ঢাকা ০৯:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত Logo তানোরে নতুন ধানের জাত ব্রি ধান ১০৩ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত Logo প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে মৌন মিছিল ও স্মারকলিপি হস্তান্তর Logo সৈয়দপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদের মতবিনিময় সভা Logo মোবাইল-ই কাল হলো নবম শ্রেণীর ছাত্রী জ্যামির, শিক্ষকের শাসন -অতঃপর বিষপানের মৃত্যু Logo রাজধানীর বাড্ডা ও শাহজাদপুরে ২ বাসে আগুন Logo রাজধানীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা Logo মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা

খাবারের জন্য হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুরা ইসরায়েলি হামলায় নিহত

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:১৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
  • ১৭ Time View

খাদ্য সংকটে অপুষ্টিসহ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়েছে শিশুরা

গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি ক্লিনিকের সামনে পুষ্টিকর সম্পূরক খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আট শিশু ও দুই নারীসহ কমপক্ষে ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে একটি হাসপাতাল জানিয়েছে।

দেইর আল-বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের ভিডিওতে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন শিশু এবং অন্যান্যদের মরদেহ মেঝেতে পড়ে আছে এবং চিকিৎসকরা অন্য কয়েকজনের ক্ষতস্থানের চিকিৎসা করছেন।

এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে ক্লিনিকটি পরিচালনাকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাহায্য সংস্থা প্রজেক্ট হোপ।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী “হামাস সন্ত্রাসী”-দের ওপর আঘাত হানার দাবি করেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে।বৃহস্পতিবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬৬ জনের মধ্যে রয়েছেন এই শিশুরাও। যদিও যুদ্ধবিরতী চুক্তি নিয়ে ইসরায়েল এবং হামাস আলোচনাও চালাচ্ছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতী নিয়ে কাতার ও মিশরের সাথে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী হলেও তারা এখনো কোনো অগ্রগতির কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

প্রজেক্ট হোপ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে দেইর আল-বালাহ এলাকায় অবস্থিত তাদের আলতায়ারা স্বাস্থ্য ক্লিনিকের সামনে এই হামলা চালানো হয়। অনেকেই অপুষ্টি, নানা ধরনের সংক্রমণ, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং আরও অনেক সমস্যার চিকিৎসার জন্য বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ইউসুফ আল-আইদি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, “হঠাৎ আমরা একটি ড্রোনের শব্দ শুনতে পেলাম এবং তারপর বিস্ফোরণ ঘটল।”

“আমাদের পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠল এবং চারপাশের সবকিছু রক্তাক্ত আর আর্ত-চিৎকারে পরিণত হলো।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি গ্রাফিক ফুটেজ যাচাই করেছে বিবিসি, যেখানে হামলার পরের ঘটনা দেখা গেছে–– প্রাপ্তবয়স্ক ও ছোট শিশুরা রাস্তায় পড়ে আছে, কয়েকজন গুরুতর আহত এবং অন্যরা নড়াচড়া করছে না।

নিহতদের জন্য আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়

জানাজার নামাজ পড়ার আগে পাশের আল-আকসা হাসপাতালের মর্গে শিশুদের মৃতদেহ সাদা কাফন ও বডি ব্যাগে মুড়িয়ে কাঁদছিলেন নিহতদের আত্মীয়রা।

একজন নারী বিবিসিকে জানান, নিহতদের মধ্যে তার গর্ভবতী ভাগ্নী মানাল ও তার মেয়ে ফাতিমাও ছিল এবং মানালের ছেলে ছিলেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।

“ঘটনার সময় তিনি বাচ্চাদের জন্য সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন,” ইন্তিসার বলেন।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক নারী বললেন, “কোন পাপের জন্য তাদের হত্যা করা হলো?”

