২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও গণপূর্ত অধিদপ্তরে তার নিয়োগকৃত দোসরদের কবল থেকে এখনো মুক্ত হয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
তেমনি একজন আজিমপুর গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, ঢাকা গণপূর্ত সার্কেল- ১ এর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বর্তমানে সিলেটের বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দায়িত্ব পাওয়া ইলিয়াস আহমেদ। তার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণিত অভিযোগ এবং স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের সকল কুকর্মের আজ্ঞাদাস হওয়া সত্বেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে তাকে ঢাকা গণপূর্ত সার্কেল ১ থেকে সিলেটের বিভাগীয় তত্ত্বাবধক প্রকৌশলীর দায়িত্বে বদলি করা হয়। এতে হতবাক গণপূর্ত অধিদপ্তরের সৎ ও দুর্নীতিহীন কর্মকর্তারা। অবাক বিস্ময়ের সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, এখনো যদি ইলিয়াস আহমেদের মত দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা বড় বড় পদে পদোন্নতি পেয়ে প্রকল্প পরিচালনা করেন, তাহলে জনগণের করের টাকা লুটপাট কখনোই বন্ধ হবে না।
ইতিপূর্বে গণপূর্তের বিভিন্ন বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট ও ক্যাসিনো কান্ডে আলোচিত দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার জিকে শামীম এর সাথে সম্পৃক্ত থেকে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। জি কে শামীমকে মাফিয়া ঠিকাদার হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ অবদান রেখেছেন ইলিয়াস আহমেদ। শুধুমাত্র আজিমপুর গণপূর্তেই নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে তিনি প্রায় ছয় বছর দায়িত্বে ছিলেন। এ সময়টাতে গণপূর্তের বড় বড় বাজেটের কাজগুলো কোটি কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে তিনি জি কে শামীমকে কে পাইয়ে দিয়েছেন। পিরোজপুর জেলার মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন আওয়ামী লীগের মহা দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের ভাই হিসেবে।
সে সময়টায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের সর্বোচ্চ প্রভাবশালী নির্বাহি প্রকৌশলী হিসেবে বিবেচিত হতেন প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদ। মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের ভাই হিসেবে অধিদপ্তরের প্রতিটি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রকৌশলী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বদলি তার ইচ্ছাতেই হতো। এভাবে বদলি বাণিজ্য করে প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদ হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
জিকে শামীম সম্পৃক্ততার বিষয়টি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আজিমপুর গণপূর্ত বিভাগের অধীনে পিলখানা উপ বিভাগে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবাকে বিপুল পরিমান নগদ টাকা এবং নিহত শিশুর ভাই গোলজারকে আজিমপুর গণপূর্ত বিভাগে পিয়নের চাকরি দিয়ে পার পেয়ে যান। এরপর তার বিরুদ্ধে জনৈক ঠিকাদার পল্টন দাস এর নিকট থেকে ঘুষ গ্রহনসহ আজিমপুরে সরকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণে ঠিকাদারের যোগসাজসে কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহনের বিনিময়ে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠে।
অন্যদিকে, তার আপন ভাইকে ঠিকাদারি পেশায় নিয়োগ করে বিভিন্নভাবে কাজ পাইয়ে দিয়ে কমিশন বাণিজ্য করারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
এভাবে অবৈধ পথে অর্জিত অর্থে তিনি ধানমন্ডিতে একটি অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট, বরিশালে নিজ এলাকায় কোটি টাকা ব্যয় করে একটি মসজিদ ছাড়াও বিদেশের মাটিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে একটি দোতলা বাড়ি করেছেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, তিনি রাজধানীর অভিজাত হোটেলে ঠিকাদারদের নিয়ে নিয়মিত মদ ও নারী নিয়ে মত্ত থাকেন।
এছাড়া আজিমপুর সরকারি কোয়ার্টার নির্মাণ কাজে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদ প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দুর্নীতিতে সমানভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। সেই ইলিয়াস কে শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতে প্রধান প্রকৌশলী তাকে ঢাকার বাইরে সিলেট বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে বদলি করেন।
আজিমপুরে পার্কিং সেড নির্মাণ নিয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে। এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তথ্য প্রমান সহ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তার ফেসবুকের সব সময় আওয়ামী লীগের পজিটিভ প্রচারসহ নানা ধরনের পোস্ট থাকতোই। পোস্ট দিয়ে সবাইকে জানান দিতেন উনি কত বড় আওয়ামী লীগার।
কিন্তু ৫ই আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে ইলিয়াস আহমেদ তার ফেসবুক থেকে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সকল ছবি সরিয়ে দেন। বিশাল অংকের টাকা নিয়ে মিশনে নামেন সকলকে ম্যানেজ করার। প্রধান প্রকৌশলীর অফিসে বড় অংকের টাকা দিয়ে তিনি রাতারাতি আওয়ামী লীগের খাতা থেকে নিজের নাম কাটানোর বন্দোবস্ত করেন এবং সফল হন।
বর্তমানে সিলেট বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব নিয়ে প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদ ঐ অঞ্চলের আওয়ামী ফ্যাসিস্টের মদদপুষ্ট ঠিকাদারদের মধ্যে কোটি কোটি টাকার কাজ বন্টন করতে শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, সিলেট থেকে এখনো তিনি গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে অধিদপ্তরের সকল কাজের নিয়ন্ত্রণ করছেন। কোন ঠিকাদার কোন কাজগুলো পাবে তার সিদ্ধান্তগুলো প্রধান প্রকৌশলীর কাছে আসে সিলেট থেকেই। এর ফলে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকার অধিকাংশই লুট তো হচ্ছেই, উপরন্তু সেই লুটের টাকায় শক্তি অর্জন করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এমনটাই জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক সৎ কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, এক মুহূর্ত দেরি না করে প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদকে আইনের আওতায় এনে অতিত ও বর্তমানে করা তার সকল দুর্নীতি ও অপকর্মের বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে ২৪ এর জুলাই শহীদদের আত্মদান সম্পূর্ণরূপে বৃথা যাবে।
তত্তাবোধক প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদের বিষয়ে জানতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তার কে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলও তিনি তা রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।