ঢাকা ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা Logo মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা Logo দুর্গাপুরে ‎রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন  Logo শীতের গন্ধ, তাপমাত্রা কমছে প্রতিদিন দুই ডিগ্রি ঈশ্বরদীতে দোকানে উঠছে শীতের সোয়েটার-জ্যাকেট, কম্বল Logo পদ্মার চরজুড়ে চলছে ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ Logo নীলফামারীতে চার দফা দাবী বাস্তবায়নে বিসিএস প্রভাষক পরিষদের মানবন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন Logo বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায়  ছাত্রলীগ নেতা আটক   Logo দেশের চলমান সব সংকট নাটকের অংশ, মানুষ ভোট দিতে চায়: মির্জা ফখরুল Logo ধেয়ে আসছে মৌসুমের প্রথম কুয়াশা বেল্ট Logo ১৩ নভেম্বর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরু

নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না

ঢাকা: দেশে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে কি না–– এ নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলে নতুন করে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়েই নতুন বিতর্কে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

নির্বাচনের পিছু ছাড়ছে না ‘সংশয়, সন্দেহ, অনিশ্চয়তা’। এখন আবার ওই শব্দগুলোই নতুন করে আলোচনায় আসছে নির্বাচন প্রশ্নে।

যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে গত ১২ই জুন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রয়ারিতে নির্বাচন প্রশ্নে যৌথ ঘোষণা দিয়েছেন।

সেই ঘোষণার পর বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে; নির্বাচন হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতেই।

বিএনপিসহ দলগুলো নির্বাচনমুখী তৎপরতাও শুরু করছে। এমনকি আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপিও নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশে পদযাত্রা, সমাবেশ-গণসংযোগের কর্মসূচি পালন করছে।

কিন্ত এরপরও এখন ভোটের ব্যাপারে নতুন করে সন্দেহ, সংশয়ের কথা আসছে। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে, রাজনীতিকদেরই অনেকে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

সরকারের একাধিক উপদেষ্টা অবশ্য বলেছেন, নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো চিন্তা সরকারের ভেতরে নেই।

অন্যদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন  বলেছেন, তারা ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না।

এরই মধ্যে এসেছে নির্বাচন পদ্ধতির বিতর্ক। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থা নাকি সরাসরি ভোট–– এ নিয়ে দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান এখন দৃশ্যমান।

বিএনপি এবং এর মিত্র কিছু দল সংসদীয় আসনে সরাসরি ভোটের বিদ্যমান ব্যবস্থার পক্ষেই রয়েছে।

কিন্তু জামায়াতসহ ইসলামপন্থি বিভিন্ন দল ও কিছু বামপন্থি দলও সংখ্যানুপাতিক হারে ভোট এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিকে সামনে এনেছে।

আর এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকারের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট।

একইসঙ্গে দলগুলোর মতপার্থক্য বা পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে রাজনীতিতে অস্থিরতা এবং নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

রাজনীতির বাইরে সাধারণ মানুষের মাঝে নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের যৌথ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে দলটি ও এর মিত্র দলগুলোর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছিলেন।

লন্ডন বৈঠকের যৌথ ঘোষণায় কিন্তু সরকারের দিক থেকে শর্ত দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, সংস্কার ও গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলে রোজার আগে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে।

এরপর, নির্বাচন নিয়ে সংকট কেটে গেছে এবং আগামী বছর রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে–– এমন বক্তব্য তুলে ধরে বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনমুখী তৎপরতাও শুরু করেন।

লন্ডন বৈঠক থেকে ‘একটি দলের নেতার সঙ্গে সরকার প্রধানের যৌথ ঘোষণা’ নিয়ে যদিও এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু লন্ডন বৈঠকের ঘোষণার প্রভাবে ওই দলগুলোর মধ্যেও ধারণা তৈরি হয়েছিল যে রোজার আগেই নির্বাচন হতে পারে।

ফলে কোনো দলই বসে নেই। নির্বাচন লক্ষ্য রেখে দলগুলো নানা কর্মসূচি পালন করছে। রাজনীতিতে অনেক রকম মেরুকরণও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

এরপরও প্রশ্ন উঠছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হচ্ছে কি না? এমনকি নির্বাচন হবে কি না, এ ধরনের আলোচনাও রয়েছে রাজনীতিতে।