“আমরা পুরো বিশ্বের কান এবং চোখের সামনে মারা যাচ্ছি। পুরো বিশ্ব গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি দেখছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে যদি মানুষ নিহত নাও হয়, সাহায্য আনতে গিয়ে তারা মারা যায়।”

সাহায্য গোষ্ঠীর ক্লিনিকগুলোকে গাজার বাসিন্দাদের জন্য আশ্রয়স্থল–– বলছেন প্রজেক্ট হোপের সভাপতি এবং সিইও রাবিহ তোরবে।

“এসব ক্লিনিকে মানুষ তাদের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আসে, নারী গর্ভাবস্থা ও প্রসবোত্তর যত্ন নেয়, অপুষ্টির জন্য চিকিৎসাসহ নানা স্বাস্থ্য সহায়হা পায় মানুষ,” তিনি বলেন।

“এরপরও আজ সকালে, সহায়তা কেন্দ্রের দরজা খোলার অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরীহ পরিবারগুলোকে নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল,” তিনি যোগ করেন, “ভয়ঙ্কর এবং হৃদয়বিদারক ঘটনা। পরিবারগুলোর জন্য কেমন লাগছে তা ঠিকভাবে বলতে পারবো না।”

“এটি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এমন ঘটনা স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দেয় যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও গাজায় কেউ এবং কোনো এলাকা নিরাপদ নয়। এটি চলতে পারে না।”

ইউনিসেফের প্রধান ক্যাথেরিন রাসেল বলেছেন, “জীবন রক্ষার জন্য সাহায্য পেতে চেষ্টা করা পরিবারগুলোকে হত্যা অযৌক্তিক।”

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ জানিয়েছে, তারা হামাসের সামরিক শাখার অভিজাত নুখবা বাহিনীর একজন সদস্যকে আঘাত করেছে যে ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলায় অংশ নিয়েছিল।

ওই এলাকার বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তির খবর জানে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী। তারা বলছে, “ঘটনাটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং জড়িত না থাকা ব্যক্তিদের যেকোনো ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে আইডিএফ।”

জিএইচএফ এর সহায়তা আনতে গিয়েও মারা যাচ্ছেন অনেকে

অন্যদিকে, হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ গাজার উপকূলীয় আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছে।

এর একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, বালি ও ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়া তিনটি ছোট শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।

বুধবার রাতে, একজন ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি কর্মকর্তা ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে এক বা দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মার্কিন সফরের সময় দেওয়া এক বক্তব্যে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, যদি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটি চুক্তি হয়, তাহলে সেই সময় ব্যবহার করে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির প্রস্তাব দেবে ইসরায়েল। যার জন্য হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে।

বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছেন যে, “এই যুদ্ধবিরতির শুরুতে আমরা যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির জন্য, অর্থাৎ একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা শুরু করব।”

এক্ষেত্রে অবশ্য হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং গাজাকে সামরিকীকরণমুক্ত করার শর্ত দিয়েছিল ইসরায়েল।

নেতানিয়াহু বলেন, “যদি আলোচনার মাধ্যমে এটি অর্জন করা যায় তাহলেই ভালো। তবে ৬০ দিন পর আলোচনার মাধ্যমে যদি এটি না হয়, তাহলে আমরা অন্য উপায়ে এটি অর্জন করব, আমাদের বীর সেনাবাহিনীর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে।”

ডানপন্থি মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজ ম্যাক্সকে নেতানিয়াহু বলেন, হামাস এখনো ৫০ জন জিম্মিকে ধরে রেখেছে, “যার মধ্যে ২০ জন জীবিত এবং প্রায় ৩০ জন আর জীবিত নেই”।

“এটি তাদের জন্য নরক হয়ে গেছে,” নিউজম্যাক্সকে তিনি বলেন।

এর আগে, হামাসের বিবৃতিতে ইসরায়েলি “একগুঁয়েমি”কে দায়ী করা হয়।

দলটি বলেছিল যে তারা ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হওয়ার ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখিয়েছে, তবে তারা একটি “ব্যাপক” চুক্তি চাইছে যা ইসরায়েলি আক্রমণের অবসান ঘটাবে।

গত ২০ মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের হামলায় গাজার বেশিরভাগ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে

এদিকে, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা জানিয়েছে ইইউ। যার মধ্যে রয়েছে গাজা উপত্যকায় সহায়তা পাঠাতে আরও ক্রসিং খোলা, অবকাঠামো মেরামত এবং সাহায্য কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়গুলো।

ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস বলেছেন, “আমরা ইসরায়েলের ওপর ভরসা রাখছি যে তারা চুক্তিতে রাজি হওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবে।”

এদিকে, চার মাসের মধ্যে গাজায় প্রথম জ্বালানি চালান পৌঁছানোর খবর জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে এও সতর্ক করে যে, ৭৫ হাজার লিটার জ্বালানি একদিনের চাহিদার চেয়েও কম।

একজন মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, অবিলম্বে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ না পৌঁছালে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা বন্ধ থাকবে।

