পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জনগণের মধ্য থেকে এই দাবি উঠে এলেই তা সম্ভব হবে।
রোববার মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে ‘পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে ‘পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রায় আট কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা পদ্মা ব্যারেজ ও পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘ সাতবার সম্ভাব্যতা যাচাই হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফারাক্কা ব্যারাজ শুধু ফরিদপুর বা নির্দিষ্ট কোনো এলাকার সমস্যা নয়, এটি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সমস্যা। এ অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা এবং জীবন-জীবিকা রক্ষায় পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।’
উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় মানুষ সেখান থেকে চলে যাচ্ছে, যা একটি গুরুতর সমস্যা। এ অঞ্চলের বহু মানুষ তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যাচ্ছে কারণ তা আর বসবাসের উপযোগী থাকছে না। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু।
তিনি আরো বলেন, নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি নিয়ে সামনে দাঁড়াতে হবে, যে সরকারই আসুক না কেন, তাদের এই বিষয়ে কাজ করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং জনগণের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন জড়িত থাকায় বিএনপি এই অঞ্চলগুলোর উন্নয়নে অত্যন্ত সচেতন। জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যেকোনো কঠিন কাজই সম্ভব।’ জনগণের ঐক্যবদ্ধ দাবিই পরবর্তী সরকারগুলোকে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বাধ্য করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি দেশের মানুষের পালস বুঝি। দেশের মানুষ উন্নতি চায়, একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়। আর এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সমস্ত সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, নির্বাচননী প্রচারণা হবে। আমি প্রত্যাশা করবো এই বিষয়টি (পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু) প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে যেনো স্থান পায়।’ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা এটিকে নির্বাচনী ইশতেহারে দিবেন। যেনো এই দাবি জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়।’
তিনি বলেন, ‘আগামী সরকারে যারা আসবে তাদের প্রথম কাজ হবে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানসহ বহুবিধি কাজে মধ্যম মেয়াদি পরিকল্পনা করা। আমি প্রত্যাশা করবো, মধ্যম মেয়াদি বাজেটে এবং ২০২৬-২৭ অর্থ বছরের বাজেটে এই প্রকল্পটি যেনো অর্থায়নের জন্য সংযুক্ত হয়।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে অত্যন্ত সচেতন যে, জনগণের যেটা প্রয়োজন ও কালের যুগের সঙ্গে সঙ্গে যে পরিবর্তনগুলো আনা দরকার, রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সচেতন… সচেতনভাবেই আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি।
সেমিনারে ‘ফারাক্কা ব্যারেজ ও বাংলাদেশের সংকট : পদ্মা ব্যারেজ ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা’ নিয়ে একটি তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া। ‘দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর আবশ্যকতা নিয়ে একটি তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী শহিদুল ইমাম।
অনুষ্ঠান শুরুতেই উত্তরায় বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বিমানের পাইলট তৌকির ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবু ওহার মো. হাফিজুল হক।
‘পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’র সভাপতি সাবেক সাংসদ আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান, সাবেক প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন, ‘পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’র জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর হোসেন খান জালাল বক্তব্য দেন।
বিএনপি'র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক শ্যামা ওবায়েদ, সম্পাদক কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আক্তারুজ্জামান আখতার, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও পাবনা চেম্বারের পরিচালক এবিএম ফজলুর রহমান, পাবনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সরকারি এডোওয়ার্ড কলেজের সাবেক ভিপি নূর মোহাম্মদ মাসুম বগা, জাসাস পাবনা জেলা শাখার সভাপতি খালেদ হোসেন পরাগ, বেড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইস উদ্দিন, পাবনা মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল আহসান খান রেওন,বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সহ-সভাপতি মাহবুবা রহমান কাজলসহ পাবনা রাজবাড়ী ফরিদপুর যশোর খুলনা রাজশাহী নাটোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী পরিবহন শ্রমিক মালিক সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।