
নীলফামারীর সৈয়দপুরে দুই নং রেলগেট থেকে রেলওয়ে কারখানা পর্যন্ত ৩ টি লুপলান আছে। প্রতিটি লুপলাইনের দৈর্ঘ্য দুই কিলোমিটার। লুপলাইনগুলোর বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের পাতের নিচের স্লিপার নেই। এমনকি কিছু স্থান থেকে রেললাইনের পাতও গায়েব। এ রেলপথে প্রায় দুই হাজার স্লিপার নেই। যার মুল্য প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বলে জানা যায়।
রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, লুপলাইনটি অনেক পুরোনো। তাই কিছু স্লিপার ভেঙে গেছে। বাকিগুলো দুর্বৃত্তরা চুরি করে নিয়ে গেছে।তবে স্থানীয় লোকজন বলছে, রেলওয়ের ওই বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহযোগিতায় স্লিপারগুলো চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ অবস্থায় এসব পথে রেলওয়ে কারখানায় মেরামতে আসা রেলকোচ প্রায় সময়ে লাইনচ্যুত হচ্ছে। তাই কোচগুলো ঝুঁকি নিয়ে কারখানায় নিয়ে যেতে হয় বলে জানিয়েছেন চালকেরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ১০, ১১ ও ১২ নং গেটের সামনে, রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকাসহ প্রায় অর্ধ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে রেললাইনে শতাধিক স্লিপার নেই। এসব জায়গার খানিক পরপর স্লিপার উধাও।
সৈয়দপুর রেলওয়ের কারখানার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুরে ৫ টি লুপলাইন রয়েছে। এর মধ্যে মালবাহী ট্রেন পরিবহনের জন্য দুটি রেলওয়ে স্টেশনের অধীন। অপর ৩ টি লুপলাইন দিয়ে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মেরামতের জন্য রেলওয়ে কোচ আনা নেওয়া করা হয়। তাই এ লুপলাইন তিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটার রেলপথে রেললাইনের পাতের নিচে ১ হাজার ৪০০ কাঠ, লোহা বা সিমেন্টের স্লিপার থাকে। প্রতিটি স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত চারটি করে ক্লিপ দিয়ে লাগানো হয়। সেই হিসাবে এসব রেলপথে ৪ হাজার ৮০০ স্লিপার থাকার কথা। এর মধ্যে দুই হাজার স্লিপার নেই বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে কারখানার প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি স্লিপারের দাম ৮ হাজার টাকা হিসাবে চুরি যাওয়া স্লিপারগুলোর দাম প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। স্লিপার না থাকায় ওই পথের রেললাইন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এতে মেরামতে আসা কোচগুলো প্রায় সময় লাইনচ্যুত হয়।
রেলওয়ে কারখানা সংলগ্ন ইসলামবাগ বড় মসজিদ এলাকার ফারুক আহম্মেদ বলেন, দিনে দুপুরেই এই রেললাইন থেকে স্লিপারগুলো খুলে নিয়ে যায় ওই এলাকার দুই লোহা চোর। এসব বিষয়ে অবগত রয়েছেন রেলওয়ের লোকজন কিন্তু তারা দেখেও না দেখার ভান করেন।
রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান বলেন, লুপলাইন থেকে এতগুলো স্লিপার উধাও। অথচ এ অবস্থাতেই এ পথে বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে মেরামত আসা কোচগুলো রেলওয়ে কারখানায় আনা-নেওয়া করা হয়। এভাবে রেললাইন থেকে স্লিপার উধাও হওয়াটা সত্যিই উদ্বেগের। এর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের দায়ি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ের কারখানার প্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (ইনচার্জ) মোরসালিন রহমান বলেন, এ লুপলাইনগুলোর স্লিপার অনেক পুরাতন এবং অধিকাংশই কাঠের। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় কোচ চলাচলের কারণে অনেক স্লিপার ভেঙে নষ্ট হয়েছে। কিছু চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ইতিমধ্যে রেলওয়ে স্টেশন অংশে লুপলাইনের সংস্কার করে নতুন স্লিপার লাগানো হয়েছে। স্লিপার চুরির বিষয়ে স্থানীয় রেলওয়ে থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি এ কর্মস্থলে নতুন। তাই অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি সম্পর্কে খোজ-খবর নেওয়ার কথা জানান তিনি।
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উন নবী বলেন, স্লিপার চুরির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি লিখিত অভিযোগ পাই তবে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।