২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় একটি অভিযান শুরু করে।

ইসরালের হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।

আর হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, তখন থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৭৬২ জন নিহত হয়েছেন।

গাজার বেশিরভাগ জনসংখ্যাও একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

৯০ শতাংশের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে; স্বাস্থ্যসেবা, পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে; এছাড়া খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের ঘাটতি রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সৈয়দপুরে আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস পালিত

খাবারের জন্য হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুরা ইসরায়েলি হামলায় নিহত

Update Time : ১১:১৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি ক্লিনিকের সামনে পুষ্টিকর সম্পূরক খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আট শিশু ও দুই নারীসহ কমপক্ষে ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে একটি হাসপাতাল জানিয়েছে।

দেইর আল-বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের ভিডিওতে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন শিশু এবং অন্যান্যদের মরদেহ মেঝেতে পড়ে আছে এবং চিকিৎসকরা অন্য কয়েকজনের ক্ষতস্থানের চিকিৎসা করছেন।

এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে ক্লিনিকটি পরিচালনাকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাহায্য সংস্থা প্রজেক্ট হোপ।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী “হামাস সন্ত্রাসী”-দের ওপর আঘাত হানার দাবি করেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে।বৃহস্পতিবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬৬ জনের মধ্যে রয়েছেন এই শিশুরাও। যদিও যুদ্ধবিরতী চুক্তি নিয়ে ইসরায়েল এবং হামাস আলোচনাও চালাচ্ছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতী নিয়ে কাতার ও মিশরের সাথে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী হলেও তারা এখনো কোনো অগ্রগতির কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

প্রজেক্ট হোপ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে দেইর আল-বালাহ এলাকায় অবস্থিত তাদের আলতায়ারা স্বাস্থ্য ক্লিনিকের সামনে এই হামলা চালানো হয়। অনেকেই অপুষ্টি, নানা ধরনের সংক্রমণ, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং আরও অনেক সমস্যার চিকিৎসার জন্য বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ইউসুফ আল-আইদি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, “হঠাৎ আমরা একটি ড্রোনের শব্দ শুনতে পেলাম এবং তারপর বিস্ফোরণ ঘটল।”

“আমাদের পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠল এবং চারপাশের সবকিছু রক্তাক্ত আর আর্ত-চিৎকারে পরিণত হলো।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি গ্রাফিক ফুটেজ যাচাই করেছে বিবিসি, যেখানে হামলার পরের ঘটনা দেখা গেছে–– প্রাপ্তবয়স্ক ও ছোট শিশুরা রাস্তায় পড়ে আছে, কয়েকজন গুরুতর আহত এবং অন্যরা নড়াচড়া করছে না।

নিহতদের জন্য আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়

জানাজার নামাজ পড়ার আগে পাশের আল-আকসা হাসপাতালের মর্গে শিশুদের মৃতদেহ সাদা কাফন ও বডি ব্যাগে মুড়িয়ে কাঁদছিলেন নিহতদের আত্মীয়রা।

একজন নারী বিবিসিকে জানান, নিহতদের মধ্যে তার গর্ভবতী ভাগ্নী মানাল ও তার মেয়ে ফাতিমাও ছিল এবং মানালের ছেলে ছিলেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।

“ঘটনার সময় তিনি বাচ্চাদের জন্য সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন,” ইন্তিসার বলেন।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক নারী বললেন, “কোন পাপের জন্য তাদের হত্যা করা হলো?”

“আমরা পুরো বিশ্বের কান এবং চোখের সামনে মারা যাচ্ছি। পুরো বিশ্ব গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি দেখছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে যদি মানুষ নিহত নাও হয়, সাহায্য আনতে গিয়ে তারা মারা যায়।”

সাহায্য গোষ্ঠীর ক্লিনিকগুলোকে গাজার বাসিন্দাদের জন্য আশ্রয়স্থল–– বলছেন প্রজেক্ট হোপের সভাপতি এবং সিইও রাবিহ তোরবে।

“এসব ক্লিনিকে মানুষ তাদের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আসে, নারী গর্ভাবস্থা ও প্রসবোত্তর যত্ন নেয়, অপুষ্টির জন্য চিকিৎসাসহ নানা স্বাস্থ্য সহায়হা পায় মানুষ,” তিনি বলেন।