এমনকি সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে তাদেরও অনেকে এসব প্রশ্ন করেন।

তবে বিএনপি ও এর মিত্রদের মধ্যে নতুন করে সন্দেহ বা সংশয়ের কারণ কী–– এ প্রশ্নে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে অনেকটা একই ধরনের জবাব পাওয়া যায়।

বগুড়া, রাজশাহী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা-এসব জেলায় বিএনপির শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান রয়েছে। এই জেলাগুলোর বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা নির্বাচন প্রশ্নে সংশয় বা সন্দেহের পেছনে সরকারের ভূমিকাকে দায়ী করেন।

লন্ডন বৈঠকের পর তিন সপ্তাহ হলেও প্রধান উপদেষ্টা বা সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে কোনো ইঙ্গিত বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির তৃণমূলের ওই নেতারা।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতাও অনানুষ্ঠানিক আলাপে তৃণমূলের সঙ্গেই সুর মিলিয়েছেন।

সর্বশেষ কয়েক দিন আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সেই সাক্ষাতে নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি, কোনো পক্ষ থেকেই।

বরং ঘটনার কয়েকদিন পর গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার সাক্ষাতে নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিটাকে ধোঁয়াশা, অস্পষ্টতা বলে বর্ণনা করছেন বিএনপি নেতাদের অনেকে। তারা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন নিয়ে তাদের সংশয়, সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

এছাড়াও তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে আগে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছিল।

সেখান থেকে সরে এসে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিল। আর লন্ডন বৈঠক থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা এসেছে।

সেখানে আবার ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলায় তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিএনপি নেতাদের।

যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে এবং সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নেবে, এটি তারা বিশ্বাস করেন।

লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপি নেতাদের অনুষ্ঠানিক বক্তব্য-বিবৃতিতে সরকারের সমালোচনা কমেছে। কারণ যেহেতু তারা ক্ষমতার কাছাকাছি চলে এসেছে বলে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে।

ফলে ধৈর্য ধরে রেখে কৌশলে নির্বাচন আদায় করতে চাইছে দলটি।

বিএনপি নেতাদেরই কেউ কেউ মনে করেন, লন্ডন বৈঠকের কারণেও সরকারের সঙ্গে একটা শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রেখে এগোনোর একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

এরপরও নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের ক্ষেত্রে বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র, সব পর্যায়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

বিএনপির মিত্র দলগুলোও পরিস্থিতিটাকে একইভাবে দেখছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক  বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারের মধ্যে দোলাচল বা দোটানা আছে। সেকারণে ধোঁয়াশা রাখা হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।

পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। একজন বিশ্লেষক  বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোসহ বিভিন্ন পক্ষকে এক জায়গায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

এছাড়া মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে এখনো শক্তভাবে দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা যাবে কি না, এ প্রশ্ন থাকে।

আর সেজন্যই রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা বাড়ছে বলে ওই বিশ্লেষক মনে করেন।

আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, ভিন্ন ভিন্ন ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে, সেকারণে সন্দেহ বা অনিশ্চয়তার কথা আসছে।

তিনি  বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থা এবং এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি করা হচ্ছে। এসব দাাবি নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

এসব দাবি সামনে আনার বিষয়কেও বিএনপি নেতারা নির্বাচন নিয়ে তাদের সন্দেহের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন।

জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও মামুনুল হকে নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থার দাবি নিয়ে এক ধরনের জোটগতভাবে একটা অবস্থান তুলে ধরতে চাইছে। এর সঙ্গে নুরুল হক নূরের গণঅধিকার পরিষদও রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনেই এই পদ্ধতি চালুর দাবি তারা করছেন।

এই দাাবির পক্ষের অন্য দলগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, নির্বাচনের পদ্ধতি বদলানো এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি তুলে তারা সরকার ও একইসঙ্গে বিএনপির ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছেন।

এছাড়া বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চিন্তাও ওই দলগুলোর মধ্যে কাজ করছে। সেজন্য ইসলামী দলগুলোর নির্বাচনি জোট করার যে চেষ্টা ছিল, এর অংশ হিসেবেও এসব দাবি সামনে আনা হচ্ছে।

সম্প্রতি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থা চালু করা ও আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন ঢাকা একটি সমাবেশ করেছে। সেই সমাবেশে জামায়াত, খেলাফত মজলিস ও গণঅধিকার পরিষদসহ ইসলামি দলগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তারা অংশ নিয়েছেন।

