুরেও গমের উৎপাদন কমে যাওয়া আর ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধ হওয়ায় সৈয়দপুরে ১০টি আটা ময়দা মিলের মধ্যে ৭টি মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আর বাকি ৩ টি মিল ও বন্ধ হওয়ারও উপক্রম হয়েছে বলে জানা যায়।
বিসিক শিল্পনগরীর শ্যামলী ফ্লাওয়ার ময়দা মিল মালিক আলহাজ্ব ইয়াসিন আলী জানান, শুধুমাত্র গম সংকটে ৭ টি মিল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৩ টির অবস্থাও ভালো না। ৫ থেকে ৬ বছর আগেও সৈয়দপুর সহ সারা দেশে প্রচুর গমের উৎপাদন হতো, অন্য দিকে ভারত থেকেও গম আমদানি হতো পর্যাপ্ত । কিন্তু সেই গমের উৎপাদন ও আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটা এবং ময়দার উৎপাদন প্রায় শূন্যের কোটায়। একই সঙ্গে প্রায় ৩ শতাধিক কর্মচারী বেকার হয়ে গেছে।
মিল মালিক ইয়াসিন আরো বলেন, দেশের বড় বড় আমদানিকারকরা রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করছেন। সেটি আবার তিনবার হাতবদল হয়ে সৈয়দপুরে আসছে। নগদ টাকায় গম কিনে বাকিতে আটা ময়দা সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। দেশে গমের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ভারত থেকে গম আমদানি করা না হলে আগামী ৫/৬ মাসের মধ্যে সৈয়দপুরে আটা ময়দা উৎপাদন বন্ধই হয়ে যেতে পারে।
ইয়াসিন আলী আরো বলেন, সৈয়দপুরে আটা ময়দা উৎপাদনে প্রতিদিন দরকার ৪০০ থেকে ৬০০ টন গম। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানিকারকদের কাছ থেকে বেশি দাম দিয়েও মিলছে না চাহিদামতো গম। অন্য দিকে ভারত থেকেও গম আমদানি বন্ধ। যার ফলে থার্ড পার্টির কাছে এক কেজি গম ৪৩ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ, বিদ্যুৎ খরচসহ শ্রমিক মজুরি খরচ পড়ে যাচ্ছে প্রায় ৪৭ টাকা। আর পাইকারি ভাবেও বিক্রি করতে হচ্ছে ৪৬/৪৭ টাকা কেজি দরে। একই দরে ভুষি ও বিক্রি করছেন তিনি। ৫/৬ বছর আগে কিছু গম মজুৎ ছিল বলেই আটা ও ময়দা উৎপাদন চালু রেখেছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের সব চেয়ে উন্নত মানের আটা ও ময়দা উৎপাদন হয় সৈয়দপুরে। এ শহরে নিম্ন মানের গম দিয়ে আটা বা ময়দা উৎপাদন করা হয় না। বাইরে থেকে যেসব আটা ময়দা সৈয়দপুরে বাজারজাত হচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগই নিম্নমানের গম দিয়ে উৎপাদিত। এর ফলে সৈয়দপুরের ব্যবসায়িরা আটা বা ময়দা উৎপাদনে মার খাচ্ছেন।
মোস্তফা ফ্লাওয়ার মিল মালিক আলহাজ্ব মোস্তফা জানান,শুধুমাত্র গম সংকটের কারনেই তার মিল প্রায় ৩ বছর বন্ধ রেখেছেন। শুধুমাত্র শ্রমিকরা যাতে বেকার হয়ে না যায়, সেজন্য ওই মিলে চিপস উৎপাদন করা হচ্ছে।
কামারপুকুর ইউনিয়ন এর সাবেক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার শরীর ভালো না,ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তিনি। ডাক্তার বলেছেন ৩ বেলা রুটি খেতে। কিন্তু বাজারে আটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। এত দামে আটা ক্রয় করা অসম্ভব হয়ে গেছে। এছাড়া চিনি, তেলসহ অন্যান্য জিনিসের দামও আকাশ ছোঁয়া। তিন বেলার মধ্যে ২/১ বেলা খাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
সাত্তার পাটোয়ারী নামের এক ব্যবসায়ি বলেন, আমি একসময় গমের ব্যবসা করতাম। মদিনা ফ্লাওয়ার মিলের মালিককে প্রায় ১৩ লাখ টাকার গম বাকিতে দিয়েছি। গম সংকটের কারণে তিনি তার ফ্লাওয়ার মিল বন্ধ করে দেওয়ায় আমার টাকাও দিতে পারছেন না। যার ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। শুধু মদিনা ফ্লাওয়ার মিলের মালিকই নন, তার মতো অনেকেই পথে বসেছেন। ভারত থেকে গম আমদানি করা না হলে শহরের বাকি আটা ময়দা মিলগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর মিল মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান,একেকটি মিলে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ টন গম দরকার। কিন্তু তা মিলছে না। শুধু শ্রমিকরা যাতে বেকার হয়ে না পড়ে সেজন্যই ৩টি মিল চালু রয়েছে। ভারত থেকে আমদানি করে অথবা সরকারি ভাবে যদি কম দামে গমের ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে অল্প দিনেই বাকি ৩টি মিলও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

স্কয়ার ফার্মারর বিরুদ্ধে ডোজ প্রতারণা ও রিপ্যাকিংয়ের অভিযোগে প্রেস কনফারেন্স শনিবার

