
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার হরিহরপাড়া ইউনিয়ন ভুমি অফিস যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এখানকার ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শামীমা আখতারের ঘুষ-দূর্নীতি ও দূর্ব্যবহারে অসহায় মানুষ। তার চাহিদা মতো টাকা না দিলে মাসের পর মাস ধরে হয়রানি বিড়ম্বনায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় সেবাপ্রার্থীদের। শামীমা আখতারের মদদে ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই এখন জমি খারিজের দালাল। এদের কেউ কেউ চাকরির পাশাপাশি জমি খারিজের দালালি করে অফিসে বসেই অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে বহিরাগতরা কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন। ফলে জমির প্রকৃত মালিকরা জমি খারিজ সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন করে আতঙ্কে ভুগছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, এই ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দালাল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে জমি খারিজ করলে দ্রুত খারিজ কার্য সম্পাদন হয়। তেমনি তাদেরকে এড়িয়ে চললে পদে পদে জমির মালিকদের দালাল নামের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রোষানলে পড়তে হয়। তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে নামজারি প্রস্তাব ভুলভাল দেয়া হয়। এছাড়াও মিসকেস ফাইলে প্রতিবেদন মাসের পর মাস আটকে রেখে ঘুষের টাকা আদায় করা হয়। আর তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে এক্ষেত্রেও ভুলভাল প্রতিবেদনও এসিল্যান্ড বরাবর দাখিল করা হয়। এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ বলে ভুক্তভোগি সূত্রে জানা গেছে।
তাঁরা আরো বলেন, নিজে খারিজ করতে গেলে বিভিন্ন ভুল ভাল ধরিয়ে দিয়ে জমি মালিকদের নার্ভাস করে দেয়া হয়। আর ভূমি অফিসের দালালদের সাথে কন্ট্রাক করলে অনায়াসেই জমি খারিজ হয়ে যায় এবং সকল হারাম হালাল হয়ে যায়। ভুক্তভোগীরা এও বলছেন, আগের চাইতে এখন আরো খোলামেলাভাবে বিপুল পরিমান অবৈধ টাকা কন্ট্রাক করে জমি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলী সম্পন্ন করা হচ্ছে। এখানকার ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শামীমা আখতারের ঘুষ-দুর্নীতি আর দূর্ব্যবহারে যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে, এই ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এড়িয়ে গেছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি সম্প্রতি ওই ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তার একটা জমি খারিজ করতে গিয়েছিলেন। ২২ শতাংশ জমি খারিজ খাজনার জন্য ২০ হাজার টাকা চেয়েছেন। অবশ্য ওই জমির খাজনা হালনাগাদ দেয়া রয়েছে। তার অফিস ও এসিল্যান্ড অফিস মিলে এতো টাকা চেয়েছেন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তার অফিস সহকারী মাহফুজ নামের একব্যক্তি। পরে তিনি খারিজ না করে চলে যায়। এছাড়াও তারা রাজশাহী সদরের বাসিন্দা বলে ঠিক সময়ে অফিসে আসেন না। এলেও সময় মতো অফিসে পাওয়া যায় না।
ওই অফিসে ভূমি সংক্রান্ত কাজে আসা আলী রেজা বলেন, জমির খারিজ কিংবা খসড়ার জন্য আসলে আগেই বলে দু-পাঁচ হাজার টাকা দাও। টাকা দিলে পরে কথা বলে। ১৪৪ ধারা মামলার রিপোর্টের জন্য আসলে টাকা ছাড়া রিপোর্ট করে না তহসিলদার। অফিস প্রধান ও অফিস সহকারী টাকা ছাড়া বিকল্প কিছু বুঝে না। কয়েক দিন আগেও আড়াই হাজার টাকার কাজ ৮ হাজার টাকা দিয়ে করিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তাদের হাতে ওই ইউনিয়নের মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। এঅবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভূমি সেবাপ্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এবিষয়ে ওই ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শামীমা আখতার বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা আর অফিস সহকারী মাহফুজের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি।
এব্যাপারে মোহনপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জোবায়দা সুলতানা বলেন, ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শামীমা আখতারের ঘুষ-দূর্নীতি ও দূর্ব্যবহার বিষয়ে তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এসিল্যান্ড।
তানোর প্রতিবেদক 


