কিন্তু বিএনপি ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ওই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানায়নি ইসলামী আন্দোলন। দলটি বলেছে, বিএনপি যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ বা আনুপাতিক ভোটের দাবির পক্ষে নয়, সেজন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোটের এ পদ্ধতি তারা কোনোভাবে মেনে নেবেন না।

বিশ্লেষকেরা দলগুলোর এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে রাজনীতিতে বিভক্তি হিসেবে দেখছেন।

তারা মনে করেন, এর প্রভাবে রাজনীতিতে অস্থিরতা বাড়ছে, যে কারণে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা আসছে ।

বর্তমানে প্রভাবশালী দলগুলোর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপিও রয়েছে। এই দলটি অবশ্য সংসদের উচ্চকক্ষ বাস্তবায়ন করা হলে, তার ভোট চাইছে আনুপাতিক পদ্ধতিতে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, তারা সংসদের নিম্নকক্ষে চলমান ব্যবস্থায় অর্থাৎ আসনভিত্তিক সরাসরি ভোটের পক্ষে রয়েছেন।

রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য উচ্চ ও নিম্ন, দুইকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদের পক্ষে একমত হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের এই আলোচনায় ইসলামপন্থি দলগুলো সংসদের দুই কক্ষের জন্যই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব করেছে। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্ররা।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, নিম্নকক্ষে বিদ্যমান সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা বহাল রাখা, আর উচ্চ কক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতির প্রস্তাব করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।

সংসদের উচ্চকক্ষেও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতির ভোট চায় না বিএনপি। তারা বলছে, নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোটে যে দল যতটা আসন পাবে, সেই অনুপাতে দলগুলোকে উচ্চকক্ষে আসন দেওয়া যেতে পারে।

ভোটের এ পদ্ধতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি বলে একাধিক উপদেষ্টা জানান।

তারা বলছেন, ঐকমত্য কমিশনে দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে যে সব প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো চিন্তা সরকারের নেই বলেও দাবি করেন তারা।

নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যের কোনো মীমাংসা সম্ভব হবে, এ ব্যাপার রাজনীতিকদেরই সন্দেহ আছে।

এছাড়া রাজনীতিকদেরই অনেকে বলছেন, সরকারের প্রায় এক বছর হতে চললেও এখনো তাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। সমন্বিত পরিকল্পনা না হওয়ায় নানা ইস্যু সামনে আসছে এবং সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

আর এ পরিস্থিতিই নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ সার ব্যবসায়ীকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা

নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না

Update Time : ০৭:০৭:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫

ঢাকা: দেশে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে কি না–– এ নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলে নতুন করে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়েই নতুন বিতর্কে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

নির্বাচনের পিছু ছাড়ছে না ‘সংশয়, সন্দেহ, অনিশ্চয়তা’। এখন আবার ওই শব্দগুলোই নতুন করে আলোচনায় আসছে নির্বাচন প্রশ্নে।

যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে গত ১২ই জুন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রয়ারিতে নির্বাচন প্রশ্নে যৌথ ঘোষণা দিয়েছেন।

সেই ঘোষণার পর বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে; নির্বাচন হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতেই।

বিএনপিসহ দলগুলো নির্বাচনমুখী তৎপরতাও শুরু করছে। এমনকি আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপিও নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশে পদযাত্রা, সমাবেশ-গণসংযোগের কর্মসূচি পালন করছে।

কিন্ত এরপরও এখন ভোটের ব্যাপারে নতুন করে সন্দেহ, সংশয়ের কথা আসছে। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে, রাজনীতিকদেরই অনেকে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

সরকারের একাধিক উপদেষ্টা অবশ্য বলেছেন, নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো চিন্তা সরকারের ভেতরে নেই।

অন্যদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন  বলেছেন, তারা ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না।

এরই মধ্যে এসেছে নির্বাচন পদ্ধতির বিতর্ক। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থা নাকি সরাসরি ভোট–– এ নিয়ে দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান এখন দৃশ্যমান।

বিএনপি এবং এর মিত্র কিছু দল সংসদীয় আসনে সরাসরি ভোটের বিদ্যমান ব্যবস্থার পক্ষেই রয়েছে।

