ঢাকা ০৪:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা Logo মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা Logo দুর্গাপুরে ‎রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন  Logo শীতের গন্ধ, তাপমাত্রা কমছে প্রতিদিন দুই ডিগ্রি ঈশ্বরদীতে দোকানে উঠছে শীতের সোয়েটার-জ্যাকেট, কম্বল Logo পদ্মার চরজুড়ে চলছে ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ Logo নীলফামারীতে চার দফা দাবী বাস্তবায়নে বিসিএস প্রভাষক পরিষদের মানবন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন
ঈশ্বরদীতে বিপৎসীমার কাছাকাছি পদ্মার পানি

চর ডুবে যাওয়ায় বিপাকে ৬০ পরিবারের ১০০০ মহিষসহ গবাদিপশু

পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেগে ওঠা চরগুলো ডুবে গেছে, চরবাসী গবাদিপশু ও মালপত্র নিয়ে লোকালয়ে সরে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৮০ মিটার। আর ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর পানির এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৩ দশমিক  ৮০ মিটার। ফলে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- গেল ২৪ জুলাই থেকে ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। সেদিন পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ৩৫ মিটার। তারপর আবার তা কমে যায়। আবার একই মাসের ৩১ জুলাই থেকে পানি বাড়তে থাকে। তার পর থেকে পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে চর এলাকার প্লাবিত হয়েছে। ফলে চর থেকে গবাদিপশু লোকালয়ে নিয়ে আসছেন চরবাসীন্দারা।
মোল্লা চরের বাসিন্দা মাসুদ বিশ্বাস বলেন, পদ্মা পানি বেড়েছে। জেগে উঠা চরগুলো ডুবে গেছে। ফলে চরের বেশিরভাগ মানুষ লোকালয়ে চলে এসেছে। এছাড়া গবাদি পশুগুলো নদীর চর থেকে লোকালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু এখানে গোখাদ্যের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।
চর জাজিরা এলাকার বাসিন্দা রাকিব বলেন, প্রতিদিন বাড়ছে পদ্মার পানি। সারাদিন চরের মানুষ তাদের মালামাল নৌকায় করে লোকালয়ে নিয়ে আসছে। এই পাশে অনেকে তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে রাখছেন। কেউ কেউ ভাড়া বাড়িতে উঠছেন। তবে যাদের গবাদি পশু রয়েছে তারা পড়ছেন বেশি বিপাকে। এমন পরিস্থিতিতে এখনও অনেক গবাদি পশু চরে রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল মমিন জানান, উপজেলার চরজাজিরা ও মোল্লার চর ডুবে যাওয়ায় মুলা ৮-৯ হেক্টর এবং ধনিয়া ৫-৬ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এছাড়া এই দুই মৌজার চরে
কৃষকের আবাদ করা কলাবাগান ও আখের খেতে পানি প্রবেশ করলেও কোন ক্ষতি হয়নি। তা ছাড়া এই সময়ে চরে খুব একটা ফসল থাকে না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার  সাঁড়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে প্রতিবছর জেগে ওঠা চর জাজিরা ও মোল্লাচর এই দুইটি মৌজায় ৬০ টি পরিবার  বসবাস করেন। গবাদি পশু পালন  করে মহিষ, গরু,ভেড়া,ছাগল, হাঁস মুরগি, পালনের মাধ্যমেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। চর ডুবে যাওয়ায় পরিবারগুলোর  ১০০০ টি মহিষ, ৪৫০ টি গরু,৫৫০ টি ভেড়া, ২০০ টি ছাগল,২৫০ হাঁস ও দেশি মুরগি নিয়ে পড়ে বিপাকে। ডুবন্ত চরের তাদের গবাদি পশু ও মালামাল নিয়ে লোকালয়ের দিকে আসছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দুই চরের বেশিরভাগ গবাদি পশুর মালিক  উপজেলার বাঘইল গ্রামে গবাদি পশু নিয়ে এসেছেন। অবশিষ্ট খামার মালিক গবাদিপশু নিয়ে কুষ্টিয়ার দিকে চলে গেছেন। চর থেকে গবাদি পশুর নিয়ে আসায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন গবাদিপশুর খাবার নিয়ে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা: আকলিমা খাতুন জানান,খামার মালিকরা চর জেগে না ওঠা পর্যন্ত নদীর পাড়ের লোকালয় থাকবেন। চরগুলো জেগে উঠে বসবাসের উপযোগী হতে প্রায় দুই মাস লেগে যায়। চর জেগে উঠলে( প্রায় দুই মাস) পরে তারা আবার চরে ফিরে যাবেন। চর ডুবে গেলে বসবাস ও গবাদি পশু পালন কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আপৎকালীন দুই মাসের জন্য খামারের মালিকরা পদ্মার পূর্ব দিকের গ্রাম বাঘইলসহ আশেপাশের  অন্যান্য জায়গায় জমির লিজ নিয়ে রাখে। চর ডুবে গেলে এখানেই এই সময়টা গবাদি পশু পালন করে।


