শুক্রবার মসজিদে জোহরের চার রাকাতের পরিবর্তে কাতারবদ্ধ হয়ে দুই রাকাতের যে ফরজ নামাজ আদায় করা হয়, ইসলামের পরিভাষায় সেটিই সালাতুল জুমা বা জুমার নামাজ। ‘জুমা’ শব্দের অর্থ এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা কাতারবদ্ধ হওয়া। জুমা মুসলিমদের সমাবেশের দিন। এই দিনকে ‘ইয়াওমুল জুমাআ' বলা হয়। আল্লাহ তাআলা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও সমস্ত জগৎকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয়দিনের শেষ দিন ছিল জুমার দিন। যে দিনগুলোতে সূৰ্য উঠে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হল জুমার দিন।
জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে একটি সুরাই নাজিল করেছেন। সুরাটিতে জুমার দিনের ইবাদত সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।' (সুরা জুমুআ : আয়াত ৯)
জুমার নামাজের আজান দেয়ার পর সব বৈষয়িক কাজ স্থগিত রেখে নামাজ আদায় করার জন্য আল্লাহ সবাইকে মসজিদে কাতারবন্দী হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। এর পরের আয়াতেই বলা হয়েছে, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা বাইরে ছড়িয়ে পড়বে ও আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে এবং আল্লাহকে বেশি করে ডাকবে; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)। অর্থাৎ আল্লাহর হক আদায় করার মাধ্যমে আখিরাতের সম্পদ অর্জন করার পর আবার দুনিয়ার সম্পদ তথা স্বাভাবিক রুটিরুজির অন্বেষণে ছড়িয়ে পড়তে বলা হচ্ছে।
আয়াতে فَاسْعَوْا শব্দের অর্থ হলো- দৌড়ানো এবং অপর অর্থ কোনো কাজ গুরুত্ব সহকারে করা। এখানে এই অর্থ উদ্দেশ্য। কারণ, নামাজের জন্যে দৌড়ে আসতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, 'প্রশান্তি ও গাম্ভীৰ্য সহকারে নামাজের জন্যে গমন কর।' (বুখারি, মুসলিম)
তবে আয়াতের উদ্দেশ্য হলো- দেরি না করে গুরুত্বসহকারে দ্রুত সময়ের মধ্যে জুমার নামাজে উপস্থিত হওয়া। জুমার দিনে জুমার আজান দেওয়া হলে আল্লাহর জিকিরের দিকে গুরুত্বসহকারে যাও। অর্থাৎ নামাজ ও খুতবার জন্য মসজিদে যেতে যত্নবান হও। যে ব্যক্তি দৌড় দেয়, সে যেমন অন্য কোন কাজের প্রতি মনোযোগ না দেয়, তোমরাও তেমনি আজানের পর নামাজ ও খুতবা ছাড়া অন্য কাজের দিকে মনোযোগ দিও না।
দ্রুত জুমার নামাজে যাওয়ার ফজিলত
এখানে ‘জিকির’ বলে জুমার নামাজ এবং এই নামাজের অন্যতম শর্ত খুতবাও বোঝানো হয়েছে। হাদিসে জুমার দিনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে হাজির হওয়ার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'যে ব্যক্তি জুমার দিনে জানাবত তথা অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার মতো গোসল করবে, এরপর (প্রথম সময়ে) মসজিদে হাজির হবে সে যেন একটি উট কোরবানি করলো। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময়ে মসজিদে গেল সে যেন একটি গরু কোরবানি করলো। যে তৃতীয় সময়ে গেল সে যেন শিংওয়ালা ছাগল কোরবানি করলো। যে চতুর্থ সময়ে গেল সে যেন একটি মুরগী উৎসর্গ করলো। যে পঞ্চম সময়ে গেল সে যেন ডিম উৎসর্গ করলো। এরপর যখন ইমাম বের হয়ে যায় তখন ফেরেশতারা (লেখা বন্ধ করে) ইমামের কাছে হাজির হয়ে জিকির (খুতবা) শুনতে থাকে।' (বুখারি)