“এরপরও আজ সকালে, সহায়তা কেন্দ্রের দরজা খোলার অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরীহ পরিবারগুলোকে নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল,” তিনি যোগ করেন, “ভয়ঙ্কর এবং হৃদয়বিদারক ঘটনা। পরিবারগুলোর জন্য কেমন লাগছে তা ঠিকভাবে বলতে পারবো না।”

“এটি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এমন ঘটনা স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দেয় যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও গাজায় কেউ এবং কোনো এলাকা নিরাপদ নয়। এটি চলতে পারে না।”

ইউনিসেফের প্রধান ক্যাথেরিন রাসেল বলেছেন, “জীবন রক্ষার জন্য সাহায্য পেতে চেষ্টা করা পরিবারগুলোকে হত্যা অযৌক্তিক।”

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ জানিয়েছে, তারা হামাসের সামরিক শাখার অভিজাত নুখবা বাহিনীর একজন সদস্যকে আঘাত করেছে যে ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলায় অংশ নিয়েছিল।

ওই এলাকার বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তির খবর জানে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী। তারা বলছে, “ঘটনাটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং জড়িত না থাকা ব্যক্তিদের যেকোনো ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে আইডিএফ।”

জিএইচএফ এর সহায়তা আনতে গিয়েও মারা যাচ্ছেন অনেকে

অন্যদিকে, হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ গাজার উপকূলীয় আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছে।

এর একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, বালি ও ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়া তিনটি ছোট শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।

বুধবার রাতে, একজন ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি কর্মকর্তা ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে এক বা দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মার্কিন সফরের সময় দেওয়া এক বক্তব্যে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, যদি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটি চুক্তি হয়, তাহলে সেই সময় ব্যবহার করে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির প্রস্তাব দেবে ইসরায়েল। যার জন্য হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে।

বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছেন যে, “এই যুদ্ধবিরতির শুরুতে আমরা যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির জন্য, অর্থাৎ একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা শুরু করব।”

এক্ষেত্রে অবশ্য হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং গাজাকে সামরিকীকরণমুক্ত করার শর্ত দিয়েছিল ইসরায়েল।

নেতানিয়াহু বলেন, “যদি আলোচনার মাধ্যমে এটি অর্জন করা যায় তাহলেই ভালো। তবে ৬০ দিন পর আলোচনার মাধ্যমে যদি এটি না হয়, তাহলে আমরা অন্য উপায়ে এটি অর্জন করব, আমাদের বীর সেনাবাহিনীর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে।”

ডানপন্থি মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজ ম্যাক্সকে নেতানিয়াহু বলেন, হামাস এখনো ৫০ জন জিম্মিকে ধরে রেখেছে, “যার মধ্যে ২০ জন জীবিত এবং প্রায় ৩০ জন আর জীবিত নেই”।

“এটি তাদের জন্য নরক হয়ে গেছে,” নিউজম্যাক্সকে তিনি বলেন।

এর আগে, হামাসের বিবৃতিতে ইসরায়েলি “একগুঁয়েমি”কে দায়ী করা হয়।

দলটি বলেছিল যে তারা ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হওয়ার ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখিয়েছে, তবে তারা একটি “ব্যাপক” চুক্তি চাইছে যা ইসরায়েলি আক্রমণের অবসান ঘটাবে।

গত ২০ মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের হামলায় গাজার বেশিরভাগ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে

এদিকে, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা জানিয়েছে ইইউ। যার মধ্যে রয়েছে গাজা উপত্যকায় সহায়তা পাঠাতে আরও ক্রসিং খোলা, অবকাঠামো মেরামত এবং সাহায্য কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়গুলো।

ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস বলেছেন, “আমরা ইসরায়েলের ওপর ভরসা রাখছি যে তারা চুক্তিতে রাজি হওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবে।”

এদিকে, চার মাসের মধ্যে গাজায় প্রথম জ্বালানি চালান পৌঁছানোর খবর জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে এও সতর্ক করে যে, ৭৫ হাজার লিটার জ্বালানি একদিনের চাহিদার চেয়েও কম।

একজন মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, অবিলম্বে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ না পৌঁছালে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা বন্ধ থাকবে।

২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় একটি অভিযান শুরু করে।

ইসরালের হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।

আর হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, তখন থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৭৬২ জন নিহত হয়েছেন।

গাজার বেশিরভাগ জনসংখ্যাও একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

৯০ শতাংশের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে; স্বাস্থ্যসেবা, পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে; এছাড়া খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের ঘাটতি রয়েছে।