কিন্তু জামায়াতসহ ইসলামপন্থি বিভিন্ন দল ও কিছু বামপন্থি দলও সংখ্যানুপাতিক হারে ভোট এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিকে সামনে এনেছে।

আর এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকারের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট।

একইসঙ্গে দলগুলোর মতপার্থক্য বা পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে রাজনীতিতে অস্থিরতা এবং নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

রাজনীতির বাইরে সাধারণ মানুষের মাঝে নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের যৌথ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে দলটি ও এর মিত্র দলগুলোর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছিলেন।

লন্ডন বৈঠকের যৌথ ঘোষণায় কিন্তু সরকারের দিক থেকে শর্ত দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, সংস্কার ও গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলে রোজার আগে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে।

এরপর, নির্বাচন নিয়ে সংকট কেটে গেছে এবং আগামী বছর রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে–– এমন বক্তব্য তুলে ধরে বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনমুখী তৎপরতাও শুরু করেন।

লন্ডন বৈঠক থেকে ‘একটি দলের নেতার সঙ্গে সরকার প্রধানের যৌথ ঘোষণা’ নিয়ে যদিও এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু লন্ডন বৈঠকের ঘোষণার প্রভাবে ওই দলগুলোর মধ্যেও ধারণা তৈরি হয়েছিল যে রোজার আগেই নির্বাচন হতে পারে।

ফলে কোনো দলই বসে নেই। নির্বাচন লক্ষ্য রেখে দলগুলো নানা কর্মসূচি পালন করছে। রাজনীতিতে অনেক রকম মেরুকরণও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

এরপরও প্রশ্ন উঠছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হচ্ছে কি না? এমনকি নির্বাচন হবে কি না, এ ধরনের আলোচনাও রয়েছে রাজনীতিতে।

এমনকি সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে তাদেরও অনেকে এসব প্রশ্ন করেন।

তবে বিএনপি ও এর মিত্রদের মধ্যে নতুন করে সন্দেহ বা সংশয়ের কারণ কী–– এ প্রশ্নে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে অনেকটা একই ধরনের জবাব পাওয়া যায়।

বগুড়া, রাজশাহী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা-এসব জেলায় বিএনপির শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান রয়েছে। এই জেলাগুলোর বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা নির্বাচন প্রশ্নে সংশয় বা সন্দেহের পেছনে সরকারের ভূমিকাকে দায়ী করেন।

লন্ডন বৈঠকের পর তিন সপ্তাহ হলেও প্রধান উপদেষ্টা বা সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে কোনো ইঙ্গিত বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির তৃণমূলের ওই নেতারা।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতাও অনানুষ্ঠানিক আলাপে তৃণমূলের সঙ্গেই সুর মিলিয়েছেন।

সর্বশেষ কয়েক দিন আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সেই সাক্ষাতে নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি, কোনো পক্ষ থেকেই।

বরং ঘটনার কয়েকদিন পর গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার সাক্ষাতে নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিটাকে ধোঁয়াশা, অস্পষ্টতা বলে বর্ণনা করছেন বিএনপি নেতাদের অনেকে। তারা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন নিয়ে তাদের সংশয়, সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

এছাড়াও তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে আগে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছিল।

সেখান থেকে সরে এসে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিল। আর লন্ডন বৈঠক থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা এসেছে।

সেখানে আবার ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলায় তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিএনপি নেতাদের।

যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে এবং সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নেবে, এটি তারা বিশ্বাস করেন।

লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপি নেতাদের অনুষ্ঠানিক বক্তব্য-বিবৃতিতে সরকারের সমালোচনা কমেছে। কারণ যেহেতু তারা ক্ষমতার কাছাকাছি চলে এসেছে বলে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে।

ফলে ধৈর্য ধরে রেখে কৌশলে নির্বাচন আদায় করতে চাইছে দলটি।

বিএনপি নেতাদেরই কেউ কেউ মনে করেন, লন্ডন বৈঠকের কারণেও সরকারের সঙ্গে একটা শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রেখে এগোনোর একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

এরপরও নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের ক্ষেত্রে বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র, সব পর্যায়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

বিএনপির মিত্র দলগুলোও পরিস্থিতিটাকে একইভাবে দেখছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক  বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারের মধ্যে দোলাচল বা দোটানা আছে। সেকারণে ধোঁয়াশা রাখা হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।

পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। একজন বিশ্লেষক  বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোসহ বিভিন্ন পক্ষকে এক জায়গায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

এছাড়া মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে এখনো শক্তভাবে দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা যাবে কি না, এ প্রশ্ন থাকে।

আর সেজন্যই রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা বাড়ছে বলে ওই বিশ্লেষক মনে করেন।

আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, ভিন্ন ভিন্ন ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে, সেকারণে সন্দেহ বা অনিশ্চয়তার কথা আসছে।

তিনি  বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থা এবং এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি করা হচ্ছে। এসব দাাবি নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

এসব দাবি সামনে আনার বিষয়কেও বিএনপি নেতারা নির্বাচন নিয়ে তাদের সন্দেহের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন।

জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও মামুনুল হকে নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থার দাবি নিয়ে এক ধরনের জোটগতভাবে একটা অবস্থান তুলে ধরতে চাইছে। এর সঙ্গে নুরুল হক নূরের গণঅধিকার পরিষদও রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনেই এই পদ্ধতি চালুর দাবি তারা করছেন।

এই দাাবির পক্ষের অন্য দলগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, নির্বাচনের পদ্ধতি বদলানো এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি তুলে তারা সরকার ও একইসঙ্গে বিএনপির ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছেন।

এছাড়া বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চিন্তাও ওই দলগুলোর মধ্যে কাজ করছে। সেজন্য ইসলামী দলগুলোর নির্বাচনি জোট করার যে চেষ্টা ছিল, এর অংশ হিসেবেও এসব দাবি সামনে আনা হচ্ছে।

সম্প্রতি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনি ব্যবস্থা চালু করা ও আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন ঢাকা একটি সমাবেশ করেছে। সেই সমাবেশে জামায়াত, খেলাফত মজলিস ও গণঅধিকার পরিষদসহ ইসলামি দলগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তারা অংশ নিয়েছেন।

কিন্তু বিএনপি ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ওই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানায়নি ইসলামী আন্দোলন। দলটি বলেছে, বিএনপি যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ বা আনুপাতিক ভোটের দাবির পক্ষে নয়, সেজন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোটের এ পদ্ধতি তারা কোনোভাবে মেনে নেবেন না।

বিশ্লেষকেরা দলগুলোর এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে রাজনীতিতে বিভক্তি হিসেবে দেখছেন।

তারা মনে করেন, এর প্রভাবে রাজনীতিতে অস্থিরতা বাড়ছে, যে কারণে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা আসছে ।

বর্তমানে প্রভাবশালী দলগুলোর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপিও রয়েছে। এই দলটি অবশ্য সংসদের উচ্চকক্ষ বাস্তবায়ন করা হলে, তার ভোট চাইছে আনুপাতিক পদ্ধতিতে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, তারা সংসদের নিম্নকক্ষে চলমান ব্যবস্থায় অর্থাৎ আসনভিত্তিক সরাসরি ভোটের পক্ষে রয়েছেন।

রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য উচ্চ ও নিম্ন, দুইকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদের পক্ষে একমত হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের এই আলোচনায় ইসলামপন্থি দলগুলো সংসদের দুই কক্ষের জন্যই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব করেছে। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্ররা।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, নিম্নকক্ষে বিদ্যমান সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা বহাল রাখা, আর উচ্চ কক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতির প্রস্তাব করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।

সংসদের উচ্চকক্ষেও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতির ভোট চায় না বিএনপি। তারা বলছে, নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোটে যে দল যতটা আসন পাবে, সেই অনুপাতে দলগুলোকে উচ্চকক্ষে আসন দেওয়া যেতে পারে।

ভোটের এ পদ্ধতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি বলে একাধিক উপদেষ্টা জানান।

তারা বলছেন, ঐকমত্য কমিশনে দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে যে সব প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো চিন্তা সরকারের নেই বলেও দাবি করেন তারা।

নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যের কোনো মীমাংসা সম্ভব হবে, এ ব্যাপার রাজনীতিকদেরই সন্দেহ আছে।

এছাড়া রাজনীতিকদেরই অনেকে বলছেন, সরকারের প্রায় এক বছর হতে চললেও এখনো তাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। সমন্বিত পরিকল্পনা না হওয়ায় নানা ইস্যু সামনে আসছে এবং সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

আর এ পরিস্থিতিই নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।