আজ মঙ্গলবার বিকেলে পদ্মা নদীর পূর্বপাড় ঘুরে দেখা গেছে, ডুবে যাওয়ার চরের খামার মালিকরা তাদের ঘরবাড়ি গবাদি পশু ও খাদ্য ( ভুষি) নৌকায় করে এপারে নিয়ে আসছেন। এ সময় নদীর পাড়ে কথা হয় চর জাজিরা মৌজার চরের বাসিন্দা খামার মালিক মিয়া চাঁদের সঙ্গে। তিনি জানান,চর ডুবে যাওয়ায় তার  ১০ টি গরু ও ৬ টি ভেড়া নিয়ে এপারে লোকালয়ে চলে আসেন। আর যারা এখনো চরে পানির মধ্যে গবাদি পশু নিয়ে রয়েছেন তারাও এপারে লোকালয়ে আসার চেষ্টা করছেন।
ডুবে যাওয়া চরের আবুল ফজল নামে এক মহিষের খামারি জানান, চর ডুবে যাওয়ায় তার ১৫ টি মহিষ নিয়ে এপারে লোকালয়ে এসেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা

ঈশ্বরদীতে বিপৎসীমার কাছাকাছি পদ্মার পানি

চর ডুবে যাওয়ায় বিপাকে ৬০ পরিবারের ১০০০ মহিষসহ গবাদিপশু

Update Time : ০৮:০৪:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেগে ওঠা চরগুলো ডুবে গেছে, চরবাসী গবাদিপশু ও মালপত্র নিয়ে লোকালয়ে সরে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৮০ মিটার। আর ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর পানির এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৩ দশমিক  ৮০ মিটার। ফলে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- গেল ২৪ জুলাই থেকে ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। সেদিন পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ৩৫ মিটার। তারপর আবার তা কমে যায়। আবার একই মাসের ৩১ জুলাই থেকে পানি বাড়তে থাকে। তার পর থেকে পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে চর এলাকার প্লাবিত হয়েছে। ফলে চর থেকে গবাদিপশু লোকালয়ে নিয়ে আসছেন চরবাসীন্দারা।
মোল্লা চরের বাসিন্দা মাসুদ বিশ্বাস বলেন, পদ্মা পানি বেড়েছে। জেগে উঠা চরগুলো ডুবে গেছে। ফলে চরের বেশিরভাগ মানুষ লোকালয়ে চলে এসেছে। এছাড়া গবাদি পশুগুলো নদীর চর থেকে লোকালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু এখানে গোখাদ্যের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।
চর জাজিরা এলাকার বাসিন্দা রাকিব বলেন, প্রতিদিন বাড়ছে পদ্মার পানি। সারাদিন চরের মানুষ তাদের মালামাল নৌকায় করে লোকালয়ে নিয়ে আসছে। এই পাশে অনেকে তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে রাখছেন। কেউ কেউ ভাড়া বাড়িতে উঠছেন। তবে যাদের গবাদি পশু রয়েছে তারা পড়ছেন বেশি বিপাকে। এমন পরিস্থিতিতে এখনও অনেক গবাদি পশু চরে রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল মমিন জানান, উপজেলার চরজাজিরা ও মোল্লার চর ডুবে যাওয়ায় মুলা ৮-৯ হেক্টর এবং ধনিয়া ৫-৬ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এছাড়া এই দুই মৌজার চরে
