ঢাকা ১০:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মন থেকে নিজের ছেলে মেয়ে ভেবে শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক ভাবে লেখাপড়া করান — শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে হাবিবুর রহমান হাবিব Logo জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) মনোনয়নের আবেদন করেছেন প্রীতম দাশ Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে গাছ ফেলে ডাকাতির চেষ্টা ॥ ধরতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে পুলিশ কর্মকর্তা আহত Logo ভয়াল ১২ই নভেম্বর স্মরণে ভোলায় আলোচনা সভা ও র‌্যালি Logo শ্রীমঙ্গলে পুলিশের অভিযানে ১১লাখ টাকার পণ্য জব্দ; ১জন গ্রেফতার Logo কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুবশক্তির ৩১ জনের পদত্যাগ Logo নভেম্বরের শেষে দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান: সালাহউদ্দিন Logo আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার কিছু নেই: আমীর খসরু Logo সীমান্তে ৪ কোটি টাকার পণ্যসহ গাড়ি জব্দ করছে বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়ান Logo আত্রাইয়ে ইটভাটা বন্ধের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

চালকের ঘুমে শেষ এক পরিবার

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৪১:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫
  • ১২ Time View

ওমান প্রবাসী মো. বাহার উদ্দিন আড়াই বছর পর দেশে ফিরছিলেন। পরিবারের সবার মাঝে ফেরার আনন্দে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন—“স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার”। কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই চূর্ণ হয়ে গেছে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায়।

বুধবার ভোরে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। পরে পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার সময় চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বলে জানায় পুলিশ।

দুর্ঘটনাস্থলে স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পরপরই গাড়ির চালক খালের পানি থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায়। বাহার উদ্দিনসহ পাঁচজন গ্লাস ভেঙে বের হয়ে আসতে পারলেও বাকি সাতজন গাড়ির ভেতরে আটকা পড়েন। তারা প্রায় দুই ঘণ্টা পানির নিচে ছিলেন। পরে পুলিশের রেকার দিয়ে গাড়িটি ওঠানোর পর মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।

চোখের সামনে নিজের মা, স্ত্রী, মেয়ে, নানী, ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই ভাতিজিকে হারিয়ে বাহার উদ্দিন শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। তার আহাজারি ও স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে পুরো গ্রামের পরিবেশ।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, বাহারের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), মেয়ে মীম আক্তার (২), মা মুরশিদা বেগম (৫০), নানী ফয়জুন নেছা (৭০), বড় ভাইয়ের স্ত্রী লাবনী আক্তার (২৫), এবং ভাতিজি রেশমি আক্তার (৯) ও লামিয়া আক্তার (৮)।

সেখানে গেলে দেখা যায়, দুই বছর বয়সী শিশুকন্যা মিম আক্তারের নিথর দেহ বুকে চেপে ধরে চিৎকার করে কাঁদছেন বাহার। কেঁদে কেঁদে বলছেন— ‘তোর জন্য এসেছিলাম মা, তুই কেন লাশ হয়ে এলি’।

বাহারের দুই ভাতিজি রেশমি ও লামিয়া ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের জন্য নতুন বই ও স্কুলব্যাগ কেনা হয়েছিল কিছুদিন আগেই। সেই ব্যাগ আর বইয়ের দিকে নিথর হয়ে তাকিয়ে আছেন তাদের মা-বাবা।

বাহারের শ্বশুর ইস্কান্দার মির্জা করে বলেন, চালকের ঘুমের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। চালকের ফাঁসি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

তিনি জানান, বিকেল ৫টায় পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের কাচারিবাড়ি এলাকায় ছয়জনের দাফন সম্পন্ন হবে। নিহত ফয়জুন নেছাকে দাফন করা হবে চর মোহাম্মদপুর গ্রামে।

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন বলেন, এটা কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটা পুরো একটি পরিবারের নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ঘটনা। চালক ঘুমিয়ে পড়ার অসতর্কতায় এভাবে একটি পরিবার শেষ হয়ে যাবে— এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।

ওসি মোবারক আরও জানান, এ ঘটনায় চালক পলাতক রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চালকের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মন থেকে নিজের ছেলে মেয়ে ভেবে শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক ভাবে লেখাপড়া করান — শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে হাবিবুর রহমান হাবিব

চালকের ঘুমে শেষ এক পরিবার

Update Time : ০৭:৪১:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

ওমান প্রবাসী মো. বাহার উদ্দিন আড়াই বছর পর দেশে ফিরছিলেন। পরিবারের সবার মাঝে ফেরার আনন্দে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন—“স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার”। কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই চূর্ণ হয়ে গেছে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায়।

বুধবার ভোরে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। পরে পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার সময় চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বলে জানায় পুলিশ।

দুর্ঘটনাস্থলে স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পরপরই গাড়ির চালক খালের পানি থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায়। বাহার উদ্দিনসহ পাঁচজন গ্লাস ভেঙে বের হয়ে আসতে পারলেও বাকি সাতজন গাড়ির ভেতরে আটকা পড়েন। তারা প্রায় দুই ঘণ্টা পানির নিচে ছিলেন। পরে পুলিশের রেকার দিয়ে গাড়িটি ওঠানোর পর মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।

চোখের সামনে নিজের মা, স্ত্রী, মেয়ে, নানী, ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই ভাতিজিকে হারিয়ে বাহার উদ্দিন শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। তার আহাজারি ও স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে পুরো গ্রামের পরিবেশ।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, বাহারের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), মেয়ে মীম আক্তার (২), মা মুরশিদা বেগম (৫০), নানী ফয়জুন নেছা (৭০), বড় ভাইয়ের স্ত্রী লাবনী আক্তার (২৫), এবং ভাতিজি রেশমি আক্তার (৯) ও লামিয়া আক্তার (৮)।

সেখানে গেলে দেখা যায়, দুই বছর বয়সী শিশুকন্যা মিম আক্তারের নিথর দেহ বুকে চেপে ধরে চিৎকার করে কাঁদছেন বাহার। কেঁদে কেঁদে বলছেন— ‘তোর জন্য এসেছিলাম মা, তুই কেন লাশ হয়ে এলি’।

বাহারের দুই ভাতিজি রেশমি ও লামিয়া ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের জন্য নতুন বই ও স্কুলব্যাগ কেনা হয়েছিল কিছুদিন আগেই। সেই ব্যাগ আর বইয়ের দিকে নিথর হয়ে তাকিয়ে আছেন তাদের মা-বাবা।

বাহারের শ্বশুর ইস্কান্দার মির্জা করে বলেন, চালকের ঘুমের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। চালকের ফাঁসি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

তিনি জানান, বিকেল ৫টায় পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের কাচারিবাড়ি এলাকায় ছয়জনের দাফন সম্পন্ন হবে। নিহত ফয়জুন নেছাকে দাফন করা হবে চর মোহাম্মদপুর গ্রামে।

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন বলেন, এটা কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটা পুরো একটি পরিবারের নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ঘটনা। চালক ঘুমিয়ে পড়ার অসতর্কতায় এভাবে একটি পরিবার শেষ হয়ে যাবে— এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।

ওসি মোবারক আরও জানান, এ ঘটনায় চালক পলাতক রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চালকের নাম পরিচয় জানা যায়নি।