বৃষ্টির পানিতেই স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। আমন রোপণের ভরা মৌসুম এখন। পাবনার ঈশ্বরদীতে বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান চাষ করেন এখানকার কৃষকেরা। বৃষ্টিতে ভিজেও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁরা এখন ব্যস্ত আমন ধানের চারা রোপণ করতে। বীজতলা থেকে হালিচারা সংগ্রহ করে আমন ধানের জমি তৈরি ও জমিতে আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই এলাকার কৃষকেরা।
আমন ধানের চারা রোপণের ভরা মৌসুমী হাওয়াই আমন ধানের চাষকে ঘিরে যেন এখন মাঠে মাঠে উৎসব শুরু হয়েছে। তবে আষাঢ় মাসের শুরু থেকেই লাগাতার বৃষ্টি হাওয়াই অনেক কৃষক জমিতে বৃষ্টির পানিতেই আমন ধানের চারা রোপণ করছেন। বৃষ্টি তাদের আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে । আগে অন্য বছরগুলোতে আমন ধান এর চারা রোপণে সেচ দিয়েই চারা রোপণের জন্য চারা লাগানোর জমি প্রস্তুত করতে হতো।এতে কৃষকদের সেচ খরচ লাগতো কিন্তু এবার এখানকার অবস্থার ভিন্ন চিত্র কারণ আষাঢ় মাসের শুরু থেকেই এ পর্যন্ত লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। আমন ধানের চারা রোপনের জন্য কৃষকদের আর কোন সেচ খরচ লাগছে না। বৃষ্টির পানিতেই ধানের চারা রোপণ করছেন। উচু জমিতে কেউ পানি দিলেও অল্প সামান্য পানিতেই চারা রোপনের জমি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এতে সেচ খরচ খুব কম হচ্ছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় এ বছর আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬ শত ৬৫ হেক্টর জমি এবং এই পরিমাণ জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৭ শত ৬৫ মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগ আরো জানায়, উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে রোপা আমন চাষ সফল করতে ১৬০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের ৭৫০ জন কৃষকের প্রত্যেক জনকে সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে ৫ কেজি উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৪৯, ব্রি -৫১, ব্রি- ৫২ ব্রি-৭৫, ব্রি-৮৭, ব্রি-১০৩ ও বিনা -১৭,বিনা -২২ জাতের ধানের বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিগত মৌসুমের চেয়ে বেশি চাষাবাদ হবে, ফলনও বেশি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
সোমবার ( ২৮ জুলাই) উপজেলার সবচাইতে বেশি আমল ধানের চাষ করা হয় মুলাডুলি ইউনিয়ন, দাশুড়িয়া ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বিভিন্ন মাঠে ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টির পানি উপেক্ষা করে এলাকার কৃষকরা তাদের জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ জমির আইল কোদাল দিয়ে কোপাচ্ছেন। কোথাও কোথাও মাঠ সমান করার জন্য শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে মইয়ের কাজ। কোথাও আবার কৃষকরা নিজেই মই টেনে জমি সমান করছেন। আবার কোথাও আমন ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। কেউ আবার জমিতে জৈব সার দিচ্ছেন।
উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের কৃষক তোরাপ আলী বিশ্বাস বলেন, প্রতি বছরই এই সময়ে জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে রোপা আমন ধান চাষ করে থাকি। এই বছরেও ২ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি ধান -১০৩ জাতের রোপা আমন ধান রোপণ করেছি। আরো দুই বিঘা জমিতে মামুন স্বর্ণা( স্থানীয় নাম) আমন ধান লাগাবো। এবার আষাঢ়ের শুরু থেকেই প্রায়ই লাগাতার বৃষ্টি হওয়ায় সেচ বাদেই জমিতে ধান রোপণের জন্য উপযোগী করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী - বাঘা মহাসড়কের পাশে গোপালপুর গ্রামের মজিবর খাঁ ও মুনছুর খাঁ দুই সহোদর ভাই জানান, প্রতি বছরই আমরা আমন ধান আবাদ করি। এবার ৬ বিঘা জমিতে উচ্চ- ফলনশীল জাতের ১০৩ ধান রোপন করেছি।
উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের পতিরাজপুরের বেতবাড়িয়া এলাকার মৌসুমী সবজি ব্যবসায়ী ও কৃষক শিপন আলী জানান, বীজ তলায় ধানের চারা তৈরি হয়ে গেছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই দুই বিঘা জমিতে তিনি আমন ধানের চারা রোপন করবেন। সাথে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন,জমি চাষ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকদের মজুরি ও সেচের পানিসহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ধানের দাম কম। বর্তমানে শ্রমিকদের মজুরিও বেশি হয়েছে।
ঈশ্বরদীর আড়মবাড়িয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আলিম জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে আমন চাষে এবার কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়াও প্রতিনিয়ত আমন ধান যারা লাগাচ্ছে সেইসব কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো:
আব্দুল মমিন জানান, গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে আজ সোমবার (২৮ জুলাই ) বিকেল পর্যন্ত ১১০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের রোপা আমন ধানের চারা রোপন করা হয়েছে।
চলতি আমন মৌসুমে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সার ডিলাররা পর্যাপ্ত পরিমাণ কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী রাসায়নিক সার তাদের গুদামে আগাম মজুত রেখেছে। বিএডিসি তালিকাভুক্ত রাসায়নিক সারের ডিলারদের মাধ্যমেই কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি এবং এমওপি সার সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষকদের আমন চাষে রাসায়নিক সারের কোনো ধরনের ঘাটতি না হয় এজন্য বাজারে সারের অবাধ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য বাজার মনিটর করা হচ্ছে।