রাজশাহীর বাঘায় জলাবদ্ধাতা নিরসনে কোটি কোটি টাকা খরচের নালা,ক্যানেল ও ড্রেন কোন কাজে আসছে না। প্রতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এবারেও আষাঢ়-শ্রাবনের বৃষ্টিপাতে উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে । পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। অবৈধ পুকুর খনন,ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন না করাসহ ক্যানেল-ড্রেন,খাল ভরাট ও দখল নিয়ে ঘর-বাড়ি ,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
বাঘা ও আড়ানী পৌর সভার বাসিন্দারা জানান, কোটি কোটি টাকা খরচে র্নিমাণ করা ড্রেনগুলো সড়কের চেয়ে উঁচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে যায়।
জানা যায়, ২০২৪ সালে বাঘা পৌরসভায় ৭ (সাত) কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আম চত্বর থেকে বাঘা বাজার হয়ে পূর্বে বটতলা পর্যন্ত ১৭৮৪ মিটার ড্রেন নির্মাণের কাজ করা হয়।
পৌর সভার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, আগেও দুই দফায় ড্রেন করা হয়েছে। রাস্তার দুইধারে নির্মাণ করা ড্রেন সড়কের চেয়ে উঁচু হওয়ায় পানি গড়ে না। এতে সড়ক ও জনপদ বিভাগের বাঘা পৌর সদরে অসমাপ্ত ১কিলোমিটার রাস্তায় পানি জমে যায়। ভাঙা চোরা রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানি মাড়িয়ে চলতে গিয়ে গর্তে পড়ে যান বাহন উল্টে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন পথচারি ও যান বাহন চালকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে,উপজেলার তেপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, হরিপুর ও শাহদৌলা সরকারি কলেজ,খাগড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়ে। প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিব বলেন,পানি মাড়িয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাওয়া আসা করতে হয়।
আড়ানি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে ৫০০ পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। ২০০ পরিবার পানি বন্দীর কথা জানিয়েছেন বাউসা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান। সেলিম হোসেন জানান, আড়ানী পৌরসভায় প্রায় ৩০০ পরিবার পানি বন্দী।
দেখা গেছে,আড়ানীর বড়াল নদের সাথে সংযুক্ত রেখে আড়ানী-বাউসা ইউনিয়নের দিঘা গ্রামের মৃতপ্রায় চন্দনা নদীতে পানি নিষ্কাশনের ক্যানেল-ড্রেন দখলে নিয়ে ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।
স্থানীয় নান্টু,সেলিম বলেছেন, অপরিকল্পিত পুকুর খননের ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকায় বসবাসকারি পরিবারের ঘর বাড়ি জলমগ্ন ছাড়াও আবাদ করা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে,প্রায় ৪৪ বছর আগে জলাবদ্ধতা নিরসন ও সেচ সুবিধাসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষের লক্ষ্য নিয়ে বাঘা উপজেলার মুর্শিদপুর থেকে নওটিকা পর্যন্ত খাল খনন করা হয়। ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর সেই খালটি পৌণে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে-২০১৯ সালে ২৪ মে উদ্বোধনের পর পুণঃখনন করা হয়। জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ভূ-অপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করেন রাজশাহীর বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ।
এলাকাবাসী জানান, এর আগেও দুবার খাল খনন করা হয়েছে। অতীতেও নদীর পানি খাল দিয়ে নিচু এলাকা নওটিকার বিলে নেমে গেছে। এখন খালের মুখে সেই নদীও আর নেই। বিরাট বালুচর ফেলে নদীই সরে গেছে অনেক দূরে। খাল খননে শুধু সরকারের অর্থ অপচয় হয়েছে।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, কাজের ধারাবাহিকতা না থাকা, প্রশস্ত খালগুলো ছোট ড্রেনে রূপান্তর, অধিকাংশ ড্রেন পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাওয়া এবং নিয়মিত ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করায় সুফল পাচ্ছে না জনসাধারন।
বিএমডিএ’র পুঠিয়া জোনের সহকারি প্রকৌশলী হানিফ শিকদার জানান, প্রকল্পের এক তৃতীয়াংশ কাজ শেষ হলেও মামলা জনিত কারণে এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।
আাড়ানি পৌরসভার উপ সহকারি প্রকৌশলী সোহেল রানা জানান, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পৌর প্রশাসক ও সহকারি প্রকৌশলীর নিদের্শনায় খাল খনন সংস্কার ও ড্রেন পরিস্কারের কাজ করা হয়েছে ।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও বাঘা পৌর প্রশাসক শাম্মী আক্তার বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে খাল উদ্ধার ও ড্রেনে প্লাস্টিক বর্জ্য ও পলিথিন ফেলা বন্ধের পাশাপাশি নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পৌর সদরে অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য সওজকে চিঠি দিয়েছেন।
রাজশাহীর সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহি প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন জানান, ভূমি অধিগ্রহনে জটিলতায় পৌর সদরে অসমাপ্ত কাজ বিলম্বে শুরু করতে হয়েছে। পরে শুরু করলেও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় কাজ করা যায়নি। পুণরায় কাজ শুরুর জন্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে কমপক্ষে ৪/৫ মাস লাগতে পারে