সৈয়দপুরে গম সংকটে আটা-ময়দার মিল বন্ধ

Update Time : ০৩:৩৫:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

সারাদেশের ন্যায় সৈয়দপুরেও গমের উৎপাদন কমে যাওয়া আর ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধ হওয়ায় সৈয়দপুরে ১০টি আটা ময়দা মিলের মধ্যে ৭টি মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আর বাকি ৩ টি মিল ও বন্ধ হওয়ারও উপক্রম হয়েছে বলে জানা যায়।
বিসিক শিল্পনগরীর শ্যামলী ফ্লাওয়ার ময়দা মিল মালিক আলহাজ্ব ইয়াসিন আলী জানান, শুধুমাত্র গম সংকটে ৭ টি মিল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৩ টির অবস্থাও ভালো না। ৫ থেকে ৬ বছর আগেও সৈয়দপুর সহ সারা দেশে প্রচুর গমের উৎপাদন হতো, অন্য দিকে ভারত থেকেও গম আমদানি হতো পর্যাপ্ত । কিন্তু সেই গমের উৎপাদন ও আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটা এবং ময়দার উৎপাদন প্রায় শূন্যের কোটায়। একই সঙ্গে প্রায় ৩ শতাধিক কর্মচারী বেকার হয়ে গেছে।
মিল মালিক ইয়াসিন আরো বলেন, দেশের বড় বড় আমদানিকারকরা রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করছেন। সেটি আবার তিনবার হাতবদল হয়ে সৈয়দপুরে আসছে। নগদ টাকায় গম কিনে বাকিতে আটা ময়দা সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। দেশে গমের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ভারত থেকে গম আমদানি করা না হলে আগামী ৫/৬ মাসের মধ্যে সৈয়দপুরে আটা ময়দা উৎপাদন বন্ধই হয়ে যেতে পারে।
ইয়াসিন আলী আরো বলেন, সৈয়দপুরে আটা ময়দা উৎপাদনে প্রতিদিন দরকার ৪০০ থেকে ৬০০ টন গম। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানিকারকদের কাছ থেকে বেশি দাম দিয়েও মিলছে না চাহিদামতো গম। অন্য দিকে ভারত থেকেও গম আমদানি বন্ধ। যার ফলে থার্ড পার্টির কাছে এক কেজি গম ৪৩ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ, বিদ্যুৎ খরচসহ শ্রমিক মজুরি খরচ পড়ে যাচ্ছে প্রায় ৪৭ টাকা। আর পাইকারি ভাবেও বিক্রি করতে হচ্ছে ৪৬/৪৭ টাকা কেজি দরে। একই দরে ভুষি ও বিক্রি করছেন তিনি। ৫/৬ বছর আগে কিছু গম মজুৎ ছিল বলেই আটা ও ময়দা উৎপাদন চালু রেখেছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের সব চেয়ে উন্নত মানের আটা ও ময়দা উৎপাদন হয় সৈয়দপুরে। এ শহরে নিম্ন মানের গম দিয়ে আটা বা ময়দা উৎপাদন করা হয় না। বাইরে থেকে যেসব আটা ময়দা সৈয়দপুরে বাজারজাত হচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগই নিম্নমানের গম দিয়ে উৎপাদিত। এর ফলে সৈয়দপুরের ব্যবসায়িরা আটা বা ময়দা উৎপাদনে মার খাচ্ছেন।
মোস্তফা ফ্লাওয়ার মিল মালিক আলহাজ্ব মোস্তফা জানান,শুধুমাত্র গম সংকটের কারনেই তার মিল প্রায় ৩ বছর বন্ধ রেখেছেন। শুধুমাত্র শ্রমিকরা যাতে বেকার হয়ে না যায়, সেজন্য ওই মিলে চিপস উৎপাদন করা হচ্ছে।
কামারপুকুর ইউনিয়ন এর সাবেক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার শরীর ভালো না,ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তিনি। ডাক্তার বলেছেন ৩ বেলা রুটি খেতে। কিন্তু বাজারে আটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। এত দামে আটা ক্রয় করা অসম্ভব হয়ে গেছে। এছাড়া চিনি, তেলসহ অন্যান্য জিনিসের দামও আকাশ ছোঁয়া। তিন বেলার মধ্যে ২/১ বেলা খাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
সাত্তার পাটোয়ারী নামের এক ব্যবসায়ি বলেন, আমি একসময় গমের ব্যবসা করতাম। মদিনা ফ্লাওয়ার মিলের মালিককে প্রায় ১৩ লাখ টাকার গম বাকিতে দিয়েছি। গম সংকটের কারণে তিনি তার ফ্লাওয়ার মিল বন্ধ করে দেওয়ায় আমার টাকাও দিতে পারছেন না। যার ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। শুধু মদিনা ফ্লাওয়ার মিলের মালিকই নন, তার মতো অনেকেই পথে বসেছেন। ভারত থেকে গম আমদানি করা না হলে শহরের বাকি আটা ময়দা মিলগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর মিল মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান,একেকটি মিলে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ টন গম দরকার। কিন্তু তা মিলছে না। শুধু শ্রমিকরা যাতে বেকার হয়ে না পড়ে সেজন্যই ৩টি মিল চালু রয়েছে। ভারত থেকে আমদানি করে অথবা সরকারি ভাবে যদি কম দামে গমের ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে অল্প দিনেই বাকি ৩টি মিলও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।