
সৈয়দপুর শহরে বর্ষা মানেই জলাবদ্ধতা। শ্রাবণের শুরুতেই এক ঘন্টার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন শহরবাসী। ১৬ জুলাই ১ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে শহরের মুন্সীপাড়া, নতুনবাবুপাড়া, পুরাতন বাবুপাড়া, বাঁশবাড়ী, মিস্ত্রিপাড়া, বাংগালিপুর নীজপাড়াসহ নিম্নাঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছেন। এসব এলাকার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষের ঘরবাড়ি ছিল ১/২ ফুট পানির নিচে। প্রতিবছরই সামন্য বৃষ্টিপাতেই শহরজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এরপরেও জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেই পৌর কর্তৃপক্ষের।
শহরবাসীর অভিযোগ, প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হলো নীলফামারীর সৈয়দপুর। কিন্তু খানাখন্দভরা সড়ক আর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিম্নমানের হওয়ায় ভোগান্তির শেষ নেই পৌর বাসীর। এসব নিয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়রসহ কজন কাউন্সিলদের অভিযোগ দিলে তারা কোনো কথারই কর্ণপাত করেন না। কাউন্সিল ও পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতাও পান না বানভাসি সহ ভুক্তভোগীরা।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে আছেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ নূর মোহাম্মদ স্ট্রিটের উভয় পাশের মানুষ, মুন্সীপাড়া, বাঁশবাড়ির সাদরা লেন এলাকাসহ বাংগালী পুর নীজ পাড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শত শত পরিবার। মাত্র ১ ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা। বৃষ্টির পানি নালা-নর্দমা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আউটলেট সুবিধা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে ড্রেনের পানি উপচে ঢুকে যাচ্ছে মানুষের ঘরে ঘরে।
শহরের শহীদ ডাক্তার জিকরুল হক সড়কের ব্যবসায়িরা বলেন, এই সড়কের ড্রেন দুটি একেবারেই নিম্নমানের। তাছাড়া নিয়মিত পরিস্কার না করার ফলে ১৬ জুলাই ১ ঘন্টা বৃষ্টিতেই শহরের ব্যস্ততম এই সড়কটির সাথে প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে বৃষ্টির পানি। যতক্ষণ পর্যন্ত পানি বেরিয়ে না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক ব্যবসায়িকে তাদের ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ করে রাখতে হবে।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের পান দোকানদার মনসুর আলী বলেন, পুরো বর্ষাকাল এখানকার হাজারো পরিবারকে জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয়। জলাবদ্ধতা যেন আমাদের বিধিলিপিতে পরিণত হয়েছে। সাবেক মেয়র ও বর্তমানে প্রশাসকের কাছে আমরা একটি মাস্টার ড্রেনের জন্য বহুবার আবেদন করে ধরনা দিয়েছি। তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেননি। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি।
এরই মধ্যে শহরের ১ নম্বর রেলগেট থেকে হাতিখানা কবরস্থান যাওয়ার রাস্তাটি ওই এলাকার ফল ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা নিজ অর্থে সড়কটি উঁচু করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। এক ঘন্টার ভারী বর্ষনে সেটির মাটি ও খোয়া উঠে গেছে।
ফল ব্যবসায়ী দুলাল বলেন, আমাদের সমস্যার কথা পৌর কর্তৃপক্ষকে বলে-বলে বিরক্ত হয়ে গেছি। তাই নিজেরাই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পৌর কাউন্সিলর বলেন, সৈয়দপুর পৌর শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের নালাগুলোতে পলিথিনসহ নানা কিছু আটকে থাকে, ফলে পানি তাৎক্ষণিক নামে না। এ ছাড়া পৌর এলাকার রেলওয়ে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার নালা-নর্দমা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব হয়না। আবার ওইসব এলাকায় বসবাসকারী গৃহস্থালি বর্জ্য নালা-নর্দমায় ফেলছেন।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের নিজস্ব টিম আছে, কিন্তু মাস্টার ড্রেন নির্মাণ বা সংস্কার করতে বাজেট ঘাটতি থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক কিছুই সম্ভব হয়নি। তবে এবারের ১৫ জুলাই শহর উন্নয়নে প্রায় ১২৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। ২/৩ টি রাস্তার সংস্কার কাজ চলমান। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরবাসীর ভোগান্তির নিরসন হবে বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহিন আকতার সাহিন বলেন, ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সৈয়দপুর মহিলা লীগের সভাপতি রাফিকা আকতার জাহান বেবি মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন প্রায় ৪ বছর। এই সময় তিনি যদি শহরের প্রায় ৩টি সড়কও সংস্কারও করতেন, তাহলে শহরবাসীর কাছে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারতেন। এছাড়া ৫ আগষ্টের পর সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম সিদ্দিকিকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়ায় তিনি ২/১ টি সড়ক সংস্কার ও ২/৩ টি ছোট ড্রেন সংস্কার করলেও পৌর বাসীর ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না।
পৌর প্রশাকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন শহর উন্নয়নে ১৫ জুলাই প্রায় ১২৩ কোটি টাকার বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পৌর বাসী আর ভোগান্তির শিকার হবেন না।
জহুল ইসলাম সৈয়দপুর, থেকে 


















