প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ১১, ২০২৫, ৩:২০ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১৩, ২০২৫, ৫:১৬ পি.এম
সৈয়দপুরে আবাসন প্রকল্পের ৮০ ভাগ ঘরবাড়ি বিক্রির অভিযোগ

নীলফামারীর সৈয়দপুরে ভুমিহীন মানুষের জন্য ২০০৪ সালে ’উত্তরা আবাসন প্রকল্প’ গড়ে তোলা হয়। ওইসময় আবাসন প্রকল্পে ১ হাজার ৫৮৯ টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়।। শর্ত দেয়া হয় বরাদ্দপ্রাপ্তদের অবশ্যই ভূমিহীন হতে হবে এবং বরাদ্দ দেওয়া বাড়ি বিক্রি ও কেউকে হস্তান্তর করতে পারবেন না। কিন্তু ওই শর্ত উপেক্ষা করে অনেকেই আবাসন প্রকল্পের ঘর বাড়ি অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ভাড়া দিয়েছেন এবং আবার অনেকেই ঘরবাড়ি পেয়ে বছরের পর বছর তালা দিয়ে রেখেছেন।
খোজ নিয়ে জানা যায় ইতিমধ্যে প্রায় ১ হাজার বাড়ি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।যাঁরা বাড়ি কিনেছেন, তাঁদের অনেকে মাদক কারবারি, দেহব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কাজে জড়িত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাঁরা সচ্ছল ও যাঁদের জমি আছে, তাঁদের নামে ২ রুম বিশিষ্ট ঘরবাড় বরাদ্দ দেওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে উপজেলার বোতলাগাড়ী মৌজায় ঢেলাপীর নামক এলাকায় তৎকালীন সরকার উত্তরা আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলে। সেই সময় সেখানে এক হাজার বাড়ি নির্মাণ করা হয়। এছাড়া বিগত শেখ হাসিনা সরকার ২০২৪ সালে সেখানে আরও ৯৮ টি ঘরবাড়ি তৈরি করে। সব মিলিয়ে সেখানে ১ হাজার ৫৮৯ টি বাড়ি রয়েছে। ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করার লক্ষে সেখানে দুই শতক জমিসহ একটি ২ রুম বিশিষ্ট ঘরবাড়ির মালিকানা দেওয়া হয় বাসিন্দাদের। শর্ত অনুযায়ী বরাদ্দপ্রাপ্তদের অবশ্যই ভূমিহীন হতে হবে এবং বরাদ্দ দেওয়া বাড়ি বিক্রি ও হস্তান্তর করতে পারবেন না। কিন্তু এই শর্ত ভেঙে একের পর এক ওই বাড়িগুলো বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিন আবাসন প্রকল্পের ৩৪/২ নম্বর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় আকবর হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, বাড়িটি তাঁর নামে বরাদ্দ নয়। এর মূল মালিক কলিম উদ্দিন। কলিমের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বাড়িটি কিনেছেন তিনি। এভাবে রশিদুল হকের ২/৭ নম্বর বাড়িটি কিনে নিয়েছেন আয়াস আলী, ২/৬ নম্বর বাড়িটি মমেনা বেগমের কাছ থেকে কিনে আশরাফুল ইসলাম গোডাউন বানিয়েছেন। আর ২/৯ নম্বর বাড়িটি জাহানারা বেগম বিক্রি করেছেন মাঝিয়া বেগমের কাছে।
বৈধভাবে বসবাসকারীরা জানান, যাঁরা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই নিজ নিজ বাড়ি রয়েছে। কয়েকজনের এমনকি চারতলা বাড়িও আছে। তাই আশ্রয়ণের ২৬টির মতো বাড়িতে তালা ঝুলছে। অনেকে একেকটি বাড়ি ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। যাঁরা বাড়ি কিনেছেন, তাঁদের অনেকে নানা অসামাজিক কাজে জড়িত রয়েছেন। তদন্ত করে অবৈধ ক্রেতাদের উচ্ছেদের দাবি জানান তাঁরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রকল্পের এক বাসিন্দা বলেন, বরাদ্দপ্রাপ্তদের সিংহভাগই সরকারের দেয়া বাড়ি বিক্রি করেছেন অন্যের কাছে। আমার বাড়ির অপর প্রান্তের বাড়িটি যাঁর নামে বরাদ্দ ছিল, তিনি সেটি অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। যিনি কিনেছেন তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িত। গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদকের আখড়া। এতে এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, মো. সেলিম হোসেন নামের একজনকে ৬৯/৭ নম্বর বাসাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেলিম এবং তাঁর এক ছেলে সরকারি চাকরি করেন। তাই আবাসনের বাড়িতে তাঁরা থাকেন না। দীর্ঘদিন ধরে সেটি তালাবদ্ধ রয়েছে।
উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ আমিন হোসেন দিপু বলেন, জরিপে দেখা গেছে এ আবাসনে ২০০৪ সালে বরাদ্দপ্রাপ্তরা শর্ত ভেঙে প্রায় ১ হাজার টির মতো বাড়ি অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এছাড়া ২০২৪ সালে নতুন করে তৈরি ৯৮ টি বাড়িতে বরাদ্দ না নিয়েই জোর করে বসবাস করছেন অনেকে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এখানাকার ৭৫ ভাগেরও বেশি বাড়িই অবৈধ দখলে চলে গেছে। তিনি বলেন গত কয়েকদিন আগে বাড়িগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে গেলে ওই বাসিন্দারা বাধা প্রধান করে, এমনকি আমাকে সেখানে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রক্ষা পাই।
এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, ইতিমধ্যে ওই মৌজার সহকারী ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে শর্ত ভেঙে আবাসনের বাড়ি বিক্রির বিষয়টি জেনেছি। আবাসনের বাড়ি দখলমুক্ত করতে খুব শিগগিরি সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সরকারের দেয়া আবাসন প্রকল্পের ঘরবাড়ি বিক্রির সত্যতা মিললে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Copyright © 2025 দৈনিক বার্তা. All rights reserved.