কৃষকের আবাদ করা কলাবাগান ও আখের খেতে পানি প্রবেশ করলেও কোন ক্ষতি হয়নি। তা ছাড়া এই সময়ে চরে খুব একটা ফসল থাকে না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার  সাঁড়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে প্রতিবছর জেগে ওঠা চর জাজিরা ও মোল্লাচর এই দুইটি মৌজায় ৬০ টি পরিবার  বসবাস করেন। গবাদি পশু পালন  করে মহিষ, গরু,ভেড়া,ছাগল, হাঁস মুরগি, পালনের মাধ্যমেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। চর ডুবে যাওয়ায় পরিবারগুলোর  ১০০০ টি মহিষ, ৪৫০ টি গরু,৫৫০ টি ভেড়া, ২০০ টি ছাগল,২৫০ হাঁস ও দেশি মুরগি নিয়ে পড়ে বিপাকে। ডুবন্ত চরের তাদের গবাদি পশু ও মালামাল নিয়ে লোকালয়ের দিকে আসছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দুই চরের বেশিরভাগ গবাদি পশুর মালিক  উপজেলার বাঘইল গ্রামে গবাদি পশু নিয়ে এসেছেন। অবশিষ্ট খামার মালিক গবাদিপশু নিয়ে কুষ্টিয়ার দিকে চলে গেছেন। চর থেকে গবাদি পশুর নিয়ে আসায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন গবাদিপশুর খাবার নিয়ে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা: আকলিমা খাতুন জানান,খামার মালিকরা চর জেগে না ওঠা পর্যন্ত নদীর পাড়ের লোকালয় থাকবেন। চরগুলো জেগে উঠে বসবাসের উপযোগী হতে প্রায় দুই মাস লেগে যায়। চর জেগে উঠলে( প্রায় দুই মাস) পরে তারা আবার চরে ফিরে যাবেন। চর ডুবে গেলে বসবাস ও গবাদি পশু পালন কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আপৎকালীন দুই মাসের জন্য খামারের মালিকরা পদ্মার পূর্ব দিকের গ্রাম বাঘইলসহ আশেপাশের  অন্যান্য জায়গায় জমির লিজ নিয়ে রাখে। চর ডুবে গেলে এখানেই এই সময়টা গবাদি পশু পালন করে।


আজ মঙ্গলবার বিকেলে পদ্মা নদীর পূর্বপাড় ঘুরে দেখা গেছে, ডুবে যাওয়ার চরের খামার মালিকরা তাদের ঘরবাড়ি গবাদি পশু ও খাদ্য ( ভুষি) নৌকায় করে এপারে নিয়ে আসছেন। এ সময় নদীর পাড়ে কথা হয় চর জাজিরা মৌজার চরের বাসিন্দা খামার মালিক মিয়া চাঁদের সঙ্গে। তিনি জানান,চর ডুবে যাওয়ায় তার  ১০ টি গরু ও ৬ টি ভেড়া নিয়ে এপারে লোকালয়ে চলে আসেন। আর যারা এখনো চরে পানির মধ্যে গবাদি পশু নিয়ে রয়েছেন তারাও এপারে লোকালয়ে আসার চেষ্টা করছেন।
ডুবে যাওয়া চরের আবুল ফজল নামে এক মহিষের খামারি জানান, চর ডুবে যাওয়ায় তার ১৫ টি মহিষ নিয়ে এপারে লোকালয়ে এসেছেন।